সিংগাপুরের সাত চল্লিশ বছর বয়ষ্ক মিলিয়নিয়ার একজন একটি বইতে লিখেছেন, ‘আমাকে প্রায়ই বিদেশ যেতে হয় এবং আমি ফ্লাই করি ইকোনমি ক্লাশে। একজন আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, এত ধনী হওয়ার পরও আপনি কেন ইকোনমি ক্লাশে ভ্রমন করেন? আমি উত্তর দেই, এ জন্যই তো আমি সিংগাপুরের সেরা ধনী।’
আরেকটি অতি মূল্যবান কথা তিনি বলেছেন, তাহলো, ‘বিলাসিতার আসলে শেষ নেই। কোনো বিলাসিতাই আপনার তৃপ্তি শেষ করতে পারবে না।যেমন, একটি ‘গুচি’ ব্যাগ কিনলেন, কেনা অব্দি আপনার আনন্দ। এরপর কিন্তু আপনার আরেকটি দামি ব্যাগ পছন্দ হবে, আপনি তাও কিনবেন, তারপর আরেকটা– এটা আসলে নেভার এন্ডিং প্রসেস।’
আমি এ লেখা লিখছি, নিজের জন্য। আমরা মধ্যবিত্তরা যখন একটু বিত্তের মুখ দেখি, তখন সেটা দিয়ে জীবনের অনেক অপূর্ণ ইচ্ছে পূরণ করে ফেলতে চাই। আমার মধ্যেও এ সমস্যা আছে।
আমরা মধ্যবিত্ত পরিবারে বড় হই। তারপর কষ্ট করে মোটামুটি দাঁড়াই। তখন মনে হয়, জীবন তো একটাই; অতএব, মধ্যবিত্তের সীমাবদ্ধতায় যা কিনতে পারিনি, সেগুলো এবার কেনা যাক। এটা শুধু আমার নয়, অনেকের সমস্যা।
এখন মনে হচ্ছে, এটা হচ্ছে জীবনের বড় ভুলের একটি। কারণ কোনো ‘কেনাই’ আসলে কারো চূড়ান্ত তৃপ্তি আনতে পারবে না। ‘গুচি’ জুতোর পর আমাদের ‘আরমানি’ কিনতে ইচ্ছে করবে। আরমানির পর ‘বারবারি’। আই ফোন ১২ কিনলে পরের বছর আই ফোন ১৩ কিনতে চাইব।
এভাবেই আসলে ধ্বংস হয় নিজের আর্থিক সংগতি। ধ্বংস হয় আত্মার শুদ্ধতা। এগুলো কেনার টাকা জোগাড় করার জন্য অশুদ্ধ দৌড় শুরু হয়, যার কোন ফিনিশিং পয়েন্ট নেই। অথচ একটি বিলাসের খরচ যদি আমি একজন বিপন্ন শিক্ষার্থীর পেছনে খরচ করতাম- সেটা হয়তো শত বছর অবদান রাখত। একজন রোগীর পেছনে খরচ করতাম, তিনি হয় তো তাঁর বাচ্চাগুলোকে গুছিয়ে যাওয়ার জন্য আর ক’দিন সময় পেতেন। অথচ, আমি ফালতু জামা, জুতো, কলম, ঘড়ি, চশমা এগুলোর পেছনে ছুটেছি।
আসলে কোনো টাকাই নিজের নয়, তা সমাজের টাকা। তাই পাই-পয়সা খরচের সময়ও আমাদের ভাবা উচিত, এ পয়সাটি কীভাবে খরচ করলে শুধু আমি না, আমরা সবাই উপকৃত হবো।
তিনি আমাকে নিজের কাছে নিজেকে ‘ভিলেন’ বানিয়ে দিলেন!
Like this:
Like Loading...