শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:৩৫ পূর্বাহ্ন

যদিও নারী তবে সাহস নিয়ে শুরু করেছিলাম

  • আপডেট সময় শুক্রবার, ২৮ জুলাই, ২০২৩

ফারাহ জাবিন শাম্মী। ‘লুক’ ফ্যাশন ম্যাগাজিনের চেয়ারম্যান ও সম্পাদক তিনি। ২০১০ সালে একজন নারী উদ্যোক্তা হিসেবে কোয়ালিটি কনটেন্ট নির্ভর দেশীয় ফ্যাশন ম্যাগাজিন ‘লুক’ প্রতিষ্ঠা করেন। স্বপ্ন পুঁজি নিয়ে শুরু করলেও নিজের একান্ত চেষ্টায় সফল ফারাহ জাবিন শাম্মী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতায় অনার্স-মাস্টার্স করেছেন তিনি।

২০০৩ সালে লেখাপড়া শেষ করে জাতীয় দৈনিকসহ বেশ কয়েকটি টেলিভিশনে মূলধারার সাংবাদিকতা করেন। কিন্তু ‘নিজে কিছু একটা করবো’ এমন স্বপ্ন ধারণ করে তিনি চাকরি ছেড়ে জমানো অর্থে নিজেই হয়ে ওঠেন উদ্যোক্তা। সম্প্রতি প্রিয়.কম-এর সঙ্গে নিজের স্বপ্নের উদ্যোগ সম্পর্কে আলাপকালে তুলে ধরেন নিজ সাহসে বেড়ে উঠার কথা।

ফারাহ জাবিন শাম্মী বলেন,
সাংবাদিকতা করার ইচ্ছে ছিল এবং করেছিও। কিন্তু পাশাপাশি আমার নিজের থেকে কিছু করার ইচ্ছে ছিল। মানে নিজেই উদ্যোক্তা হওয়ার ইচ্ছে আসে। বাসায় সানন্দা নিতাম। তখন দেখতাম মানুষ আভিজাত্য প্রকাশে ড্রইংরুমে সানন্দা রাখে। কিন্তু আমাদের দেশে মানুষ সানন্দা, দেশ ম্যাগাজিন পড়লেও দেশের ম্যাগাজিনগুলো কেউ কিনে পড়ে না, বিজ্ঞাপন পাওয়া যায় না। কিন্তু কেন পড়ছে না সেই ভাবনা নিয়ে অনেকের সাথে কথা বলেছি।

সকলেই বলেছে কনটেন্ট নেই, পড়ার মত মান সম্পন্ন কনটেন্ট থাকে না। আমার ভাবনায় ছিল আমি এমন একটা ম্যাগাজিন করবো যা দেশের মানুষের জীবনযাত্রা, ফ্যাশন এবং বিউটিসহ মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণ। যদিও ওই সময় অনেকেই বলেছিলেন, ম্যাগাজিন করা অনেক ব্যয় সাপেক্ষ ও কঠিন। আর আমি একজন নারী এ কারণে হয়তো পেরে উঠবো না। কিন্তু আমি অনেক সাহস নিয়েই ‘লুক’ ম্যাগাজিনের কাজ শুরু করি।

ম্যাগাজিন কেন?
ফারাহ জাবিন শাম্মী বলেন, আমার পক্ষে তো আর টিভি বা পত্রিকা করার সাধ্য নেই। তাই ভেবেছিলাম একটা ম্যাগাজিন করি। কারণ আবার মা-ফুফুদের দেখেছি পাশ্ববর্তী দেশের সানন্দা কিনে এনে পড়ছে। আর লাইফস্টাইল ও রেসিপি’র প্রতি আগ্রহ রয়েছে আমাদের দেশে। তখন আমি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল আরটিভির চাকরি ছেড়ে দিই। কারণ সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম- করবো তো করবোই। আর ওই সময় আমার স্বামী ও বন্ধু-বান্ধবরা আমাকে খুব সাহসও দিয়েছিল।

তিনি বলেন, শুরুতে লুক ম্যাগাজিনের কোন অফিস ছিল না। আমি, আমার স্বামী ও এক বন্ধু এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা ডিপার্টমেন্টের কয়েকজন জুনিয়রসহ আমরা প্রথম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে মাঠে বসে ম্যাগাজিনের কনটেন্টসহ ব্যবসায়িক বিষয়গুলো নিয়ে মিটিং করি। টিএসসি’র মাঠ থেকেই আমরা ম্যাগাজিনের কার্যক্রম পরিচালনা করতাম এবং ম্যাগাজিনের একটা ইস্যূও বের করি। এরপর দু’তিনটি ইস্যু বের করি।

লুক সম্পাদক বলেন, প্রাথমিকভাবে দেড় লাখ টাকা পুঁজি করে শুরু করা ‘লুক’এর জন্য প্রথম ইস্যুতে বিজ্ঞাপন তেমন পায়নি। তবে দু’একটি পরিচিত বিজ্ঞাপনদাতা পাশে ছিল। যদিও সবাই বলেছিল বিজ্ঞাপন আসবে না। কিন্তু নিজেই চেনা-জানা দু’একজনের কাছে গেলাম কিন্তু দেখলাম বিজ্ঞাপন আনাটা আসলেই খুব কঠিন। কিন্তু চেষ্টা চালিয়ে গেলাম কারণ সাহসটাই ছিল বেশি।

আর নেশা ও জেদ ছিল যে আমাকে করতেই হবে। এরপর এক বছরের মধ্যে সাতটি ইস্যু বের করার পর আমরা আরএকে গ্রুপের সঙ্গে চুক্তি করি। তখনই আমরা অফিস-স্টাফসহ পুরোদমে পেশাদার ভাবে আমি লুক দাঁড় করায়। এরপর প্রায় প্রতিটা সংখ্যায় সারকুলেশন বেরে যায়। এ অবস্থায় আমাদের ১০ লাখ টাকা প্রতি সংখ্যায় খরচ করতে হয়।

ম্যাগাজিনে কি বিষয়গুলো প্রাধান্য পায়?
তিনি বলেন, সামাজিক জনসচেতনতামূলক সংবাদগুলো বেশি প্রাধান্য পায়। এরমধ্যে লাইফস্টাইল, বিউটি, গল্প, রেসিপি, পেইন্টিং, সাইকোলজিক্যাল বিষয়গুলো। মোটকথা আমাদের মূল লক্ষ্য লুকের ৯৬ পৃষ্ঠার মানুষ নিজেকে যেন দেখতে পায়।

বর্তমান ম্যাগাজিন বাজার
তিনি বলেন, বর্তমানে দেশে ম্যাগাজিনের জন্য বিজ্ঞাপনের মার্কেট নেই আর তৈরিও হচ্ছে না। ফলে নতুন ম্যাগাজিন এলেও টিকে থাকা কষ্টসাধ্য। তবে সকল কিছুর উর্ধ্বে ম্যাগাজিনের কনটেন্ট কোয়ালিটি। আর কোয়ালিটি ধরে রাখতে পেরেছি বলেই আমি মনে করি লুক এখনো টিকে আছে। আজকে অনেকেই লুক দেখে বলতে বাধ্য হন- এটা বাংলাদেশের ম্যাগাজিন! শত কষ্টভোগ হলেও এ ধরণের উৎসাহ পেলে আমার সাহস আরো বেড়ে যায়। তবে লুকের জন্য কোয়ালিটির কোন ছাড় নয়। আর এভাবেই আজ ছয় বছর হয়ে গেল লুক এর।

প্রত্যেকের ধারণ থাকে যে। এত টাকা কেন খরচ হয়। অনেকে হয়তো বলেন এত কেন? কারণ যদি কোয়ালিটি ম্যাগাজিন করতে হয় তবে কোয়ালিটি কনটেন্ট প্রয়োজন। আর এজন্য স্টাফ, ফটোশুট, মডেল ইত্যাদি পেছনেও একটা ভালো অর্থ খরচ করতে হয়। এছাড়া একটা ভালো মানের ম্যাগাজিন করতে পারলে একটা সময় লাভজনক না হলেও আয় থেকে এটার খরচ পরিচালনা করা সম্ভব।

তিনি বলেন, শুরুতে আমাদের সার্কুলেশন ছিল এক হাজার। এরপর তা বেড়ে দাঁড়ায় ১০ হাজারে। তবে আমরা ২০১৩ সালের এপ্রিলে আমরা আরএকে’র এজিএম এর জন্য তাদের চাহিদার প্রেক্ষিতে ২০ হাজার কপি ছাপাই। যা বাংলাদেশের কোন ম্যাগাজিনের জন্য সর্বোচ্চ সার্কুলেশন ছিল।

শুধুমাত্র ফ্যাশন ম্যাগাজিনই নয় ফারাহ জাবিন শাম্মী বর্তমানে উত্তরায় ৭ নম্বর সেক্টরে ব্ল্যাক বার্ড নামক একটি ফ্যাশন হাউজও পরিচালনা করছেন। এই ফ্যাশন হাউজের পোশাকগুলো নিজস্ব কারখানায় তৈরিকৃত করা হয়।

নারী উদ্যোগত্যাদের উদ্দেশ্য তিনি বলেন, যদিও আমাদের দেশে একজন নারী হিসেব একটি ফ্যাশন ম্যাগাজিন বা হাউজ করা খুবই কষ্টসাধ্য। তবে আমার কনফিডেন্স ছিল। এজন্য স্বপ্নের পাশাপাশি ধৈর্য্যও থাকতে হবে আর লক্ষ্য থাকতে হবে আমি পারবো এবং করবো।

তথ্যসূত্র: প্রিয় ডটকম

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com