সকালে অ্যালার্মের কর্কশ শব্দের বদলে যদি পাখিদের সুরেলা সিম্ফনিতে ঘুম ভাঙাতে চান, আগ্লেয়গিরির মধ্যে দিয়ে সঙ্গীর সঙ্গে লং ড্রাইভে যেতে চান তা হলে আপনার জন্যে বেস্ট হনিমুন ডেস্টিনেশন সেন্ট লুসিয়া। ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জের সেন্ট লুসিয়া এখনও ট্যুরিজ়মের আগ্রাসী মনোভাবের স্বীকার হয়নি। ফলে এর প্রাকৃতিক নৈসর্গ একেবারেই আনকোরা। ক্যারিবিয়ানের বাকি শহরের যেখানে ভিড়ভাট্টায় নাভিশ্বাস উঠছে, সেন্ট লুসিয়ার নির্জন, নিরিবিলি প্রকৃতি নব দম্পতিদের কাছে স্বর্গরাজ্যই বটে। আফ্রিকান, ভারতীয়, ব্রিটিশ, স্প্যানিশ ও ফরাসী প্রভাব সেন্ট লুসিয়ার সংস্কৃতিকে আরও ঋদ্ধ ও সমৃদ্ধ করেছে। আর তাই বাকি ক্যারিবিয়ানের থেকে এর একটা স্বতন্ত্র চরিত্র আছে। ভৌগলিক দিক থেকে দেখলেও এত প্রাকৃতিক বৈচিত্র ক্যারিবিয়ান দীপপুঞ্জের আর কোথাও দেখা যায় না। এই মাউন্টেন আইল্যান্ডের একদিকে বিস্তৃত রেনফরেস্ট, অন্যদিকে আকাঁশছোয়া পিটন পাহাড় আগ্নেয়গিরি, আর একদিকে পাম গাছে ছাওয়া স্বর্ণালী সমুদ্রতট। প্রেমের জন্যে এর চেয়ে সুন্দর প্রাকৃতিক প্রেক্ষিত আর কী হতে পারে।
সেন্ট লুসিয়ার একটা আলাদা পালস আছে। সেটা আপনারা প্রতি মুহূর্তে অনুভব করতে পারবেন। হাত হাতে রেখে উত্তর সেন্ট লুসিয়ায় হাঁটা হোক সমুদ্রের ধারে বসে সূর্যাস্ত দেখা, কিংবা এখানকার মিউজ়িকাল জ়িগে গা ভাসিয়ে দেওয়া, ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ফ্লেভারের এক অনন্য স্বাদ পাবেন সেন্ট লুসিয়ায়। রোমান্টিক ডে আউটের জন্যে নৌকায় পাল তুলে ভেসে যেতে পারেন সেন্ট লুসিয়ার ট্রপিকাল ওয়েস্ট কোস্টে। জলের ঢেউয়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ক্যাটামেরন নামিয়ে দেবে আপনাকে পিটন পাহাড়ের (আগ্নেগিরি বলা ভাল) কাছে । মাটি থেকে ২০০০ মিটার উপরে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। কাছেই আছে বোটানিকাল গার্ডেন আর প্রাকৃতিক জলপ্রপাত।
এখান থেকে সোজা গাড়ি চালিয়ে যাওয়া যায় আগ্নেগিরির ভিতর। ক্যারিবিয়ানে একমাত্র সেন্ট লুসিয়াতেই পাবেন আশ্চর্যতম ড্রাইভ ইন ভলক্যানো। এখানে দেখতে পাবেন সালফার স্প্রিং। ক্যাটামেরনে ওঠার আগে গা ভিজিয়ে নিতে পারেন উষ্ণ জলে। পরের গন্তব্য ছোট্ট টাউন সুফ্রিয়ের। পায়ে পায়ে ঘুরে দেখে নিন। এখানে কোনও ব্যস্ততা নেই, মনে হয় শহর যেন সদ্য ঘুম থেকে উঠেছে। ঘুরে আসুন প্লান্টেশন এস্টেট থেকে। হাজারও রকমরে ফুল, পাখি দেখতে পাবেন রাস্তায়। এরপর স্থানীয় রেস্তরাঁয় চেখে নিন ওয়েল্ট ইন্ডিয়ান স্পেশালিটি। নোকায় উঠে খানিক দূর গিয়ে স্নরকেলিং পয়েন্ট। দু’জনে মিলে ডুব দিন জলে আর এক্সপিরিয়েন্স করুন জলেন তলার রঙিন পৃথিবী। এরপর নৌকা ভাসিয়ে মেরিগট বে-তে। এখানেই ডক্টর ডুলিটল ছবির শু্যটিং হয়েছিল। দু’চোখ ভরে প্রকৃতির সৌন্দর্য পান করে ফিরে আসুন নর্থ আইল্যান্ডে।
সেন্ট লুসিয়ার আর এক আকর্ষণ এর রেনফরেস্ট। ড্রাইব করে পৌঁছে যেতে পারেন। ফরেস্ট গাইড আপনাদের নিয়ে রওনা দেবে নেচার ওয়াকে। দেখতে পাবেন বিশাল গোমিয়ার গাছ, ব্লু মাহোত গাছ, ওয়াইল্ড অ্যানথুরিয়াম লিলি, ওয়াইল্ড নাটমেগ। প্রকৃতি যেন ঢেলে সাজিয়েছে জঙ্গলকে। ম্যাঙ্গগ্রোব কাক্কু, ব্ল্যাক ফিঞ্চের দেখাও মিলবে। আর ভাগ্য ভাল থাকলে দেখতে পাবেন বিশেষ প্রজাতির সেন্ট লুসিয়ান প্যারট। জঙ্গলের প্রতি পদেই কিছি না কিছু রোমাঞ্চ অপেক্ষা করে আছে। এই অভিজ্ঞতা একেবারেই ভোলার নয়। জঙ্গল যদি ভাল লাগে তা হলে ডিপ সি ফিশিং করতে ভুলবেন না। সে আপনি মাছ ধরতে জানেন কি জানেন না, নৌকা করে মাঝ সমুদ্রে গিয়ে নানা ধরনের মাছ দেখা ও বড়শিতে গাঁথার এমন সুযোগ আর কোথাও পাবেন না। টুনা, ডলফিন, ওয়াহু, বিলফিশ নিজের হাতে ধরার মজাই আলাদা।
আর রাতে তারার আলোয় থাকবে স্পেশাল ক্যান্ডেললাইট বিচ ডিনার। সামনে নীল সমুদ্রের হাতছানি আর আপনাদের আদুরে আলাপ, প্রেমের গল্প শুরু করতে এই তো চাই!
কীভাবে যাবেন
সরাসরি সেন্ট লুসিয়া যাওয়া যায় না। ইমিরেটস, ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ় এর বিমান আছে। দুবাই, লন্ডন গয়ে অ্যান্টিগা পৌঁছায়। এখান থেকে কানেক্টিং বিমানে যেতে পারেন সেন্ট লুসিয়া। মায়মি হয়েও সেন্ট লুসিয়া যাওয়া যায়। মায়ামি থেকে সেন্ট লুসিয়া যেতে সময় লাগে মোটামুটি দু’ঘণ্টা।
কোথায় থাকবেন
গেস্ট হাউজ় থেকে শুরু করে অ্যাপার্টমেন্ট সবই আছে সেন্ট লুসিয়ায়। বেছে নিতে পারেন হোটেল বে গার্ডেনস (www.baygardensresorts.com), হোটেল ডাউনটাউন (thedowntownhotel.net), হোটেল কোক পাম (www.coco-resorts.com). সেন্ট লুসিয়া সম্পর্কে আরও জানতে দেখে নিন www.stlucianow.com।