সিলেটে ঘুরতে আসার প্ল্যান করছেন? কোথায় কোথায় ঘুরবেন, তার একটা খসড়া তৈরি করছেন। আপনাকে তখনই মাথায় নিতে হবে প্রকৃতির স্বর্গ বিছানাকান্দি ও পান্থমাইয়ের কথা। পর্যটন সম্প্রসারণের এ সময়ে আলোচিত নামগুলোর অন্যতম সিলেটের এ দুটি স্থান। একই রুটে যাতায়াতের কারণে দিনের দিন শেষ করতে হবে এ দুটি স্পট। কাছাকাছি নৌকা ভ্রমণের সুযোগে বিছানাকান্দি যাওয়ার আগে পান্থমাই ঝরনা দেখে আসাটা বেশ বুদ্ধিমানের কাজ। সব মিলিয়ে এ দুটি জায়গায় একদিনে ভ্রমণ করতে পারবেন সহজেই।
বিছানাকান্দি যাওয়ার আগেই আপনি যাবেন পান্থমাই ঝর্রনায়। পান্থমাই ঝরনা ভারতে হলেও এর সৌন্দর্য পুরোটাই বাংলাদেশ থেকে দেখা যায়। ভারতীয়দের এ সৌন্দর্য দেখতে হলে ভিসা নিয়ে বাংলাদেশে আসতে হবে। ওখানে গেলে আপনার মনে হবে, যাক বাবা, পান্থমাই জলপ্রপাত তোমাকে ছুঁতে না পারলেও তোমার অসম্ভব সৌন্দর্য দেখে আমি অভিভূত। আমাদের দেশের ঝর্ণাগুলো মূলত ওপর থেকে নিচের দিকে প্রবাহিত হলেও এ ঝরনার বিশেষ বৈশিষ্ট্য এটা পাহাড়ি ঢল বেয়ে পাথরের মধ্য দিয়ে সজোরে প্রবাহিত হয়, যা আপনাকে এক উদ্দাম নৃত্য দেখাবে।
বেশ গর্জন করতে থাকবে। আর টানতে থাকবে আপনার মন। কিন্তু একে ছুঁয়ে দেখার মতো সাধ্য আপনার নেই। তবে গড়িয়ে পড়া পানিতে গা ভিজিয়ে কিছুটা তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলতে পারেন। এখানেই সার্থকতা। সবুজে ঘেরা গ্রামের মধ্যে এ আমাদের এক অহংকার বলতেই পারেন। পান্থমাই গ্রামের চারপাশটা খুব চমৎকার প্রকৃতি দিয়ে ঘেরা। যেন সৌন্দর্যের আধার। রয়েছে বড় একটি খেলার মাঠ। বলা হয়ে থাকে, পান্থমাই বাংলাদেশের সবচেয়ে সুন্দর গ্রামগুলোর একটা। আপনার কাছেও গ্রামটা অসম্ভব সুন্দর লাগবে। মেঘালয় পাহাড়ের বুকে হেলান দিয়ে থাকা পান্থমাই গ্রাম বর্ষার রূপ আর সৌন্দর্যে অনন্যসাধারণ। এ ঝরনার পানি পুরোটাই প্রবাহিত হয় বাংলাদেশে। এর থেকে গড়িয়ে যাওয়া পানিতেই তৈরি হয়েছে ছোট নদী। স্থানীয়রা এটাকে ছড়া বলে থাকে। আর পান্থমাই জলপ্রপাত এ দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন বলেই এটাকে ফাটা ছড়া বা ঝরনা নামে চেনে।
বিছানাকান্দি
পান্থমাই ভ্রমণ শেষে আপনার এবারের গন্তব্য বিছানাকান্দি। প্রকৃতির রাজকন্যা বিছানাকান্দির দিকে নৌকা যতই এগোতে থাকবে, ততই চারপাশের সৌন্দর্যটা যেন উপচে পড়বে আপনার ওপর। মুগ্ধতা ততটাই বেড়ে যাবে। এ মুহূর্তগুলো পুরো ভ্রমণটাকে আরো স্মরণীয় করে রাখবে। একটু দূরের দুই পাশে মেঘে ঢাকা মেঘালয় পাহাড় যেন স্বাগত জানাবে আপনাকে। অবাক বিস্ময়ে বিছানাকান্দির রূপ দেখতে দেখতে এগোতে থাকবেন মূল স্পটের দিকে। গিয়ে এবার জলকেলিতে মেতে ওঠার পালা।
বিছানাকান্দিতে রয়েছে ছোট-বড় অগণিত পাথরের সমারোহ। চারপাশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে অজস্র পাথর, দেখে যেন মনে হয় পুরো এলাকাটাই পাথরের বিছানা। পিয়াইন নদীর অগণিত পাথরের মাঝে আপনাকে হাঁটতে হবে সাবধানে পা ফেলে। একটু অসাবধানতার ফলে যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। পানির গভীরতা কম হলেও পাথরের মাঝে আপনার ভ্রমণকে করবে আরো রোমাঞ্চিত। একটু পরপর বিজিবি সদস্যদের সতর্কবাণী আপনাকে এনে দেবে আরো থ্রিলার।
জলপাথরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মাঝে নিজের একটা ছবি হলেও ফ্রেমবন্দি করে রাখতে ব্যস্ত হবেন। ওপরে নীল আকাশ ঠিকরে পড়েছে জলে। জল হয়েছে নীলাভ। ডানে-বাঁয়ে সামনে মেঘালয়ের উঁচু পাহাড়। পাহাড়ে হেলান দিয়ে সাদা মেঘ। মাঝে ঝরনার বর্ষণধারা। দৃষ্টির শেষ সীমানা পর্যন্ত শুধু পাথর আর পাহাড়। এ দৃশ্য দেখে নিজেকে সামলানো যে বড় কঠিন! দীর্ঘ সময় জলপাথরের বিছানায় শুয়ে-বসে গোসল করার পর একসময় বুঝতে পারবেন, এবার ফিরতে হবে। তখন কেবল মন খারাপের পালা। যখন ফিরে আসবেন, তখন পেছন থেকে সীমান্তের দিগন্ত ছোঁয়া মেঘালয় পাহাড় হাতছানি দিয়ে ডাকবে আর বলবে, আরো কিছুক্ষণ থেকে যাও। সময় পেলে ঘুরে আসতে পারেন এই পর্যটন স্পট থেকে। এখানকার নয়নাভিরাম প্রকৃতি আপনাকে নিরাশ করবে না ।
যাতায়াত, থাকা-খাওয়া
রাজধানী ঢাকাসহ দেশের যেকোনো জেলা থেকে সর্বপ্রথম আপনাকে আসতে হবে সিলেট শহরে। এখানে পর্যটকের থাকার জন্য অনেক হোটেল-মোটেল রয়েছে। ৩০০ থেকে শুরু করে ছয় হাজার টাকা পর্যন্ত রুম ভাড়া পাওয়া যায় সিলেটে। নিরাপত্তাব্যবস্থাও বেশ ভালো। বিছানাকান্দি যেতে হলে সর্বপ্রথম আপনাকে নগরীর আম্বরখানা পয়েন্ট যেতে হবে। সেখানে বিমানবন্দর রোড দিকে সিএনজিযোগে ধরতে হবে বিছানাকান্দি আর পান্থমাইয়ের পথ। সিএনজি হাদারপার বাজার পর্যন্ত রিজার্ভ করে গেলে ভালো হয়।
পাঁচজন মিলে ৪০০ টাকায় সাধারণত ভাড়া নেওয়া হয়। তবে এ লোকাল গেলে ভাড়া জনপ্রতি ১০০ টাকা। হাদারপার থেকে নৌকাযোগে বিছানাকান্দি ও পান্থমাই একসঙ্গে ঘুরতে ভাড়া গুনতে হবে এক হাজার ৫০০ থেকে দুই হাজার টাকা। দুটি স্পটে একসঙ্গে গেলেই ভালো হয়। নৌকা ভাড়া ঠিক করার সময় আপনাকে একটু চালাকির পরিচয় দিতে হবে। তা না হলে অতিরিক্ত ভাড়া চেয়ে বসতে পারে। সচরাচর সিএনজিচালিত অটোরিকশা বিছানাকান্দি যাওয়ার অন্যতম বাহন হলেও নিজস্ব ছোট বাহনগুলো ব্যবহার করা যেতে পারে। রাস্তা কিছুটা খারাপ থাকায় সাবধানে যেতে হবে। বিছানাকান্দি যেতে হয় সিলেটের আম্বরখানা পয়েন্ট হয়ে এয়ারপোর্ট রোড দিয়ে যেতে হবে। অথবা সারিঘাট হয়ে সিলেট-জাফলং সড়ক ধরেও যেতে পারেন হাদারপার বাজার পর্যন্ত।
এখানে থাকা-খাওয়ার তেমন ভালো ব্যবস্থা নেই। সিলেটে থেকেই সময় করে যেতে হবে বিছানাকান্দি আর পান্থমাই। যাওয়া সময় সিলেট থেকে খাওয়া নিয়ে যেতে পারেন। ওখানে একটা বাজার থাকলেও দুপুরে খাওয়ার তেমন ভালো ব্যবস্থা নেই। টুকটাক নাশতা সারতে পারেন। আর কোনোমতে পেট ভরাতে চাইলে স্থানীয়দের রান্না করা রেস্টুরেন্টগুলোতে ঢুঁ মারতে পারেন।