শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৩:৫২ অপরাহ্ন

কানাডা দেশটা কেমন

  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ৬ জুন, ২০২৩

কানাডা একটি চমৎকার দেশ। সবকিছুই সুন্দর এই দেশের। এই দেশ নিয়ে আমার কোনো অভিযোগ নাই বরং অনেক মুগ্ধতা আছে। বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে যেমন যুদ্ধকবলিত এলাকা বাদ দিলে বাংলাদেশ বা পৃথিবীর অন্য যে কোনো জায়গা থেকে যারাই এই দেশে আসেন তারা প্রায় প্রত্যেকে স্ব স্ব ক্ষেত্রে যোগ্যব্যাক্তি। সবাই প্রায় উচ্চ শিক্ষিত। এর বাইরে এ দেশে আসার বিশেষ সুযোগ নাই। টরন্টো তথা পুরো কানাডা জুড়ে অসংখ্য প্রতিভাবান বাংলাদেশী আছেন যাদের সবাইকে আমি চিনি না। যখন চেনা জানা হয় তখন অবাক হই, মুগ্ধ হই।

কানাডা এই কাজটি করে। তারা বেছে বেছে ইমিগ্রান্ট নিয়ে আসে। যেনো তাদের সন্তান বা পরবর্তী প্রজন্ম মূল ধারায় অবদান রাখতে পারে। কানাডা ইমিগ্রান্টদের দেশ। বাংলাদেশীরা এমনিতেই প্রতিভাবান। আমাদের সন্তানেরা এখন ডমিনেটিং পর্যায়ে চলে যাচ্ছে ক্রমশঃ। বিখ্যাত সব বিশ্ববিদ্যালয়ে তারা পড়ছে। পড়া শেষ করে বড় বড় চাকরি করছে। একশ, দুইশ হাজার ডলার বেতনের চাকরি করছে। গাড়ি বাড়ি হয়ে যাচ্ছে। এমনকি আমেরিকাও তাদের লুফে নিচ্ছে কানাডার চেয়ে ডাবল সুযোগ সুবিধা দিয়ে।

এখানকার নতুন প্রজন্ম ফেরেশতা টাইপ মানুষ হচ্ছে। সৎ, পরিশ্রমী এবং দেশপ্রেমিক। কোনো বিষয় নিয়ে নেগেটিভ কথা তাদের মুখ থেকে উচ্চারিত হয় না। কোনো অভিযোগ করে না। তারা মিথ্যা বলে না, জানেও না। স্কুল থেকেই নৈতিকতা শেখানো হয়। সেলফ ইন্ডিপেনডেন্ট হতে শেখানো হয়। তিন বছরের একটা শিশুও জানে কিভাবে ডেবিট মেশিন চালাতে হয়। ম্যানারস জানে। এরা কাউকে হিংসা করে না। হিপ্রোক্রসি নাই। সরল এবং বন্ধুবৎসল। যা কিছু সমস্যা আমাদের প্রথম প্রজন্মের মধ্যে। অন্যের কুৎসা করা, জেলাসি, কারো ভাল দেখলে গা জ্বলা এসব আমাদের মধ্যেই বিরাজমান। এই স্বভাব আমরা সাথে করেই নিয়ে এসেছি। সবকিছু বদলালেও স্বভাব সহজে বদলায় না। তা স্বত্ত্বেও জীবন অনেক সুন্দর, বেশিরভাগ মানুষ সুন্দর মনের, তারা গুনিকে সম্মান করতে জানে।

সুশৃঙ্খল, হিউম্যান রাইটস, আর্থিক স্বাচ্ছন্দ, চিকিৎসা, লিভিং স্ট্যান্ডার্ড, এনভায়রনমেন্ট সবই চমৎকার। নতুন প্রজন্ম দুর্দান্ত হিউম্যানবিয়িং হিসাবে বেড়ে উঠছে। এদের জন্য গর্ব করা যায়। শুধু কানাডা বলেই নয় এই চিত্র ইউরোপ, আমেরিকা অস্ট্রিলিয়া, সুইডেন সর্বত্র্য। সব দেশেই আমার বন্ধুরা আছে। তাদের কাছ থেকে এসব জানতে পারি। এখন সব খবরই জানা যায়। কানাডা খুবই নিরাপদ দেশ। তাইতো দেশ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার হয়ে আসছে এই দেশে। সবই সাদা হয়ে আসছে। সব শ্রেনীর লোকই আছে এই দলে। পাচারকারীরা রাজকীয় জীবন যাপন করে এই দেশে। আমরা যারা ইমিগ্রান্ট হয়ে এসেছি আমাদের কাজ করতে হয়, তারা বসে বসে খায়। দামী বাড়িতে থাকে, দামী গাড়িতে চড়ে। এদেশে কিছু সংখ্যক কাজ না করেও আরাম আয়েসে আছে। কায়দা কানুনগুলো জেনে নিলেই হয়। যে যেভাবে জীবন বেছে নেয়। পুরোটাই নিৰ্ভৱ করে ব্যাক্তির মানসিকতার উপর।

প্রলম্বিত উইন্টারকে মেনে নিতে পারলে খুবই ভাল দেশ কানাডা। এখন সামার এসেছে। এই সময়টা দারুণ সুন্দর কানাডা। চারিদিকে সবুজের সমারোহ। মন ভাল করে দেয়। অনেকেই এই দেশে আসতে চায়। প্রতিদিন অনেক ম্যাসেজ আসে আমার কাছে। কানাডার ইমিগ্রেশনের নিয়ম কানুন সম্পর্কে জানতে চায়। আমি যতটা সম্ভব তথ্য দিয়ে সাহায্য করি। তথ্য প্রযুক্তির যুগে এসব জানা কঠিন কাজ না। কানাডার সরকারি ওয়েবসাইটে গেলেই সব তথ্য পাওয়া যায়। এছাড়া টরন্টো বা অন্যান্য জায়গায় অনেক ইমিগ্রেশন কনসালটেন্সি আছে। ঢাকায়ও আছে। তবে অনেক প্রতারনার খবরও পাওয়া যায়। যারাই কানাডা আসতে চান জেনে বুঝে, ভাল ল’ইয়ারের কাছে যাবেন। নিজেরাও ট্রাই করতে পারেন। অনেকে অবশ্য কানাডা নিয়ে বা বিদেশ নিয়ে খুবই নগেটিভ ধারণা পোষন করেন। দিল্লিকা লাড্ডুর সাথে তুলনা করেন। আমি বলব দিল্লিকা লাড্ডু না খেয়ে পস্তানোর চেয়ে খেয়ে পস্তানো ভাল। বিদেশে আসলে আপনার চিন্তার প্রসরতা বাড়বে, পৃথিবী উন্মুক্ত হবে, সৰ্বোপরি আপনি নিজের দেশকে সহযোগিতা করতে পারবেন। রেমিটেন্সের টাকায় অৰ্থনীতির চাকা সচল থাকছে। বিদেশে দেশের মুখ উজ্জল করতে পারবেন। বাংলাদেশকে এখন সবাই চেনে। গুরুত্ব দেয়। আমাদের একজন বঙ্গবন্ধু জন্মেছিলেন বলেই আমরা সবুজ পাসপোর্ট পেয়েছি। দেশ বিদেশে ছড়িয়ে পড়তে পেরেছি। আমাদের সন্তানরা সুন্দর জীবন পেয়েছে। তা না হলে আমাদের কোনো আত্মপরিচয় থাকত না। এই কথাগুলো আমি অগেও বলেছি।

আমার কানাডা আসার গল্প অনেকবার করেছি। এই মাসে বিশ বছর পূর্ন হবে আমার কানাডার জীবন। দুই দশক! সময় কত দ্রুত যায়। মনে আছে এইতো সেদিন ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের ফ্লাইট থেকে আমরা চারজন পিয়ারসন এয়ারপোর্টে নেমেছিলাম। এখন আমি দেশে ফিরে যেতে চাই। বরিশালে ফিরতে চাই। এ কথা অনেকবার লেখা হয়েছে। তাতে দুই ধরণের প্রতিক্রিয়া পাই আমি। একদল বলে চলে আসো। আর এক দল বলে বিদেশ হচ্ছে ওয়ানওয়ে টিকিট। একবার গেলে আর ফেরা যায় না। অনেকেই কিন্তু ফিরে গেছেন। আবার অনেকেই বিদেশে আসতে চান না। বিদেশের প্রতি তাদের কোনো মোহ নাই। দুই দলের প্রতিই আমি শ্রদ্ধা পোষন করি। দুই পক্ষের কথাই সত্যি। ফিরে যাওয়ার জন্য মনের জোর লাগে। আমিও ফিরতে চাই কিন্তু পারি না। এর কারণ হচ্ছে আমার পরিবার। আমার সন্তানদের রেখে আমি কিছুতেই থাকতে পারব না। ওরা ছাড়া আমার কেউ নাইও।

নিজের দেশকে আমি ভালবাসি। দেশের জন্য, মানুষের জন্য আমি কিছু করার তাগিদ অনুভব করি। কানাডার প্রতিও আমার দ্বায়িত্ব আছে। আমি আমার সন্তানদের বলেছি এই দেশ আমাদের অনেক দিয়েছে। শিক্ষা দিয়েছে, চিকিৎসা দিয়েছে, আশ্রয় দিয়েছে। আমি যদি নাও পারি তোমরা এই দেশের সেবা করবে। আমার সন্তানরা সবসময় আমাকে উৎসাহিত করে। বলে তোমার যেখানে মন চায় সেখানে থাক। জেসমিনকে বলেছি চলো আমরা ফিরে যাই। ভাগাভাগি করে থাকি।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com