মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম ধনী দেশ কুয়েত। রাস্তাঘাট, দালানকোঠা, অবকাঠামো উন্নয়ন ও সৌন্দর্যবর্ধনের কাজে রয়েছে প্রচুর শ্রমিক চাহিদা। দেশটির বিভিন্ন সরকারি প্রজেক্টে ১৮নং আখুদ আকামা ক্লিনিং ভিসায় শ্রমিকরা আসেন। ৮ ঘণ্টা ডিউটিতে ৭৫ দিনার বেতনে ভারত, নেপাল, মিশরের শ্রমিকরা আসেন ১ লাখ থেকে দেড় লাখ টাকায়। একই কাজে বাংলাদেশিরা শ্রমিকরা আসেন ৬ লাখ থেকে ৭ লাখ টাকা খরচ করে।
প্রবাসে যাওয়ার আগে খুব কম সংখ্যক মানুষ আখুদ ভিসা সম্পর্কে ধারণা রাখেন। অধিকাংশ ক্লিনার কোম্পানির অধীনে কাজ করেন, যাদের বেতন মাত্র ৭৫ দিনার। বাংলাদেশি টাকায় এর পরিমাণ মাত্র ২৭ হাজার।
এই বেতনের মধ্যে মোবাইল খরচ ৫ দিনার, খাওয়া-দাওয়া ২০ দিনার ও অন্য খরচ ৫ দিনার খরচ হয়ে যায়, যা বাংলাদেশি টাকায় ১১ হাজার টাকার মতো। বাকি থাকে ১৬ হাজার টাকা।
এছাড়া শ্রমিকদের নির্দিষ্ট সময়ের পর কোম্পানির কন্ট্রাক বাতিল হয়ে গেলে পুনরায় আকামা লাগাতে কোম্পানিকে দিতে টাকা।
কুয়েতের কমিউনিটির বিশিষ্টজনরা জানান, কুয়েতে কোম্পানি আখুদ ক্লিনিং ভিসাগুলো নামমাত্র ফি প্রদানে ইস্যু হয়। কিন্তু বাংলাদেশিদের জন্য এই ভিসার দাম হয়ে যায় ৭ লাখ টাকা। বাকি সব টাকা চলে যায় দালালের পকেটে। অথচ সরকারের এ ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নেই। দক্ষিণ কোরিয়া, জাপানসহ অন্যান্য দেশে সরকারিভাবে কম খরচে শ্রমিক পাঠানো হয়। একই প্রক্রিয়ায় কুয়েতেও শ্রমিক পাঠালে অবৈধ শ্রমিকের সংখ্যা কমে আসবে। তাতে বাঁচবে দেশের অর্থ, বাড়বে রেমিট্যান্স।
কুয়েতে সরকারিভাবে বাংলাদেশিদের জন্য সব ভিসা বন্ধ রয়েছে। লামানা পদ্ধতি ছাড়া ভিসা বের করা সম্ভব হয় না। সেখানে বাংলাদেশিদের ভিসা বের করার জন্য মন্ত্রী বরাবর দরখাস্ত করতে হয়। সেটাও আবার দালালদের মাধ্যমে। এভাবে ভিসার দাম ৭ থেকে ১০ লাখ টাকায় পৌঁছায়। ভিসা পেতেও অনেক ভোগান্তির শিকার হতে হয় প্রবাসীদের। আবার একটি ভিসা বের করতে বছরের পর বছর চলে যায়।
ক্লিনার কোম্পানিতে বেতন কম হওয়ায় প্রায় ৯০ শতাংশ বাংলাদেশি প্রবাসী বৈধ আকামা-পাসপোর্ট-ভিসা থাকা সত্ত্বেও অবৈধভাবে পার্টটাইম কাজ করেন, যা আকামা আইনের লঙ্ঘন।
৮ ঘণ্টা কোম্পানির অথবা মালিকানায় কাজ করার পর অনেকে বাইরে বিভিন্ন কাজ করেন যেমন– গাড়ি পরিষ্কার করা, সবজি বিক্রি করা, বিভিন্ন মার্কেটে, অফিসে, দোকানে ফ্যাক্টরিতে কাজ করা, যা দেশটির আইনে সম্পূর্ণ নিষেধ। যেহেতু পার্টটাইম ছাড়া আয় বাড়ানোর উপায় নেই, তাই আইনভঙ্গ করেই কাজ করেন অনেকে। আকামা আইন লঙ্ঘনের দায়ে গ্রেপ্তার হওয়া প্রবাসীদের অনেককে সতর্কতামূলক পেপার দেওয়া হয়। তবে বেশিরভাগ সময় গ্রেপ্তার হলে নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হয়।