শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৩৯ অপরাহ্ন

নিউইয়র্কে দুইদিনের রবীন্দ্রউৎসবে সর্বত্রই রবীন্দ্রনাথের ছায়া আর পদধ্বনি

  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ১৬ মে, ২০২৩

গত সপ্তাহান্তে নিউইয়র্কের মূলধারার ভেন্যু জ্যামাইকা পারফর্মিং আর্ট সেন্টারে দুই দিনব্যাপি যে বর্ণাঢ্য রবীন্দ্রউৎসব হয়ে গেল তার সাফল্যের দুটি বিষয়কে চিহ্নিত করা যায়। এই আয়োজন এতটাই বহুমাত্রিক বিস্তৃত ছিল যে সেখানে রবীন্দ্রনাথকে নানাভাবে উন্মোচনের চেষ্টা প্রতীয়মান হয়েছে আর রবীন্দ্রনাথের সার্বিক সৃষ্টিকর্মকে এতটাই বাক্সময় করে তোলার চেষ্টা হয়েছে যে মনে হয়েছে যেন রবীন্দ্রনাথ সেখানে স্বয়ং উপস্থিত আছেন। সেটা বাস্তবে সম্ভব নয়, কিন্তু এই উদ্যোগ সেই ধারণাকে দর্শক শ্রোতা ও অংশগ্রহণকারীদের চেতনায় গেঁথে দিতে পেরেছেন। রবীন্দ্রউৎসবের বিরল সাফল্য এখানেই।

বিখ্যাত টাইমস স্কয়ারে পহেলা বৈশাখ উদযাপনের মধ্য দিয়ে এ বছর থেকে নিউইয়র্কে বাঙালি সংস্কৃতি চর্চার যে জোয়ার শুরু হয়েছে, তা এখন দৃশ্যমান। সেই খবর আমেরিকা ছাড়িয়ে বাংলাদেশে তো বটেই বিশ্বজুড়েই বাঙালিদের কাছে পৌঁছে গেছে। এই উদযাপনের প্রধান অনুষঙ্গ হয়ে এসেছে নিউইয়র্কের প্রায় সব শিল্পীকে একই ব্যানারে নিয়ে এসে শতকণ্ঠে গান গাওয়ানো। টাইমস স্কয়ার থেকে যার শুরু, এ পর্যন্ত তা রবীন্দ্রউৎসবে এসে শেষ হয়েছে। এই শতকণ্ঠের গানের নেতৃত্ব দিয়েছেন সংগীতশিল্পী ও শিক্ষক মহীতোষ তালুকদার তাপস রোড আইল্যান্ড থেকে এসে।

গত শনিবার রবীন্দ্রউৎসব সকাল ১১টায় উদ্বোধন হয়ে শেষ হয়েছে রাত ১১টায় আর রবিবারও একইভাবে শুরু  ও শেষ হয়েছে। ২৪ ঘন্টায় পরিবেশিত হয়েছে ৫৪টি অনুষ্ঠান। আর সব মিলিয়ে অংশ নিয়েছে তিন শতাধিক মানুষ। এদের বয়স ৮ থেকে ৮৮ বছর।

অনুষ্ঠানটিকে উজ্জ্বল করেছেন রবীন্দ্রসংগীতের অবিসম্বাদিত শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা, বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ড. পবিত্র সরকার, বাংলা কথাসাহিত্যের দুই নক্ষত্র ড. জ্যোতিপ্রকাশ দত্ত ও ড. পূরবী বসু, অধ্যাপক মতলুব আলী, চন্দ্রিল ভট্টাচার্য প্রমুখ। নিজে অসুস্থতার কারণে সশরীরে উপস্থিত থাকতে না পারলেও কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ড. গায়ত্রী চক্রবর্তী স্পিভাক ভিডিও বার্তায় রবীন্দ্রউৎসবের সর্বৈব সাফল্য কামনা করেন।

জ্যামাইকা পারফর্মিং আর্টস সেন্টার জেপ্যাকের ফেন্সের বাইরে নিউইয়র্কের আর্টিস্ট ফোরামের শিল্পীদের আঁকা রবীন্দ্রনাথ বিষয়ক চিত্র প্রদর্শনী দিয়ে এই উৎসবের শুরু। জেপ্যাক ভবনের বাইরে রবীন্দ্রনাথের একটি প্রমাণ সাইজের ভাস্কর্য যেন রবীন্দ্রনাথ স্বয়ং স্বাগত জানাচ্ছেন সকলকে এই উৎসবে। ভিতরে ঢুকে বেসমেন্টে ওবায়দুল্লাহ মামুনের তোলা শান্তি নিকেতনের আলোকচিত্র ও রবীন্দ্রনাথের আঁকা চিত্রকর্মের আলোকচিত্র প্রদর্শনী, লবিতে জোড়াসাঁকো, শিলাইদহ, শান্তি নিকেতনের লোকেশন ব্যাকগ্রাউন্ডে সুপার ইম্পোজ করা ছবি তোলার আয়োজন। মিলনায়তনে একটির পর একটি অনুষ্ঠান বিরতিহীনভাবে  সকাল ১১টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত।

পুরো অনুষ্ঠানটি প্রায় একক নিয়ন্ত্রণে রেখে অত্যন্ত সুচারুভাবে পরিচালনা ও সমন্বয় করেন হাসানুজ্জামান সাকী। তাঁকে সার্বিক সহায়তা করেন চার তৎপর সমন্বয়কারী গোপাল সান্যাল, স্বীকৃতি বড়–য়া, আবদুল হামিদ ও সুখেন গোমেজ। উপস্থাপনায় ছিলেন নিউইয়র্কের প্রায় সকল উপস্থাপক। তবে উপস্থাপনার পাশাপাশি মঞ্চে সমন্বয় করেন সাদিয়া খন্দকার। দুদিনের অনুষ্ঠানে যন্ত্রসংগীতে সংগত করেন তপন মোদক, শহীদ উদ্দিন, সজীব মোদক, জহির উদ্দিন লিটন ও আহমেদ টিটো।

দুইদিনের অনুষ্ঠানযজ্ঞে ৫৪টি আয়োজনের মধ্যে দশটিকে বিশেষভাবে চিহ্নিত করা যায়। যেমন শতকণ্ঠে রবীন্দ্রসংগীত, রাবীন্দ্রিক ফ্যাশন বসনে ভূষণে রবির চয়নে, চন্দ্রিল ভট্টাচার্যের স্মারক বক্তব্য, শিকাগোতে রবীন্দ্রনাথের বাস করা বাড়ির মালিকদের সংবর্ধনা, তথ্যচিত্র স্টাডি রুম, সুরের ধারার সংগীত পরিবেশনা, গার্গী মুখার্জীর মৃণাল’স লেটার (একক অভিনয়), সঙ্গীত পরিষদেও রবীন্দ্রসংগীতে শাস্ত্রীয় ধারা, বিপার নৃত্যনাট্য তাসের দেশ ও অমিয় বন্দ্যোপাধ্যায় এবং সেলিমা আশরাফকে আজীবন সম্মাননা।

গত বছর লালন উৎসবের আয়োজনের মধ্য দিয়ে যেমন নিউইয়র্কে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজনে নতুন ধারার সৃষ্টি হয়, এ বছর রবীন্দ্র উৎসব তারই ধারাবাহিকতায় আরেক ধাপ সাফল্যের সিঁড়ি অতিক্রম করল। লালন ও রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে প্রবাসে সাধারণ মানুষের এই আগ্রহ দেখে ড. পবিত্র সরকার ও রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাসহ অনেকেই অভিভূত হয়েছেন। আর দর্শকরা প্রাণভরে উপভোগ করেছেন অনুষ্ঠানমালা। দুদিনের অনুষ্ঠানে কোনো অভিযোগ শোনা যায়নি।

আয়োজকদের পক্ষ থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তি এখানে পত্রস্থ হলোঃ

হাজারো মানুষের উপস্থিতি আর উৎসবমুখর পরিবেশের মধ্য দিয়ে নিউইয়র্কে শেষ হয়েছে দুদিনব্যাপি উত্তর আমেরিকা রবীন্দ্র উৎসব। রবীন্দ্র সম্মিলন পরিষদ ইউএসএ আয়োজিত প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত এ উৎসবের সহযোগী যুক্তরাষ্ট্রের ভারতীয় বাঙালিদের সংগঠন বঙ্গ সংস্কৃতি সংঘ-সিএবি ও পশ্চিম বাংলার বাংলা ওয়ার্ল্ডওয়াইড।

শনিবার উৎসবের উদ্বোধন করেন কিংবদন্তী রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী ড. রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে ছিলেন কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক গায়ত্রী চক্রবর্তী স্পিভাক। শারীরিক অসুস্থতার কারণে অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে না পারলেও এক ভিডিও বার্তায় তিনি বিদেশে পড়াশোনা করা নতুন প্রজন্মের কাছে আরও বেশি বেশি রবীন্দ্রনাথকে তুলে ধরার আহবান জানিয়েছেন।

রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা বলেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে নিয়ে এমন আয়োজন সত্যিই অতুলনীয়। এই অনুষ্ঠান থেকে আমাদের সবার শিক্ষা গ্রহণ করা উচিত। তিনি বলেন, মানুষ যত রবীন্দ্রনাথকে জীবনে ধারণ করবে ততই বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে।

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ড. পবিত্র সরকার, বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল ডা. মো: মনিরুল ইসলাম, ভারতের কনসাল জেনারেল রনধীর জয়সুয়াল, বিশ্বখ্যাত বাঙালি বক্তা চন্দ্রিল ভট্টাচার্য, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক আহকাম উল্লাহ, টিভি ব্যক্তিত্ব ও বিতার্কিক হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ, ডা. জিয়াউদ্দিন আহমেদ, হাসান ফেরদৌস, রণদেব সরকার, রাহাত হোসেন নাজু, এটর্নি মঈন চৌধুরী ও উৎসবের আহবায়ক হাসানুজ্জামান সাকী।

উদ্বোধনী এ পর্বে আয়োজক কমিটির নেতৃবৃন্দের মধ্যে ছিলেন সমন্বয়কারী গোপাল স্যানাল, স্বীকৃতি বড়–য়া, আবদুল হামিদ, সুখেন গমেজ, অনুষ্ঠান সহযোগীদের মধ্যে ড. সাহানা ভট্টাচার্য্য, শুভ রায়, শুভদীপ ঘোষ, কৃশ ঘোষ বাপ্পা, শিল্প নির্দেশনায় জাহেদ শরীফ ও মিডিয়া ব্যবস্থাপনায় পিনাকী তালুকদার।

এ সময় উদ্বোধনী সংগীত শতকন্ঠে রবীন্দ্রনাথ পরিবেশিত হয়। বিশেষ উপস্থিতিতে ছিলেন রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা, পরিচালনা করেন মহীতোষ তালুকদার তাপস। নীলা জেরীন ডান্স একাডেমির শিল্পীরা উদ্বোধনী নৃত্য পরিবেশন করেন।

এর আগে সকাল ১১টা থেকে রবীন্দ্র সাহিত্য সম্মেলন শুরু হয়। উৎসবের প্রথম পর্বটি ছিল লেখক, কবি, সাহিত্যিকদের অংশগ্রহণে মুখর। দুদিনে প্রায় একশ লেখক অংশ নেন। সাহিত্য সম্মেলনের উদ্বোধন করেন একুশে পদকপ্রাপ্ত কথাসাহিত্যিক ড. জ্যোতিপ্রকাশ দত্ত। উপস্থিত ছিলেন বাংলা একাডেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত ড. পূরবী বসু ও লেখিকা আলোলিকা মুখোপাধ্যায়। নিউইয়র্ক সাহিত্য একাডেমীর পরিচালক মোশাররফ হোসেনের সঞ্চালনায় শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন সাপ্তাহিক ঠিকানার প্রধান সম্পাদক মুহম্মদ ফজলুর রহমান।

নিউইয়র্কে বাঙালিদের জন্য শনি ও রবিবার দুটি দিন ছিল অবিস্মরণীয়। এমন দৃশ্য কেউ কোনোদিন দেখেনি নিউইয়র্কে। জ্যামাইকা পারফরমিং আর্টস সেন্টারের ভেতর ও বাইরে মানুষের ভিড় সামলাতে আয়োজকদের হিমশিম খেতে হয়। হাজার হাজার মানুষের ঢলে আয়োজকরা ভেন্যুর তিনটি স্থানে অনুষ্ঠানটিকে ভাগ করতে বাধ্য হন। এমনকি অনুষ্ঠান স্থলের বাইরে উন্মুক্ত প্রাঙ্গণে ‘শতকণ্ঠে রবীন্দ্রনাথ’ শীর্ষক সমাপনী পর্বটি স্থানান্তর করেন। ফলে বাইরে অপেক্ষায় থাকা হাজারো মানুষের ঢল কিছুটা হলেও অনুষ্ঠান উপভোগ করার সুযোগ পায়।

সকাল থেকেই উন্মুক্ত প্রাঙ্গণে চলে ‘শিল্পীর চোখে রবীন্দ্রনাথ’ শীর্ষক চিত্রপ্রদর্শনী। শিশুরা আঁকে রবীন্দ্রনাথকে। এ পর্বের উদ্বোধন করেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন চিত্রশিল্পী খুরশিদ আলম সেলিম। এসময় বাংলাদেশী আমেরিকান আর্টিস্ট ফোরামের সভাপতি আর্থার আজাদ ও সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ চৌধুরী বক্তব্য রাখেন।

ঠিক একই সময় জেপ্যাকের বেসমেন্টে শুরু হয় ড. ওবায়দুল্লাহ মামুনের আলোকচিত্র প্রদর্শনী। প্রদর্শনীতে ওহাইয়ো থেকে আগত সিলভিয়া পান্ডিতের তিনটি চিত্র স্থান পায়। প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের সাবেক ডিন অধ্যাপক মতলুব আলী। তিনটি প্রদর্শনী ঘুরে দেখেন শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা, বাংলাদেশ ও ভারতের কনসাল জেনারেল।

উৎসবে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে সত্যজিৎ রায়ের তথ্যচিত্র, রবীন্দ্রনাথের চিত্রকলার ওপর সনাৎ মহান্তের পরিচালনায় নির্মিত তথ্যচিত্র ‘রুপের অতীত রূপ’ ও সুমন মুখোপাধ্যায় পরিচালিত চলচ্চিত্র ‘শেষের কবিতা’ প্রদর্শিত হয়।

প্রথম দিন শনিবার উদ্বোধনের পরপরই ছিল আলোচনা আমার রবীন্দ্রনাথ। এরপর রবীন্দ্রনাথের বিজ্ঞান চিন্তা নিয়ে বলেন ড. আশরাফ আহমেদ, রবীন্দ্রনাথের গানে বাউল প্রভাব নিয়ে বলেন মাহমুদুল হক দুলু, গীতাঞ্জলি ও নোবেল পুরস্কার সম্পর্কে বলেন সউদ চৌধুরী, আমেরিকায় রবীন্দ্রনাথ বিষয়ে বলেন আবদুল্লাহ জাহিদ এবং রবীন্দ্রনাথের চিঠিপত্র পর্ব পরিচালনা করেন মনিজা রহমান। আলোচক ছিলেন মঞ্জুর আহমেদ। কবিতা পাঠের আসর পরিচালনা করেন মনজুর কাদের।

উৎসবে হাসানুজ্জামান সাকীর সম্পাদনায় স্মারক গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচনে অতিথি ছিলেন মোর্শেদ আলম, ড. সিদ্দিকুর রহমান, রেখা আহমেদ, কৌশিক আহমেদ, জাফর ফেরদৌস, শিতাংশু গুহ, হোসনে আরা ও খাইরুল ইসলাম পাখি। ভিনভাষীর চর্চায় রবীন্দ্রনাথ পরিবেশন করে শ্রী চিন্ময় (নিউইয়র্ক)। প্রথম দিন দুটি মঞ্চনাটক শিরীন বকুল ও ড. নজরুল ইসলাম অভিনীত ও শিল্পাঙ্গন পরিবেশিত ‘রক্তকরবী’ এবং গোলাম সারওয়ার হারুন নির্দেশিত ও ঢাকা ড্রামা পরিবেশিত ‘মিছে কোলাহল’ নাটক মঞ্চস্থ হয়।

সন্ধ্যায় প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের মেলবন্ধন শীর্ষক একটি অনুষ্ঠান উপস্থাপন করেন অভিনয়শিল্পী লুতফুন নাহার লতা ও মার্ক ওয়াইনবার্গ দম্পতি। ভার্জিনিয়া থেকে আগত আশীফ এন্তাজ রবির গ্রন্থনায় শিল্পী দিনার মণি ও নাজিয়া নওশাদ শাওন পরিবেশন করেন গীতিকথা ওরা সন্ধ্যার মেঘমালা। অনুপ দাস ডান্স একাডেমি-আড্ডা পরিবেশন করে ভানুসিংহের পদাবলী। ভার্জিনিয়ার তা থৈ ও ধ্রæপদ পরিবেশন করে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ফিকশন-নন ফিকশন প্রেমের আখ্যানÑকার মিলন চাও বিরহী।

নৃত্যনাট্য তাসের দেশ (ইংরেজি) পরিবেশন করে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পারফরমিং আর্টস-বিপা। প্রথম দিনে রাতে একক সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী শ্রেয়া গুহঠাকুরতা।

পরদিন রবিবার উৎসবের দ্বিতীয় দিনে সাহিত্য সম্মেলনের মাধ্যমে রবীন্দ্র উৎসব শুরু হয়। এতে আমার রবীন্দ্রনাথ শীর্ষক আলোচনায় অংশ নেন ড. জ্যোতিপ্রকাশ দত্ত, সৈয়দ মোহাম্মদ উল্লাহ্, তমিজউদ্দীন লোদী ও ফকির ইলিয়াস। সঞ্চালনা করেন হাসান ফেরদৌস।

কবিতা, শ্রæতি নাটক শীর্ষক অনুষ্ঠানে ছিলেন আলোলিকা মুখোপাধ্যায়, অবন্তিকা মুখার্জী, সঞ্চালনা করেন সুদীপ্তা চট্টোপাধ্যায়।

আবীর আলমগীরের সঞ্চালনায় নিউইয়র্ক ও নিউজার্সীর শিল্পীরা আবৃত্তি পরিবেশন করেন। এদিন দুটি তথ্যচিত্র বরেণ্য সাংবাদিক সৈয়দ মোহাম্মদউল্লাহর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বইয়ের বিরল সংগ্রহশালা নিয়ে ‘স্টাডি রুম’ এবং ডা. জিয়াউদ্দীন আহমেদের রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সংক্ষিপ্ত জীবনীঃ প্রবাসে রবীন্দ্র চর্চা শীর্ষক ডকুমেন্টারি প্রদর্শিত হয়।

এরপর চারুশিল্পীরা মঞ্চে আসেন এবং মতলুব আলীর সদ্য প্রকাশিত গ্রন্থ কবির ছবি ও ছবির কবি-এর মোড়ক উন্মোচন হয়। এসময় বক্তব্য রাখেন সাপ্তাহিক বাঙালী সম্পাদক কৌশিক আহমেদ ও শিল্পী কায়সার কামাল। রবীন্দ্রনাথঃ তর্কে বিতর্কে শীর্ষক আলোচনায় অংশ নেন ড. পবিত্র সরকার, মনজুর আহমদ, ড. পূরবী বসু ও আবেদীন কাদের। সঞ্চালনা করেন হাসান ফেরদৌস।

এদিন নিউজার্সীর এপিকস এক্টরস ওয়ার্কশপের পরিবেশনায় রবি ঠাকুরের স্ত্রীর পত্র গল্প অবলম্বনে ইংরেজি মঞ্চনাটক মৃণাল’স লেটার মঞ্চস্থ হয়। পরিচালনা ও অভিনয়ে ছিলেন গার্গী মুখার্জী।

রবীন্দ্র সংগীতে শাস্ত্রীয় ধারা শীর্ষক অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন সংগীত পরিষদের কাবেরী দাশ। ‘ওই মহামানব আসে’ সংগীতানুষ্ঠান পরিবেশন করে প্রকৃতি নিউইয়র্ক। রবীন্দ্র সংগীতে কীর্তন ধারা পরিবেশন করে ড. সাহানা ভট্টাচার্য্য (মেরিল্যান্ড) ও ড. উদিতা মুখার্জী (উইসকনসিন)।

বিকেলে আমেরিকায় রবীন্দ্রনাথের বসবাস করা বাড়ির ক্রেতা বাঙালি দম্পতি কাজল মুখোপাধ্যায় ও মৌসুমী দত্ত রায়ের সংবর্ধনায় উপস্থিত ছিলেন প্রবীর রায়, মিলন আওন, বিশ্বজিৎ চক্রবর্তী, নজরুল মিন্টো, এ্যানি ফেরদৌস, কাজী আজিজ মামুন, তাপস সান্যাল, পার্থ চক্রবর্তী ও পার্থ সারথী মুখোপাধ্যায়।

রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যার উপস্থিতিতে তাঁর প্রতিষ্ঠিত সুরের ধারা (নিউইয়র্ক) পরিবেশন করে মনোজ্ঞ সংগীতানুষ্ঠান। পরিচালনা করেন বিদিশা দেওয়ানজী (কানেকটিকাট)।

এন জে বুটিকের পরিবেশনায় ও ইন্টারলিংক নেটের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত হয় ভিন্নধর্মী রাবীন্দ্রিক ফ্যাশন শো- বসনে ভ‚ষণে রবির চয়নে। এতে পোশাক ডিজাইন করেন নুসরাত এলিন এবং পরিচালনায় ছিলেন নজরুল কবির। আমিই রবীন্দ্রনাথের শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি শীর্ষক আরও একটি ভিন্নধর্মী পরিবেশনা প্রীতি-বিতর্ক অনুষ্ঠিত হয়। রবি ঠাকুরের অমিত-লাবণ্য, মহেন্দ্র-বিনোদিনী ও রমেশ-হেমনলিনী চরিত্রে বিতর্কে অংশ নেন যথাক্রমে এটর্নি রাজু মহাজন (মেরিল্যান্ড) ও সামসুন নাহার নূপুর (নিউইয়র্ক), মোহিত প্রধান (টেক্সাস) ও সাঈদা সাথী (ভার্জিনিয়া) এবং মোস্তাফিজ খান (টেক্সাস) ও ড. তারান্নুম শায়লা জামান প্রত্যাশা (নিউইয়র্ক)। সঞ্চালনায় ছিলেন বাংলাদেশ থেকে আগত টিভি ব্যক্তিত্ব ও বিতার্কিক হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ।

আন্তর্জাতিক রবীন্দ্রনাথ নিয়ে আলোয় ভুবন ভরা পরিবেশন করে সৃষ্টি (নিউজার্সী)। পরিচালনায় ছিলেন সুবর্ণা খান, বিচিত্রা, তমা ও অহনা। গীতিনাট্য চিত্রাঙ্গদা পরিবেশন করেন অহনা ডায়েস ও তার দল।

রাতে সমাপনী অনুষ্ঠানে দেড় শতাধিক শিল্পী জেপ্যাকের বাইরের সিঁড়িতে ‘শতকণ্ঠে রবীন্দ্রনাথ’ পরিবেশন করেন। শতকণ্ঠ পরিচালনা করেন মহীতোষ তালুকদার। শিশুশিল্পী মানহা সকলকে মুগ্ধ করেন। আর ভেন্যুর অভ্যন্তরে বিশেষ সমাপনী নৃত্য পরিবেশন করে নৃত্যাঞ্জলি। পরিচালনা করেন চন্দ্রা ব্যানার্জী।

উৎসবে দেবব্রত বিশ্বাসের ছাত্র অমিয় বন্দ্যোপাধ্যায় (ভারত) ও বিপার অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সেলিমা আশরাফকে (বাংলাদেশ) আজীবন সম্মাননা তুলে দেন ড. পবিত্র সরকার, ডা. জিয়াউদ্দীন আহমেদ ও রাহাত হোসেন নাজু। এসময় টিবিএন টোয়ান্টিফোরের সিইও পুলক ভুঁইয়া ও কানাডার দেশে-বিদেশে পত্রিকার প্রধান সম্পাদক নজরুল মিন্টো উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে সন্ধ্যায় স্মারক বক্তৃতা দেন চন্দ্রিল ভট্টাচার্য। চল্লিশ মিনিটের টানা বক্তৃতার সময় পিনপতন নিরবতা নেমে আসে অনুষ্ঠান স্থলে। সবশেষ রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে শেষ হয় দুদিনের অনুষ্ঠান।

উৎসবে ভারত, বাংলাদেশ, ব্রিটেন, জার্মানী, মেক্সিকো ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রের অন্তত ২৫টি স্টেট থেকে কবি, লেখক, সাহিত্যিক, শিল্পী, কলাকুশলী ও রবীন্দ্র অনুরাগীরা অংশ নেন।

দুইদিনের অনুষ্ঠানের প্রাইম টাইমে রবীন্দ্রউৎসবের পৃষ্ঠপোষক ও ডোনারদের পরিচয় করিয়ে দেয়া হয়। তারা হলেন প্রধান পৃষ্ঠপোষক সৈয়দ জাকি হোসেন, ডায়মন্ড পৃষ্ঠপোষক রাহাত হোসেন নাজু, গোল্ড পৃষ্ঠপোষক মো. খলিলুর রহমান, প্রিমিয়াম ডোনার এটর্নি মঈন চৌধুরী, গিয়াস আহমেদ, মোহাম্মদ এন. মজুমদার, আকাশ রহমান, নূরুল আমিন বাবু, শাহনেওয়াজ, জোসেফ বিকাশ ডিকস্টা, ফাহাদ সোলায়মান, মামুন কাজী আজিজ, পারভীন পাটোয়ারি, কবীর পাটোয়ারি এবং বেলায়েত হোসেন বেলাল।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com