দিনের বেলায় কিছু সরকারি-বেসরকারি অফিস খোলা থাকলেও পুরো শহর নীরব থাকে। মনে হয় দিনের বেলায় ঘুমন্ত শহর। দুপুরের পর থেকে ধীরে ধীরে জাগতে শুরু করে শহরের লোকজন। ক্রমান্বয়ে খোলা হয় হোটেল, রেস্টুরেন্ট, শপিংমল, সুপারশপ, বিউটি পার্লারসহ বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান।
তবে পুরোদমে চালু হয় পশ্চিম আকাশে সূর্য অস্ত যাওয়ার পর। রাত ৯-১০টা থেকে কোলাহল শুরু, জমে ১২টার পর শেষ রাত পর্যন্ত পর্যটকদের পদচারণায় মুখর পুরো শহর। কেউ সমুদ্র পাড়ে শুয়ে রয়েছে, কেউ পার্টি করছে, কেউ সমুদ্রের পানিতে গোসল করছে, আবার কেউবা সঙ্গী নিয়ে হাঁটছে। মানুষের বিচরণ, কোলাহল দেখে মনে হয় না এখন রাত। ঠিক ভোরের সূর্য উদিত হওয়ার সাথে সাথে আবার সুনসান নীরব হয়ে যায় সবকিছু। পাতায়া শহরের চিত্রটা এমন।
যদি আপনাকে কেউ প্রশ্ন করে, পাতায়ায় কেন যাবেন? প্রশ্নটা শুনে অবাক হবার মতো কিছুই নেই। কারণ, বিশ্বব্যাপী পর্যটকরা সৌন্দর্য উপভোগ করতে যায়। যদিও পাতায়া বাংলদেশের কক্সবাজারের তুলনায় অনেক ছোট, কিন্তু অবকাঠামো উন্নয়ন, পর্যটকদের জন্য সুযোগ-সুবিধা, ব্যবস্থাপনা অসাধারণ। আপনি সারারাত আপনার মতো ঘোরেন, চলফেরা করে আপনাকে কেউ কিছু জিজ্ঞেস করবে না। চুরি, ছিনতাই তো দূরের কথা।
থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংকক থেকে মাত্র ১৫৩ কিলোমিটার দূরে পাতায়ার অবস্থান। পর্যটকরা থাইল্যান্ডের যে কয়েকটি ভ্রমণযোগ্য শহরের কথা জানে, তার মধ্যে পাতায়া অন্যতম। এটাকে এশিয়ার অন্যতম হানিমুন স্পটও বলা হয়ে থাকে। নাইট ক্লাব, রেস্তোরাঁ, সমুদ্রের তীর-সবকিছু একাকার।
আরও পড়ুন: পাতায়ায় বাংলাদেশিদের খাবারে আস্থা ‘মহিনের রুচি রেস্টুরেন্ট’
থাইল্যান্ডে সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গে পাতায়ার ওয়ার্কিং স্ট্রিটে মনে হয়, দিন শুরু হলো মাত্র। কোথাও ইংলিশ, কোথাও থাই আবার কোথাও হিন্দি-আরবি গান চলছে। বারগুলোতে চলছে লাইভ শো।
তবে, পাতায়া মানেই যৌনতা, এটা ভাবলে ভুল। আপনি ওয়ার্কিং স্ট্রিট বাদ দিয়ে ঘুরে আসতে পারেন আরও বিভিন্ন জায়গায়। পুরো পাতায় ঘুরে উপভোগ করতে পারেন নানা ধরনের চিত্তবিনোদন। যেমন, ঘোড়ায় চড়া, মোটর বা মোটরসাইকেল চালনো প্রতিযোগিতা, টেনিস, পাতায়া পার্কে গমন, পানি পার্কের আনন্দ উপভোগ, হাতির খোঁয়াড় পরিদর্শন, নং নুচ গ্রাম পরিদর্শন, অর্কিড নার্সারি পরিদর্শন, শিল্পকলা কেন্দ্র পরিদর্শন এবং সাংস্কৃতিক প্রদর্শনও উপভোগ করতে পারেন।
পাতায়ার সৈকতে গার্ডেন ছাতার নিচে ডেকচেয়ারে গা হেলিয়া দিয়ে সমুদ্রের আমেজ উপভোগ করতে দারণ লাগবে যে কারো। অনেক বিদেশি পর্যটক সৈকতের বালুতে গড়াগড়ি করছে।
পাতায়ার রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ী চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার বাসিন্দা মোহাম্মদ শিমুল বলেন, পাতায়ায় ব্যবসা বাণিজ্য রাতনির্ভর। এখানকার ব্যবসায়ীরা দিনের বেলায় ঘুমায়, রাতে ব্যবসা করে। মূলত এখানে বেশিরভাগ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান দিনে বন্ধ থাকে। আমরা দুপুরের পর আস্তে আস্তে দোকান খুলতে থাকি। বেচাকেনা শুরি হয় বিকেলের পর থেকে। বেশি জমজমাট থাকে রাত ১০টার পর থেকে শেষ রাত পর্যন্ত।
পাতায়ার বিভিন্ন শপিংমল ঘুরে দেখা গেছে, সন্ধ্যার পর থেকে সব শপিংমলে জমজমাট বেচাকেনা চলছে। পুরুষের চেয়ে নারী ক্রেতা বেশি। কেউ নিজের জন্য, কেউ পরিবারের জন্য, কেউ আত্মীয়-স্বজনের জন্য নানা ধরনের আইটেম ক্রয় করছেন। বিক্রেতাদের মধ্যে অনেক শপিংমলে থাইল্যান্ডের নারীর পাশাাশি ইন্ডিয়ান ও নেপালি নারী বেশি রয়েছে।
পাতায়ায় বেড়াতে যাওয়া ভারতের আসামের আদিত্য মোহন বলেন, আমি ব্যবসায়িক কাজে প্রায় থাইল্যান্ড আসি। এবার সাথে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে পাতায়া এসেছি। এখানে দুদিন থাকবো। কোরাল দ্বীপ ঘুরে এসেছি, অনেক চমৎকার জায়গা। এই সিটি দিনের চেয়ে রাতে অনেক জমজমাট থাকে।