পৃথিবীর এক স্থানে যখন সূর্য ডোবে ঠিক তার অপর প্রান্তে তখন সূর্যের উদয় হয় আকাশে। পর্যায়ক্রমে পৃথিবীর প্রতিটি স্থানে রাত আসে ভোর হয়। সূর্য ডুবে গেলে রাত নামে। পশু পাখি থেকে শুরু করে গাছপালা, মানুষ প্রত্যেকেরই বিশ্রামের সময় রাত। পরদিন সকালে পূব আকাশে সূর্যের উদয় হলে আবার বাড়ে কর্মব্যস্ততা। তবে নরওয়ে এমন একটি দেশ যেখানে রাতেও ডোবেনা সূর্য। তাই নরওয়েকে বলা হয় নিশীথ সূর্যের দেশ।
একটা সময় বলা হত ব্রিটিশ সাম্রাজ্যে কখনো সূর্য ডোবে না। তার কারণ ছিল তার বিশালত্ব। ইউরোপ থেকে আফ্রিকা, আমেরিকা থেকে এশিয়া সর্বত্র ছড়ানো ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের এক প্রান্তে সূর্য অস্ত হলে অন্য প্রান্তে হতো সূর্যোদয়। কিন্তু সেদিন আর নেই। ব্রিটিশ সাম্রাজ্য এসে ঠেকেছে তাদের দ্বীপ রাষ্ট্রের মধ্যেই। তাও সম্প্রতি ভাঙ্গনের মুখে। তবে বর্তমান পৃথিবীতে এখনো এমন কয়েকটি দেশ আছে যেখানে বছরের একটা লম্বা সময় ধরে কখনোই সূর্য অস্ত যায় না। আজকের প্রতিবেদনে সেই দেশগুলি সম্পর্কেই আলোচনা করা যাক।
প্রথমেই নাম আসবে নরওয়ের। পৃথিবীর আর্কটিক অঞ্চলে অবস্থিত নরওয়ের হ্যামারফেস্ট বন্দর থেকে রাতে দিগন্ত রেখায় সূর্যের দেখা মেলে। তাছাড়া সেখানে বছরের মে থেকে জুলাইয়ের শেষ পর্যন্ত কখনোই সূর্য অস্ত যায় না। অর্থাৎ টানা এই আড়াই মাস সময় ধরে এদেশে অন্ধকার বলে কিছু থাকেনা। শুধু সূর্যের তীব্রতা বাড়ে কমে। এছাড়াও সেই দেশের স্যালবার্ডে, ১০ ই এপ্রিল থেকে ২৩ শে আগস্ট পর্যন্ত একটানা সূর্যাস্ত হয় না। একই রকমভাবে কানাডার নুনাভুট অঞ্চলও আর্কটিক সার্কেলের ২ ডিগ্রি উপরে অবস্থিত হওয়ায় এখানেও বছরের প্রায় দুই মাস দিন সূর্য ডোবে না। উল্টে শীতকালে তারা ৩০ দিন রাত থাকে।
গ্রেট ব্রিটেনের পর আইসল্যান্ড ইউরোপের সবথেকে বড় দ্বীপ। আইসল্যান্ড বিখ্যাত সে দেশে সাপ ও মশার অনুপস্থিতির কারণে। তবে জুন মাসে এই দেশেও রাতের বেলায় সূর্য দেখা যায়। আইসল্যান্ডের বেশ খানিকটা পশ্চিমে অবস্থিত গ্রিনল্যান্ড দ্বীপপুঞ্জ থেকেও গ্রীষ্মকালে রাতের বেলায় সূর্যের আলো দেখতে পাওয়া যায়। তারপরেই আসে আলাস্কার ব্যারো অঞ্চলের নাম। এই অঞ্চলেও গ্রীষ্মকালে মে মাসের শেষ থেকে জুলাই মাসের শেষ পর্যন্ত রাতের বেলায় সূর্য দেখা যায়। সেই সাথে সাথে এখানে উত্তর গোলার্ধের শীতকাল অর্থাৎ নভেম্বর মাসের শুরু থেকে ডিসেম্বর মাসের শুরু পর্যন্ত প্রায় ৩০ দিন টানা রাত থাকে।
ইউরোপের আরেক দেশ ফিনল্যান্ডেও গরম কালে একটানা ৭৩ দিন সূর্য ডোবে না আবার উল্টোদিকে শীতকালে টানা ৩২ দিন সূর্যের দেখা মেলেনা। এই অদ্ভুত প্রাকৃতিক পরিস্থিতির কারণে সে দেশের বেশিরভাগ মানুষই বিশ্বাস করে যে মানুষ শীতকালে বেশি ঘুমায় এবং গরমকালে কম ঘুমায়। ফিনল্যান্ডের পাশাপাশি তাদের পড়শি দেশ সুইডেনেও মে মাস থেকে শুরু করে আগস্ট মাসের শেষ পর্যন্ত প্রায় ছয় মাস টানা সূর্যাস্ত হয় না এবং পরবর্তী ছয় মাস সে দেশে টানা রাত থাকে।
এছাড়াও নরওয়ে থেকে উত্তরে ভ্যালবাদ ও জান মায়েন দ্বীপ, রাশিয়ার আরখানগেলস্ক দ্বীপ, আরো উত্তরে রাশিয়ার প্রলিব মারকামা, রাশিয়ার ক্রস্নয়াস্ক ক্রায় দ্বীপেও টানা ছয় মাস দিন ও ছয় মাস রাত্রি বিরাজ করে।