পিরামিড (Pyramid) হলো এক প্রকার জ্যামিতিক আকৃতি বা গঠন যার বাইরের তলগুলো ত্রিভূজাকার (Triangular) এবং যারা শীর্ষে একটি বিন্দুতে মিলিত হয়। পিরামিড একটি বহুভূজাকৃতি ভূমির উপর অবস্থিত। বহুভূজের উপর অবস্থিত যে ঘনবস্তুর একটি শীর্ষবিন্দু থাকে এবং যার পার্শ্বতলগুলো প্রত্যেকটি ত্রিভুজাকার, তাকে পিরামিড বলে।
পৃথিবীর প্রাচীন সপ্তম আশ্চর্য মিশরের পিরামিড সম্পর্কে জানব শুকতারা Tv র এই পর্বে।
মিশরের পিরামিড পৃথিবীর প্রাচীন সপ্তম আশ্চর্যের মধ্যে একটি। প্রাচীন মিশর শাসন করতেন ফারাও (প্রাচীন মিশরীয় শাসক বা রাজাদের ফারাও (Pharaoh) বলা হতো)। তাদেরকে কবর বা সমাধী দেয়ার জন্যই পিরামিড নির্মান করা হতো। ফারাওদের সমাধিস্থ করা হত পিরামিডের কেন্দ্রে।
মিশরীয়রা মনে করত ফারাওরা মৃত্যুর পর মৃতদের রাজা হিসেবে নতুন দ্বায়িত্ব পালন করেন। পিরামিড হল ফারাওদের পুর্নজন্মের প্রবেশ দ্বার। ফারাওদের মৃত্যুর পর যতদিন তাদের দেহ সংরক্ষণ করা যাবে ততদিন তারা স্বর্গে বাস করবে। সেজন্যই মৃত ফারাওদের দেহ মমি করে পিরামিডের ভেতরে সংরক্ষণ করা হত।
মিশরে ছোটবড় ৭৫টি পিরামিড আছে।
মিশরের পিরামিডের সবচেয়ে বড় এবং আকর্ষনীয় হচ্ছে গিজা’র পিরামিড যা খুফু’র পিরামিড হিসেবেও পরিচিত।
এটি তৈরি হয়েছিল খ্রিস্টপূর্ব প্রায় ৫০০০ বছর আগে। এর উচ্চতা প্রায় ৪৮১ ফুট। এটি ৭৫৫ বর্গফুট জমির উপর স্থাপিত। এটি তৈরি করতে সময় লেগেছিল প্রায় ২০ বছর এবং শ্রমিক খেটেছিল আনুমানিক ১ লাখ। পিরামিডটি তৈরি করা হয়েছিল বিশাল বিশাল পাথর খন্ড দিয়ে। পাথর খন্ডের এক একটির ওজন ছিল প্রায় ৬০ টন, আর দৈর্ঘ্য ছিল ৩০ থেকে ৪০ ফুটের মত। এগুলো সংগ্রহ করা হয়েছিল দূর দুরান্তের পাহাড় থেকে। পাথরের সাথে পাথর জোড়া দিয়ে পিরামিড তৈরি করা হত। চার হাজারের বছরের পুরানো এক সমাধিতে অঙ্কিত এক চিত্রে দেখা যায় এক বিশাল স্তম্ভকে স্লেজে করে সরানো হচ্ছে; অনেক মানুষ রশি দিয়ে সেই স্লেজ টেনে নিচ্ছে। আর তাদের মধ্যে একজন পাত্র থেকে জল ঢালছে বালির উপরে। এতে ঘর্ষণ প্রায় অর্ধেক হয়ে যায়। এভাবে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল আড়াই টন ওজনের এক একটা ব্লক।পিরামিড তৈরী করতে ২০ লক্ষ পাথরের ব্লক ব্যবহার করা হয়েছে। এ ব্লকগুলো প্রায় ৫০০ মাইল দূর থেকে নির্মান স্থলে বয়ে নিয়ে আসতে হয়েছে। আড়াই থেকে ৫০ টন ওজনের প্রায় ২০ লক্ষ ব্লক তারা মরুভুমির ভেতর দিয়ে কিভাবে পরিবহণ করে নিয়ে এসেছে তা সত্যিই এক বিষ্ময়।
খুফুর পিরামিডের ভেতরে ৩টি চেম্বার আছে। ৩০০ ফুট দৈর্ঘ ও ৩ ফুট প্রস্থে নিরেট পাথর কেটে এ চেম্বারগুলোর প্রবেশ পথ তৈরী করা হয়েছে। পিরামিডের কেন্দ্রীয় চেম্বারে ফারাওদের মৃতদেহ রাখা হয়। এ চেম্বারে পৌছতে দেড়শ ফুট সিড়ি পার হয়ে যেতে হয়। আধুনিক মেশিন দিয়ে পাথর কাটার প্রযুক্তির সাথে পিরামিডের পাথর কাটার অবিশ্বাস্য রকমের মিল রয়েছে। তবে বর্তমানকালে যন্ত্র দিয়েও এত সুন্দর আর নিঁখুত করে পাথর কাটা সম্ভব নয়।
চুনা পাথরের ব্লক দিয়ে বাইরের দেয়াল আর মূল্যবান গ্রানাইট পাথর দিয়ে পিরামিডের ভেতরের দেয়াল তৈরী করা হয়েছে। বাইরের একটি ব্লকের নূন্যতম ওজন ১টি প্রাইভেট কারের সমান আর ভেতরের একেকটা ব্লকের ওজন ৪০ টি প্রাইভেট কারের সমান। ভারি পাথরের ব্লকগুলো একটার সাথে আরেকটা জোড়া দিয়ে এমনভাবে পিরামিড তৈরি করা হয়েছে যে, একটি পাথর থেকে আরেকটি পাথরের মাঝের অংশে একচুলও ফাঁকা নেই। বর্তমানে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ক্রেন দিয়ে সর্বোচ্চ ১০ টন ওজন ৫০ থেকে ১০০ মিটার পর্যন্ত তোলা যায়। অথচ তারা এত ভারি পাথর প্রায় দেড়শ মিটার উচ্চতায় তুলে অত্যন্ত নিঁখুতভাবে।