রবিবার, ১০ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৩৫ পূর্বাহ্ন

দেশ পরিচিতি: আর্জেন্টিনা

  • আপডেট সময় শনিবার, ৮ এপ্রিল, ২০২৩

উত্তরে উপ-গ্রীষ্মমণ্ডলীয় থেকে দক্ষিণে সাব-অ্যান্টার্কটিক পর্যন্ত ৪ হাজার কিলোমিটার বিস্তৃত দেশ আর্জেন্টিনা। দেশটির ভূখণ্ডের মধ্যে রয়েছে আন্দেজ পাহাড়ি অঞ্চল, জলাভূতি, পাম্পাস ও দীর্ঘ উপকূলীয় সমতল এলাকা। খনিজ সম্পদে ভরপুর দেশটির রয়েছে শিক্ষিত মানবশক্তি। দেশটির অর্থনীতি দক্ষিণ আমেরিকার মধ্যে বৃহত্তম। সাংস্কৃতিক নিরীখে দেশটিতে হোর্হে লুইস বরগোসের গুরুত্বপূর্ণ লেখকের জন্ম হয়েছে। ট্যাঙ্গো নাচও দেশটির ঐতিহ্য।

দেশটির রাজনৈতিক ইতিহাস সংকটে পূর্ণ। একাধিক সামরিক অভ্যুত্থান এবং জনতোষণবাদী পেরোনবাদী আন্দোলনের অস্পষ্টতায় এসব সংকট দেখা দেয়। তবে দেশটির অর্থনীতি নাটকীয় প্রবৃদ্ধি ও মন্দার শিকার হয়েছে।

আর্জেন্টনার গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য

  • রাষ্ট্রীয় নাম: আর্জেন্টাইন রিপাবলিক
  • রাজধানী: বুয়েনস এইরেস
  • আয়তন: ২৭ লাখ ৮০ হাজার বর্গ কিলোমিটার
  • জনসংখ্যা: ৫ কোটি ৭৩ লাখ
  • ভাষা: স্প্যানিশসহ গুয়ারানি, কুয়েচুয়া, কম, মকোভি, উইচি, ওয়েলশ
  • আয়ুষ্কাল: ৭৩ বছর (পুরুষ), ৮০ বছর (নারী)

নেতৃত্ব

আলবার্তো ফার্নান্দেজ। ছবি: রয়টার্স

আলবার্তো ফার্নান্দেজ। ছবি: রয়টার্স

প্রেসিডেন্ট আলবার্তো ফার্নান্দেজ

২০১৯ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হয়ে ক্ষমতায় রয়েছেন মধ্য-বাম পেরোনবাদী আলবার্তো ফার্নান্দেজ। ক্ষমতাসীন মৌরিসিও মাকরিকে পরাজিত করে তিনি প্রেসিডেন্ট হন। তার নির্বাচিত হওয়া দেশটির মন্দা, উচ্চ মূল্যস্ফীতি ও ব্যয় সংকোচন নিয়ে জনগণের অসন্তুষ্টির প্রকাশ।

ক্ষমতা গ্রহণের সময় ফার্নান্দেজ অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় মজুরি ও সুবিধা বৃদ্ধির ঘোষণা দিয়েছিলেন। তবে এখন পর্যন্ত দেশটির সংকট কেটে গেছে, এমনটি বলার মতো তেমন কোনও ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি।

আর্জেন্টিনার অর্থমন্ত্রী মার্টিন গুজম্যান ২০২২ সালে পদত্যাগ করেন সরকারের নীতির সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করার কারণে। জাতীয় ঋণের পুনর্গঠন নিয়ে আন্তর্জাতকি মুদ্রা তহবিলের সঙ্গে আলোচনায় নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন।

দেশটির সংবাদমাধ্যম আনুষ্ঠানিকভাবে সরকারি সেন্সরশিপমুক্ত। ছবি: রয়টার্সদেশটির সংবাদমাধ্যম আনুষ্ঠানিকভাবে সরকারি সেন্সরশিপমুক্ত। ছবি: রয়টার্স

সংবাদমাধ্যম

দক্ষিণ আমেরিকার একটি বৃহত্তম মিডিয়া বাজার রয়েছে আর্জেন্টিনার। প্রাধান্য বিস্তারকারী মাধ্যম হলো টিভি। প্রধান প্রধান নেটওয়ার্কগুলো পরিচালনা করে বড় বেসরকারি কোম্পানি।

দেশটির সংবাদমাধ্যম আনুষ্ঠানিকভাবে সরকারি সেন্সরশিপমুক্ত।

লাতিন আমেরিকার মধ্যে ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ হারের একটি অঞ্চল আর্জেন্টিনা। ফেসবুক হলো শীর্ষ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম।

প্রেসিডেন্ট হুয়ান পেরোন এবং তার স্ত্রী ইভিটা এখনও বিতর্কিত। ছবি: এপিপ্রেসিডেন্ট হুয়ান পেরোন এবং তার স্ত্রী ইভিটা এখনও বিতর্কিত। ছবি: এপি

আর্জেন্টিনার ইতিহাসে কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা

১৬ শতক: রিভার প্লেট উপকূল এবং অভ্যন্তরীণ এলাকায় স্প্যানিশ উপনিবেশ শুরু হয়।

১৭৭৬: রিভার প্লেটে পৃথক রাজ প্রতিনিধির পদ (ভাইস-রয়্যালিটি) প্রতিষ্ঠা করে।

১৮১০: ভাইসরয় উৎখাত, স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু।

১৮১৬: স্বাধীনতা ঘোষণা করা হয়। পরের কয়েক দশক অশান্তি, বিদেশি হস্তক্ষেপের চেষ্টা এবং কেন্দ্রীয় ও ফেডারেল শক্তির মধ্যে গৃহযুদ্ধ দেখা দেয়।

১৮৬১: অবশেষে বুয়েনস এইরেস রাজ্য একটি সংযুক্ত দেশ গঠনের জন্য আর্জেন্টিনা কনফেডারেশনের সঙ্গে পুনরায় একীভূত হয়।

১৮৮০: কয়েক দশকের উদার অর্থনৈতিক ও অভিবাসননীতির সূচনা যা দ্রুত আয় এবং জনসংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি প্রগতিশীল শিক্ষা এবং সামাজিক নীতির দিকে পরিচালিত করে।

১৯১৬-২২: প্রেসিডেন্ট হিপোলিটো ইরিগোয়েন প্রগতিশীল সামাজিক সংস্কারের একটি ধারা প্রণয়ন করেন। তিনি ১৯২৮ সালে প্রেসিডেন্ট হিসেবে আরেক মেয়াদের জন্য পুনরায় নির্বাচিত হন।

১৯৩০: মহা মন্দা আর্জেন্টিনাকে কঠোরভাবে আঘাত করে। কারণ এর কৃষি রফতানির চাহিদা কমে যায়। সশস্ত্র বাহিনী সামরিক অভ্যুত্থানে ক্ষমতা দখল এবং সামরিক হস্তক্ষেপের নজির স্থাপন করে। যা ১৯৮০ দশকের দিকে শেষ হয়।

১৯৩২: বেসামরিক শাসন পুনরায় প্রতিষ্ঠিত হয়। কিন্তু অর্থনৈতিক পতন অব্যাহত থাকে।

১৯৪৩: জাতীয়তাবাদী সামরিক কর্মকর্তারা স্থবিরতা এবং নির্বাচনে জালিয়াতির অভিযোগ তুলে ক্ষমতা দখল করে। এদের একজন হলেন কর্নেল হুয়ান পেরোন।

১৯৪৬: হুয়ান পেরোন উচ্চ মজুরি এবং সামাজিক নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতিতে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হন। তার স্ত্রী, ইভা ‘ইভিটা’ পেরোনকে শ্রম সম্পর্কিত মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়।

১৯৪৯: একটি নতুন সংবিধান প্রেসিডেন্টের ক্ষমতাকে শক্তিশালী করে। বিরোধীরা কারারুদ্ধ, স্বাধীন সংবাদপত্র দমন করা হয়।

১৯৫১: পেরোন বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে পুনরায় নির্বাচিত হন, কিন্তু পরের বছর এভিটা মারা যাওয়ার পর তার সমর্থন হ্রাস পেতে শুরু করে।

১৯৫৫: সহিংস সামরিক বিদ্রোহ প্রেসিডেন্ট পেরোনকে পদত্যাগ এবং নির্বাসনে যেতে বাধ্য করে।

আর্জেন্টিনার সামরিক বাহিনী দক্ষিণ আটলান্টিকের ব্রিটিশ ফকল্যান্ড দ্বীপপুঞ্জ আক্রমণ করে। ছবি: রয়টার্স

আর্জেন্টিনার সামরিক বাহিনী দক্ষিণ আটলান্টিকের ব্রিটিশ ফকল্যান্ড দ্বীপপুঞ্জ আক্রমণ করে। ছবি: রয়টার্স

১৯৬৬: বছরের পর বছর বেসামরিক সরকারের অস্থিতিশীলতার পর ক্ষমতা দখল করেন জেনারেল হুয়ান কার্লোস ওঙ্গানিয়া।

১৯৭৩:  পেরোনিস্ট পার্টি মার্চে নির্বাচনে জয়লাভ করে, পেরোন সেপ্টেম্বরে প্রেসিডেন্ট হন।

১৯৭৪: জুলাই মাসে মৃত্যু হয় পেরোনের। তার তৃতীয় স্ত্রী ইসাবেল তার স্থলাভিষিক্ত হন। ডানপন্থি এবং বামপন্থিদের পক্ষ থেকে সন্ত্রাস বৃদ্ধি পায়, ধর্মঘট, বিক্ষোভ এবং ব্যাপক মুদ্রাস্ফীতির মধ্যে শত শত মানুষের মৃত্যু হয়।

১৯৭৬: সশস্ত্র বাহিনী আবার ক্ষমতা দখল করে এবং ‘ডার্টি ওয়ার’ শুরু করে। এতে বামপন্থীদের প্রতি সহানুভূতিশীল সন্দেহে হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়।

১৯৮২: আর্জেন্টিনার সামরিক বাহিনী দক্ষিণ আটলান্টিকের ব্রিটিশ ফকল্যান্ড দ্বীপপুঞ্জ আক্রমণ করে, কিন্তু রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর ব্রিটিশ সশস্ত্র বাহিনী কয়েক মাস পরে আর্জেন্টিনার সেনাদের বিতাড়িত করে।

১৯৮৩: ফকল্যান্ড ব্যর্থতায় জান্তার পতন এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার। প্রেসিডেন্ট হন রাউল আলফনসিন।

১৯৯০: যুক্তরাজ্যের সঙ্গে সম্পূর্ণ কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃস্থাপন। যদিও আর্জেন্টিনা ফকল্যান্ডের দাবি বজায় রাখে।

১৯৯৪: বুয়েনস এইরেসের একটি ইহুদি কেন্দ্রে বোমা হামলায় ৮৬ জন নিহত। আর্জেন্টিনার সবচেয়ে ভয়াবহ এই সন্ত্রাসী হামলায় আরও দুই শতাধিক আহত হন। প্রসিকিউটররা ইরান এবং তার লেবাননের হিজবুল্লাহ মিত্রদের দায়ী করেছে।

২০০১: অর্থনৈতিক সংকট। সর্বকালের সর্ববৃহৎ সার্বভৌম ঋণ খেলাপি (৮০ বিলিয়ন ডলার) হয় আর্জেন্টিনা। প্রেসিডেন্ট নেস্টর কার্চনারের পেরোনিস্ট সরকার স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধার করে।

২০০৫: সুপ্রিম কোর্ট সাধারণ ক্ষমা আইন বাতিল করার অনুমোদন দেয় যা ১৯৭৬-১৯৮৩ সাল পর্যন্ত সামরিক শাসনের সময় মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য সন্দেহভাজন সাবেক সামরিক কর্মকর্তাদের দায়মুক্তি দিয়েছিল। কংগ্রেস ২০০৩ সালে সাধারণ ক্ষমা বাতিল করার পক্ষে ভোট দেয়।

ব্রাজিল ও প্যারাগুয়ে সীমান্তে ইগুয়াজু ঝরনা। ছবি: রয়টার্সব্রাজিল ও প্যারাগুয়ে সীমান্তে ইগুয়াজু ঝরনা। ছবি: রয়টার্স

২০১৩: আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) দ্বারা মূল্যস্ফীতি এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সঠিক তথ্য প্রদান না করার জন্য নিন্দার মুখে প্রথম দেশ হয় আর্জেন্টিনা।

ফকল্যান্ড দ্বীপবাসীরা ব্রিটিশ ভূখণ্ডে থাকার পক্ষে ভোট দেয়।

বুয়েনস এইরেসের কার্ডিনাল জর্জ মারিও বার্গোগ্লিওকে পোপ হিসেবে বেছে নেওয়া হয়। তিনি প্রথম লাতিন আমেরিকান যিনি রোমান ক্যাথলিক চার্চের নেতৃত্ব দেন। তিনি ফ্রান্সিস নাম গ্রহণ করেন।

২০১৪: ১৩ বছরের মধ্যে দ্বিতীয়বার আন্তর্জাতিক ঋণ খেলাপি হয় আর্জেন্টিনা।

২০১৫: রক্ষণশীল প্রেসিডেন্ট মাউরিসিও মাকরি অর্থনীতিতে রাষ্ট্রীয় ভূমিকার প্রভাব বিস্তারের বাজার সংস্কারের কর্মসূচি চালু করেন।

২০১৯: পেরোনিস্ট প্রার্থী আলবার্তো ফার্নান্দেজ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হন। আর্জেন্টিনায় একজন ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্টকে ভোটে হারানো প্রথম নেতা তিনি।

সূত্র: বিবিসি

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com