সরকারি ছুটিকে কেন্দ্র করে প্রায় সপ্তাহ খানেক ধরেই পরিকল্পনা ছিলো বন্ধুদের নিয়ে ভ্রমণে যাবে সিয়াম। ক্যাম্পাসের বন্ধুরাও যেতে বেশ আগ্রহ দেখালো।
কারণ ভ্রমণপিপাসুদের মনতো আর খাঁচায় বন্দী করা যায় না। তাই কংক্রিটের শহরে একটি ছুটি মানেই অনেক কিছু। ঘুরতে যাওয়ার পরিকল্পনা করলেও কোথায় ঘুরতে যাবে এতদিনেও ঠিক করতে পারেনি সিয়াম।
তারপর সে তার ক্যাম্পাসের গ্রুপে পরামর্শ চাইলে বেশিরভাগ সিলেটের পান্থুমাই জলপ্রপাত দেখতে যেতে চাইলো। ঢাকা হতে ট্রেনে করে সিলেট যেতে কমলাপুর কিংবা বিমান বন্দর রেলওয়ে স্টেশন হতে উপবন, জয়ন্তিকা, পারাবত অথবা কালনী এক্সপ্রেস ট্রেনকে বেছে নিতে হবে ভ্রমণ সঙ্গী হিসেবে।
ট্রেনে যেতে সময় লাগবে ৭-৮ ঘণ্টা। দিকনির্দেশনা মতো রাতের বেলা সিয়াম ও তার বন্ধুরা ট্রেনে করে চললো সিলেটের উদ্দেশ্যে। হইহুল্লর আর আড্ডা-গানে চলতে থাকল তাদের ট্রেন ভ্রমণ।
সকাল সাড়ে ৭টা ট্রেন স্টেশনে পৌঁছালো। সবার খিদে পেয়েছে। তাই সবাই প্রথমেই স্টেশনের ধারের হোটেলে নাস্তা সেরে নিল। এরপর সিলেটের আম্বরখানার সিএনজি স্টেশন থেকে লোকাল সিএনজিতে চড়ে হাদারপার নামক স্থানে পৌঁছালো।
এখানে এসে সিয়াম জানতে পারল হাদারপার নৌকা ঘাট থেকে বিছানাকান্দি, পান্থুমাই জলপ্রপাত ও লক্ষণছড়া এক খরচেই দেখা যাবে। তবে মাঝির সঙ্গে আলোচনা করে নৌকা ঠিক করাই ভালো। নৌকা ভাড়া ১২০০-১৫০০ টাকা ।
নৌকায় যেতে যেতে ধীরে ধীরে চোখের সীমানায় মেঘালয় পাহাড়ের অপরূপ দৃশ্যের দেখা মিললো। পথের সে দৃশ্য তো কলমের আচরে ফুটিয়ে তোলা সম্ভব নয়। সারাপথ ক্যামেরা বন্দী করতে করতে পান্থুমাই গ্রামে এসে পৌঁছায় সকলে।
গ্রামবাসীকে জিজ্ঞাসা করতেই দেখিয়ে দিল পান্থুমাই জলপ্রপাত কোন দিকে। একটু এগিয়ে যেতেই সিয়ামের চোখে পড়লো দূরে অধর ঝরায় ঝরছে পান্থুমাই জলপ্রপাতের পানি।
তবে ভারতের মেঘালয়ের অংশ হওয়ায় কাছে যাওয়ার সুযোগ নেই। সামনেই সাইন বোর্ডে লেখা ‘সামনে ভারত, জনসাধারণের প্রবেশ নিষেধ’। এতো কাছে থেকেও পান্থুমাই ঝরনা অধরাই থেকে গেল সিয়ামদের কাছে।
তবে পান্থুমাই ঝরনা ভারতে হলেও এর সৌন্দর্য উপভোগ বাঙ্গালীরাই করতে পারে। কারণ এখান থেকেই জলপ্রপাতের সৌন্দর্য ফুটে ওঠে। তাই ভারতীয়রাও আসেন ভিসা নিয়ে ঘুরতে।
পান্থুমাই নাকি বাংলাদেশের মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর গ্রাম। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর চারদিক। সব সৌন্দর্য যেন এখানেই বেয়ে বেয়ে পড়ছে। রয়েছে সুন্দর একটি খেলার মাঠ।
এর পাশে বয়ে চলেছে পাহাড় বেয়ে নেমে আসা পিয়াইন নদী। যেন ক্যানভাসে রং-তুলির আঁচড়ে আঁকা জীবন্ত ছবি। বাংলার রূপ দেখে মুগ্ধ হতে চাইলে পান্থুমাই গ্রাম ও জলপ্রপাতে ঘুরতে আসার বিকল্প নেই।