মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১২:১২ পূর্বাহ্ন

চলো নিঝুম দ্বীপে যাই

  • আপডেট সময় শুক্রবার, ৩১ মার্চ, ২০২৩
802186 Nijhum Dwip (Nijhum island) once known as Char Osman is a small island under Hatiya Upazila in Noakhali district in Bangladesh. There was no settlement on the island until 1970 before which people used to come to the island on seasonal basis. The island was included in the Hatiya constituency in the early 70s. At that time a large number of people from Hatiya, Shahbajpur and Ramgati, losing their lands and homes in riverbank erosion migrated to the island as new settlers. The Forest Department of the government of Bangladesh created mangrove forest on the island and in 2001 declared it as National Park. The main attraction of the park is a herd of about 25,000 spotted dear or Chitra Horin. Nijhum Dwip, Noakhali, Bangladesh. December 10, 2009. (photo); (add.info.: Bangladesh); Majority World/UIG.

প্রাণ ও প্রকৃতির এক অপার সমাহার আমাদের দক্ষিণাঞ্চল। অনন্য জীবনধারা থেকে প্রকৃতির রূপের খেলা, কী নেই বঙ্গোপসাগরে বুকজুড়ে জেগে থাকা দক্ষিণের ভূখণ্ডে। সাগরের বুকে তেমনই এক ভূখণ্ড নোয়াখালী জেলার হাতিয়া উপজেলার অন্তর্গত নিঝুম দ্বীপ।

মনপুরা ভ্রমণ শেষে নিঝুম দ্বীপের হাতছানিতে পা বাড়ালাম সেদিকেই। মনপুরার হাজিরহাট থেকে ২০০ টাকা ভাড়ায় মোটরসাইকেলে জনতাঘাট পেরিয়ে চলে গেলাম মনপুরা সৈকতের কাছের একটি ঘাটে। সেখান থেকে ছাড়বে আমাদের নিঝুম দ্বীপগামী ট্রলার। ট্রলার আগে থেকেই ঠিক করা ছিল।

পূবাকাশে জ্বলজ্বলে সূর্যের আলো সাগরের ছোট ছোট ঢেউগুলোয় ঝলমল করছে, সৈকতের কেওড়া বন পেরিয়ে আর্দ্র হাওয়া এসে লাগছে গায়ে। এর মাঝেই সৈকতের পাড় ধরে যাত্রা শুরু করল আমাদের ট্রলার। নীল জলে আমাদের ট্রলার যতে এগিয়ে যেতে লাগল, ততই ঝাপসা হয়ে যেতে লাগল ফেলে আসা সৈকত, কেওড়া বন, যেন দূরের কোনও গ্রাম।

মনপুরাকে যত পেছনে ফেলে আসছি, ততই নিকটবর্তী হচ্ছে নিঝুম দ্বীপ। কাছেই সবুজ বাদাবন আর উঁচু ভূমি জানান দিল আমরা চলে এসেছি আকাঙ্ক্ষিত নিঝুম দ্বীপে। খালের ভেতর দিয়ে আরও কিছু দূর এগিয়ে চলতে লাগল আমাদের ট্রলার। পথে দেখা হলো ট্রলার চালিয়ে যাওয়া সদ্য শৈশব পেরোনো, কিংবা কেবল কৈশোরে পা ফেলা কিছু দূরন্ত বালকের সাথে। ট্রলারে তাদের পেড়ে আনা সবুজ কেওড়া ফল। চাইতেই আগ্রহভরা হাসিমুখে কয়েক ঝোঁকা উপহার দিয়ে যেন আমাদের স্বাগতম জানাল তাদের বাড়ি, নিঝুম দ্বীপে।

আর কিছু দূর এগোতেই চোখে পড়ল বন বিভাগের বাংলো, ওয়াচ টাওয়ার, নামারবাজার ঘাট। নামারবাজার ঘাটে থামল আমাদের ট্রলার। ঘাটের ঠিক পাশে আমাদের থাকার হোটেল। ট্রলার থেকে নেমে হাঁটলাম হোটেলের দিকে। নতুন ভূখণ্ডে পা ফেলার অপেক্ষা আমাদের ফুরাল।

হোটেলে কিছুক্ষণ আরাম করে গোসল করতে বেরোলাম বন বিভাগের বাংলোর পাশের বিশাল পুকুরে। গোসল করতে নেমে ছোটখাটো একটা সাঁতার প্রতিযোগিতাও হয়ে গেল আমাদের। গোসল সেরে উপরে উঠতেই আমাদের জন্য অপেক্ষা করছিলে এক বিস্ময়। পুকুরের পাড়ে নিশ্চিন্তে শুয়ে আরাম করছে একটি হরিণ! হরিণ সাধারণত লাজুক হলেও আমাদের উপস্থিতিতে তার তেমন কোনও ভাবান্তর লক্ষ করা গেল না। আমরা তার মাথায় ও পিঠে হাত বুলিয়ে আদর করলাম, যা বেশ উপভোগই করল হরিণটি।

এই ঘাটে প্রতিদিন মাছ নিয়ে ভেড়ে সমুদ্রফেরত বেশ কিছু ট্রলার। আমার উঠেছিলাম হোটেল নিঝুম দীপান্তরে। সুন্দর ছিমছাম হোটেলটির মালিক নিজেও একজন মাছের আড়তদার এবং ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার। তাঁর আড়তে সদ্য ভেড়া এক ট্রলারে দেখা পেয়ে গেলাম সংকটাপন্ন শাপলাপাতা মাছের, স্থানীয়ভাবে যা পরিচিত হাউস মাছ নামে। উল্লেখ্য, সংকটাপন্ন হওয়ায় শাপলাপাতা মাছ ধরা ও খাওয়ায় নিরুৎসাহিত করা হয়।

বিকেলে দেখতে বেরোলাম নিঝুম দ্বীপ ন্যাশনাল পার্ক। পার্কে বনের ভেতর হাঁটার পথে দেখা মিলে গেল হরিণের। বনের ভেতর এমন কাছ থেকে হরিণ দেখতে পারাটা খুবই আনন্দের। ম্যানগ্রোভ এবং তার ভেতর দিয়ে বয়ে চলা খাড়ি দেখে মনে হচ্ছিল যেন সুন্দরবনের ভেতরেই আছি। আরও ঘুরলাম বন্দরটিলা ঘাটসহ বেশ কয়েকটি জায়গা। জেলেদের কাছ থেকে শুনলাম গভীর সমুদ্রে তাঁদের মাছ ধরার গল্প, তাঁদের সুখ ও দুঃখ।

নামারবাজার ঘাট থেকে নিঝুম দ্বীপ সৈকত হাঁটার দূরত্বে, মাত্র কয়েক মিনিটের পথ। জোছনা রাত হওয়ায় সৈকতে রাতের  সৌন্দর্য মিস করতে চাইলাম না আমরা। চাঁদের আলোয় ভাটা পড়া সৈকতের চিকচিক করা বালুতে হাঁটতে হাঁটতে মনে হলো, জগতের সব সৌন্দর্য যেন ধরা দিয়েছে এখানে। অপার মুগ্ধতা নিয়ে ঘাটে ফিরে খাবার হোটেলে ইলিশ ভক্ষণ করে সৈকতে সূর্যোদয় দেখার পরিকল্পনা করে চলে গেলাম শান্তির নিদ্রায়।

আমরা ভোরে সৈকতে সূর্যোদয় দেখলাম। নিঝুম দ্বীপে ভোরের আলো ফুটে উঠছে। আমাদেরও সময় হচ্ছে ব্যাগ গোছানোর। নিঝুম দ্বীপ যত সুন্দরই হোক, তার মায়া রেখে ফিরতে যে আমাদের হবেই। দুপুর ১২টায় হাতিয়া লঞ্চঘাট থেকে ছাড়বে আমাদের ঢাকাগামী লঞ্চ ফারহান-৪। সব কাজ সেরে ঠিক সময়ের আগেই পৌঁছাতে হবে ঘাটে।

নামারবাজার ঘাট থেকে ১০০ টাকা মোটরসাইকেল ভাড়ায় প্রথমে স্পিডবোট ঘাটে, জনপ্রতি ৮০ টাকা ভাড়ায় স্পিডবোটে চ্যানেল পাড় হয়ে আবার ৩০০ টাকা মোটরসাইকেল ভাড়ায় জাহাজমারা হয়ে লঞ্চ ঘাটে পৌঁছে গেলাম। এই লঞ্চ আমাদের ভোর ৫টায় নামিয়ে দেবে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে।

যেভাবে যাবেন

অামাদের মতো মনপুরা হয়ে ট্রলারে কিংবা হাতিয়া হয়ে নিঝুম দ্বীপ যেতে পারেন। লঞ্চে সদরঘাট থেকে সিঙ্গেল কেবিনের ভাড়া পড়বে এক হাজার টাকা, ফ্যামিলি কেবিন ভাড়া তিন-চার হাজার টাকা, ডেকের ভাড়া ২০০-৩০০ টাকা। হাতিয়া ঘাট থেকে ২৫০-৩০০ টাকা ভাড়ায় মোটরসাইকেলে স্পিডবোট ঘাট, ৮০ টাকায় স্পিডবোটে চ্যানেল পাড় হয়ে ১০০ টাকা ভাড়ায় মোটরসাইকেলে নামারবাজার ঘাট।

যেখানে থাকবেন

নামারবাজার ঘাটে হোটেল নিঝুম দ্বীপান্তরসহ বেশ কিছু হোটেল আছে। নিঝুম দ্বীপে থাকার ব্যবস্থা ভালোই বলা চলে।

যা খাবেন

এখানে বিভিন্ন রকমের সামুদ্রিক মাছ খেতে পারেন। এখানকার মহিষের দুধের কাঁচা দইও বিখ্যাত।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com