প্লেবয় ম্যাগাজিন বলেছে, সাবেক পর্ন তারকা মিয়া খলিফার সাথে সব ধরণের সম্পর্ক ছিন্ন করেছে তারা। মিয়া খলিফা ইসরায়েলে হামাসের হামলার সমর্থন জানিয়ে নানা বক্তব্য প্রকাশের পর এই সিদ্ধান্ত নেয়ার কথা জানিয়েছে ম্যাগাজিনটি।
মিয়া খলিফা পর্ন তারকা থাকার সময় খুবই জনপ্রিয় ছিলেন। তিনি সম্প্রতি ইসরায়েলে হামাস আক্রমণ চালানোর পর তাদের সমর্থন জানিয়ে এক্স নেটওয়ার্কে (সাবেক টুইটার) নিজের অ্যাকাউন্টে বিভিন্ন বক্তব্য প্রকাশ করেন।
এতে তিনি হামাসের সদস্যদেরকে “স্বাধীনতাকামী যোদ্ধা” হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
লেবাননী বংশোদ্ভূত আমেরিকার নাগরিক সাবেক এই পর্ন তারকা তার এক পোস্টে লিখেন: “আপনি যদি ফিলিস্তিনের অবস্থা দেখার পরও ফিলিস্তিনের পক্ষে না দাঁড়ান তাহলে আপনি ভুল দিকে অবস্থান নিয়েছেন, বৈষম্যের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন এবং এক সময় ইতিহাস সেটা আপনার সামনে তুলে ধরবে।”
আরেকটি পোস্টে তিনি হামাসের সদস্যদের বলেন, “মোবাইলকে ঘুরিয়ে আড়াআড়ি ভাবে ভিডিও ধারণ করতে।” কারণ এ ধরণের ভিডিও ক্লিপ টেলিভিশনে চালানোটা সহজ।
মিজ খলিফার এই ধরণের বক্তব্য তুলে ধরে প্লেবয় ম্যাগাজিন বলেছে, “যদিও তারা বাক স্বাধীনতায় বিশ্বাসী” কিন্তু তারা “ঘৃণা বা বিদ্বেষমূলক বক্তব্য” সহ্য করবে না।
এই প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানটি বলেছে, তারা মিয়া খলিফার সাথে সব ধরণের সহযোগিতার সম্পর্ক ছিন্ন করেছে।
এই সিদ্ধান্তের অংশ হিসেবে তারা “ক্রিটার” নামে ম্যাগাজিনটির প্ল্যাটফর্ম থেকে মিজ খলিফার চ্যানেল সরিয়ে ফেলবে বলেও জানিয়েছে।
প্লেবয় ম্যাগাজিনে পড়ার মতো বিভিন্ন বিষয়ের পাশাপাশি নারী ও পুরুষের যৌন উত্তেজক ছবি প্রকাশ করা হয়।
এই ম্যাগাজিনটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৫৩ সালে। সত্তরের দশকে এর প্রচার সংখ্যা ৫৫ লাখ কপি ছাড়িয়ে গিয়েছিল। কিন্তু ধীরে ধীরে এই সংখ্যা কমে আসে।
বো-টাই পরা একটি খরগোশের ছবিযুক্ত ম্যাগাজিনটির লোগো বিশ্বের সবচেয়ে পরিচিত লোগোর মধ্যে অন্যতম। প্লেবয়ের আয়ের বেশিরভাগ অংশই আসে প্রসাধনী, গহনা এবং বেভারেজ বিক্রিতে এই লোগোর লাইসেন্স দেয়ার মাধ্যমে।
গত ১৫ই অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলা শুরুর পর থেকে হামাসের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, এখনো পর্যন্ত ৮৩০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে।
একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে থাকা ইসরায়েলি দূতাবাস জানিয়েছে, কমপক্ষে ১০০৮ জন ইসরায়েলি নাগরিক নিহত হয়েছে। জাতিসংঘ বলেছে, কমপক্ষে এক লাখ ৮৭ হাজার বাসিন্দা বাস্তুচ্যুত হয়েছে।
মিয়া খলিফা লেবাননের বৈরুতে জন্মগ্রহণ করেন। তার বয়স যখন ১০ বছর, তখন তারা বাবা-মা যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ডে অভিবাসন করেন। টেক্সাস ইউনিভার্সিটি থেকে তিনি ইতিহাসে স্নাতক সম্পন্ন করেছেন।
মিয়া খলিফা পর্ন শিল্পে মাত্র তিন মাস কাজ করেছেন। ২০১৫ সালে তিনি তার সেই পেশা থেকে অবসর নেন।
যদিও পর্ন শিল্পে তার ক্যারিয়ার খুবই স্বল্প সময়ের, তারপরও এটি নিয়ে বিতর্ক কম ছিল না। তার অভিনীত সবচেয়ে জনপ্রিয় পর্ন দৃশ্যগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিতর্কের জন্ম দিয়েছিল, হিজাব পরে সঙ্গমের দৃশ্য।
এর আগে তিনি বলেছিলেন: “ভিডিওটি সম্প্রচারের সাথে সাথে যেন আগুন লেগে যায়। আইএসআইএস আমাকে মৃত্যুর হুমকি দেয় এবং গুগল ম্যাপ থেকে তারা আমার বাসস্থানের একটি ছবি পাঠায়। আমি এতো ভয় পেয়েছিলাম যে, আমি দুই সপ্তাহ একটি হোটেল বসবাস করেছি।”
পর্ন শিল্প মিয়া খলিফাকে ২০১৪ সালে মায়ামির একটি রাস্তায় খুঁজে পেয়েছিল। সে বছরের অক্টোবরেই তার প্রথম পর্ন সিনেমা মুক্তি পেয়েছিল। তিনি এই ঘটনা সম্পর্কে কাউকে জানাতে চান না এবং তিনি বলেছিলেন, একে তিনি “ছোটখাটো দুষ্টুমি” হিসেবে দেখেন যা তিনি আর কখনোই করবেন না।
কিন্তু একই বছরের ডিসেম্বরে “পর্নহাব” ওয়েবসাইটে তিনি সর্বোচ্চ ক্যাটাগরির অভিনেতাদের মধ্যে জায়গা করে নেন।
এর আগে তিনি বলেছিলেন, “আমি আমার অতীতকে সামলাতে পারছি না। আমি কিছু সময়ে জন্য মুখে মুখোশ পরারও চেষ্টা করেছি। এই অবস্থা কাটিয়ে ওঠার জন্য আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো।”
সাবেক এই পর্ন তারকা এর আগে পর্ন কোম্পানিগুলোর সমালোচনা করে বলেন, তারা “অসহায় যুবতী নারীদের ফাঁদে ফেলে।”
মিয়া খলিফা অভিযোগ করে বলেন, এই কোম্পানিগুলো “অসহায় বা খারাপ অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে এমন নারীদের আইনি চুক্তির মাধ্যমে ফাঁদে ফেলে।”