শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ০৯:২৪ অপরাহ্ন

ছুটির দিনে জিন্দাপার্ক ঘুরে যা যা দেখবেন

  • আপডেট সময় শুক্রবার, ১৪ জুলাই, ২০২৩
ভ্রমণের সপ্তাহখানেক আগে আমার বাল্যবন্ধু রিফাত ফোন দিয়ে জানালো ঢাকার নিকটেই জিন্দাপার্কে ঘুরতে যাবে। দু’দিন পর নিশ্চিত করলাম, আমিও যাচ্ছি জিন্দাপার্ক দর্শনে।
৩ মার্চ ভোরবেলা ভ্রমণের তারিখ ঠিক করা হলো। জিন্দা পার্ক যাওয়ার অনেকগুলো পথ আছে। ঢাকা থেকে সবচেয়ে সুবিধাজনক উপায় হলো ৩০০ ফিট দিয়ে যাওয়া।
ছুটির দিনে জিন্দাপার্ক ঘুরে যা যা দেখবেন
ছুটির দিনে জিন্দাপার্ক ঘুরে যা যা দেখবেন

অর্থাৎ কুড়িল বিশ্বরোড হাইওয়ে দিয়ে। কুড়িল হয়ে যেতে হবে কাঞ্চন ব্রিজ। দিক নির্দেশনা অনুযায়ী কাঞ্চন ব্রিজ থেকে অটোরিকশা নিয়ে পৌঁছালাম নারায়ণগঞ্জের জিন্দা গ্রামে। এই গ্রামেই জিন্দা পার্কের অবস্থান।
নারায়ণগঞ্জের দাউদপুর ইউনিয়নে প্রায় ১৫০ একর জমির উপর অবস্থিত প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা জিন্দা পার্ক। গাছপালা, পাখির কলকাকলি, জলাধারে ভরপুর এই পার্কে গেলে যে কারও মন প্রশান্তিতে ভরে উঠবে। পার্কটি সব ধরনের উটকো ঝামেলা থেকেও মুক্ত।
শান্তিময় একটি স্থানে এসে পড়েছি। দুই ধারে গাছের সারি। অসংখ্য গাছ, অনেক জাতের গাছ। ১৫০ টাকায় টিকিট কেটে ঢুকে পড়লাম জিন্দা ঐকতান পার্কে। তবে ছুটির দিন বাদে টিকিটের দাম ১০০ টাকা। ২৫০ জাতের ১০ হাজারেরও বেশি গাছ আছে এখানে। রয়েছে বিশাল শালবন বিহার। যেদিকেই তাকাই সবুজের ছায়াঘেরা উদ্যান।
প্রবেশের শুরুতেই একপাশে ঘাসের বিছানায় ছোট্ট চারকোণা জলাধার। তার উপরে নকল কাঠের গোলাকার ব্রিজ। তার সামনেই একটি মসজিদ। আরেকটু সামনেই একটি মঠ। রাস্তার অন্যপাশে খোলা মাঠ। আমরা একপাশ থেকে দেখতে দেখতে যাচ্ছি।
একটুখানি বন পেরিয়ে একটা কৃত্রিম লেক দেখতে পেলাম। সেখানে অনেক মানুষ, কেউ ব্যাডমিন্টন খেলছেন, কেউ চাদর বিছিয়ে বসে গল্প করছেন। লেকের মাঝখানে একচিলতে কৃত্রিম দ্বীপ।
কাঠের পাটাতন আর প্লাস্টিকের ড্রাম দিয়ে ভাসমান ব্রিজ বানানো হয়েছে। ব্রিজ দিয়ে যাওয়া যায়। বেশি লোক একসঙ্গে ব্রিজে উঠলে ভীষণভাবে দুলে ওঠে। দ্বীপটি দারুণ। পানিতে পা ডুবিয়ে ঘাসের উপর বসে থাকা যায়।
ছুটির দিনে জিন্দাপার্ক ঘুরে যা যা দেখবেন
ছুটির দিনে জিন্দাপার্ক ঘুরে যা যা দেখবেন

এ রকম মোট ৫টি লেক আছে জিন্দা পার্কে। ইচ্ছা হলে লেকের পানিতে কিছুক্ষণ ভেসেও বেড়াতে পারবেন। তার জন্য কয়েকটি নৌকা বাঁধা আছে ঘাটে। লেকে ভেসে বেড়ানোর পাশাপাশি উপভোগ করা যাবে প্রকৃতিকে।
কাছেই কয়েকটি গাছের ওপর ‘ট্রি হাউজ’। একটু উঠে বসেও থাকা যায়। আমরাও তাই করলাম। নামার সময় কাঠের সিঁড়ি বেয়ে না নেমে লাফিয়ে নামলাম। ‘ট্রি হাউজের’ নিকটস্থ লেকটার ঠিক পাশেই লালমাটির রাস্তা। রাস্তার দুই ধারে গাছের সারি।
পার্কটি কিন্তু বেশ বড়। পুরোটা মিলে ৫০ একর। হাঁটতে হাঁটতে অন্য আরেকটি লেকের পাশে বহু আকাঙ্ক্ষিত পাঠাগারটি খুঁজে পেলাম। চমৎকার স্থাপত্যশৈলীতে বানানো পাঠাগারটি ছবিতে দেখেই প্রেমে পড়েছিলাম। সামনাসামনি দেখেও ভালো লেগেছে। ভেতরে বেশ কয়েকজন ডুবেছিল বইয়ের নেশায়।
পুরোটা ঘুরে দেখতে গেলে খিদে পাবেই। খাবারের ব্যবস্থাও রয়েছে পার্কে। খিদে লাগলে, মহুয়া স্ন্যাকস অ্যান্ড মহুয়া ফুডস রেস্টুরেন্টে খাওয়া যাবে। রাতে থাকার ব্যবস্থাও নাকি আছে। মহুয়া গেস্ট হাউসে রাত কাটানো যাবে।
ছায়াঘেরা পার্কটায় হাঁটতে হাঁটতে ভাবছিলাম, রাতে কী সুনসান নীরব আর অন্ধকারই না হবে স্থানটি! থাকা গেলে দারুণ থ্রিলিং হতো! তবে এখানে রাত কাটানো, কতোটা নিরাপদ, সেটা নিয়ে আমি চিন্তিত।
একটি লেকের উপর বাঁশের সাঁকো দেখে খুব ইচ্ছে হলো, পাড়ি দিই। কিন্তু মানুষের ভিড়ে হলো না। ছুটির দিনে বেড়াতে যাওয়ার শাস্তি। ঘুরে একধারে গিয়ে দেখি কতোগুলো মাটির ঘর।
মনে হলো, এগুলোই কি সেই ‘গেস্ট হাউজ’। উঁকিঝুঁকি দিয়ে দেখে ‘গেস্ট হাউজ’ বলে মনে হলো না। আবার দুইজন নারীকে মাটির চুলায় রাঁধতেও দেখলাম।
ওখান থেকে একটু হেঁটে সামনে গিয়ে দেখি, দোতলা একটি ভবন। কী সুন্দর করে বানানো! সিঁড়ি বেয়ে ছাদে দোতালায় উঠে মুগ্ধ হলাম। এমন একটি ছাদ পেলে আর কিছুই চাইতাম না।
একটু খেয়াল করে রুমগুলোর দরজায় তাকিয়ে দেখি, ক্লাস এইট, ক্লাস নাইন লেখা। তালা দেওয়া দরজার ফোকরে উঁকি দিয়ে দেখি, ভেতরে কি সুন্দর চেয়ার টেবিল! এটা সত্যিই একটা স্কুল!
এত সুন্দর স্কুল কি আর কোথাও আছে? পার্কের দায়িত্বশীলদের একজনকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘স্কুল কি সত্যিই চলমান, নাকি বন্ধ আছে আপাতত?’ তিনি জানালেন, স্কুল নাকি সত্যিই চলছে। এলাকার ছেলে-মেয়েরা পড়াশোনা করে।
স্কুল থেকে বেরিয়ে অনেকটা পথ হেঁটে দেখি হরেকরকম জিনিসের দোকান। কুটির শিল্পের জিনিসপত্রই বেশি। ফেরার সময় সেই প্রথম লেকটার পাশ ঘুরে লাল মাটির রাস্তাটা পেরিয়ে বাগানের মধ্য দিয়ে বের হলাম।
এখানেও বসার জায়গা আছে। হাঁটতে হাঁটতে ক্লান্ত লাগলে, বসে বিশ্রাম নিয়ে আবার হেঁটেছি। এই পথেই ফেরার সময় আরেকটা সুন্দর বাড়ি দেখলাম। বাংলোবাড়ির মতো।
সেটির সামনে যেতেই একজন বললেন, এখানে টুরিস্টদের ঢোকা নিষেধ। এটি মালিকপক্ষের জন্য বরাদ্দ। পাশেই একটা গরুর খামার দেখলাম। ক্লান্ত হয়ে বেরিয়ে যাওয়ার আগে আরও কয়েকটি বাড়ি দেখলাম। বাড়িগুলো কিসের জন্য, বুঝলাম না। ওদের উচিৎ ছিল, বাড়িগুলোর সামনে কিছু লিখে দেওয়া।
প্রসঙ্গত, ১৯৭৯ সালে রূপগঞ্জ পূর্বাচল উপশহরে ঢাকা ইস্টার্ন বাইপাস সড়কঘেঁষে জিন্দা পার্ক (ঐকতান) গড়ে তোলেন অগ্রপথিক পল্লী সমিতির সদস্যরা। গর্বের বিষয় হচ্ছে, পার্কটি কোনো সরকারি উদ্যোগ বা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের ফসল নয়। পার্কটি তৈরি এলাকাবাসীর স্বতঃস্ফূর্ত ও প্রাণবন্ত অংশগ্রহণে।
ছুটির দিনে জিন্দাপার্ক ঘুরে যা যা দেখবেন
ছুটির দিনে জিন্দাপার্ক ঘুরে যা যা দেখবেন

মহল্লার ৫ হাজার সদস্য নিয়ে ‘অগ্রপথিক পল্লী সমিতি’ ১৯৮০ সালে যাত্রা শুরু করে। দীর্ঘ ৩৫ বছরের বিশ্রামহীন পরিশ্রমের ফসল এই পার্ক। এ রকম মহৎ উদ্দেশ্য, এত লোকের সক্রিয় অংশগ্রহণ ও ত্যাগ শিকারের উদাহারণ খুব কমই আছে।
পার্কটির নাম অদ্ভুত হওয়ার কারণ হিসেবে স্থানীয়দের থেকে জানা যায়, গ্রামটির নাম জিন্দা গ্রাম। সেই অনুযায়ী পার্কটিকে জিন্দা পার্ক নামে ডাকা হয়। তবে পার্কের নাম ‘ঐকতান পার্ক’। বর্তমানে জিন্দা গ্রামটি আদর্শ গ্রাম হিসেবেই পরিচিত।
এবার আমাদের ফেরার পালা। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে ক্লান্ত শরীর নিয়ে পার্ক থেকে বের হলাম। যেই পথে এসেছি সেই পথেই আবার হাঁটা, অটোয় ওঠা, বাসে চড়ে ঢাকায় ফিরে আসা। সঙ্গে আনলাম জিন্দাপার্কের রঙিন স্মৃতি।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com