বিগত কয়েক বছর ধরে দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশ থেকে আসা অভিবাসীদের অন্যতম প্রিয় গন্তব্য হয়ে উঠেছে দক্ষিণ-পশ্চিম ইউরোপের দেশ পর্তুগাল। একটি নির্দিষ্ট কাজের চুক্তির শর্ত পূরণ করে কয়েক বছরের মধ্যে নিয়মিত হওয়ার সুযোগ আছে দেশটিতে৷ ফলে অনিয়মিত অভিবাসীরা ভিড় বেড়েছে দেশটিতে৷
তবে আবাসন সংকট, ইইউর অন্যান্য দেশগুলোর তুলনায় কম বেতন ও দীর্ঘ প্রসাশনিক জটিলতার কারণে বছরের পর বছর ধরেও বৈধতার অপেক্ষায় আছেন হাজারো অভিবাসী।
প্রশাসনিক জটিলতা কমানোর উদ্যোগ নিয়েছে লিসবন কর্তৃপক্ষ৷ সম্প্রতি তারা জানিয়েছে, ২০২১ ও ২০২২ সালে বৈধ হতে যারা আবেদন করেছেন, তাদের দীর্ঘ জট
এই উদ্যোগের আওতায় প্রায় তিন লাখ অনথিভুক্ত অভিবাসনপ্রত্যাশীকে বৈধতা দিতে চায় পর্তুগাল সরকার।
অনেকেই এটিকে গণ বৈধতা বলে আখ্যায়িত করেছেন৷ প্রকৃতপক্ষে এটি ২০২১ ও ২০২২ সালের মধ্যে সব শর্ত পূরণ করে যারা আবেদন করেছেন, তাদের আবেদন দ্রুত নিষ্পত্তির অংশ বলে ইনফোমাইগ্রেন্টসকে নিশ্চিত করেছে পর্তুগালের ইমিগ্রেশন অ্যান্ড বর্ডার সার্ভিস (এসইএফ)।
সেফ নামে পরিচিত পর্তুগিজ সরকারের এই দপ্তরটি আরও জানিয়েছে,
ইমিগ্রেশন অ্যান্ড বর্ডার সার্ভিস অন্যান্য সরকারি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বয় করে ২০২২ সালে প্রবর্তিত আইনি পরিবর্তনগুলো মেনে চলার উদ্যোগ নিয়েছে। সরকার বিদেশি নাগরিকদের রেসিডেন্স পারমিট প্রক্রিয়া নিয়ে একটি নতুন মডেলও তৈরি করেছে।
বৈধ হয়েছেন ৮৬ হাজারেরও বেশি দক্ষিণ এশীয় নাগরিক
২০১৮ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত দক্ষিণ এশিয়ার দেশ বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, নেপাল ও শ্রীলংকরা নাগরিকদের পরিসংখ্যান নিয়ে ইমিগ্রেশন অ্যান্ড বর্ডার সার্ভিস (এসইএফ) এর সঙ্গে কথা বলেছে ইনফোমাইগ্রেন্টস।
সংস্থাটি জানিয়েছে, ২০২২ সালে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বৈধতা প্রাপ্তির দিক থেকে শীর্ষে আছেন ভারতীয়রা। গত বছর পর্তুগালে ৩৪ হাজার ২৩২ জন ভারতীয় অভিবাসী অনিয়মিত থেকে নিয়মিত হয়েছেন৷ ২০২১ সালে এই সংখ্যাটি ছিল ৩০ হাজার ২৫১ জন। অর্থাৎ আগের বছরের তুলনায় ১২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
এই প্রক্রিয়ায় ২০১৮ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত মোট এক লাখ ১৮ হাজার ১৩৬ জন ভারতীয় অভিবাসী পর্তুগালে বৈধতা পেয়েছেন।
তালিকার দ্বিতীয় শীর্ষ দেশ নেপাল। ২০২২ সালে নেপালের ২৩ হাজার ৪৪১ জন নাগরিক নিয়মিত হয়েছেন। যা এর আগের বছরের তুলনায় প্রায় ৯ শতাংশ বেশি।
অপরদিকে, তালিকার তৃতীয় স্থানে আছেন বাংলাদেশিরা। আটিলান্টিকের তীরে অবস্থিত এই ইউরোপীয় দেশটিতে গত বছর ১৭ হাজার ১৬৯ জন বাংলাদেশি বৈধ অভিবাসী হিসেবে নিবন্ধিত হয়েছেন। যা আগের বছরের তুলনায় প্রায় ৬৪ শতাংশ বেশি। ২০২১ সালে ১০ হাজার ৯৩৪ জন বাংলাদেশি নিয়মিত হয়েছিলেন।
পাকিস্তানের নাগরিকেরা তালিকার চতুর্থ অবস্থানে আছেন। দেশটির ১১ হাজার ৩৮৫ জন অভিবাসী গত বছর বৈধতা পেয়েছেন। যা ২০২১ সালের তুলনায় প্রায় ৬৬ শতাংশ বেশি।
এছাড়া, শ্রীলঙ্কার ১৩৪ জন নাগরিক গত বছর বৈধ অভিবাসী হিসেবে নিবন্ধিত হওয়ার সুযোগ পেয়েছেন। দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশগুলোর তুলনায় দেশটির অভিবাসীদের সংখ্যা পর্তুগালে বেশ কম।
যেভাবে নিয়মিত হবেন অভিবাসীরা
সরকারের নতুন মডেল অনুযায়ী, আটকে থাকা অভিবাসীরা দুটি ধাপে নিয়মিত হবেন।
প্রথমত, আটকে থাকা অভিবাসীদের অনলাইনে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সঙ্গে সাক্ষাৎকার পর্ব শেষ করবেন। এক্ষেত্রে তাদেরকে সেফ থেকে নির্দিষ্ট তারিখের ব্যাপারে আগেই জানানো হবে। এই পর্বটির জন্য অভিবাসীদের ইতিপূর্বে সশরীরে সেফ কার্যালয়ে যেতে হতো।
প্রথম ধাপ সফলভাবে শেষ হলে, দ্বিতীয় ধাপে অভিবাসীদের অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়ে সরাসরি পরিষেবা ডেস্কে যেতে হবে। নতুন মডেল অনুযায়ী, বৃহত্তর অঞ্চলের পরিষেবা ডেস্কগুলো একটি বড় কেন্দ্রে স্থাপিত হবে। যেখানে অভিবাসীরা পূর্বের চেয়ে বেশি সময় ধরে সেবা নিতে পারবেন।
সেফ আরও জানিয়েছে,
ব্রাজিলসহ বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা পর্তুগিজ ভাষাভাষী অভিবাসীদের আরও দ্রুত ও সহজ উপায়ে রেসিডেন্স পারমিট দিতে একটি দ্রুত ও সহজ পদ্ধতি স্থাপন করা হবে। দীর্ঘ জটিলতার কারণে এই খাতেও প্রচুর জট দেখা দিয়েছে।
সেফ আশা করছে, এই মডেলের সাহায্যে করোনা মহামারি ও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তীব্র হয়ে ওঠা জটিলতা দ্রুত পুনরুদ্ধার করা সহজ হবে।