ভারতের উত্তর-পূর্ব দিকে অবস্থিত বেশ জনপ্রিয় একটি পর্যটন রাজ্য সিকিম। ভারতের সর্বোচ্চ এবং বিশ্বের তৃতীয় সর্বোচ্চ পর্বত চূড়া কাঞ্চনজঙ্ঘা সহ অসংখ্য প্রাকৃতিক আকর্ষণ ও পর্যটন এলাকায় বেষ্টিত সিকিম রাজ্যে প্রতিনিয়ত দেশি বিদেশি অসংখ্য পর্যটকদের আনাগোনা লক্ষ করা যায়।
সিকিমের রাজধানীর নাম গ্যাংটক এবং এই গ্যাংটকের সাথে অন্যান্য রাজ্যগুলোর যোগাযোগ মাধ্যম একমাত্র সড়কপথ। পাহাড়ি এলাকা হওয়ায় সিকিম রাজ্যের সাথে দেশের অন্যান্য অঞ্চলের রেলপথে যোগাযোগ ব্যবস্থা নেই। তাই সিকিম রাজ্যে ঘুরতে আসতে চাইলে সরকপথই একমাত্র মাধ্যম।
সিকিম রাজ্যের উত্তর-পূর্ব দিকে তিব্বত, পূর্ব দিকে ভুটান, পশ্চিম দিকে নেপাল এবং দক্ষিণ দিকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ অবস্থিত। চলুন অসাধারণ প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ সিকিম রাজ্যের উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থানগুলো থেকে ঘুরে আসা যাক।
সিকিমের রাজধানী শহর গ্যাংটক থেকে ৩৮ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত সোমগো লেক ভারতের অন্যতম উঁচু হ্রদ যার উচ্চতা ১২৩১০ ফুট। ডিম্বাকৃতির হ্রদটির পরিষ্কার নীল পানির সৌন্দর্য উপভোগের পাশাপাশি আশেপাশের বরফে আচ্ছাদিত পাহাড় দেখতে চাইলে অবশ্যই শীতকাল হবে উপযুক্ত ভ্রমনের সময়। গ্যাংটক থেকে গাড়ি রিজার্ভ করে এবং কিছুটা পথ ট্রেকিং করে সোমগো লেক বা ছাঙ্গু লেকে পৌঁছানো যায়।
গ্যাংটক থেকে ৫৬ কিলোমিটার পূর্বে অবস্থিত সিকিমের একটি জনপ্রিয় পর্যটন স্পট নাথুলা পাস ট্রেকিং উৎসাহী দের জন্য উপযুক্ত একটি জায়গা। ১৪১৪০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত এই স্পটে সীমান্ত বানিজ্য বাজার সহ কুপুপ নামে একটি ছোট জায়গা রয়েছে যেখানে সব সময় মেঘেদের আনাগোনা ঘটে। বুধবার থেকে শনিবার পর্যন্ত স্পটটি জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকে। নাথুলা পাস যাওয়ার পুরো পথটিই পাহাড়ি রাস্তায় ট্রেকিং করে পাড়ি দিতে হবে।
সিকিম রাজ্যের একটি ঐতিহাসিক প্রাচীন শহর ইউকসম যা বেশ কয়েকটি পর্যটন স্পটের জন্য বিখ্যাত। এই শহরের উল্লেখযোগ্য পর্যটন স্পট হলো- ঐতিহাসিক নরবুগাং পার্ক, তাশি টেনকা, গোয়েচালা ট্রেক, কাঞ্চনজঙ্ঘা জাতীয় উদ্যান ইত্যাদি। ইউকসম শহর ভ্রমনের উপযুক্ত সময় মার্চ থেকে জুন এবং সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত। জলপাইগুড়ি থেকে সড়কপথে জোরেথাং হয়ে ইউকসম পৌছানো সবথেকে সহয এবং এতে সময় লাগবে ৬ থেকে ৭ ঘন্টা।
ভারতের ৩৬ টি হেরিটেজ গ্রামের মধ্যে একটি হলো লাচেন যা সিকিম রাজ্যের উত্তরে অবস্থিত। লাচেন গ্রামের উল্লেখযোগ্য আকর্ষণগুলো হলো- গুরুডংমার লেক, রঙিন রডোডেনড্রন ফুল, এই গ্রামের হস্তশিল্প, মাউন্ট কাব্রু, মাউন্ট সিমভো, রডোডেনড্রন অভয়ারণ্যের রোমাঞ্চকর পথ ইত্যাদি। লাচেন গ্রাম পরিদর্শনের উপযুক্ত সময় মার্চ থেকে জুন অথবা ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারি। নিউ জলপাইগুড়ি এর নিকটতম রেলহেড থেকে ট্যাক্সি নিয়ে এবং বেশ কিছুটা পথ ট্রেকিং করে লাচেন গ্রামে পৌঁছাত পারবেন।
সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৭০০০ ফুট উঁচু সাউথ সিকিমের একটি নিরিবিলি শান্ত ও জঙ্গলে ঘেরা পাহাড়ি শহর রাবাংলা যেখান থেকে বিখ্যাত কাঞ্চনজঙ্ঘার একটি চমৎকার ভিউ পাওয়া যায়। তাছাড়া গভীর জঙ্গল ভেদ করে ট্রেকিং এর অভিজ্ঞতা সহ কাছাকাছি অবস্থিত চা বাগান পরিদর্শন করতে পারবেন। রেলপথে জলপাইগুড়ি স্টেশনে নেমে সেখান থেকে একটি ক্যাব ভাড়া করে সরাসরি রাবাংলা শহরে আসতে পারবেন।
রাবাংলা থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে সিকিম রাজ্যের আরেকটি পর্যটন শহর নামচি যা এর তুষারে মোড়ানো পাহাড়ি অঞ্চল, বনভূমি ও উপত্যকার জন্য বেশ জনপ্রিয়। নামচি শহরের মূল আকর্ষণগুলো হলো- শিলা বাগান, চা বাগান, শেরডুপ চোয়েলিং মনাস্ট্রি, নামচি মহোৎসব ইত্যাদি। গ্যাংটক থেকে সড়ক পথে গাড়ি রিজার্ভ করে অথবা জলপাইগুড়ি থেকে গাড়ি রিজার্ভ করে নামচি পৌঁছানো যাবে। জলপাইগুড়ি স্ট্যান্ড থেকে লোকাল গাড়িও পাওয়া যায়।
সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৯৪০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত জুলুক গ্রাম সিকিমের একটি উল্লেখযোগ্য পর্যটন এলাকা যা সিল্ক রুটের জন্য বিখ্যাত। এছাড়াও জুলুক গ্রাম থেকে উপভোগ করতে পারবেন কাঞ্চনজঙ্ঘা মাউন্ট এবং থামবি ভিউ পয়েন্ট এর চমৎকার সৌন্দর্য। জুলুক ভ্রমণের উপযুক্ত সময় আগস্ট এবং সেপ্টেম্বর মাস। গ্যাংটক অথবা জলপাইগুড়ি থেকে ক্যাব ভাড়া করে জুলুক আসতে পারবেন।
দার্জিলিং রেলওয়ে স্টেশন থেকে মাত্র ৩৩ কিলোমিটার দূরে সিকিমের তিস্তা নদী অবস্থিত যা হিমবাহ গলে বয়ে চলা জলরাশির এক বিশাল প্রবাহ। এই পর্যটন কেন্দ্রে উপভোগ্য বিষয়গুলো হলো- শীতের হিমায়িত তিস্তা, গ্রীষ্মের সোনালী আলোকরশ্মিতে ঝলমলে তিস্তা, ডিকচু ব্রিজ, রিভার রাফটিং ইত্যাদি। দার্জিলিং রেলওয়ে স্টেশন থেকে ক্যাব ভাড়া করে সরাসরি তিস্তা নদীতে পৌছানো যায়।
তিস্তা নদী আমাদের বাংলাদেশের অংশেও আছে কিন্তু ভারতের তিস্তা বাধের কারনে আমাদের অংশের তিস্তা নদী এখন মৃত বলা চলে।
সিকিম রাজ্যের রাজধানী গ্যাংটক এই অঞ্চলের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন এলাকা যেখানে চমৎকার পাহাড়ি উপত্যকা, জলপ্রপাত, তুষারে ঢাকা পর্বতমালার সৌন্দর্য উপভোগ করার পাশাপাশি স্থানীয়দের আন্তরিক আতিথেয়তায় মুগ্ধ হতে পারবেন৷ গ্যাংটক এর প্রধান প্রধান আকর্ষণগুলো হলো- উপত্যকায় প্যারাগ্লাইডিং, ঝাকরি জলপ্রপাত, কিয়ংনোসলা জলপ্রপাত, তুষারাবৃত পর্বতমালা, রোপওয়ে থেকে বার্ড-আই ভিউ ইত্যাদি। গ্যাংটক পৌঁছানোর সবথেকে সহয উপায় হলো রেলপথে নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনে নেমে সেখান থেকে ক্যাব ভাড়া করে গ্যাংটক আসা।
ভারতের সিকিম রাজ্যের গয়ালশিং জেলার একটি পাহাড়ি শহর পেলিং যা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৭২০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত। কাঞ্চনজঙ্ঘাকে সবথেকে ভালোভাবে পরিদর্শন করা যায় এই পর্যটন এলাকা থেকে, তাছাড়াও পেলিং এর আরও কিছু জনপ্রিয় আকর্ষণ হলো- সেবারো রক গার্ডেন, সিংশোর ব্রিজ, রিম্বি জলপ্রপাত ইত্যাদি। জলপাইগুড়ি রেলওয়ে স্টেশন থেকে অথবা গ্যাংটক থেকে ক্যাব ভাড়া করে পেলিং শহরে পৌঁছানো যায়।
অসংখ্য বন্যপ্রানী ও পাহাড়ি গাছপালায় মোড়া সিকিমের অন্যতম জাতীয় উদ্যান সিঙ্গালীলা জাতীয় উদ্যান যেখান থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা এবং মাউন্ট এভারেস্ট শৃঙ্গের চমৎকার দৃশ্য উপভোগ করা যায়। বন্য পাখির কলকাকলীতে মুখরিত বনের মধ্যে দিয়ে হাটার অভিজ্ঞতার পাশাপাশি এই জাতীয় উদ্যান থেকে সান্দাকফু ও ফালুট ভ্রমনের অভিজ্ঞতাও অর্জন করতে পারবেন। সিঙ্গালীলা জাতীয় উদ্যানে পৌঁছানোর সবথেকে সহয মাধ্যম হলো রেলপথে ঘূম রেলওয়ে স্টেশনে নেমে একটি ক্যাব ভাড়া করে সরাসরি সিঙ্গালীলা জাতীয় উদ্যানের প্রবেশ গেটে চলে আসা।
সিকিমের কাং চেংইয়াও রেঞ্জের উত্তরে অবস্থিত গুরুডংমার লেক ভারতের অন্যতম উঁচু লেক যার উচ্চতা ১৭৮০০ ফুট। নভেম্বর মাস থেকে মে মাস পর্যন্ত পুরো লেকটি হিমায়িত থাকে এবং এসময়ে আশেপাশের তুষারে ঢাকা পর্বগুলো আরও বেশি আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে, সেই সাথে লেকের পাশের বুনো প্রানীগুলো ভ্রমণের রোমাঞ্চ কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেয়। গুরুদংমার লেক যাওয়ার সহয মাধ্যম হলো দার্জিলিং রেলওয়ে স্টেশন হয়ে সেখান থেকে ক্যাব ভাড়া করে লেকে পৌঁছানো।
সিকিমে একটি চ্যালেঞ্জিং ও শ্বাসরুদ্ধকর ট্যুর প্লান করলে অবশ্যই গোয়েচালা গিরিপথ ভ্রমন তালিকায় রাখতে হবে। গোয়েচালা গিরিপথ ভ্রমনের মূল আকর্ষণ পর্বত গিরিপথ যা ট্রেকিং এবং হাইকিংয়ের জন্য বেস্ট, তাছাড়া আছে কাঞ্চনজঙ্ঘা রেঞ্জে চমৎকার সূর্যোদয়, কাঞ্চনজঙ্ঘা জাতীয় উদ্যানের রাস্তায় ট্রেকিং ইত্যাদি । গোয়েচালা গিরিপথ ভ্রমনের উপযুক্ত সময় এপ্রিল থেকে জুন মাস পর্যন্ত। নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনে নেমে ক্যাব ভাড়া করে গোয়েচালা আসতে পারবেন।
ভারতের সবথেকে আকর্ষনীয় ন্যাশনাক পর্ক কাঞ্চনজঙ্গা ন্যাশনাল পার্ক যা বিভিন্ন স্থানীয় প্রাণী এবং তুষারে ঢাকা পাহাড়ি রাস্তায় ট্রেকিং এর জন্য বিখ্যাত। এই পার্কে দেখা মিলবে লাল পান্ডা, তুষার চিতা এবং হিমালয়ের কালো ভাল্লুক সহ বেশ কিছু আকর্ষণীয় প্রাণী। অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর মাস কাঞ্চনজঙ্ঘা ন্যাশনাল পার্ক ভ্রমণের উপযুক্ত সময়। ইউকসোম শহর বা গ্যাংটক থেকে ট্যাক্সি ভাড়া করে সহযেই পার্কের প্রবেশ গেটে পৌঁছাতে পারবেন।
বিশ্বের ১৪ তম সর্বোচ্চ উঁচু লেক এবং ভারতের একমাত্র উঁচু লেক হলো চোলামু লেক যা ১৮০০০ ফুট উঁচুতে অবস্থিত। চোলামু লেক ভ্রমনের জন্য আগে থেকেই অনুমতিপত্র নিয়ে রাখতে হবে এবং পরিবার পরিজন নিয়ে এই লেক ভ্রমন কিছুটা বিপজ্জনকও। তবে লেকের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও পার্শবর্তী তিব্বতের সীমান্তের দৃশ্য উপভোগ করতে চাইলে অবশ্যই চোলামু লেক ভ্রমনে যাওয়া উচিত। চেলামু লেক ভ্রমনের উপযুক্ত সময় অক্টোবর এবং নভেম্বর মাস। ক্যাব ভাড়া করে প্রথমে লাচেন পৌছে সেখান থেকে ট্যাক্সি নিয়ে লেকে পৌঁছাতে হবে।
তৃতীয় সর্বোচ্চ পর্বতচূড়া কাঞ্চনজঙ্ঘায় ট্রেকিং এর সবথেকে সেরা পছন্দ হতে পারে কাঞ্চনজঙ্ঘা বেস ক্যাম্প। ১৪০০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত বেস ক্যাম্পের ট্রেকটি শুরু হয় সিকিমের জংরি থেকে। কাঞ্চনজঙ্ঘাকে সবথেকে ভালোভাবে উপলব্ধি করার একমাত্র স্পট কাঞ্চনজঙ্ঘা বেস ক্যাম্প। সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবর এবং এপ্রিল থেকে জুন মাস কাঞ্চনজঙ্ঘা বেস ক্যাম্পে ট্রেকিং এর উপযুক্ত সময়। অবশ্যই হাতে দীর্ঘ সময় নিয়ে এই ট্রেকটি ভ্রমনের প্লান করতে হবে।
সিঙ্গালীলা রিজ ট্রেক হলো একটি জনপ্রিয় মাঝারি মানের ট্রেক যেখানে আরোহনের জন্য পর্যাপ্ত ফিটনেস ও স্ট্যামিনা দরকার। জনপ্রিয় এই ট্রেইলটিতে ভ্রমনের সময় দেখতে পাবেন এভারেস্ট, মাকালু এবং লোটসের মহিমান্বিত দৃশ্য, অজানা প্রজাতির বিভিন্ন ফুল ও ঔষধি গাছ। সিঙ্গালীলা রিজ ট্রেক ভ্রমনের উপযুক্ত সময় মার্চ থেকে জুন মাস পর্যন্ত। ট্রেকটি দার্জিলিং থেকে শুরু হয় এবং রিম্বিকে শেষ হয়।
কাঞ্চনজঙ্ঘা জাতীয় উদ্যানে অবস্থিত একটি প্রধান আকর্ষণ গ্রীন লেক যা হিমবাহ গলিত পানি নিয়ে গঠিত। কাঞ্চনজঙ্ঘা ট্র্যেকিং এর সময় এই লেকটির দেখা মিলবে। গ্রীন লেক পরিদর্শনের জন্য গ্যাংটক থেকে ১০ দিনের একটি ট্রেক প্লান করলে সবথেকে সুবিধাজনক ভ্রমন উপভোগ করতে পারবেন।
৪৭২৪ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত জিরো পয়েন্ট সিকিমে অবস্থিত অন্যতম একটি তুষারে আবৃত্ত পর্বচূড়া যেখানে তুষারে রাজ্যে আরোহনের পাশাপাশি স্নিগ্ধ নীল আকাশের মনোরম দৃশ্য উপভোগ করতে পারবেন। গ্যাংটক থেকে ক্যাব ভাড়া করে প্রথমে লাচুং গ্রামে পৌছে সেখান থেকে আবার ট্যাক্সি নিয়ে জিরো পয়েন্ট পৌঁছাতে পারবেন । ভ্রমনের উপযুক্ত সময় এপ্রিল থেকে মে মাস।
গ্যাংটক থেকে ১৪১ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত থাঙ্গু উপত্যকা গ্রামীন জীবন পরিদর্শন, উপজাতীয় জীবনধারা, গ্রীষ্মকালীন ফুলের সৌন্দর্য ও ট্রেকিং এর জন্য বেশ জনপ্রিয়। থাঙ্গু উপত্যকা ভ্রমনের উপযুক্ত সময় মে থেকে জুন মাস। গ্যাংটক থেকে ট্যাক্সি রিজার্ভ করে সরাসরি থাঙ্গু উপত্যকায় পৌঁছানো যায়।
পূর্ব হিমালয়ের সবথেকে বড় হিমবাহ জেমু হিমবাহ যা ২৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং এটি তিস্তা নদীর মূল উৎস। হিমবাহ ভ্রমনকালে কাঞ্চনজঙ্ঘার একটি চমৎকার দৃশ্য উপভোগ করতে পারবেন এবং এটিই কাঞ্চনজঙ্ঘায় আরোহণের পূর্ব ঘাঁটি। জেমু হিমবাহ ভ্রমনের উপযুক্ত সময় মার্চ থেকে মে এবং সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর মাস। গ্যাংটক থেকে ক্যাব ভাড়া করে প্রথমে উত্তর সিকিমের লাচেনে পৌঁছাতে হবে এবং সেখান থেকে বাকি পথ পায়ে হেঁটে যেতে হবে।
পূর্ব সিকিমে অবস্থিত বনভূমির পাহাড় নিয়ে গঠিত একটি অত্যাশ্চর্য পার্ক সিকিম হিমালয় জিওলজিক্যাল পার্ক যা হিমালয়ের বিভিন্ন প্রাণী, বনভূমি ও দুষ্প্রাপ্য বিভিন্ন গাছের জন্য বিখ্যাত। প্রতিদিন সকাল নয়টা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত পার্কটি জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকে। গ্যাংটক থেকে ট্যাক্সি রিজার্ভ করে পার্কের সামনে যেতে পারবেন।
সিকিমের রাজধানী শহর গ্যাংটক থেকে মাত্র কয়েক কিলোমিটার দূরে বাকথাং জলপ্রপাত একটি অত্যাশ্চর্য প্রকৃতি সৌন্দর্যের জন্য জনপ্রিয়। জলপ্রপাতের চমৎকার জলধারার সৌন্দর্য উপভোগ করার পাশাপাশি দড়ি স্লাইডিং এর অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারবেন এবং জলপ্রপাতের নিচের ছোট পুলে শরীর ভিজিয়ে নিতে পারবেন। গ্যাংটক থেকে একটি ক্যাব ভাড়া করে মাত্র ২০ মিনিটে বাকথাং জলপ্রপাতে পৌছাতে পারবেন।
গ্যাংটক শহরের কেন্দ্রে অবস্থিত রিজ পার্ক এর চমৎকার ডেকোরেশন, দুষ্প্রাপ্য বিভিন্ন উদ্ভিদ ও রঙবেরঙের ফুলের জন্য বিখ্যাত। তবে রিজ পার্কের মূল আকর্ষণ হলো বার্ষিক অর্কিড শো। এপ্রিল থেকে মে মাস রিজ পার্ক ভ্রমনের উপযুক্ত সময়। গ্যাংটক থেকে ট্যাক্সি বা ক্যাব নিয়ে খুব সহযেই রিজ পার্কে যাওয়া যায়।
সিকিমের প্রধান পর্যটন এলাকা গ্যাংটক এর আরও একটি আকর্ষণ বনঝাকড়ি জলপ্রপাত যা ১০০ ফুট উচ্চতা থেকে নিচের দিকে পতিত হয়। জলপ্রপাতের মনোরম দৃশ্যের পাশাপাশি উপভোগ করতে পারবেন বনঝাকরি পার্কের সবুজ বন আর জঙ্গলে ঘুরে বেড়ানোর রোমাঞ্চকর অনুভূতি। আগস্ট থেকে সেপ্টেম্বর মাস বনঝাকড়ি জলপ্রপাত ভ্রমনের উপযুক্ত সময়। গ্যাংটক থেকে ক্যাব বা ট্যাক্সি ভাড়া করে সহযেই বনঝাকরি পার্কের প্রবেশ গেইটে পৌঁছানো যায়।
সিকিম এর পেলিং শহরের কাছাকাছি একটি পুরোনো গ্রামের পাশে খেচেওপালরি লেক অবস্থিত যার টলটলে পানি যে কোনো প্রকৃতিপ্রেমীকে মুগ্ধ করবে। লেকের জলজ প্রাণীগুলো আরও একটি আকর্ষণের বিষয়। ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চ মাস খেচিওপালরি লেক ভ্রমনের উপযুক্ত সময়। গ্যাংটক থেকে ক্যাব ভাড়া করে প্রথমে পেলিং শহরে পৌঁছাতে হবে এবং সেখান থেকে লোকাল কিংবা প্রাইভেট জীপে করে লেক পর্যন্ত যাওয়া যায়।
সিকিমের পেলিং শহরের কাছাকাছি অবস্থিত সিংশোর ব্রিজ সিকিমের সর্বোচ্চ ব্রিজ এবং সমগ্র এশিয়ার দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ব্রিজ। সিকিমের প্রাচীনতম এই ব্রিজটি মাটি থেকে ১০০ মিটার উঁচুতে নির্মান করা হয়েছে এবং ব্রিজটির দৈর্ঘ্য ২৪০ মিটার। গ্যাংটক থেকে ক্যাবে করে প্রথমে পেলিং শহরে এবং সেখান থেকে বাস বা জীপে করে সিংশোর ব্রিজে পৌঁছাত পারবেন।
গ্যাংটক থেকে সড়কপথে পাঁচঘন্টা সময়ের দূরত্বে অবস্থিত কাঞ্চনজঙ্ঘা জলপ্রপাত সিকিমের মূল আকর্ষণ গুলোর মধ্যে একটি। মনেকরা হয় কাঞ্চনজঙ্ঘার হিমবাহ থেকেই জলপ্রপাতটির সৃষ্টি যা নব্বই এর দশকের শেষ পর্যন্ত একটি গভীর জঙ্গলের আড়ালে লুকায়িত ছিল। এপ্রিল থেকে জুন বা সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবর মাস কাঞ্চনজঙ্ঘা জলপ্রপাত ভ্রমনের উপযুক্ত সময়। গ্যাংটক থেকে ক্যাব বা বাসে চেপে কাঞ্চনজঙ্ঘা জলপ্রপাত ভ্রমনে যেতে পারবেন।
ভারতের সিকিম হলো বিশ্বের ভ্রমন পিপাসু পর্যটকদের কাছে পরিচিত একটি পর্যটন রাজ্য যার প্রত্যেকটি স্পটই রোমাঞ্চকর ভ্রমন অভিজ্ঞতা অফার করে। সিকিম ভ্রমনের সময় সবথেকে বেশি আনন্দদায়ক অভিজ্ঞতা হতে পারে হেলিকপ্টার যাত্রা, ইয়াক যাত্রা, হ্যান্ড গ্লাইডিং, প্যারাগ্লাইডিং, ট্রেকিং, কেনাকাটা ইত্যাদি। ভারতে ট্যুর প্লান করলে অবশ্যই পছন্দের তালিকায় শীর্ষে স্থান পেতে পারে ভারতের অন্যতম পর্যটন এলাকা এই সিকিম রাজ্য।