ছায়া-শীতল পথ, পাখির কলতান, জলরাশি, নিরিবিলি পরিবেশ— ভাবুন তো, ইট কংক্রিটের জঙ্গল ছেড়ে হঠাৎ এমন কোথাও গেলে কেমন লাগবে? শান্ত, স্নিগ্ধ পরিবেশ মনকে কীভাবে নাড়া দেবে।
রিসোর্টের নাম সূবর্ণভূমি। ঢাকা থেকে ৪৩ কিলোমিটার অদূরে মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার ইসমানী চরে এই রিসোর্ট। মেঘনা নদীর একেবারে কোল ঘেঁষেই গড়ে ওঠা সূবর্ণভূমি রিসোর্ট নদী পিপাসুদের কাছে অপূর্ব সৌন্দর্য নিয়ে ধরা দিতে বাধ্য। চারপাশের কোলাহল থেকে নিজেকে সরিয়ে নিভৃতে কেবল প্রকৃতি আর নদীর মাঝে কিছু সময় কাটাতে এই জায়গাটি অসাধারণ।
শনিবার (৭ ডিসেম্বর) আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করেছে সূবর্ণভূমি রিসোর্ট। এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানেও ছিল ভিন্ন ধাঁচের ছোঁয়া। চোখ ধাঁধানো আয়োজন নয়, বরং সাবলীল আনন্দ উপভোগকেই প্রাধান্য দেওয়া হয়েছিল।
সূবর্ণভূমি রিসোর্টের চেয়ারম্যান ও উদ্বোধনী আয়োজনের সভাপতি মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘বেশিরভাগ উদ্বোধনী অনুষ্ঠান করা হয় জনপ্রিয় অভিনয় শিল্পী, রাজনৈতিক বা ক্ষমতাবান ব্যক্তিদের দিয়ে। কিন্তু সূবর্ণভূমি রিসোর্টের উদ্বোধন করেছে সুবিধাবঞ্চিত একদল শিশু। কেননা এই রিসোর্ট শুধুমাত্র বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যেই তৈরি হয়নি, এর মুনাফার একটি অংশ সূবর্ণভূমি ফাউন্ডেশন পরিচালিত বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার জন্য ব্যয় হবে।’এই রিসোর্ট পরিচালনায় এলাকাবাসীর সহযোগিতা ও রিসোর্টে ঘুরতে আসা সকলের মতামত ও পরামর্শ আশা করেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
দিনটির মধ্যমণি এই শিশুদের আনন্দ দেখে আমার মতো অনেকেই মূহূর্তের জন্য হলেও শৈশবে ফিরে যেতে পারেন। ‘কোন দেশেতে তরুলতা/ সকল দেশের চাইতে শ্যামল/ কোন দেশেতে চলতে গেলেই/ দলতে হয় রে দুর্বা কোমল?’ কিংবা ‘ধনধান্য পুষ্প ভরা আমাদের এই বসুন্ধরা, তাহার মাঝে আছে দেশ এক সকল দেশের সেরা’— এই গানগুলো শিশুরা যখন সমস্বরে গাইছিল, তখন প্রচণ্ড আবেগে কী ব্যথায় কেবল শৈশবের দিনগুলোর জন্য হাহাকার হতেই পারে। তবে তাতে আনন্দ উপভোগে ভাটা পড়ে না একটুকুও।
খোলামেলা পরিবেশে গড়ে ওঠা এই রিসোর্টের সঙ্গে মেঘনা নদীর এক অপূর্ব মেলবন্ধন শান্তির পরশ বুলিয়ে দেবে নিশ্চিত। সকালের স্নিগ্ধতা, অলস দুপুর, বিকেলের নির্মল পরিবেশ আর গভীর রাতের নিস্তব্ধতা— সবকিছুই উপভোগ করার চমৎকার আয়োজন আছে এতে। ‘গোধুলী বেলা’, ‘মেঘ বালিকা’, ‘দিগন্ত ছোঁয়া’ ও ‘রোদেলা সারাদিন’— এই চারটি ডুপ্লেক্স কটেজ থেকে প্রকৃতিকে বিভিন্নভাবে দেখার সুযোগ মিলবে।
সূবর্ণভূমি ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে গড়ে ওঠা সূবর্ণভূমি রিসোর্টের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. শামীম ইমাম, পরিচালক নন্দিনী ইমাম, মো. জাহেদ হাসান ও মাইনুল ইসলাম, বিদ্যানন্দ স্কুলের শিক্ষক প্রতিনিধিসহ আরও অনেকে।
সূবর্ণভূমি রিসোর্টের একটি ব্যতিক্রমধর্মী উদ্যোগ হলো লাইব্রেরির ব্যবস্থা। বইপ্রেমীরা ঘুরতে এসেও আয়েশ করে বই পড়তে পারেন। সময় কাটানোর জন্য রয়েছে একটি থিয়েটার রুম। যেখানে ইচ্ছামতো নাটক, সিনেমা দেখার সুযোগ থাকছে।
রিসোর্টের ভেতরে ‘অরুন্ধতী’ ও ‘ধ্রুবতারা’ রেস্টুরেন্ট দু’টির খাবার বেশ মানসম্মত, যেখানে দুই শতাধিক মানুষের একসঙ্গে খাওয়ার ব্যবস্থা আছে। রয়েছে শিশু ও বড়দের জন্য আলাদা আলাদা সুইমিংপুলের ব্যবস্থা।
নিরিবিলি পরিবেশে করপোরেট অনুষ্ঠান বা সেমিনার করতে চাইলেও সূবর্ণভূমি রিসোর্ট সেরা জায়গাগুলোর মধ্যে একটি। এখানে ‘সপ্তর্ষি’ কনফারেন্স রুমে অন্তত ১০০ জন অনায়াসেই বসতে পারবেন।
সূবর্ণভূমি রিসোর্ট একেবারে শিশুদের মনের মতো করে বানানো। শিশুদের বাঁধভাঙা আনন্দই সে কথা জানান দেয়। খোলামেলা পরিবেশ, খেলার সরঞ্জাম, দোলনা, সুইমিং পুল— আর কী লাগে! শিশুদের প্রাণোচ্ছলতা সেদিন বড়দেরও মাতিয়ে রেখেছিল।
আজকাল শহরে বেড়ে ওঠা বাচ্চাদের খেলাধুলার জায়গাটুকু জোটে না। খেলার সময় খুঁজে পাওয়াও কঠিন। তাই ছুটির দিনে এমন একটি জায়গায় বাচ্চাদের খেলার সুযোগ করে দেওয়াই যায়।
সূবর্ণভূমি রিসোর্টে সারাদিনের জন্য প্যাকেজ ২৫০০ টাকা (জনপ্রতি)। রাতে থাকতে গেলে কটেজ ভাড়া ১০,০০০ টাকা (একরুম)। তবে নির্ধারিত মূল্যের ওপর ডিসকাউন্ট থাকে।
প্রকৃতি তার রূপ-রস-গন্ধ উজাড় করেই দেয় মানুষকে। নিঃশব্দে একদম নিজের মতো কিছু সময় উপভোগ করতে চাইলে মানুষ প্রকৃতির কাছে যায়। প্রকৃতি ও মানুষের সম্পর্কের উষ্ণতার প্রতীক হয়ে থাকে অনেক কিছুই। তেমনি একটি প্রতীক ‘সূবর্ণভূমি রিসোর্ট’।