মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:৫০ পূর্বাহ্ন

মধুচন্দ্রিমায় দম্পতিদের অন্যতম পছন্দ কোলকাতার দীঘা সমুদ্র সৈকত

  • আপডেট সময় বুধবার, ৩ মে, ২০২৩

সোনালী সৈকত নামে আখ্যায়িত কোলকাতার অসাধারণ দীঘা সমুদ্র সৈকত। সৈকতটিকে সোনালী সৈকত বলা হয় এর সোনালী রঙের বালু এবং মনোমুগ্ধকর দৃশ্যপটের জন্য। মূলত এই জায়গাটি তৈরি হয়েছে লক্ষাধিক বছর পূর্বের বালুর পাহাড় থেকে যা কিনা এটিকে আরও সুন্দর গঠন দিয়েছে।

বর্তমানে এই জায়গাটির বেশিরভাগ ক্যাসুরিয়ানা উদ্ভিদ দিয়ে পরিবেষ্টিত। পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম সমুদ্র ভ্রমণ কেন্দ্র দীঘা সমুদ্র সৈকত। ৭ কিলোমিটার লম্বা এই সমুদ্রতট কোলকাতা থেকে ১৮৭ কিলোমিটার দূরে মেদিনীপুর জেলায় অবস্থিত। পূর্বে এটি বেরকুল নামে পরিচিত ছিল। এই সৈকতটি ১,৮০০ শতকে ব্রিটিশরা আবিষ্কার করেছিল

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর দীঘা সমুদ্র সৈকতের এক পাশ দিয়ে দেখা যায় অসাধারণ ঝাউবন আর অন্যদিকে সমুদ্রের মুক্ত হাওয়া এবং গর্জনের ডাক। সমুদ্র তটে দাঁড়িয়ে এক অপার্থিব অনুভূতিতে মন ছুঁয়ে যায়। দিগন্ত বিস্তৃত সমুদ্র যেন হাতছানি দিয়ে ডাকতে থাকে। দীঘা সমুদ্র সৈকত বেশি পরিচিত কারণ এটি পৃথিবীর অন্যতম প্রশস্ত সমুদ্র সৈকত। পশ্চিমবঙ্গের সৌন্দর্যের মাত্রা দীঘা সমুদ্র সৈকত আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।

শান্ত ঢেউয়ের কারণে এখানে সহজেই সাঁতার কাটা যায় এবং চলাচল করা যায়।  সৈকত ঘুরে বেড়ানোর জন্য মোটর চালিত নৌকা ভাড়া করার সর্বোত্তম। এর মনোমুগ্ধকর দৃশ্যপটের  জন্য একে বাংলার প্রথম সেনানায়ক একে ‘পূর্বের উজ্জ্বল’ নামে আখ্যায়িত করেছিলেন। ভ্রমণপিয়াসীদের জন্য এটি একটি যথাযথ সমুদ্র সৈকত। ফটোগ্রাফি করতে চাইলে এবং সামুদ্রিক খাবার খেতে চাইলে দীঘার তুলনা নেই। দীঘায় মূলত দুটি সমুদ্র সৈকত রয়েছে। একটি পুরনো সমুদ্র সৈকত এবং অপরটি নতুন সমুদ্র সৈকত। পুরাতন এবং নতুন দীঘা দুটির মধ্যে আলাদা বৈশিষ্ট্য রয়েছে।

যারা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যকে প্রাধান্য দিয়ে ভ্রমণ করে এসেছেন তারা বেশিরভাগই ভ্রমণের জন্য পুরাতন সৈকতকে সঠিক মনে করেছেন। নতুন দীঘা সমুদ্র সৈকত পুরাতনটি থেকে দুই কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। তবে নতুন দীঘা সমুদ্র সৈকতের বড় সুবিধা হলো এখানে অবস্থানের জন্য বহু সংখ্যক হোটেল রয়েছে। আর আপনি খুব সহজেই রিকশায় করে উভয় সৈকতে ঘুরে বেড়াতে পারবেন।

শীতকালে পর্যটকদের জন্য এটি লোকে লোকারণ্য হয়ে থাকে। মনোরম সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের দৃশ্য ক্যামেরাবন্দী করার জন্য দীঘা সমুদ্র সৈকত অদ্বিতীয়। যখন সোনালী লাল আভা সাগরের ঢেউয়ে প্রতিফলিত হবে আপনার মুহুর্তটি হয়ে উঠবে আরও মোহনীয়। সহজ ভাষায় এই সুন্দর মুহূর্তটাকে আর কোনো কিছুর সাথে তুলনা করা যায় না কিংবা ব্যাখ্যা করা যায় না। নতুন দীঘা সমুদ্র সৈকত থেকে মাত্র ১৫ কিলোমিটার পূর্বে অবস্থিত শংকরপুর সৈকত অনেকটাই জনমানবহীন।

এটি নিয়মিত মাছ ধরার পোতাশ্রয় হিসেবে খ্যাত। খুব সকালে আসতে পারলে প্রথমে দেখতে পাবেন মনোমুগ্ধকর সূর্যোদয় আর দ্বিতীয়ত দেখতে পাবেন এখানকার জনমানুষের মাছ ধরা। যারা ভিড় পছন্দ করেন না এবং নিরিবিলি জায়গায় থাকতে চান তারা এখানে ভ্রমণ করতে পারেন।

দীঘা থেকে প্রায় ৫-৭ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত চন্দনেশ্বর মন্দির। যারা দীঘায় বেড়াতে আসেন তারা সেখানে ভ্রমণ করতে চান। এটি মূলত একটি শিব মন্দির। যেহেতু ভারত হিন্দুপ্রধান দেশ তাই এখানে ভারতের বিভিন্ন অঙ্গ রাজ্য থেকে হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা পূজো করতে আসেন। পঞ্জিকার একটি বিশেষ সময়ে এখানে ভিড় বেশি থাকে। এপ্রিলের দ্বিতীয় সপ্তাহে এই ভিড় বেশি হয়ে থাকে। এপ্রিলে ১৩ দিনব্যাপী চৈত্র মেলার জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজনে  আপনি উদ্ভাসিত হয়ে যাবেন।

এখানে এসে মনে হবে হঠাৎ করেই যেন সমুদ্র এলাকা আপনার থেকে অদৃশ্য হয়ে গেল। দীঘায় রয়েছে ‘দীঘা বিজ্ঞান কেন্দ্র’ যেখানে  সকল মানুষের জন্যই প্রবেশের অনুমতি রয়েছে। আপনার সাথে যদি শিশু বা বিদ্যালয় পড়ুয়া কেউ থাকে এখানে অবশ্যই আসা উচিত। বাচ্চাদের জন্য এটি একটি মানসম্মত জায়গা যেখানে তারা বিজ্ঞান বিষয়ক নানা কিছু দেখতে পাবে। বলা যায়, এখানে প্রবেশ করলে মনে হবে এ যেন এক বিজ্ঞানের শহর। এছাড়াও জুরাসিক পার্ক বাচ্চাদেরকে আনন্দে আত্মহারা করবে এর বিভিন্ন সংগ্রহশালার কল্যাণে।

বাচ্চাদেরকে নিয়ে সামুদ্রিক একুরিয়ামে যেতে পারেন। ১৯৮৯ সালে প্রতিষ্ঠিত এই একুরিয়ামটি বর্তমানে ভারতের বন ও পরিবেশ অধিদপ্তর তত্ত্বাবধায়ন করে থাকে। সামুদ্রিক সাপ, চিংড়ি, একাইনোডার্মাটা, গলদা চিংড়িসহ আরও নানা ধরনের সামুদ্রিক প্রাণীদের দেখতে পাওয়া যায়। সামুদ্রিক প্রাণীদের জীববৈচিত্র্য এবং তাদের জীবন সম্পর্কে এখানে জানতে পারা যায়। কেরালা রাজ্যের প্রতিফলিত প্রাকৃতিক দৃশ্য অবলোকন করতে  হলে আপনাকে যেতে হবে তালসারি সমুদ্র সৈকতে।

দীঘা সমুদ্র সৈকত থেকে এর দূরত্ব প্রায় ৭ কিলোমিটার। এর এমন নামকরণ করা হয়েছে কারণ এটি সম্পূর্ণ পাম গাছ দিয়ে ঘেরা। আপনার মন অনায়াসে এখানকার প্রাকৃতিক পরিবেশ, সবুজ ধানক্ষেত, প্রশস্ত নদী, দূরের পাহাড় এবং সমুদ্রতটের দৃশ্যপটে হারিয়ে যাবে। এখানে প্রচুর পরিমানের নারকেল গাছ ও ক্যাসুরিয়ানা উদ্ভিদ রয়েছে। এই সবকিছু মিলিয়ে আপনি যেন কেরালা রাজ্যের একটি অংশে এসে পরবেন। এছাড়া রয়েছে উদয়পুর ও তাজপুর সমুদ্র সৈকত।

দিনের বেলায় আপনি এখানকার খুচরা বিক্রেতাদের সামুদ্রিক মাছ, ডাবের পানি, গ্রিল করা মুরগি ইত্যাদি বিভিন্ন কিছু খেতে পারবেন। শুধু তাই নয়, সুস্বাদু সামুদ্রিক প্রাণীদের হরেক রকমের মজাদার খাবার সামগ্রী রয়েছে। দীঘায় অবস্থানের জন্য প্রতি রাতের খরচ প্রায় ১,৫০০ টাকা থেকে শুরু করে  ২,৫০০ টাকা পর্যন্ত লাগতে পারে।

কীভাবে যাবেন : বাংলাদেশ থেকে খুব সহজেই কোলকাতা রেল স্টেশন পৌঁছতে পারবেন। কোলকাতা রেলস্টেশন থেকে দীঘা রেলওয়ে স্টেশনে যেতে সময় লাগে প্রায় তিন ঘন্টা।  বাংলাদেশ থেকে  কোলকাতা রেলস্টেশন যেতে হলে আপনার সময় পরবে প্রায় ১০ ঘন্টা। ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট থেকে কোলকাতার স্টেশনে মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেনে আপনি সহজেই যেতে পারবেন। এসি ২,৫০০ টাকা এবং প্রথম শ্রেণীর জন্য ৩,৪০০ টাকা টিকেট মূল্য।

ভ্রমণের জন্য আলাদা ট্যাক্স হিসেবে আপনাকে ৫০০ টাকা দিতে হবে। তবে অবশ্যই অনলাইনে টিকিট কাটা যাবে না। স্টেশনে উপস্থিত হয়ে টিকেট কাটতে হবে। তবে এখানে কিছু বিষয় লক্ষণীয়, কিছু কিছু জায়গায় অসংখ্য পাথর দেখতে পাওয়া যায় যেখানে সমুদ্রের ঢেউ জোরালোভাবে আঘাত হানে। অতিরিক্ত বেগে আছড়ে পরার কারণে বিভিন্ন ধরনের দুর্ঘটনা ঘটেছিল এই জায়গায়। তাই সেখানে না যাওয়াই উত্তম। সন্ধ্যার পর মেয়েদের বের না হওয়াই ভালো।

নিরাপদ জনিত বিভিন্ন ধরনের সমস্যা সম্মুখীন হতে পারেন। অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত দীঘায় ঘোরার জন্য সর্বোত্তম সময়। শুধুমাত্র সমুদ্র সৈকত নয়, এখানে আপনার আরামদায়ক সময় কাটানোর জন্য সুন্দর বাগান রয়েছে। শীতকাল খুবই ভালো সময় ভ্রমণের জন্য যেহেতু তখন বৃহত্তম দূর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়। সবমিলেই সৈকত প্রেমিক এবং মধুচন্দ্রিমায় দম্পতিদের অন্যতম পছন্দ দীঘা সমুদ্র সৈকত। এখানকার পরম সৌন্দর্য এবং মনোরম দৃশ্য সমুদ্র প্রেমিকদের হাতছানি দিয়ে প্রতিনিয়ত  ডাকবে।  

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com