চীনের একটি বাজার থেকে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছিল বলে শুরু থেকে আলোচনা আছে। ওই বাজার থেকে তিন বছরের বেশি সময় আগে সংগ্রহ করা নমুনা বিশ্লেষণের পর প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। চীনের একটি গবেষক দলের তৈরি করা ওই গবেষণা প্রতিবেদনটি নেচার সাময়িকীতে প্রকাশ হয়েছে।
২০২০ সালে সংগ্রহ করা আলামত বিশ্লেষণ করে প্রকাশিত এটিই প্রথম গবেষণা প্রতিবেদন যা পিয়ার রিভিউ (অন্য বিজ্ঞানীকে দিয়ে মূল্যায়ন করানো) করা হয়েছে। করোনাভাইরাসের উৎস এবং কীভাবে ছড়াল, তা জানতে বিভিন্ন গবেষণায় চীনের উহানের হুয়ানান বাজারের কথা–ই সবচেয়ে আসছে।
প্রতিবেদনে বাজারে বিক্রি হওয়া প্রাণীর সঙ্গে ভাইরাসটির সংযোগ কী, তা দেখানো হয়েছে। কীভাবে করোনার প্রাদুর্ভাব ছড়িয়ে পড়েছিল, তা জানতে বিভিন্ন গবেষণার ক্ষেত্রে নতুন প্রতিবেদনটি দিকনির্দেশনা দেবে বলে আশা করা হচ্ছে।
গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব নমুনায় ভাইরাস পাওয়া গেছে, সেগুলোতে বন্য প্রাণীর জেনেটিক উপকরণও ছিল। কোনো কোনো বিজ্ঞানী বলছেন, করোনাভাইরাস যে শুরুতে আক্রান্ত পশু থেকে মানুষের মধ্যে ছড়িয়েছে, তা এ প্রতিবেদনের মধ্য দিয়ে আরও জোরালো হয়েছে।
তবে গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশ করতে কেন তিন বছর সময় লেগেছে, তা স্পষ্ট নয়। বাজারের বিভিন্ন দোকান, খাঁচা এবং যন্ত্রপাতি থেকে এসব নমুনা সংগ্রহ করা হয়।
চীনের গবেষক দলটি ফেব্রুয়ারিতে অনলাইনে তাদের গবেষণার প্রাথমিক ফলাফল উপস্থাপন করে। তবে বাজার থেকে সংগৃহীত এসব নমুনা পরীক্ষা করে কী তথ্য পাওয়া গেছে, তা নিয়ে তখন বিস্তারিত উল্লেখ করা হয়নি। সম্প্রতি তা নেচার সাময়িকীতে বিস্তারিতভাবে প্রকাশ করা হয়। এর আগে অন্য বিজ্ঞানীরা তা যাচাই করেছেন।২০২০ সালে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার আগে বিজ্ঞানীদের তোলা ছবিতে দেখা গেছে, হুয়ানান বাজারে র্যাকুন কুকুরসহ বিভিন্ন প্রাণী বিক্রি হচ্ছে।
গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, বাজারের যেসব জায়গায় বন্য প্রাণী বিক্রি করা হতো, সেখান থেকে সংগৃহীত নমুনায় করোনাভাইরাস পাওয়া গেছে। তাদের বিশ্লেষণে দেখা গেছে, যেসব প্রাণী থেকে করোনাভাইরাস ছড়ায় বলে সন্দেহ করা হয়, বিশেষ করে র্যাকুন কুকুরের মতো প্রাণী এসব এলাকায় জীবন্ত অবস্থায় বিক্রি হয়।
তবে চীনা গবেষকেরা বলেছেন, কীভাবে করোনার প্রাদুর্ভাবের শুরু, সে ব্যাপারে তাঁরা নিশ্চিত কোনো প্রমাণ পাননি। পরিবেশ থেকে সংগৃহীত নমুনা দিয়ে প্রমাণ করা যায় না, এসব প্রাণী আক্রান্ত ছিল। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, শুধু প্রাণী নয়, বাজারে আসা আক্রান্ত কোনো মানুষ থেকে করোনা ছড়ানোর আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরাস বিশেষজ্ঞ ডেভিড রবার্টসন করোনাভাইরাসের উৎসস্থল সম্পর্কে জানতে ২০২০ সাল থেকে গবেষণা করছেন। বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে রবার্টসন বলেন, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, সবচেয়ে জরুরি তথ্যগুলো এখন প্রকাশ হয়েছে, যা ব্যবহার করে অন্যরা কাজ করতে পারবে।