মালয়েশিয়ায় ভিসা পেতে চরম অনিশ্চয়তায় দিনাতিপাত করছেন, প্রবাসী বাংলাদেশিরা। আর এ অনিশ্চয়তা দূর করে দ্রুত সমাধানের অনুরোধ জানিয়েছেন, দেশটিতে নিযুক্ত বিদায়ী হাইকমিশনার মো. গোলাম সারোয়ার।
বুধবার (৪ অক্টোবর) পুত্রজায়া মালয়েশিয়ার ইমিগ্রেশনের মহাপরিচালক রুসলিন জুসোহর সঙ্গে তার কার্যালয়ে সৌজন্য সাক্ষাতকালে এ অনুরোধ জানান বিদায়ী হাইকমিশনার।
২০১৬ সালে রি-হায়ারিং কর্মসূচির আওতায় বৈধ হওয়া বাংলাদেশি কর্মীদের ২০২৩ সালে ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পর ৬ ও ৭ নম্বর ভিসা প্রাপ্তিতে চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে দিনাতিপাত করছে। এসব কর্মীদের বর্তমানে চলমান রি-ক্যালিব্রেশন প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত করার মাধ্যমে কর্মীদের মাঝে বিরাজমান অনিশ্চয়তার অবসানে ইমিগ্রেশন মহাপরিচালকের আন্তরিক সহযোগিতার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করলে, এ বিষয়ে অভিবাসন দপ্তর মালয়েশিয়া সরকারের বিদ্যমান ভিসানীতি অনুসরণ করছে বলে জানান ইমিগ্রেশন মহাপরিচালক।
তিনি জানান, ৬নং ভিসা শেষ হওয়া বাংলাদেশি কর্মীদের বিশেষ পাসের মাধ্যমে মালয়েশিয়ায় বসবাস করার সুযোগ রাখা হয়েছে। হাইকমিশনার এ সময়ে এসব কর্মীদের মূল্যবান কর্ম অভিজ্ঞতা এবং দক্ষতা আমলে নিয়ে এবং মালয়েশিয়ার বিদ্যমান কর্মী চাহিদা বিবেচনায় ২০২৩ এর জানুয়ারি থেকে ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়া কর্মীদের রি-ক্যালিব্রেশন-২ প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত করার আহ্বান জানান।
মহাপরিচালক এ বিষয়টি সহানুভূতির সঙ্গে বিবেচনার আশ্বাস দিয়ে হাইকমিশনের মাধ্যমে সব বাংলাদেশি কর্মীদের মালয়েশিয়ায় বৈধভাবে বসবাসের জন্য আহ্বান জানান।
সাক্ষাৎকালে বাংলাদেশ এবং মালয়েশিয়ার মধ্যকার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক এবং দেশটিতে বসবাসরত বাংলাদেশি কর্মীদের স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেন তারা।
এছাড়া হাইকমিশনার মহাপরিচালক ইমিগ্রেশনকে মালয়েশিয়ায় কর্মরত অবস্থায় তার এবং তার দপ্তরের আন্তরিক সহযোগিতার জন্য ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি তার সময়কালে গত ডিসেম্বর ২০২১ সাল থেকে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগের প্রক্রিয়া পুনরায় চালু হওয়ার কথা জানিয়ে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগের বর্তমান অবস্থা জানান।
বাংলাদেশ এবং মালয়েশিয়ার মধ্যকার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক এবং মালয়েশিয়ায় বসবাসরত বাংলাদেশি কর্মীদের স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেন হাইকমিশনার ও ইমিগ্রেশন মহাপরিচালক। ছবি- সংগৃহীত
বাংলাদেশী কর্মীদের বিশ্বস্ততা, কর্মনিষ্ঠা, উত্তম চারিত্রিক বৈশিষ্ট, কঠোর পরিশ্রমী হওয়ার কারণে মালয়েশিয়ার কর্ম বাজারে বাংলাদেশি কর্মীদের ব্যাপক চাহিদার কথা উল্লেখ করেন। মহাপরিচালক, ইমিগ্রেশন এ বিষয়ে একমত প্রকাশ করে জানান, এর আগে মালয়েশিয়ায় বিদেশি কর্মীর সংখ্যা বিবেচনায় বাংলাদেশ দ্বিতীয়স্থানে থাকলেও, রি-ক্যালিব্রেশন প্রক্রিয়ার আওতায় এ বছরের ডিসেম্বর থেকে বাংলাদেশ প্রথম স্থানে চলে আসবে।
হাইকমিশনার মালয়েশিয়ায় নিয়োগপ্রাপ্ত বাংলাদেশি কর্মীদের মালয়েশিয়ার ভিসা ইস্যুর ক্ষেত্রে চলমান ধীরগতির কথা উল্লেখ করে মালয়েশিয়ায় নতুন বাংলাদেশি কর্মীদের নিয়োগ প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে দ্রততার সঙ্গে ই-ভিসা ইস্যু করার জন্য অনুরোধ জানান। এ বিষয়ে মহাপরিচালক, ইমিগ্রেশন শিগগিরই টাস্কফোর্স গঠনের মাধ্যমে আগামী এক মাসের মধ্যে মালয়েশিয়ার ভিসা ইস্যু করার ক্ষেত্রে দীর্ঘসূত্রিতা দূর করে কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে চলমান প্রক্রিয়াকে দ্রুততার সঙ্গে সম্পন্ন করার বিষয়ে হাই কমিশনারকে আশ্বাস দেন।
মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনারের শেষ কর্ম দিবসে এই অতি গুরুত্বপূর্ণ সভার জন্য মহাপরিচালক (অভিবাসন) তাকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান। বিদায়ী হাইকমিশনার মহাপরিচালককে বাংলাদেশ এবং মালয়েশিয়ার মধ্যকার সম্পর্ক উন্নয়নে নতুন হাইকমিশনার এবং হাইকমিশনের সবার সঙ্গে একযোগে, নিবিড়ভাবে কাজ করার আহ্বান জানান।
হাই কমিশনার মো. গোলাম সারোয়ার মালয়েশিয়ায় তিন বছরের কার্যকাল অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে সমাপ্ত করে তৃতীয় বাংলাদেশি হিসাবে দক্ষিণ এশিয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা (সার্ক)-এর মহাসচিব হিসাবে যোগদানে, বুধবার রাতে মালয়েশিয়া ছেড়েছেন।
সাক্ষাতের সময় বিদায়ী হাইকমিশনারের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন, ডেপুটি হাই কমিশনার মো. খোরশেদ আলম খাস্তগীর, শ্রম মিনিস্টার মো. নাজমুছ সাদাত সেলিম, শ্রম কাউন্সিলর শরিফুল ইসলাম, কাউন্সিলর রাজনৈতিক ও দূতালয় প্রধান ফারহানা আহমেদ চৌধুরী এবং কাউন্সিলর, কন্স্যুলার জি এম রাসেল রানা।
এছাড়াও, মালয়েশিয়ার অভিবাসন বিভাগের পরিচালক (নীতি এবং পরিকল্পনা), পরিচালক (ফরেন ওয়ার্কার্স), পরিচালক (এনফোর্সমেন্ট) উপস্থিত ছিলেন।