শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৫৫ অপরাহ্ন

নদীর বুকে পদ্মা রিসোর্ট

  • আপডেট সময় সোমবার, ২৮ আগস্ট, ২০২৩

শহরের দৈনন্দিন জীবন নিয়ে হাঁপিয়ে উঠছে মানুষ। ইট-পাথরের দালান আর জ্যামে থেমে থাকা গাড়ি-ঘোড়ার মধ্যেই আঁটকে গেছে শহুরে মানুষের জীবন। আবার শহরে থেকে থেকে নদীর মাঝে বয়ে চলা ঢেউ আর সবুজে ঘেরা মাঠও ভুলতে বসেছে অনেকে। ব্যস্ত কোনো সপ্তাহ শেষে ছুটির দিনে কিংবা কোনো অবসরে সবারই মন চায় অবসাদগ্রস্থ দেহকে একটু প্রশান্তির ছায়া এনে দিতে। ভ্রমণপিয়াসী মানুষ তাই সবসময়ই অপেক্ষায় থাকে শহর ছেড়ে একটু বেড়িয়ে আসার।

হাতে অল্প সময় এবং বাজেট নিয়ে ঘোরার মতো জায়গার অবশ্য অভাব নেই ঢাকার আশপাশে। এর মধ্যে অন্যতম হলো পদ্মা রিসোর্ট। পদ্মা নদীর গা ঘেঁষে জেগে ওঠা চড়ের মধ্যেই অপূর্ব সুন্দর জায়গাটি তৈরি করা হয়েছে। চারদিক সবুজ দিয়ে ছেয়ে থাকা রিসোর্টের পাশেই বয়ে চলেছে পদ্মা নদী। পরিবার এবং বন্ধু-পরিজন নিয়ে সময় কাটানোর জন্য একটি চমৎকার জায়গা হতে পারে এটি।

কীভাবে যাবেন

মজার ব্যাপার হচ্ছে পদ্মা রিসোর্ট ঢাকা থেকে মাত্র ৫০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এটি অবস্থান করছে মুন্সীগঞ্জ জেলার লৌহজং উপজেলার লৌহজং থানার একদম পাশে পদ্মা নদীর বুকে। যদি নিজের প্রাইভেট গাড়ি থাকে তাহলে যেতে এক থেকে দেড় ঘণ্টা সময় লাগবে। আর বাস দিয়ে গেলে প্রথমে গুলিস্তান যেতে হবে। সেখান থেকে গাংচিল পরিবহনে করে সরাসরি লৌহজংয়ের আসতে পারবেন। ভাড়া নেবে ৭০ টাকা।

অথবা মাওয়া ঘাটে নেমে তারপর লৌহজং আসতে পারেন। সেক্ষেত্রে গুলিস্তান থেকে বাসের অভাব হবে না। রামপুরা-মালিবাগ থেকে কেউ আসতে চাইলে প্রচেষ্টা পরিবহনে উঠতে পারেন মাওয়াঘাট পর্যন্ত। মাওয়া থেকে অটোরিকশায় করে লৌহজং থানা আসতে পারবেন। রিজার্ভ করলে ভাড়া নিবে ১০০ টাকার মতো। সেখানে থানার পাশেই ঘাট রয়েছে। আর নদীর ওপারে তাকালেই দেখতে পারবেন অপূর্ব এবং ছিমছাম পদ্মা রিসোর্ট। আগে থেকে ফোনে যোগাযোগ করে গেলে রিসোর্টের নিজেদের ইঞ্জিন চালিত নৌকা আপনাকে ওই পারে নিয়ে যাবে। সে ক্ষেত্রে ভাড়া লাগবে প্রতিজনের ৫০ টাকা করে। অবশ্য এই ভাড়ায় আসা-যাওয়া দুটি পারাপারই রয়েছে। নিজের ব্যক্তিগত গাড়ি পার্ক করতে চাইলে থানার পাশেই জায়গা রয়েছে। দরকার হলে থানার লোকজনকে একটু জানিয়ে নিন। না হয় রিসোর্টের ম্যানেজারকে বলুন।

কী খাবেন

পদ্মা রিসোর্টে ঢুকলে আপনাকে এখানেই খাওয়া-দাওয়া করতে হবে। নিজেদের সু-সজ্জিত রেস্টুরেন্টে খাবারের মান বেশ ভালোই বলা চলে। সকালে নাস্তা করতে চাইলে ১০০ টাকা লাগবে। পদ হিসেবে থাকবে পরটার সাথে সবজি, ডিম আর চা। পানির বোতল আলাদা নিজে কিনতে হবে অবশ্য। আর দুপুরের খাবার খরচ ৪০০ টাকা। এই প্যাকেজে থাকবে সাদা ভাত, সবজি, ইলিশ মাছ ভাজি, মুরগির মাংস এবং ডাল। খাবারের স্বাদ বেশ ভালো। তবে একটি কথা বলে রাখা ভালো। রেস্টুরেন্টের লোকজন আপনাকে এসে পানির বোতল, সফট ড্রিংকস কিংবা চা-কফি সাধতে থাকবে। এমনভাবে বলবে যে মনে হবে এটি প্যাকেজেরই অংশ। তাই কোনো কিছু খাওয়ার আগে জেনে নিন এটি আপনার প্যাকেজের মধ্যে রয়েছে নাকি। না হয় পরে এর জন্য আবার আলাদা টাকা গুনতে হবে আপনাকে।

যোগাযোগ ও খরচ

ছুটির দিন কিংবা ঈদের বন্ধ ছাড়া বুকিং না করে গেলেও সাধারণত কটেজ খালি পাওয়া যায়। তবে আগে থেকে ম্যানেজারের সাথে কথা বলে গেলে ভালো। উনারা সব ব্যবস্থা করে রাখবেন। বুকিংয়ের জন্য পদ্মা রিসোর্টের নিজস্ব ওয়েবসাইটে সব তথ্য পাওয়া যাবে।

এবার আসা যাক পয়সাকড়ির ব্যাপারে। রিসোর্ট যদি শুধু দিনের বেলা ভাড়া করতে চান, তাহলে সকাল ১০ টা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত থাকতে পারবেন এবং সেক্ষেত্রে ভাড়া লাগবে ২৩০০ টাকা। আর যদি দিনসহ রাতও কাটাতে চান, তাহলে ভাড়া লাগবে ৩৪০০ টাকা। যা হোক এবার ঘোরার পালা।

নদী পার হয়ে আপনি চলে আসবেন মূল জায়গায়। প্রথমেই চোখ জুড়াবে সবুজের সমারোহ দেখে। তার মাঝে তৈরি করা হয়েছে মোট ১৬টি কটেজ। এই কটেজগুলোই মূল আকর্ষণের জায়গা। নদীর পাড় ঘেঁষে গড়ে ওঠা কটেজগুলোতে বেশ আরামদায়ক এবং নিরিবিলি সময় কাটাতে পারবেন। কটেজগুলোর নামকরণও করা হয়েছে বেশ সুন্দরভাবে। ১২টি কটেজের নাম রাখা হয়েছে বাংলা বছরের ১২টি মাসের নামানুসারে। আর বাকি চারটির নাম নেওয়া হয়েছে চারটি ঋতু থেকে। যদি ভরা বর্ষায় আসেন তাহলে কটেজগুলোর সামনে পানি টলটল করবে। এর উপর কাঠের তৈরি রাস্তা দিয়ে হাঁটাচলা করতে হয়। মনে হয় কটেজগুলো যেন ভেসে আছে পানিতে।

কটেজগুলোর মান খুব যে আধুনিক তা না, কিন্তু বাঙালিয়ানার সাথে আধুনিকতার একটা মেলবন্ধন করার চেষ্টা করা হয়েছে। কটেজটি দুই তলা বলা হলেও একে তিনটি স্তরে ভাগ করা যায়। কটেজের প্রথম তলায় একটি খাটের সাথে কয়েকটি সোফা রাখা হয়েছে গল্প-আড্ডা করার জন্য। এর পাশেই কয়েকটি সিঁড়ি পাড়ি দিয়ে উপরে উঠলেই দ্বিতীয় স্তরে পৌঁছে যাবেন। সেখানে বাথরুম ছাড়াও একটি বিশাল বারান্দার মতো রয়েছে, যেখান থেকে একেবারে সরাসরি নদী দেখা যায়। নদীর নির্মল বাতাস আর নদীর জলে ভরা জোছনার আলো উপভোগ করতে চাইলে এই জায়গার জুড়ি নেই। আর একদম উপরের স্তরে আছে শোয়ার জন্য দুটি সিঙ্গেল বেড, একটি ওয়ারড্রোব এবং একটি সেন্টার টেবিল। উপরে ছনের ছাউনি দিয়ে একটু গ্রামীণ পরিবেশ সৃষ্টি করার চেষ্টা করা হয়েছে। বেশ আরাম করেই সময় কাটানো সম্ভব এখানে। তবে আটজনের বেশি এক কটেজে থাকা যাবে না।

রিসোর্টের চারদিক ঘুরে দেখুন ভালো করে। মনোরম একটি পরিবেশ রয়েছে। কটেজগুলোর বাইরে বসে থাকার জন্য বেশ কিছু ছাউনি এবং বেঞ্চ রয়েছে। আর নদীর ঠাণ্ডা পানিতে চাইলে গোসল করে নিতে পারেন। তবে সে ক্ষেত্রে অবশ্যই আপনাকে একজন দক্ষ সাঁতারু হতে হবে। সাঁতার না জানলে অবশ্যই পানিতে নামবেন না। পারলে লাইফ জ্যাকেট নিয়ে যান একটি সাথে করে। আর নদীর অপার সৌন্দর্য উপভোগ করতে ট্রলার, স্পিডবোট কিংবা সাম্পানও ভাড়া করতে পারবেন। সে ক্ষেত্রে কথা বলুন রিসোর্টের ম্যানেজারের সাথে।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com