পৃথিবীর ২২তম ধনী রাষ্ট্র, ৪০-৫০ বছর আগেও যেটি ছিল অনুন্নত তৃতীয় বিশ্বের একটি দেশ। ১৯৬৫ সালে স্বাধীনতাপ্রাপ্ত সেই অগোছালো দেশটি আজ বিশ্ববাসীর এক দারুণ আকর্ষণের নাম। বলছিলাম বর্তমান বিশ্বের অন্যতম ধনী রাষ্ট্র সিঙ্গাপুরের কথা। দেশটির সাফল্যের পেছনে রয়েছে সুশাসন সাথে অর্থনৈতিক সাফল্য। না, দেশটিতে কোনও প্রাকৃতিক সম্পদ নেই, কিন্তু তাদের পর্যটনশিল্প বারবার প্রশংসা যেমন কুড়িয়েছে তেমনই এনে দিয়েছে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধ।
আধুনিক স্থাপত্যশৈলী আর অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ছোট্ট একটি দ্বীপ সিঙ্গাপুর। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাস্তা, ঝামেলাবিহীন যাতায়াত, কম খরচে ভ্রমণ পর্যটকদের আকর্ষণ যেন বাড়িয়ে দিয়েছে কয়েকগুণ। বিশ্বের অন্যতম বিলাসবহুল দেশটিতে ঘুরতে গেলে হাতে বেশ কিছুদিন সময় নিয়ে যাওয়াই ভালো।
সিঙ্গাপুর নদীর মুখে প্রায় ২ হাজার মিটারেরও বেশি বর্গক্ষেত্র বিস্তৃত পার্কটির নাম মারলিয়ন। মারলিয়ন পার্ক হলো সিঙ্গাপুরের অন্যতম একটি পর্যটন স্পট। প্রতিদিন হাজার হাজার বিদেশি এই পার্ক পরিদর্শন করেন। মারলিয়ন পার্ক সংক্ষেপে যাকে বলে মারলিন পার্ক।
মারলিন বা সিংহ-মৎস্য হচ্ছে সিঙ্গাপুরীদের গর্বের প্রতীক, বীরত্বের প্রতীক। কথিত আছে, বহু পূর্বে সিঙ্গাপুর যখন তেমাসেক বা সমুদ্রনগরী নামে পরিচিত ছিল, তখন প্রচণ্ড এক সামুদ্রিক ঝড় ওঠে দ্বীপে। আতঙ্কিত অধিবাসীরা নিজেদের সঁপে দেন ঈশ্বরের হাতে। ঠিক সেই মুহূর্তে সমুদ্র থেকে সিংহ-মৎস্য আকৃতির এক জন্তু এসে ঝড়ের বিরুদ্ধে লড়াই করে বাঁচিয়ে দেয় অধিবাসীদের।
আর তখন থেকেই মারলিন নামের সিংহ-মৎস্য সিঙ্গাপুরীদের গর্ব ও বীরত্বের প্রতীক। আধুনিক সিঙ্গাপুরের প্রতীক হচ্ছে মারলায়ন অর্থাৎ মাছ বা মারমেইড আর সিংহের মিলিত মূর্তিরূপ। মূর্তিটি প্রায় ৯ মিটার উঁচু, ওজন প্রায় ৭০ টন।
এই মারলায়নের চেহারা মূলত একটি বিরাট পানির ফোয়ারা। মেরিনা বের একপাশে মারলায়ন পার্ক, ওপর পাড়ে মেরিনা বে স্যান্ডস্ হোটেল ও শপিং সেন্টার। এ এক এলাহি কাণ্ড। না দেখলে যা বোঝানো কঠিন। তবে মেরিনা বে স্যান্ডস হোটেল তৈরির আগে পর্যটকরা মারলায়ন পার্কের ফোয়ারার সামনে ছবি তুলেই তাদের সিঙ্গাপুরের স্মৃতি সংরক্ষণ করতো।
মারলিনের মূর্তি ম্যারিনা বে-এর মারলিয়ন পার্কে অবস্থিত। সিংহ-মৎস্য তার মুখ থেকে অনবরত পানি বের হচ্ছে। আর সেখানে ছবি তুলতে প্রতিদিন ভিড় জমায় হাজারো মানুষ। বিশাল এলাকাজুড়ে পার্কটির একদিক থেকে আরেক দিক যেতেই কেটে যায় একবেলা। পার্কটির চারপাশেজুড়ে নানা স্থাপত্য বারবার আপনার চোখকে ধাঁধিয়ে দিবে।
চারিদিকেই বিস্ময়কর দৃশ্য। সোজা রাস্তা চলে গেছে ভীষণ উঁচু বিল্ডিং গুচ্ছের দিকে। আমাদের ডানে প্রায় শতবর্ষ পুরনো দৈত্যাকার বিল্ডিংটা হোটেল ফুলারটন বে। আধুনিকতার মাঝে যেন ঐতিহ্যের ছোয়া। তবে, দেখতে মোটেই বেমানান নয়। আর বামে বিরাট মেরিনা বে উপসাগর। তার চারপাশে যেন মনি মাণিক্যের মতো ছড়িয়ে আছে সিঙ্গাপুরের নাম করা স্থাপনাগুলো।
তিনটি ৬০ তালা বিল্ডিংয়ের মাথায় জাহাজ আকৃতির ছাদ দিয়ে সংযুক্ত মেরিনা বে স্যান্ডস্ হোটেলটিই সব মনি মাণিক্যের মধ্যে যেন কহিনুর হিরা, সেভাবেই নিজের উপস্থিতি জানান দিচ্ছিল। মেরিনা বে স্যান্ডস হোটেলের সাথে সাথে চোখের সামনে মাথা তুলে দাড়িয়ে ছিল সিঙ্গাপুর ফলাইয়ার (Singapore Flyer) নাগরদোলা।
অসংখ্য ৫ তারকা হোটেলের বড় বড় বিল্ডিং ছড়িয়ে ছিল উপসাগরের একটি পাড় ধরে। মারলায়ন পার্কের ঝরনা দেখতে দেখতেই চারিদিকের এসব জিনিস দেখা হয়ে যাচ্ছিলো। পুরো উপসাগরজুড়ে নানা রকম ছোট-বড় নৌযানে পর্যটকদের ভ্রমণ করা দেখতেও মজা লাগছিল। ঝরনাকে পিছে রেখে পর্যটকদের ছবি তোলার তোড়জোড়ও দেখার মতো।
এখানে এলে চোখ আটকে যায় একটি ৫৪ তলা ভবনের দিকে। ওটা একটা জাদুঘর। ওই ভাবনের আকৃতি খুবই সুন্দর। দূর থেকে দেখে মনে হয়, ভবনের মাথায় বুঝি একটি বড়ো আকৃতির নৌকা বসিয়ে রাখা হয়েছে। ওখানে প্রবেশ করতে ১৫০ ডলার দিয়ে টিকেট কাটতে হয় বলে অনেকেই ভেতরে যাওয়ার সাহস করেননা।
মারলিন পার্কে কী করবেন
১. মারলিনে ছবি তুলুন
দিনের বেলা জায়গাটি খুব সামান্য ভিড় হতে পারে তবে আপনি তখনও দুর্দান্ত ছবি তুলতে পারেন। তবে রাতের বেলা, শহরের জাদুকরি পরিবেশের সৌন্দর্য মিস করবেননা কোনোভাবেই। মারলিন এবং শহরের কিছু মনোরম দৃশ্য ফ্রেমবন্দী করতে ভুলবেননা একদমই যে
২. পার্কে অবসর যাবেন
মারলিন পার্কটির সৌন্দর্য পুরোপুরি উপভোগ করার জন্য রাতেরবেলা একদম উপযুক্ত সময়। নদীর ধারে শীতল বাতাস এবং রোমান্টিক পরিবেশটি সিঙ্গাপুর ভ্রমণের সার্থকতা বাড়িয়ে দিবে কয়েকগুণ।
৩. মেরিনা বেতে আলো এবং জলের শো দেখুন
মেরিনা স্যান্ডস বেতে প্রতি রাতে জল শো দেখার সুযোগটি হাতছাড়া করবেন না। শোটি বেশ জনপ্রিয়। তাই বেশ কয়েকটি মন্ত্রমুগ্ধ আলোর শো ভিডিও আপনার ক্যামেরাটি প্রস্তুত সর্বদা প্রস্তুত রাখুন।
কীভাবে মারলিন পার্কে যাবেন
আপনি চাঙ্গি পৌঁছানোর পরে, এমআরটি পূর্ব পশ্চিম লাইনের রাফেলস প্লেস স্টেশনে যান। সেখানে থেকে বি থেকে প্রস্থান করুন এবং ইউনাইটেড বিদেশী ব্যাংক প্লাজায় যান। প্লাজার মাঝখানে ফুলারটন হোটেল অবস্থিত। আর এর পেছনেই মারলিন।
ঐশ্বর্য মীম