ক্যাশলেস লেনদেন এবং আর্থিক অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে স্মার্ট করতে পারে সেন্ট্রাল ব্যাংক ডিজিটাল কারেন্সি (সিবিডিসি) সিস্টেম। এই সিস্টেমের মাধ্যমে রাজস্ব আয়ও বাড়ানো যেতে পারে। তাই ডিজিটাল অর্থনীতিতে রূপান্তর করতে সেন্ট্রাল ব্যাংক ডিজিটাল কারেন্সি (সিবিডিসি) সিস্টেম গ্রহণ করার সম্ভাবনা রয়েছে বাংলাদেশের।
সিবিডিসি নোট ইস্যুর করার খরচ কমানোর মাধ্যমে নগদ অর্থ ব্যবস্থাপনা করে থাকে বলে মত প্রকাশ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির (এমআইটি) গবেষক তাকাতোশি নাকামুরা।
রাজধানীর একটি হোটেলে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে জাপানী সিবিডিসি সিস্টেম কোম্পানি সাইফার কোরের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) তাকাতোশি নাকামুরা বলেন, ডিজিটাল মুদ্রা ডিজিটাল অর্থনীতির সম্প্রসারণ এবং কর আদায়ের হারকে বৃদ্ধি করতে সহায়তা করবে। এসময় উপস্থিত ছিলেন— জাপানের সাবেক উপ-অর্থমন্ত্রী মোটোইউকি ওদাচি এবং সাইফার কোর বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মেহেদুল ইসলাম।
সিবিডিসি সিস্টেম ক্রিপ্টোকারেন্সির মতো হলেও এসব মুদ্রার মূল্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক দ্বারা নির্ধারিত হয়ে থাকে উল্লেখ করে নাকামুরা বলেন, ডিজিটাল মুদ্রা ডিজিটাল অর্থনীতিকে সমর্থন করতে পারে। উদাহরণ হিসেবে তিনি ইন্দোনেশিয়ার শহরের বাইরের আর্থিক পরিষেবাগুলোতে ডিজিটাল মুদ্রার সুবিধাগুলো তুলে ধরেন।
নাকামুরা বলেন, ইন্দোনেশিয়া শত শত দ্বীপ রয়েছে শহর থেকে অনেক দূরে। সেখানে নগদ টাকা লেনদেনের জন্য কোনো অটোমেডে টেলার মেশিন (এটিএম) বুথ নেই। সিবিডিসি সিস্টেম শুধুমাত্র ইন্টারনেট সংযোগের মাধ্যমে দুর্গম জায়গাতেও আর্থিক সেবা পৌঁছাতে পারে এবং সেবা দিতে পারে।
সিবিডিসির নির্দেশিকায় অন্যান্য দেশের অর্থের নতুন ধরনকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সহযোগিতার সম্ভাব্য ক্ষেত্রগুলো নিয়ে একটি স্মার্ট অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে সিবিডিসি চালু করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনা করতে জাপানের একটি প্রতিনিধিদল ঢাকা সফরে রয়েছে।
তারা সিবিডিসি সিস্টেমের মাধ্যমে প্রযুক্তিগত সহযোগিতা বাড়ানোর জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের কতিপয় কর্মকর্তাদের সাথে দেখা করেছেন। জাপানি বিশেষজ্ঞ নাকামুরা আশা করেন, সিবিডিসি ইন্টারনেট অর্থনীতিকে সহজতর করে এবং রাজস্ব খাত থেকে রাজস্ব সংগ্রহ সম্প্রসারণের মাধ্যমে বাংলাদেশের উন্নয়ন যাত্রায় সহায়তা করবে।
তিনি বলেন, সিবিডিসির মাধ্যমে আর্থিক অন্তর্ভুক্তি অর্জন করা সম্ভব যেখানে সব নাগরিক উপকৃত হতে পারবেন। বর্তমানে এশিয়ার অন্যতম দেশ, নেপাল, সিবিডিসির মাধ্যমে আর্থিক অন্তর্ভুক্তির উল্লেখযোগ্য সুবিধাগুলো ভোগ করছে এই বিশেষজ্ঞের মতে।
এসময় জাপানের সাবেক উপ-অর্থমন্ত্রী এবং সাইফার কোরের চিফ অপারেটিং অফিসার মোটোইউকি ওদাচি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে সমর্থন করার জন্য ডিজিটাল মুদ্রা প্রবর্তনের উপর জোর দিয়ে বলে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। ছয় বছর আগে আমি প্রথম ঢাকায় এসেছিলাম। বাংলাদেশের মেগা অবকাঠামো দেখে আমি বিস্মিত। একটি স্মার্ট অর্থনীতিতে অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নকে সমর্থন করার জন্য নগদ লেনদেনের ঝামেলা এড়াতে সিবিডিসি গ্রহণ করা উচিত। সার্টিফাইড পাবলিক অ্যাকাউন্ট্যান্ট।
ওদাচি বলেন, বৈশ্বিক জিডিপির ৯৫ শতাংশের বেশি প্রতিনিধিত্বকারী ১১৪টি দেশ সিবিডিসি নেওয়ার সম্ভাব্যতা যাচাই করছে। আটলান্টিক কাউন্সিলের মতে ২০২০ সালের মে মাসে ৩৫টি দেশ সিবিডিসি বিবেচনায় নিয়েছে এবং ৬০টি দেশ সিবিডিসির খোঁজ করেছে। ২০২৩ সালে, ২০টিরও বেশি দেশ সিবিডিসিকে পাইলট হিসেবে ব্যবহার করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। অস্ট্রেলিয়া, থাইল্যান্ড, ব্রাজিল, ভারত, দক্ষিণ কোরিয়া এবং রাশিয়া পাইলট শুরু করতে চায়।