বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ১১:২০ পূর্বাহ্ন

মালয়েশিয়ায় উচ্চশিক্ষা

  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ৬ জুলাই, ২০২৩

মালয়েশিয়ায় উচ্চশিক্ষা ও স্কলারশিপ লাভের সুযোগ বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের মধ্যে দিন দিন বেড়েই চলেছে। যদিও বাংলাদেশী শিক্ষার্থীরা
কানাডা-আমেরিকা ও অস্রেলিয়ায় পড়াশোনা করার প্রতি সবচেয়ে বেশি ঝোঁক।কিন্ত সীমিত স্কলারশিপ ও প্রচুর পড়াশোনার খরচের কারণে অনেকে ঐসব দেশ
থেকে মুখ ফিরিয়ে মালয়েশিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হচ্ছে। কারণ এখানে পড়াশোনর খরচ তুলনামূলক কম। আবার শিক্ষা লাভের পর মালয়েশিয়াসহ
ইউরোপ-আমেরিকা ও কানাডায় চাকুরী পাওয়া তুলনামূলক সহজ হয়। এই প্রবন্ধে মালয়েশিয়া স্টুডেন্ট ভিসা, মালয়েশিয়া স্টুডেন্ট ভিসা চেক করার নিয়ম,
মালয়েশিয়া স্কলারশিপ, পড়াশোনার খরচ পার্টটাইম জব ফ্যাসিলিটি ইত্যাদি বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ।

মালয়েশিয়া পরিচিতি

বাংলাদেশ থেকে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে প্রায় ৩৫০০ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত একটি উন্নত দেশের নাম মালয়েশিয়া। এর রাজধানীর নাম কুয়ালালামপুর।
বিমানে ঢাকা থেকে কুয়ালালামপুর যেতে প্রায় ৩ ঘন্টা সময় লাগে। মালয়েশিয়ার মুদ্রার নাম রিঙ্গিত। এক রিঙ্গিতে বাংলাদেশী টাকায় প্রায় ২৬ টাকা (২০২৩) হয়।
এর আয়তন ৩,২৯,৭৫৮ বর্গ কিমি যা বাংলাদেশের চেয়ে প্রায় তিনগুন প্রশস্ত। আর লোক সংখ্যা মাত্র তিন কোটির মত।

এক নজরে মালয়েশিয়া?

মালয়েশিয়া পর্যটন কেন্দ্রিক দেশ। এটি এশিয়ার ইউরোপ’ খ্যাতি অর্জন করেছে। এখানে রয়েছে প্রচুর জবের সুযোগ। মালয়েশিয়ায় বর্তমানে
উচ্চশিক্ষা অর্জন করছে ১৩২ দেশের প্রায় ১,৫০,০০০ বিদেশী ছাত্র-ছাত্রী। বাংলাদেশী ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য একটি এশিয়ার মধ্যে প্রথম পছন্দের স্থান।
কারণ বাংলাদেশ থেকে মাত্র ৩.৫ ঘন্টার প্লেন ভ্রমনেই চলে যাওয়া যায় মালয়েশিয়াতে। মালয়েশিয়ার প্লেনের টিকিটের দামও খুব কম।

পড়াশোনার প্রোগ্রাম সমূহ

মালয়েশিয়ার শিক্ষা ব্যবস্থা ৪টি পর্যায়ে ভাগ করা হয় নিচে ক্রম অনুসারে দেওয়া হল,
১. ডিপ্লোমা কোর্স: এটি ২ থেকে ৩ বৎসর সময় লাগে।
২. আন্ডার গ্র্যাজুয়েট কোর্স: এটি ৩ থেকে ৫ বৎসর মেয়াদী।
৩. পোস্টগ্র্যাজুয়েট ডিগ্রী: ১.৫ থেকে ২ বৎসর মেয়াদী।
৪. ডক্টরাল (PhD) ডিগ্রী: ৩-৫ বৎসর মেয়াদী।

কখন সেমিস্টার শুরু হয়?

মালয়েশিয়ার উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থা সেমিস্টার ভিত্তিক । প্রতি শিক্ষাবর্ষ সাধারণত ৩ টি সেমিস্টারে বিভক্ত। সেগুলো হচ্ছে,
১ম সেমিস্টার : জানুয়ারী-এপ্রিল।
২য় সেমিস্টার : মে-আগষ্ট।
৩য় সেমিস্টার : সেপ্টেম্বর-ডিসেম্বর।
তবে কোন বিশ্ববিদ্যালয় জানুয়ারিত সেমিস্টার শুরু হয়। আবার কোনটি মার্চে সেমিস্টার শুরু হয়। মোট কথা একেক বিশ্ববিদ্যালয়ের স্প্রিং সেমিস্টার একেকে সময়ে আরম্ভ হয়।

কেন মালয়েশিয়ায় উচ্চশিক্ষা করবেন?

যেহেতু মালয়েশিয়ার স্টুডেন্ট ভিসা মাল্টিপল এন্ট্রী ভিসা সেহেতু ইচ্ছা হলেই বাংলাদেশে খুব সহজেই চলে আসা যায়। এছাড়াও মালয়েশিয়ায় উচ্চশিক্ষার মান খুবই উন্নত।
মালয়েশিয়া থেকে লেখাপড়া করে পৃথিবীর যেকোন দেশে চাকুরী অথবা পরবর্তী পর্যায়ের পড়াশোনার সুযোগ রয়েছে। কানাডা, অস্ট্রেলিয়ায় ক্রেডি ট্রান্সফারের সুযোগও রয়েছে।
এছাড়াও নিন্মক্ত শুবিধাগুলো তো আছেনই,

  • UNESCO এর জরীপে মালয়েশিয়ায় উচ্চশিক্ষা বিশ্বের ৯ম তম ‘Preferable Destination For Higher Studies’.
  • এখানে পড়াশোনা, থাকা খাওয়ার খরচ খুব কম।
  • মুসলিম দেশ হওয়ায় হালাল খাবার ও ধর্ম পালন সহজ হয়।
  • মালয়েশিয়াতে জীবনযাত্রার মান খুবই উন্নত।
  • প্রায় সারা বছরই একই রকম আবহাওয়া থাকে। তবে বৃস্টি কাল শুরু হয় সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ।
  • মালয়েশিয়ায় উচ্চশিক্ষার জন্য স্টুডেন্ট ভিসার নিশ্চয়তা ৯৯%। যদি ডকুমেন্ট সঠিক থাকে।

মালয়েশিয়ার সরকারী বিশ্ববিদ্যালয় সমূহ

মালয়েশিয়ায় রয়েছে অনেক বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলেজ। এ সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এবং প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ পৃথিবীর উন্নত বিশ্বের নামি দামি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে সম্পৃক্ত। আর এ জন্যই মালয়েশিয়ায় উচ্চশিক্ষা বাংলাদেশিদের জন্য ১ নম্বর অবস্থানে রয়েছে। তবে বাংলাদেশী শিক্ষার্থিদের জন্য মালয়েশিয়ার সরকারী ও বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষার খরচ প্রায় একই।
মালয়েশিয়ান শিক্ষার্থীদের জন্য সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কম খরচে পড়াশোনার সুযোগ রয়েছে। যেটি বাংলাদেশী কিংবা অন্য দেশের শিক্ষার্থীদের জন্য নেই।
সরকারী বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর একটি তালিকা নিচে প্রদান করা হল, যে বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে সাধারণত বাংলাদেশী শিক্ষার্থীরা ভর্তি হয়,

মালয়েশিয়ার বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় সমূহ

বিশ্বের বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর সাথে মালয়েশিয়ার প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর তুলনা করা যায়। কারণ এখানকার প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় গুলো কিউ এস ওয়ার্ল্ড রেককিং এ খুব ভালো অবস্থানে আছে। এক থেকে ৫০০ এর মধ্যে প্রায় ৩০ টি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। যা পৃথিবীর খুব কম দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ই অর্জন করতে পেরেছে।
তাই বাংলাদেশসহ বিশ্বের অনেক দেশ থেকে মালয়েশিয়ায় উচ্চশিক্ষা নেওয়ার জন্য পারি জমাচ্ছে। এমনকি চায়নার মত উন্নত দেশ থেকেও শিক্ষার্থীরা মালয়েশিয়ায় পড়াশোনা করতে আসছে। কারণ মালয়েশিয়ার ভালো পড়াশোনা ও পড়ার মাধ্যম ইংরেজী।
নিচে মালয়েশিয়ার সবচেয়ে ভালো প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় গুলির একটি তালিকা ও লিংক প্রদান করা হল।
(লিংকে ক্লিক করলে সংশ্লিষ্ঠ বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পাবেন।)

  1. Limkokwing University (লিমককউইং ইউনিভার্সিটি)
  2. UCSI (ইউসিএসআই) INTI (ইনটি)
  3. Taylor’s University (টেইলর ইউনিভার্সিটি)
  4. MAHSA University (মাশা বিশ্ববিদ্যালয়)
  5. SEGI (সেগি ইউনিভার্সিটি),
  6. MULTIMEDIA University (মাল্টিমিডিয়া)
  7. Asia Pacific University of Technology (APU)
  8. NILAI University (নীলাই),
  9. KAGC College
  10. Curtin University
  11. Infrastructure University (ইনফ্রাসট্রাকচার ইউনিভার্সিটি)
  12. City University (সিটি ইউনিভার্সিটি)
  13. INTI International University
  14. Asia Metropolitan University (AMU)
  15. IHM College Malaysia
  16. KDU (কেডিইউ)
  17. Manipal International University (মানিপাল)।
    এছাড়াও আরো মালয়েশিয়ান বিশ্ববিদ্যালয় আছে যে গুলোতে বেশি বাংলাদেশী ছাত্র-ছাত্রী যায় না।
    তাই সে গুলো নাম উল্লেখ করা করা হয় নি।

কোন সাবজেক্টে পড়বেন মালয়েশিয়ায়?

সাবজেক্ট পছন্দ করা সত্যিই একটি কঠিন কাজ। কারণ এর উপরই নির্ভর করে শিক্ষার্থীর কর্ম জীবন। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার সকল সাবজেক্ট সম্পর্কে একটি ধারণা প্রদান করা হল। এখান থেকে বেছে নিতে পারেন আপনার পছন্দের সাবজেক্ট। এখানে ভর্তির বেশকিছু নিয়ম আছে তবে,
এখানে ভর্তির জন্য বাংলাদের মত বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরিক্ষা দেওয়া লাগে না। তবে রেজাল্টের ভিত্তিতে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেকে চান্স পায়।
আবার অনেকে চান্স পায় না। কোন কোন সাবজেক্টে ভর্তির জন্য এইচ এস সি তে বা এ লেভেলের নির্দিষ্ট বিষয়ের রেজাল্ট চাওয়া হয়।
চাহিদার চেয়ে কম হলে ভর্তির সুযোগ থাকে না। নিচে মালয়েশিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের উল্লেখযোগ্য সাবজেক্ট সমূহের লিস্ট দেওয়া হল।

কোন সাবজেক্টে পড়লে জীবনে কি হওয়া যায় এ বিষয়ে জানুন এখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবজেক্ট সমূহ।

মালয়েশিয়ায় স্কলারশিপ লাভের সূযোগ পাবেন কিভাবে?

মালয়েশিয়ায় উচ্চশিক্ষার জন্য নানা ধরনের স্কলারশিপের ব্যবস্থা আছে। তবে স্কলারশিপ লাভের জন্য খুব ভালো একাডেমিক রেজাল্ট থাকতে হয়।
এবং ইংরেজিতে ভালো দক্ষতার প্রমাণ দিতে হয়। খারাপ রেজাল্ট নিয়ে স্কলারশিপের জন্য শুধু শুধু প্রচেষ্টা করে লাভ নেই। তবে ফুল স্কলারশিপ না পেলেও আংশিক স্কলারশিপের সুযোগ আছে। নিচে মালয়েশিয়ায় পড়ালেখার জন্য যে সকল প্রতিষ্ঠান বৃত্তি দিয়ে থাকে তার একটি তালিকা দেওয়া হল-

মালয়েশিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির যোগ্যতা কি?

ডিপ্লোমা কোর্স: ডিপ্লোমা কোর্সের জন্য নূনতম উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট প্রয়োজন হয়।
আন্ডার গ্র্যাজুয়েট কোর্স: আন্ডার গ্র্যাজুয়েট কোর্সের জন্য ন্যূনতম ১২ বৎসরের পূর্বতন শিক্ষা অর্থাৎ উচ্চ মাধ্যমিক সমমানের শিক্ষা
পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ডিগ্রী: পোস্ট গ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রামের জন্য ন্যূনতম ১৬ বৎসরের পূর্বতন শিক্ষা অর্থাৎ ব্যাচেলর ডিগ্রীধারী।
ডক্টরাল (PhD) ডিগ্রী: ডক্টরাল (PhD) কোর্সের জন্য পোস্টগ্র্যাজুয়েট ডিগ্রী এবং ব্যাপক গবেষণালব্ধ অভিজ্ঞতা দরকার হয়।
এছাড়া ব্যচেলর পাশ করেও মালয়েশিয়াতে ডিপ্লোমা অথবা পূনরায় ব্যচেলরে যাওয়া যায়। কারণ মালয়েশিয়াতে স্টাডি গ্যাপ গ্রহনযোগ্য।

ভাষাগত যোগ্যতা

মালয়েশিয়ায় আন্ডার গ্র্যাজুয়েট ও পোস্ট গ্র্যাজুয়েট পড়াশুনার জন্য বিদেশী শিক্ষার্থীদের ইংরেজী ভাষার নিম্নোক্ত যেকোন একটি যোগ্যতা থাকতে হবে।

মালয়েশিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইন আবেদন এর জন্য ডকুমেন্টস

যে কোন কোর্সে ভর্তির জন্য সাধারণত তার আগের ক্লাশের সার্টিফিকেট ও মার্কসিট লাগে। সেই সাথে পাসপোর্ট ও ছবি প্রয়োজন হয়।
নিচে একটি ডকুমেন্টস এর তালিকা দেওয়া হল। তবে সময় সময় এগুলো ভেরি করে বা আপডেট হয়।

  • সকল একাডেমিক সার্টিফিকেট এবং মার্কশীট/ট্রান্সক্রিপ্ট।
  • এম.এস. ও পিএইচডি’র এর জন্য সিভি, মোটিভেশনাল লেটার ও রিকমেন্ডেশন লেটার।
  • পাসপোর্টের ইনফরমেশন পেজের ছবি/ কপি ও পাসপোর্ট সাইজের ছবি।
  • IELTS সার্টিফিকেটের কপি/ এম.ও.আই/ডুয়েলিঙ্গ প্রযোজ্য ক্ষেত্রে।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com