পৃথিবীর অন্যতম সুখী দেশ হিসেবে পরিচিত ফিনল্যান্ড। ইউরোপ মহাদেশের দেশগুলোর মধ্যে বিভিন্ন কারণে এ দেশটি বিখ্যাত। এখানকার সমাজের মূল শক্তি হলো সমতা। দেশটির শিক্ষাব্যবস্থা বিশ্বমানের। তাই উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে বিদেশি শিক্ষার্থীদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে ফিনল্যান্ড।
ফিনল্যান্ডে রয়েছে দুই ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। একটিকে বলা হয় বিশ্ববিদ্যালয় আর অন্যটি ইউনিভার্সিটি অব অ্যাপ্লাইড সায়েন্স, যা ইউএএস। অটাম ও স্প্রিং—এই দুই সেমিস্টার পদ্ধতিতে চলে সেখানকার শিক্ষাকার্যক্রম। স্প্রিং সেমিস্টার জানুয়ারি থেকে জুলাই
এবং অটাম সেমিস্টার আগস্ট থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত চলে। দেশটি বিদেশি শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন বৃত্তিও দিয়ে থাকে। ফিনল্যান্ডে ভালো কাজের ভারসাম্য রয়েছে এবং দীর্ঘ মেয়াদে স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য এটি একটি আদর্শ জায়গা। তাই বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা ফিনল্যান্ডে উচ্চশিক্ষা নিতে বেশ আগ্রহী।
কেন ইউনিভার্সিটি অব হেলসিঙ্কি?
বিশ্বব্যাপী সর্বোচ্চ র্যাঙ্ক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে অন্যতম একটি হলো ইউনিভার্সিটি অব হেলসিঙ্কি। এটি ফিনল্যান্ডের শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয় এবং ইউরোপীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে শীর্ষ চল্লিশের মধ্যে। বিশ্ববিদ্যালয়টি বিশ্ব মানের শিক্ষাদান, গবেষণা এবং উদ্ভাবনের সুযোগ-সুবিধা দিয়ে থাকে। বিজ্ঞান পড়াশোনার ক্ষেত্রে এর সুনাম অনেক। ফিনল্যান্ড টানা ছয় বছর ধরে বিশ্বের সবচেয়ে সুখী দেশের তালিকায় রয়েছে। ফলে এখানকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পড়াশোনার জন্য বেশ উপযোগী। আর এই বিশ্ববিদ্যালয় ফিনল্যান্ডের রাজধানী হেলসিঙ্কিতে হওয়ায় আমার পছন্দের তালিকায় অন্যতম ছিল।
বৃত্তির পরিচিতি
বিশ্ববিদ্যালয়টিতে তিন ধরনের স্কলারশিপ আছে। ৫০ শতাংশ টিউশন ফি মওকুফ, ১০০ শতাংশ টিউশন ফি মওকুফ এবং ফিনল্যান্ড স্কলারশিপ, যাতে ১০০ শতাংশ টিউশন ফি মওকুফসহ জীবনযাত্রার খরচ বহনের জন্য ৫ হাজার ইউরো দেওয়া হয়। আমি হেলসিঙ্কি বিশ্ববিদ্যালয়ে ফার্মাসিউটিক্যালস রিসার্চ, ডেভেলপমেন্ট এবং সেফটি বিষয়ে মাস্টার্সের জন্য শতভাগ টিউশন ফি মওকুফ পেয়েছি। ফলে যে কেউ বৃত্তি পেলে ফিনল্যান্ডে তার উচ্চশিক্ষার যাত্রা সহজ হবে।
সুযোগ-সুবিধা
ফিনল্যান্ডে বৃত্তি পেলে টিউশন ফির ওপর বিভিন্ন পরিমাণে ছাড় থাকে। আর শতভাগ বৃত্তি পেলে তো কোনো টাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিশোধ করতে হয় না। পাশাপাশি বৃত্তির ধরন অনুযায়ী অনুদানও দিয়ে থাকে। বৃত্তির জন্য আবেদন বিনা মূল্যে। পড়াশোনা শেষ করার পর আপনি দুই বছরের ওয়ার্ক পারমিট পাবেন; যা সদ্য পাস করা গ্র্যাজুয়েটদের জন্য একটি বড় সুবিধা। দেশটিতে চার বছর বসবাসের পর আপনি স্থায়ী বসবাসের জন্য আবেদন করতে পারবেন। এ ছাড়া শেনজেন ভিসা-সুবিধা তো থাকছেই। দেশটিতে শিক্ষার্থীদের জন্য পরিবহন খরচে ছাড় রয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন রেস্তোরাঁয় শিক্ষার্থীদের জন্য ছাড় থাকে।
আবেদনের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
■ ডিগ্রির সার্টিফিকেট ও ট্রান্সক্রিপ্ট (ইংরেজিতে না হলে অনুবাদ করতে হবে)। বৃত্তির জন্য আবেদনকারী প্রার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয় তাদের ই-মেইল করতে হবে।
■ ও লেভেল, এ লেভেল কিংবা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকের সার্টিফিকেট এবং ট্রান্সক্রিপ্ট।
■ আইইএলটিএসে সামগ্রিক স্কোর ৬.৫ হতে হবে।
■ একাডেমিক সিভি।
■ প্রেরণামূলক চিঠি।
■ রেকমেন্ডেশেন লেটার ১-২টি।
আবেদনের প্রক্রিয়া
অনলাইনে আবেদন করতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে গিয়ে আপনার পছন্দসই প্রোগ্রাম নির্বাচন করুন। পোর্টালে ফরম
পূরণ করুন। এভাবে আবেদন হয়ে যাবে। আবেদনের সময়কাল ১ ডিসেম্বর ২০২৩ থেকে ৩ জানুয়ারি ২০২৪ পর্যন্ত। অনলাইনে
আবেদন করতে ভিজিট করুন।
পরামর্শ
আপনার এসওপি যত তাড়াতাড়ি পারেন প্রস্তুত করুন এবং আপনার অ্যাপ্লিকেশন অনুযায়ী এটি সম্পাদনা করতে থাকুন। প্রয়োজনীয় একাডেমিক কাগজপত্র, সুপারিশপত্র আগে থেকেই প্রস্তুত রাখুন। সুপারিশের জন্য আপনার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের কাছে যান। আর তাঁদের বেশির ভাগই এখন অনলাইনে কমিউনিকেশন করেন। আবেদন করা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যদি আপনাকে একটি সাক্ষাৎকারের জন্য ডাকা হয়, উপস্থাপিত বিষয় সম্পর্কে একটি ভালো জ্ঞান রাখুন এবং খুব আত্মবিশ্বাসী হোন। সফল আপনি হবেনই।