তালেবানের ভয়ে যেসব আফগান তাদের দেশ থেকে পালিয়ে ইউরোপে যাওয়ার চেষ্টা করছেন, ইরান ও তুরস্ক সীমান্ত পাড়ি দেওয়ার সময় বিভিন্ন অপরাধী গ্রুপ তাদের অপহরণ করে অমানবিক নির্যাতন চালাচ্ছে।
অপহৃত এসব আফগানকে জিম্মি করে তাদের ওপর চালানো নির্যাতনের ভিডিও তাদের পরিবারের কাছে পাঠিয়ে মুক্তির বিনিময়ে বিশাল অংকের মুক্তিপণ দাবি করা হচ্ছে।
একটি ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে: পাহাড়ের ওপর একদল আফগান, যারা আফগানিস্তান থেকে অন্য জায়গায় পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন, তাদের সবাই একজন আরেকজনের সঙ্গে শেকল দিয়ে বাঁধা। তাদের গলায় তালা লাগানো। তারা তাদের মুক্তির জন্য আবেদন জানাচ্ছেন।
‘যারা এই ভিডিওটি দেখছেন তাদের বলছি। আমাকে গতকাল অপহরণ করা হয়েছে। তারা আমাদের প্রত্যেকের মুক্তির জন্য চার হাজার ডলার দাবি করছে। দিন রাত সারাক্ষণ তারা আমাদের মারধর করে,’ বলছেন এক ব্যক্তি, তার ঠোঁট রক্তাক্ত, সারা মুখে ধুলো জমে আছে।
আরেকটি ভিডিওতে একদল নগ্ন পুরুষকে দেখা যাচ্ছে। তাদের তুষারের ওপর হামাগুড়ি দিতে দেখা যাচ্ছে। এক ব্যক্তি চাবুক হাতে তাদের পেছন দিক থেকে তাড়া করছে।
‘আমার পরিবার আছে, আমার সঙ্গে এ রকম করবেন না; আমার স্ত্রী সন্তান আছে, অনুগ্রহ করে আমাকে দয়া করুন,’ এক ব্যক্তি কাঁদতে কাঁদতে আরেকজনের কাছে অনুনয় করছিলেন।
এর কিছুক্ষণ পরেই অপরাধী গ্রুপের এক সদস্য ছুরি ধরে তার ওপর যৌন নির্যাতন চালায় যা ভিডিওতে ধারণ করা হয়।
এসব অস্বস্তিকর ভিডিও প্রমাণ করে যে ইরানে এ ধরনের অপরাধী গ্রুপের তৎপরতা বেড়ে গেছে যারা আফগানিস্তান থেকে ইউরোপের দিকে পালিয়ে যাওয়ার পথে লোকজনকে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় করছে।
ইরানের ভেতর দিয়ে এই পথ ধরে আফগানদের প্রথমে তুরস্ক এবং পরে সেখান থেকে ইউরোপে পাচার করা হচ্ছে কয়েক দশক ধরে।
আমি নিজেও এই পথ ধরে ১২ বছর আগে ইরান থেকে যুক্তরাজ্যে পালিয়ে গিয়েছিলাম যেখানে আমাকে থাকার (অ্যাসাইলাম) অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এই রুটটি এখন আগের চেয়েও আরও বেশি বিপদজনক হয়ে ওঠেছে।
যারা ইরান থেকে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে তুরস্কে যেতে চাইছেন, তাদের শুষ্ক ও পাহাড়ি এলাকার ভেতর দিয়ে যেতে হয়। এই পথে ছায়ার নিচে আশ্রয় নেওয়ার জন্য কোনো গাছপালাও নেই। ফলে ওই এলাকায় টহলরত নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের চোখ ফাঁকি দেওয়া কঠিন।
তালেবান বাহিনী ২০২১ সালের আগস্ট মাসে আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখলের পর হাজার হাজার আফগান দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছে। এই পথে আফগানদের পালিয়ে যাওয়ার ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় অপরাধী গ্রুপগুলো এটাকে অর্থ উপার্জনের সুযোগ হিসেবে দেখছে।