শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:১৫ অপরাহ্ন

বিশ্বের দীর্ঘতম নৌ ভ্রমণে প্রমোদতরি ‘গঙ্গা বিলাস’

  • আপডেট সময় শুক্রবার, ৭ এপ্রিল, ২০২৩

‘এম ভি গঙ্গা বিলাস’। বিশ্বের দীর্ঘতম (শুধু নদীতে চলার ক্ষেত্রে) বিলাসবহুল প্রমোদতরি। ভারতে তৈরি এ প্রমোদতরি উত্তরপ্রদেশের বারানসি থেকে বাংলাদেশ হয়ে যাবে আসামের ডিব্রুগড়। এ পথে এটি পাড়ি দেবে প্রায় ৩ হাজার ২০০ কিলোমিটার। আর এতে সময় লাগবে ৫১ দিন।

বিশ্বে নদীপথে এই যাত্রা দীর্ঘতম। প্রায় দুই মাসের এই ভ্রমণে একজন পর্যটককে গুনতে হবে ২০ লাখ রুপি। পথে দুই দেশের মোট ২৭টি নদী পাড়ি দেবে বেসরকারি এই প্রমোদতরি। এ সময় পর্যটকরা ভারত-বাংলাদেশের অন্তত ৫০টি ঐতিহাসিক ও তাৎপর্যপূর্ণ স্থান ঘুরে দেখার সুযোগ পাবেন। এর মধ্যদিয়ে বাংলাদেশ ও ভারত—দুই দেশই উপকৃত হবে।

শুক্রবার সকালে ভার্চুয়ালি ‘গঙ্গা বিলাস’-এর উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এদিন ৩২ জন সুইজারল্যান্ডের নাগরিক নিয়ে গঙ্গায় ভাসে প্রমোদতরিটি। উদ্বোধনি অনুষ্ঠানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেন, “পর্যটনের এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হলো। এর ফলে পূর্ব ভারতের বহু পর্যটনস্থল বিশ্বের পর্যটন ম্যাপে স্থান করে নেবে।”

তিনি আরও বলেন, “এই ক্রুজ যেখান দিয়ে যাবে, সেখানকার বাণিজ্য বৃদ্ধির সম্ভাবনা বহু গুণ বেড়ে যাবে। বাড়বে কর্মসংস্থান। হবে উন্নয়ন।”

“স্বাধীনতার পর গঙ্গা শুধু অবহেলিতই হয়নি, তার দুই পাশের জনগণও বঞ্চিত হয়েছে। পেটের তাগিদে অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য হয়েছে। এই ক্রুজ নদীপথের বিশেষত্ব ও প্রয়োজনীয়তাকে তুলে ধরে তাকে বিকাশের সঙ্গে যুক্ত করবে”, বলে জানান তিনি।

মোদি বলেন, “বৈশ্বিক ক্ষেত্রে ভারতের গুরুত্ব যত বাড়ছে, ততই বেড়ে চলেছে ভারতকে জানা ও বোঝার আগ্রহ। এই ক্রুজ সেই আগ্রহ মেটাবে।”

তিনি বলেন, “ভারতকে কেবল মাত্র একটি শব্দে ব্যাখ্যা করা যায় না। ভারতকে কেবল হৃদয় থেকে অনুভব করা যায়। কারণ জাতি, ধর্ম, দেশ নির্বিশেষে সকলের জন্য ভারত তার হৃদয় উন্মুক্ত করেছে।”

এ প্রমোদতরিতে চেপে নদী বিলাসের দক্ষিণার পরিমাণ শুধু ধনীদের পক্ষেই বহন করা সম্ভব। কারণ, ক্রুজ পরিচালক রাজ সিংয়ের মতে, ৫১ দিন ভ্রমণের দরুন মাথাপিছু খরচ পড়বে প্রায় ২০ লাখ রুপি। প্রমোদতরিতে রয়েছে মোট ১৮টি বিলাসবহুল স্যুইট। প্রতিটিতে দুজনের থাকার বন্দোবস্ত রয়েছে।

এতে রয়েছে অত্যাধুনিক স্পা, জিম, লাইব্রেরি, বিনোদনের বন্দোবস্ত এবং দেশ-বিদেশের খাওয়া। প্রমোদতরীতে বিশাল বড় রেস্তোরাঁ ও সানডেক আছে। মেন ডেকে আছে ৪০ আসনের রেস্তোরাঁ। সেখান থেকে ইন্ডিয়ান এবং কন্টিনেন্টাল খাবার দেওয়া হবে। রয়েছে রিয়েল টিক স্টিমার চেয়ার এবং কফি টেবিল। যা যাত্রীদের অভাবনীয় অভিজ্ঞতা প্রদান করবে। ক্রুজে বর্জ্য ব্যবস্থাপনাও থাকছে, যাতে গঙ্গা দূষিত না হয়।

‘গঙ্গা বিলাস’ ক্রুজে জিমও আছে। গঙ্গা-সহ অন্যান্য নদীকে সাক্ষী রেখে জিম করতে পারবেন পর্যটকরা। জিমে একেবারে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা আছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

তারা আরও জানায়, এই ভ্রমণের মধ্য দিয়ে বিদেশি পর্যটকেরা ভারত ও বাংলাদেশের ইতিহাস, সংস্কৃতি, বৈচিত্র্যপূর্ণ জীবন ও আধ্যাত্মিকতা সম্পর্কে অবহিত হবেন।

প্রথম গঙ্গা বিলাস উত্তরপ্রদেশ রাজ্যের বারানসী থেকে গাজীপুর, বক্সার হয়ে ২০ জানুয়ারি বিহারের রাজধানী পাটনায় পৌঁছাবে। সেখান থেকে পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ কলকাতায় এসে পৌঁছাবে। একদিন রাত্রিযাপন করে সুন্দরবন হয়ে বরিশাল ধরে সম্ভাব্য ১২ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় পৌঁছাবে।

এরপর আরিচা, টাঙ্গাইল, চিলমারি হয়ে ভারতের আসামের ধুবড়ী হয়ে ২৩ ফেব্রুয়ারি গৌহাটি পৌঁছাবে। সেখান থেকে ১ মার্চ মাজুলী ব-দ্বীপ হয়ে ডিব্রুগড় যাবে গঙ্গা বিলাস।

অর্থাৎ দীর্ঘতম নদী যাত্রায় প্রমোদতরীটি ভারত-বাংলাদেশের ২৭টি নদীর উপর দিয়ে যাবে। ঐতিহ্যবাহী ও ধর্মীয় স্থানসহ ৫০টিরও বেশি পর্যটনস্থান পরিদর্শন করানো হবে। কোন পথ দিয়ে যাচ্ছে তার জন্য থাকবে উভয় দেশের নদীপথের মানচিত্র।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com