শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:৫৪ অপরাহ্ন

পর্যটকদের কাছে এক অনন্য আকর্ষণ বালি

  • আপডেট সময় বুধবার, ২৯ মার্চ, ২০২৩

দীর্ঘ কাজের শেষে সবাই চায় অবসর। ছুটিতে অবসর সময় কাটানোর জন্য একেক জন পছন্দ করেন একেক পদ্ধতি। কেউ ঘরে বসে বই পড়েন, কেউ পরিবারে সময় দেন, আবার কেউ পছন্দ করেন ঘুরতে যেতে। অনেকে কয়েকদিনের জন্য পাড়ি জমান দেশের বাইরে। আমাদের এশিয়া মহাদেশের লোকেরা দেশের বাইরে ছুটি কাটাতে যে সকল স্থান পছন্দ করে তাদের মধ্যে অন্যতম ইন্দোনেশিয়া। প্রায় সতেরো হাজারেরও বেশী দ্বীপ নিয়ে গঠিত ইন্দোনেশিয়া ব্রাজিলের পর দ্বিতীয় বৃহৎ জীববৈচিত্র্যের দেশ। এর জীব ও উদ্ভিদ শ্রেণীর মধ্যে এশীয় ও অস্ট্রেলীয় সংমিশ্রণ দেখা যায়। সুমাত্রা, জাভা, বোর্নিও এবং বালিতে এশীয় প্রাণীদের রয়েছে বিচিত্র সমারোহ।

কুটা সমুদ্র সৈকতের পানির রং গাঢ় নীল। নীল সৈকত আর সাদা বালি আপনার মন ভরিয়ে তুলবে

ল্যাটিন ইন্ডাস শব্দ থেকে ইন্দোনেশিয়া শব্দের উৎপত্তি। অর্থ দ্বীপ। ডাচ উপনিবেশের কারণে তাদের দেয়া নামটি ওই অঞ্চলের জন্য প্রচলিত হয়। ১৯০০ সাল থেকে জায়গাটি ইন্দোনেশিয়া নামে পরিচিতি পায়। প্রাকৃতিক কারণেই ইন্দোনেশিয়া ভ্রমণের জন্য অন্যতম উপযুক্ত একটি দেশ। আর এই দেশটিতে পর্যটকদের জন্য সবচেয়ে আকর্ষণীয় প্রদেশ হলো বালি, যেখানে একসাথে রয়েছে প্রচুর দর্শনীয় স্থান।

লোভিনা সৈকতে রয়েছে ডলফিন দেখার বিশেষ ব্যবস্থা

বালি মূলত ইন্দোনেশিয়ার একটি একক দ্বীপ। বালির রাজধানী দেনপাসার। বালির সবচেয়ে বিখ্যাত দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে বিশ্বসেরা হলো এর সমুদ্র সৈকত। এখানকার সৈকতগুলোতে স্পিডবোটে টেনে নেয়া প্যারাসুটের সাহায্যে মানুষের আকাশে ওড়ার সুযোগ রয়েছে। সৈকতের সৌন্দর্যের পাশাপাশি দেখার মতো বালিতে রয়েছে কয়েক হাজার বছরের পুরনো মন্দির। এসব মন্দিরের মধ্যে বালির উত্তর-পশ্চিমে ‘তানাহ লট’ নামক স্থানের মন্দিরগুলো সবচেয়ে বিখ্যাত। সমুদ্রের কাছাকাছি নির্মিত মন্দিরগুলো অনেক আগের রাজাদের রাজসিক প্রস্তরশৈলীর এক অপূর্ব নিদর্শন। মূলত এটি তীর্থযাত্রীদের জন্য পবিত্রতম জায়গা। মন্দিরের দৃষ্টিনন্দন স্থাপত্যশিল্প, নির্মল ও শান্ত পরিবেশে মন সহজেই স্নিগ্ধ হয়ে ওঠে। মন্দিরগুলো প্রায় দেড় হাজার বছরের পুরনো। জোয়ারের সময় এই মন্দিরগুলোর চারপাশে যখন পানি এসে জড়ো হয় তখন দূর থেকে মন্দিরগুলোকে পানির ভেতরে পদ্মফুলের মতো ভাসমান বলে মনে হয়। বিশেষ করে পূর্ণিমার রাতে জোয়ারের সময় এই মন্দিরগুলোর অপরূপ রূপ চোখে পড়ার মতো।

বালির উত্তর-পশ্চিমে তানাহ লট নামক স্থানে বিখ্যাত মন্দিরগুলোর একটি

ইন্দোনেশিয়া মুসলমানপ্রধান দেশ হলেও বালি হিন্দুপ্রধান দ্বীপ। বালিতে বসবাসকারীদের মধ্যে ৮৪.৫ শতাংশই হিন্দু এবং মন্দিরের আধিক্যের কারণে বালিকে বলা হয় দেবতাদের দ্বীপ, শান্তির দ্বীপ। বালির অন্যতম জাঁকজমকপূর্ণ এলাকা কুটা। বালির কুটা সমুদ্রসৈকতের পানির রং গাঢ় নীল। এই নীল সৈকত আর সাদা বালির ভেতরে ঝলমলে রোদের দিনে ঘুরে বেড়াতে ক্লান্তি লাগবে না। তবে বালির বিখ্যাত সূর্যাস্ত দেখতে হলে যেতে হবে উলুওয়াটু সানসেট পয়েন্টে। সূর্যাস্তের পাশাপাশি উলুওয়াটুর বালি সংস্কৃতির অন্যতম ঐতিহ্যবাহী নাচ কেকাক পরিবেশনার জন্য বিখ্যাত। আর রাত্রিযাপন উলুওয়াটুতে করার চেয়ে সেমিন্যাক বীচে করা আরও বেশী আনন্দের। সোনালি সমুদ্র সৈকত, সমুদ্রে উইন্ড সার্ফিং, ঘন সবুজ বনানী, কারুকার্যময় মন্দির ও বিদেশিদের মনপছন্দ সি-ফুড ইত্যাদি মিলিয়ে অন্যরকম রাত খুঁজে পাওয়া যায় সেমিন্যাক বিচে। মূলত এই বিচে রাত কাটানোর জন্য আগত পর্যটকদের পরিমাণ চোখে পড়ার মতো।

উবুদে মূল দর্শনীয় বস্তু হলো পাহাড়ের গায়ে জুম চাষের ফলে গড়ে ওঠা অপূর্ব ধানক্ষেত

বালির একেক অঞ্চলের সমুদ্র সৈকত একেক রকম। বালিতে ‘লোভিনা’ নামক একটি সৈকত রয়েছে যেটি বন্য ডলফিন দেখার জন্য বিখ্যাত। এই সৈকতে ডলফিন দেখার জন্য রয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা। এক ধরনের নৌকায় বিশেষ ব্যবস্থা রাখা আছে যেখানে বসে পর্যটকরা ঝাঁকে ঝাঁকে ডলফিনের লাফালাফি আর সাঁতার দেখার সুযোগ পান। বালিতে যে শুধু সমুদ্র সৈকত আছে তা নয়। এখানে রয়েছে জীবন্ত আগ্নেয়গিরি। সমুদ্র সৈকতের কোল ঘেঁষে বেশ কিছু দূরে বালি প্রদেশের কিন্তামানি অঞ্চলের জীবন্ত আগ্নেয়গিরি বাতুর এবং পাহাড় ঘেঁষা বাতুর হ্রদ পর্যটকদের জন্য অন্য এক আকর্ষণীয় স্থান। কিন্তামনি  থেকে ৩৯ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ‘তির্তা এম্পুল’ নামক একটি মন্দিরও দর্শনীয় স্থান হিসেবে খুবই বিখ্যাত। মন্দিরের এক পাশে রয়েছে বিস্তৃত সবুজ পাহাড়, অন্য পাশে রয়েছে কয়েকটি ছোট ছোট জলাশয় যার উৎস পাহাড় থেকে বেরিয়ে আসা এক প্রস্রবণ। মন্দিরের চত্বরে রয়েছে অনেকগুলো ছোট মন্দির। স্থাপত্যশৈলী ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কারণে এই মন্দিরটি পর্যটকদের কাছে খুবই আকর্ষণীয়।

আর্ট ভিলেজ বালির প্রাচীন একটি গ্রাম। নানা ধরনের হস্তশিল্পের জন্য এটি বিখ্যাত

এছাড়া কুটা এবং কিন্তামানির মাঝামাঝি এলাকা ‘উবুদ’ ও দর্শনীয় স্থান হিসেবে বেশ বিখ্যাত। উবুদে মূল দর্শনীয় বস্তু হলো পাহাড়ের গায়ে জুম চাষের ফলে গড়ে ওঠা ভিন্ন সবুজের অপূর্ব ধানক্ষেত। তবে উবুদ থেকে ফেরার পথে আর্ট ভিলেজ পরিদর্শন না করে আসা হবে বোকামি। এটি বালির একটি প্রাচীন গ্রাম। নানা ধরনের হস্তশিল্পের জন্য বিখ্যাত। বালিকে পরিকল্পিত পর্যটন এলাকা হিসেবে গড়ে তোলার সময় গ্রামটিকেও নানাভাবে সজ্জিত করা হয়। এই গ্রামের অধিকাংশ বাড়িতে কাঠের ভাস্কর্য কিংবা নানা স্যুভেনির তৈরি করা হয়। এগুলো ধারণ করে ইন্দোনেশিয়ার প্রকৃত ও ঐতিহ্য।

বালির বিখ্যাত সূর্যাস্ত দেখতে হলে যেতে হবে উলুওয়াটু সানসেট পয়েন্টে। দেখতে হবে কেকাক নাচ

সব মিলিয়ে সবুজ ধানক্ষেত, সুনীল সমুদ্র, বাহারি স্থাপত্যের প্রাচীন মন্দির, অপূর্ব সূর্যাস্তের পর সাগরের তীরে খোলা আকাশের নিচে কেকাক নাচের আয়োজন, বন্য ডলফিন দেখার আয়োজন, হাজার রকমের পাখি এই দ্বিপটিকে পরিণত করেছে দর্শনীয় বস্তুতে। যে কারণে পর্যটকদের কাছে বালি এক অনন্য আকর্ষণ।

 

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com