মেজবান বাংলাদেশের বৃহত্তর চট্টগ্রাম এলাকার বহুমাত্রিক ঐতিহ্যবাহী একটি ভোজের অনুষ্ঠান। মেজবান শব্দটি এসেছে মূলত ফার্সি শব্দ থেকে। মেজবান অর্থ অতিথি আপ্যায়নকারী আর মেজবানি হচ্ছে আতিথেয়তা। চট্টগ্রামের স্থানীয় লোকেরা আঞ্চলিক ভাষায় মেজবানকে মেজ্জান বলে থাকেন। প্রকৃতপক্ষে, মেজবানের শুরুর ইতিহাস জানা না গেলেও প্রায় ৫০ বছর ধরে এখানকার মানুষ মেজবান খাবার আয়োজন করে আসছেন।
যেকোনো ধরণের অনুষ্ঠানে মেজবান খাবার আয়োজন করা হয়ে থাকে। আর এই ধরণের আয়জনে আমন্ত্রণ করা হয় সকল শ্রেণী পেশার মানুষকে। মেজবান এর আসল বিশেষত্ব হল এর খাবার। অতুলনীয় এই খাবারের জন্যই এর প্রচার আজ সারা দেশ জুড়ে। বিশেষ এক কায়দাই পিতলের বড় হাড়িতে রান্না হয় এই মেজবানি খবার।
এখন এই মজাদার মেজবান খাওয়ার জন্য আর মেজবানের দাওয়াত এর জন্য অপেক্ষা করার প্রয়োজন নেই। কারণ চট্টগ্রামেই গড়ে উঠেছে ঐতিহ্যবাহী খাবারের এক রেস্তোরাঁ। হ্যাঁ, এই রেস্তোরাঁই পাওয়া যাবে মেজবানি খাবার। রেস্তোরাঁটির নাম “মেজ্জান হাইলে আইয়ুন”। ইতিমধ্যেই রেস্তোরাঁটি ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।
এখানে পাওয়া যাচ্ছে সেই ঐতিহ্যবাহী খাবার মেজবান। এখানে সাদা ভাতের সঙ্গে তিন বা চার ধরণের তরকারি পরিবেশন করা হয়। যেমন: গরুর মাংস, গরুর নলা দিয়ে কম ঝাল মসলা ও টক সহযোগে রান্না করা শুরুয়া যা নলা কাঁজি নামে পরিচিত এবং বুটের ডাল দিয়ে হাঁড় ও চর্বি যুক্ত হালকা ঝালযুক্ত তরকারি রান্না করা হয়। মেজবানি খাবারের ঘ্রাণই একে সবার চেয়ে আলাদা করে তোলে।
ডেজার্ট হিসেবে এখানে পাবেন বোরহানি আর ফিরনী। তাছাড়া ও থাকছে বিয়ে বাড়ির খাবার মেন্যু। “মেজ্জান হাইলে আইয়ুন” রেস্তোরাঁটিতে খাবার পরিবেশন করা হয় মাটির সানকিতে এতে করে ঐতিহ্যর ধারা বজায় থাকে। তাছাড়া এখানে খাবার পরিবেশন করতে বেশি সময় ও নেয়া হয় না।
রেস্তোরাঁটির একটি বিশেষত্ব হলো- এর দেয়ালে আঞ্চলিক ভাষাই বিভিন্ন খাবারের নাম লেখা রয়েছে; যা থেকে তাদের খাবার মেন্যু সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। আর এখানে খাবার খেতে হলে আপনাকে বেশি টাকাও খরচ করতে হবে না। মেজবানি খাবারের স্বাদ যেন সবাই যেকোনো সময় পেতে পারেন সেই লক্ষেই কাজ করে যাচ্ছে এই রেস্তোরাঁটি। চট্টগ্রামের ফজলুল কাদের রোডে রেস্তোরাঁটির অবস্থান। শিগগিরই ঢাকায়ও এর শাখা খোলা হবে বলে জানা গিয়েছে।