শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ১১:১৭ পূর্বাহ্ন

মাত্র একটি বাক্যে জীবনের সফলতাকে প্রকাশ করেছেন বিলিয়নিয়ার ওয়ারেন বাফেট

  • আপডেট সময় বুধবার, ২৪ মে, ২০২৩

ব্যবসা ও সম্পদ বিষয়ক নানা গুরুত্বপূর্ণ উপদেশ দেওয়ার জন্য বিশেষ খ্যাতি রয়েছে আমেরিকান বিজনেস ম্যাগনেট ও মানবসেবী ওয়ারেন বাফেটের। ফোর্বস রিয়েল-টাইম বিলিয়নিয়ার তালিকা অনুযায়ী, বাফেট এই মুহূর্তে বিশ্বের পঞ্চম ধনী এবং তিনি বার্কশায়ার হ্যাথাওয়ের চেয়ারম্যান ও সিইও। তবে ব্যবসায়িক উপদেশের পাশাপাশি জীবন ও সত্যিকার সফলতা কী- সেসব বিষয়ে গভীর অন্তর্দৃষ্টি রয়েছে তার এবং বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে তা তরুণ সমাজের সামনে তুলে ধরেছেন। ইনক ম্যাগাজিনের এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, বাফেটের তেমনই একটি এক লাইনের উপদেশ যা আমাদেরকে সফলতার সত্যিকার মানে বুঝতে সাহায্য করবে।

ওয়ারেন বাফেটের বলা কিছু বিখ্যাত উক্তির মধ্যে একটিতে ফুটে উঠেছে একজন ব্যক্তির জীবনে ‘ভালোবাসা’র গুরুত্ব ও প্রভাব কতখানি। বাফেট বলেছেন, “আপনি যখন আমার বয়সে পৌঁছাবেন, তখন জীবনে সফলতার পরিমাপ করবেন এভাবে যে,  কতজন মানুষ আপনাকে ভালোবাসবে বলে আপনি চেয়েছিলেন এবং সত্যিকার অর্থে কতজন আপনাকে ভালোবাসে।”

ভালোবাসার মধ্য দিয়ে সফলতা পরিমাপ

ওয়ারেন বাফেটের কথাগুলো আমাদেরকে আবারও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় স্মরণ করিয়ে দেয়- এই পার্থিব জীবনে কোন জিনিসটি সবচেয়ে দরকারি যা পেশাদার অর্জন ও বস্তুগত সম্পদ প্রাপ্তিকে সত্যিকার অর্থেই মহিমান্বিত করবে? বাফেট এক্ষেত্রে জোর দিয়ে বলেন, একজন ব্যক্তি সারাজীবনে যত সম্পদের মালিক হোক বা যত প্রশংসাই পাক না কেন, আশেপাশের মানুষের ভালোবাসা ও স্নেহ না পেলে সেই সব অর্জনই নিস্ফল।

বস্তুগত সাফল্য বা উন্নতি হয়তো আমাদের অনেক খ্যাতি ও পরিচিতি এনে দেবে, কিন্তু মানুষের সাথে যদি গভীর সম্পর্ক ও যোগাযোগ না থাকে, তাহলে যে শূন্যতা রয়ে যায় তা কোনোকিছু দিয়েই পূরণ করা সম্ভব না।

‘সফলতা কেনা যায়’- এই প্রচলিত ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করেছেন ওয়ারেন বাফেট। টাকা দিয়ে অনেক বিলাসপণ্য এবং সাময়িক আনন্দ কেনা সম্ভব হলেও, টাকা দিয়ে ভালোবাসা কেনা যায় না। বাফেট বলেন, “ভালোবাসা বিষয়টার একটা সমস্যা হলো, আপনি এটা কিনতে পারবেন না। আপনি হয়তো টাকা দিয়ে বাইরে থেকে কিছু কিনে আনন্দ পেতে পারেন, হয়তো টাকা দিয়ে নিজের প্রশংসা করার জন্য ডিনারের আয়োজনও করাতে পারেন। কিন্তু ভালোবাসা পাওয়ার একটাই উপায়- ভালোবাসার যোগ্য হওয়া।”

ভালোবাসার সবচেয়ে বিশুদ্ধ রূপ

ভালোবাসা ও প্রশংসা পেতে চাওয়া মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি। তবে ওয়ারেন বাফেট সতর্ক করে বলেন, আর্থিক লেনদেনের বা বস্তুগত কোনো সুবিধা দেওয়ার বিনিময়ে যে ভালোবাসা পাওয়া যায় সেই মিথ্যা জালে যেন কেউ জড়িয়ে না পড়ে। টাকা সব সমস্যা সমাধান করতে পারে, এমনকি ভালোবাসার সাধনাও- এমন ভ্রান্ত ধারণা অনেকের মনেই দৃঢ়ভাবে রয়ে যায়। কিন্তু তা সত্যি নয়।

বাফেট বলেন, “আপনার প্রচুর টাকা থাকাও একটা বিরক্তিকর ব্যাপার হতে পারে। সবসময় আপনার মনে হবে, আমি তো একটা চেক লিখে দিলেই পারি: আমি এক মিলিয়ন ডলার দিয়ে ভালোবাসা কিনে নিবো। কিন্তু না, বিষয়টা এভাবে কাজ করে না।”

মানুষের সাথে মানুষের প্রকৃত যোগাযোগ ও উদারতার মাধ্যমে গড়ে ওঠা সম্পর্কের গভীরতা ও অকৃত্রিমতা কোনো সম্পদের বিনিময়ে পাওয়া সম্ভব না। সে কারণেই বাফেট প্রকৃত সুখ খোঁজার এমন এক উপায় বলেছেন যা প্রচলিত ধ্যান-ধারণাকে অস্বীকার করে। বাফেটের ভাষ্যে, “আপনি মানুষকে যত বেশি ভালোবাসবেন, নিজেও তত বেশি ভালোবাসা পাবেন।”

বাড়িতে, কর্মক্ষেত্রে কিংবা সমাজে- সর্বত্রই অন্যদের প্রতি ভালোবাসা ও দয়া দেখানোর মাধ্যমে আমরা এমন একটা পরিবেশ তৈরি করতে পারি যেখানে ভালোবাসার স্ফূরণ ঘটবে। নিঃশর্তভাবে ভালোবেসে যাওয়া আশেপাশের সবার জীবনে এক ধরনের প্রভাব ফেলবে যা ঘুরেফিরে শেষ পর্যন্ত আমাদের জীবনকেই সমৃদ্ধ করবে।

আমাদের যত বয়স বাড়তে থাকে, ফুলেফেঁপে ওঠা ব্যাংক-ব্যালেন্স বা খ্যাতি আমাদের সন্তুষ্টি দেয় না; বরং কতজন মানুষের হৃদয়ে জায়গা করে নিতে পেরেছি এবং কতজন আমাদের সত্যিই ভালোবাসে, সেটাই সবচেয়ে বড় হয়ে দাঁড়ায়। অন্তত ওয়ারেন বাফেট এমনটাই মনে করেন।

এই মার্কিন বিলিয়নিয়ারের প্রজ্ঞা ও তার উক্তি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, শুধুমাত্র বাইরের অর্জন-অর্থবিত্ত দিয়ে সফলতা পরিমাপ করা উচিত নয়। বরং আমাদের সম্পর্কগুলোর গভীরতা এবং অন্যদের জীবনে কী প্রভাব ফেলতে পেরেছি সেটাই মূখ্য। আশেপাশের মানুষের ভালোবাসার বন্ধনে থেকে জীবন কাটানোর মাধ্যমে সত্যিকারের সফলতা ও পূর্ণতা অনুভব করা সম্ভব।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com