বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত কক্সবাজারে বেড়াতে আসা পর্যটকদের বেশিরভাগই ভ্রমণে আগ্রহ দেশের একমাত্র প্রবাল সমৃদ্ধ দ্বীপ সেন্ট মার্টিন। তবে পর্যটকরা এ দ্বীপে ভ্রমণের সুযোগ পায় বছরে ছয় মাস।
বাকি সময় উপযোগী যানের অভাবে উত্তাল সাগর পাড়ি দিয়ে পর্যটকরা সেন্ট মার্টিন যেতে পারেন না। সামনে পর্যটকরা সি-প্লেনে করে পুরো বছর সেন্ট মার্টিন ভ্রমণ করতে পারবেন। এক্ষেত্রে দ্বীপের পরিবেশ-প্রতিবেশ রক্ষায় সীমিত পর্যটক যাতায়াতের পরিকল্পনা করছে সরকার। এজন্য পর্যটকদের অবশ্যই রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে।
ইন্টারনাল স্টাডি ট্যুর অফ ক্যাপস্টোন কোর্সের ফেলোদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (কউক) চেয়ারম্যান কমোডর (অবসরপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ নুরুল আবছার সরকারের এই পরিকল্পনার কথা জানান।
মোহাম্মদ নুরুল আবছার বলেন, প্রতিবছর পর্যটন মৌসুমে সেন্ট মার্টিন ভ্রমণে যেতে ভিড় করেন পর্যটকরা। এতে একসঙ্গে বিপুল পর্যটক সমাগমে সেন্ট মার্টিনের পরিবেশ ও প্রতিবেশের ওপর মারাত্মক প্রভাব পড়ছে। এর বিকল্প হিসেবে ১২ মাসে প্রতিদিন অল্প সংখ্যক পর্যটক যাতে সেন্ট মার্টিন ভ্রমণ করতে পারে, সেজন্য সি-প্লেন দরকার। এজন্য সরকার তা দ্রুত বাস্তবায়নে উদ্যোগ নিয়েছে।
কউক চেয়ারম্যান বলেন, কক্সবাজারের উন্নয়নে ব্যাপক পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। এরমধ্যে বড় বড় প্রকল্প দৃশ্যমান। এসব বড় উন্নয়নের পাশাপাশি বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কক্সবাজারকে সর্বোচ্চ সুন্দর ও ট্যুরিজম জোন হিসেবে গড়ে তুলতে মাস্টারপ্ল্যান (মহাপরিকল্পনা) তৈরি করা হয়েছে।
এই পরিকল্পনায় রয়েছে কক্সবাজার টু মহেশখালী এবং কক্সবাজার টু টেকনাফ ক্যাবল কার স্থাপন, সাবরাং ট্যুরিজম পার্কে বিশাল আন্ডার-সি অ্যাকুরিয়াম, সার্কুলার বাস টার্মিনাল, মেরিনা বে রিসোর্ট, খুরুশকুল স্মার্ট সিটি, থিম পার্ক, ইকো রিসোর্ট, চৌফলদণ্ডীতে রিভাররেইন ট্যুরিজম। যত দ্রুত সম্ভব এই উন্নয়নগুলো বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কাজ করছে কউক।
তিনি বলেন, কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ দেশের সবচেয়ে বড় মহাপরিকল্পনা প্রকল্প নিয়েছে। এ পরিকল্পনায় কয়েক বছরের মধ্যে হাতে নেওয়া উন্নয়ন প্রকল্পগুলো শেষ করে একটি উন্নত মডেল কক্সবাজার উপহার দেওয়া হবে।
কমোডর নুরল আবছার আরও বলেন, কক্সবাজারে স্যুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট, বাঁকখালী নদীকে ১৫০ ফিট প্রশস্তকরণ এবং ইন্টারন্যাশনাল কনভেন্স সেন্টার স্থাপনের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে কউক। বিদেশি পর্যটকরা যেন কক্সবাজারে এসে মুদ্রা বিনিময় করতে পারে সেই ব্যবস্থাও করা হচ্ছে।
কউক চেয়ারম্যান অনুষ্ঠানে উপস্থিত ফেলোদের সামনে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের ভিশন উপস্থাপন করেন। এতে তিনি প্রমোশন ট্যুরিজম, ব্লু ইকোনমির সম্পদ ব্যবহার করা, জলবায়ু স্থিতিস্থাপকতা এবং বঙ্গোপসাগরে ভূ-রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতাকে কাজে লাগানো, রোহিঙ্গা সংকট এবং এর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাবের দিকে নজর রাখার বিষয় উল্লেখ করেন।
কউক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ নুরুল আবছারের সভাপতিত্বে এতে উপস্থিত ছিলেন সংসদ সদস্য মো. আয়েন উদ্দিন, মোহাম্মদ শিবলী সাদিক, মোহাম্মদ আসলাম হোসাইন, এমএ মতিন, আমিরুল আলম মিলন, আনজুম সুলতানা সীমা, উম্মে ফাতেমা নাজমা বেগম, অতিরিক্ত সচিব তারেকুল ইসলাম, ফেরদৌসী শাহরিয়ার, ডক্টর সালমা মমতাজ, পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক বেলালুর রহমান, অ্যাসিস্টেন্ট চিপ অফ নেভাল স্টাফ রিয়ার অ্যাডমিরাল মো. জহির উদ্দিন, ভাইস-চ্যান্সেলর ফখরুল ইসলাম, বিগ্রেডিয়ার জেনারেল একেএম ফজলুর রহমান প্রমুখ।