সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৫৪ অপরাহ্ন

থাইল্যান্ডের ১০ টি সুন্দর দর্শনীয় স্থান

  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৩
Beautiful caucasian woman with an asian style conical hat sitting on a longtail boat and enjoying a carefree summer day on the beach.

এশিয়া মহাদেশের পর্যটকদের জন্য শুধু নয়, বিশ্বব্যাপী পর্যটকদের কাছে থাইল্যান্ড ভ্রমণের জন্য অত্যন্ত পছন্দের একটি দেশ। দেশটি তার নজরকাড়া অসংখ্য দর্শনীয় স্থানের জন্য পর্যটকদের স্বর্গরাজ্য হয়ে উঠেছে। থাইল্যান্ড প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি। বিশ্বের সেরা প্রাকৃতিক নিসর্গকে উপভোগ করতে থাইল্যান্ডের জুড়ি নেই। এই দেশটি প্রধানত সমুদ্র সৈকত এবং অজস্র দীপপুঞ্জের জন্য বিখ্যাত। পরিবারের সবাইকে নিয়ে থাইল্যান্ডে সুন্দর সময় কাটাতে পারবেন আপনি। আসুন আজকের ‘চলুন বেড়িয়ে আসি’ অনুষ্ঠানে আমাদের সঙ্গে ঘুরে আসুন থাইল্যান্ডের সবচেয়ে সুন্দর ১০টি দর্শনীয় স্থান থেকে।

গ্র্যান্ড প্যালেস:

ব্যাংককের গ্র্যান্ড প্যালেস তার সুন্দর স্থাপত্যের জন্য সুপরিচিত। এই প্যালেসটি পর্যটকদের জন্য এক অবশ্য-দর্শনমূলক গন্তব্যস্থল। প্রাসাদটি চারটি প্রাচীর দ্বারা পরিবেষ্টিত। এটি অনেক মঠ, দুর্যোগ এবং মিনার নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণকারী রাজা রামা ১-এর দ্বারা তৈরি হয়েছিল। গ্র্যান্ড প্যালেসের প্রাঙ্গণের মধ্যে রয়েছে ওয়াত ফ্রা শি রাট্টানা সাতসাদারাম বা ওয়াত কায়েও বা চ্যাপেল রয়্যাল বা এমারেল্ড বুদ্ধ। মন্দিরের প্রধান ভবনটি একটি পান্না-সবুজ বর্ণের বুদ্ধের মূর্তি দেখা যায়‑ যা দেখতে স্বর্গীয় মনে হয়। এ ছাড়া এখানে রাজ্যাভিষেকের পটমণ্ডপ, রাজকীয় অলংকরণ ও মুদ্রা যাদুঘরে মুদ্রা, রাজপোশাক, অলঙ্কারাদি, রাজ দরবারে ব্যবহৃত রাজকীয় অলংকরণ ইত্যাদি দেখা যায়।

ওয়াত অরুন:

থাইল্যান্ডের ওয়াত অরুন ‘ঊষার মন্দির’ হিসাবেও পরিচিত। ওয়াত অরুণ রাজা তৃতীয় রামার সময়কালে সম্পূর্ণতা পায়। মন্দিরটি তার কৃতিত্বের স্তম্ভগুলির জন্যও সুপরিচিত, যেটি ক্ষমের শৈলীতে নির্মিত হয়েছিল। এটি ব্যাংককের প্রধান পর্যটন আকর্ষণ। সূর্যাস্তের সময় মন্দিরটির শ্রেষ্ঠ দৃশ্য উপভোগ করতে পারবেন। থোনবুড়ি নদীর অন্য এক পারে নির্মিত একটি রেস্তোরাঁয় বসে রাতের খাবার খাওয়ার সময় ওয়াত অরুণের স্বর্গীয় দৃশ্য উপভোগ করা যায়। এখানকার পারিপার্শ্বিক পরিবেশ খুবই নির্মল ও শান্তিপূর্ণ। এই পরিবেশ আপনাকে মুগ্ধ করবেই।

ওয়াট ফো:

ব্যাংককের আরেকটি ঐতিহাসিক দর্শনীয় স্থান হচ্ছে প্রাচীন বুদ্ধ মন্দির ওয়াট ফো। এখানে রয়েছে গৌতম বুদ্ধের বিশালাকার এক মূর্তি; যেটি প্রায় দেড়শ ফুট লম্বা এবং চল্লিশ ফুট উঁচু। আধশোয়া এ মূর্তিটি সম্পূর্ণ সোনার পাতে মোড়া যা দেখতে খুবই অসাধারণ। এ ছাড়া এর চোখ ও পা দুটি মুক্তো দিয়ে তৈরি। এ ছাড়া, এখানে আরো দেখতে পাবেন অনেকগুলি প্যাগোডা, অসংখ্য বৌদ্ধমূর্তি, বোধিবৃক্ষ ঝর্ণা প্রভৃতি।

সাদুয়াক ফ্লোটিং মার্কেট:

থাইল্যান্ডের ভাসমান বাজারে একদিন না ঘুরে আসলে আপনার থাইল্যান্ড ভ্রমণ অপূর্ণ থেকে যাবে। ব্যাংকক ও অন্যান্য সব গুরুত্বপূর্ণ শহরের কাছাকাছি এরকম বেশ ক’টি ভাসমান বাজার রয়েছে। তবে এসবের মধ্যে দামনোয়েন সাদুয়াক ভাসমান বাজার সবচেয়ে বেশি বিখ্যাত। এই বাজারের দূরত্ব ব্যাংকক থেকে ৯০ কি.মি.। সদ্য তৈরি করা খাবার থেকে শুরু করে হস্তশিল্প‑ সব কিছুরই অঢেল আয়োজন রয়েছে এখানে। শুধু শাক-সবজি, ফলমূল, বা খাবার নয়, ঘর সাজানোর জন্য নানা রকমের ছবি, ফুলদানি, মূর্তি, নকল ফুলও পাওয়া যায় ভাসমান বাজারে। তবে শুধু পানিতেই নয়, তীরেও আছে স্যুভেনিয়র, পেইন্টিং, টি-শার্ট, ঘড়ি, গয়না, বাঁশি, কাঠের খেলনা ও নানা ধরনের পোশাকের দোকান।

পাতায়া সমুদ্র সৈকত:

পাতায়া সমুদ্র সৈকত মোটামুটি সবার কাছে পরিচিত। এই সৈকতের সাদা নরম বালু, সামনে বিস্তৃত নীল সমুদ্র, তাতে ভেসে বেড়ানো রঙ-বেরঙের বাহারি ছোট ছোট নৌকা আর পেছনে সবুজের চাদর বিছানো পাহাড়ের সারি আপনাকে দেবে এক অসাধারণ অনুভূতি। সাজানো গোছানো পাতায়ার পরতে পরতে ছড়িয়ে আছে সৌন্দর্য। ব্যাংকক থেকে পাতায়ার দূরত্ব ১৪৭ কিলোমিটার। এখানে রয়েছে মনস্টার অ্যাকুরিয়াম। এটি পারিবারিক দিন কাটানোর জন্য অন্যতম আদর্শ স্থান। আপনি এখানে বিভিন্ন ধরণের সামুদ্রিক প্রাণী যেমন হাঙ্গর ও গভীর সমুদ্রের অন্যান্য মাছের চলাচল দেখার পাশাপাশি তাদের সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারবেন।

ফুকে:

এটি থাইল্যান্ডের বৃহত্তম দ্বীপ। ব্যাংকক থেকে ফুকের দূরত্ব প্রায় ৮৬০ কিলোমিটার। অসামান্য সমুদ্র সৈকতের জন্য ফুকের খ্যাতি বিশ্বজুড়ে। পৃথিবী বিখ্যাত সমুদ্র সৈকতগুলি সবই ফুকে দ্বীপে। ফুকের সাগর পাড়ের নীল জল, বন ও গ্রীষ্মমন্ডলীয় দ্বীপসমূহ, সাদা বালুময় সৈকত, সমুদ্রের মাঝে পাহাড় জঙ্গল ভরা ছোট ছোট নির্জন দ্বীপ সৌন্দর্যের এক অনন্য বিস্ময়। সৈকতের পাশাপাশি ফুকের আরেকটি সৌন্দর্য হলো আন্দামান সাগরের ভেতরে চুনাপাথরের পাহাড়। বৈচিত্র্যময় এসব চুনাপাথরের পাহাড়ে অনেক সিনেমার শুটিং হয়েছে।

সিয়াম ওশান ওয়ার্ল্ড:

সাগরের অভ্যন্তরের সৌন্দর্য এবং সামুদ্রিক নানা প্রাণীর জীবন যাপন দেখতে হলে আপনাকে যেতে হবে সিয়াম ওশান ওয়ার্ল্ডে। কাঁচ ঘেরা বিশালাকার সব জলাধারে রয়েছে সামুদ্রিক নানা প্রাণী। রয়েছে হাঙ্গর, তিমিসহ নানান রকম সামুদ্রিক জলজ প্রাণী। কাঁচের তৈরি সুড়ঙ্গপথ দিয়ে যখন হাঁটবেন তখন মনে হবে আপনি সাগরের মাঝে রয়েছেন আর বিশাল বিশাল সব সামুদ্রিক প্রাণী আপনাকে ঘিরে ঘুরছে। সামুদ্রিক জীবন সম্পর্কে আপনার জ্ঞান বিস্তৃত করতে এক চমৎকার জায়গা এটি।

কো ফি-ফি দ্বীপপুঞ্জ:

কো ফি-ফি দ্বীপপুঞ্জ তাদের নান্দনিক বা শিল্প-রুচিসম্মত সৌন্দর্যের জন্য অতি পরিচিত এবং প্রতি বছর বিশাল সংখ্যক পর্যটক এখানে আসেন। বর্তমানে সামুদ্রিক বিনোদনমূলক কার্যক্রম যেমন স্নরকেলিং এবং স্ক্যুবা ডাইভিং-এর জন্য কো ফি-ফি হল বিশ্বের এক অন্যতম প্রসিদ্ধ গন্তব্যস্থল। পর্যটকদের জন্য প্রচুর চিত্ত-বিনোদনের ব্যবস্থা রয়েছে এখানে। এ ছাড়া এখানে ক্রুজ, ক্লিফ ডাইভিং, রক ক্ল্যাইম্বিং এবং মাছ ধরা বা ফিশিংয়ের ব্যবস্থা রয়েছে।

নর্দান হিল ট্রাইবস:

উত্তর থাইল্যান্ডের দিকে লুকিয়ে আছে থাইল্যান্ডের এমন এক জগত যা সাধারণ পর্যটকদের হাতের নাগালের একটু বাইরে। উত্তর থাইল্যান্ডের এই অঞ্চলটির নাম নর্দার্ন হিল ট্রাইবস। ট্র্যাকিং করে যে কেউ আসতে পারবে এখানে আর এখানকার যে কোনো গ্রামে কাটাতে পারবে ছুটির কয়েকটি স্মরণীয় দিন। যেহেতু অধিকাংশ আদিবাসীই অর্থনৈতিকভাবে অসচ্ছল, তাই এখানে থাকার খরচও কম।

চিয়াং মাই:

চিয়াং মাই থাইল্যান্ডের প্রধান উত্তরাঞ্চলীয় শহর। এটি ব্যাংকক থেকে ৭০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। থাইল্যান্ডের অন্যরকম জঙ্গল দেখতে গেলে যেতে হবে চিয়াং মাইয়ে। চিয়াং মাইকে বলা হয় থাইল্যান্ডের উত্তরের রাজধানী। সংস্কৃতি এবং অপূর্ব প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সংমিশ্রণ এই শহর। সংস্কৃতি নিয়ে যাদের আগ্রহ তাদের প্রথম পছন্দ হতে পারে চিয়াং মাই। কেননা এখানে আছে পাঁচশ’রও বেশি মন্দির। শিশুদের পাশাপাশি বড়দেরকেও মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখবে চিয়াং মাই এর রাত্রিকালীন চিড়িয়াখানা। রয়েছে সুদৃশ্য জঙ্গলের ভেতরে হাইকিং ও খরস্রোতা নদীতে র‍্যাফটিং করার সুযোগ। থাইল্যান্ডের সর্বোচ্চ পয়েন্ট ডোই ইথানান রয়েছে চিয়াং মাইতে। পাহাড়ি উপজাতি, অসংখ্য জলপ্রপাত, থাই হাতির অভয়ারণ্য সব মিলিয়ে অসাধারণ এক জায়গা চিয়াং মাই। ব্যাংককের তুলনায় চিয়াং মাই রাতের বেলা কিছুটা নিরিবিলি। তবে তার মানে এই না যে, আপনাকে হোটেলে বসে থাকতে হবে। রয়েছে অসংখ্য বার ও শপিং করার জন্য রাতের বাজার। যেখানে আপনি পাবেন, নানান ধরনের ঐতিহ্যবাহী থাই জিনিসপত্র।

বাংলাদেশ থেকে থাইল্যান্ডের ভিসা আপনি দুইভাবে করতে পারেন। নিজে অথবা এজেন্সি-কে দিয়ে। এক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিতে হবে। ভিএফএস অর্থাৎ থাই দূতাবাস ওয়েবসাইটে এ সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় তথ্য রয়েছে।

থাই দূতাবাসে আপনাকে ৬ মাসের ব্যাংক স্টেটমেন্ট এবং ব্যাংক সলভেন্সি সার্টিফিকেট জমা দিতে হবে। ব্যাংকে কমপক্ষে ৬০ হাজার টাকা থাকতে হবে। আর ফ্যামিলি ভিসার জন্য ১ লাখ ২০ হাজার টাকা থাকতে হবে। এটা অফিশিয়াল রিকোয়ারমেন্ট, তবে এর বেশি টাকা থাকলে ভালো। আর একাউন্টে রেগুলার ট্রানজেকশন থাকা আরও ভালো।

আপনি যদি স্টুডেন্ট হন তবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে লিভ লেটার দিতে হবে আর অভিভাবকের ব্যাংক স্টেটমেন্ট, সলভেন্সি সার্টিফিকেট দিতে হবে। সাথে আপনার অভিভাবক আপনার ট্যুরের খরচ দিচ্ছে এমন একটা লেটারও দাখিল করতে হবে। সাথে অভিভাবকের ন্যাশনাল আইডি কার্ড দিতে হবে।

ভিসা ফি

সিঙ্গেল এন্ট্রি টুরিস্ট ভিসার জন্য ৩৭৪০ টাকা ভিসা ফি জমা দিতে হয়। যেদিন ভিসার পেপার জমা দিতে যাবেন সেখানেই ফি দিতে হবে।

গুলশান ভিএফএস-এ গিয়ে জমা দিতে হবে সব পেপার। খুব সকাল সকাল চলে যাওয়া ভাল। সকাল ৭ টার মধ্যে সেখানে পৌঁছুলে সবচেয়ে ভাল। প্রতিদিন নির্দিষ্ট জমা নেবার লিমিট  আছে। ভিএফএস প্রতিদিন ৩০০ এপ্লিকেশন জমা নেয় তাদের ঢাকা, চট্টগ্রাম এবং সিলেটের সেন্টার মিলে। ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি এই সময় টা খুব চাপ থাকে ভিসার।

জমা দেবার পর

পাসপোর্ট জমা দেবার পর ৫-৭ কার্যদিবসের মধ্যে আপনার পাসপোর্ট পেয়ে যাবেন। নিজে সাবমিট করলে দ্রুত পাবেন। এই সময়ের মধ্যে আপনাকে এমব্যাসি থেকে ফোন দেওয়া হবে। কল দেবার কারণ হলো ভেরিফাই করা আপনি ভিসা জমা দিয়েছেন কিনা? কেন যাবেন? দেশে কি করেন? এসব জিজ্ঞেস করবে। অনেকটা ভিসা ইন্টারভিউ বলা যায়। প্রথমবার ভিসার ক্ষেত্রেই তারা কল দিয়ে থাকে।

থাইল্যান্ড তিন মাসের সিঙ্গেল এন্ট্রি ভিসা ইস্যু করে। এই তিনমাস হল আপনার থাইল্যান্ডে ঢোকার জন্য নির্ধারিত সময়। এই তিন মাসের মধ্যে যেদিন ঢুকবেন সেদিন থেকে ৬০ দিন বা ২ মাস থাকার অনুমতি পাবেন।

থাই রি এন্ট্রি ভিসা

আপনি যেদিন থাইল্যান্ডে ঢুকবেন সেদিন থেকে ৬০ দিনের মধ্যে আবার যদি থাইল্যান্ডে আসতে চান তবে থাইল্যান্ডের রি-এন্ট্রি ভিসা নিতে পারেন। অনেকেই থাইল্যান্ড থেকে পাশের দেশ ক্যাম্বোডিয়া, লাওস, ভিয়েতনাম ঘুরতে যেতে চায়। থাইল্যান্ড থেকে পাশের দেশগুলোর রিটার্ন টিকেট অনেক সস্তায় মিলে।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com