গোপালগঞ্জ জেলার কোটালীপড়ার আশুতিয়া গ্রামের হতদরিদ্র পরিবারের সন্তান সোহাগ মিয়া ওরফে আরাভ খান দুবাইতে আরাভ জুয়েলারি দোকানের মালিক।
অতি সম্প্রতি এই দোকানের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের জাতীয় দলের স্বনামধন্য ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান এবং দেশি-বিদেশি শিল্পীসহ নানা পেশার লোকজন অংশগ্রহণ করেন।
প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় আরাভ খানের জুয়েলারি দোকানের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের দৃশ্য দেখে কোটালীপাড়ার আশুতিয়া গ্রামের মানুষ হতভম্ব হয়ে যান।
তারা বলেন, এই গ্রামের হতদরিদ্র মতিউর রহমান মোল্লার ছেলে সোহাগ মোল্লা। সে এত টাকার মালিক কীভাবে হলো? গ্রামের মধ্যে নারী-পু’রু’ষ থেকে শুরু করে সবার মধ্যে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়।
সবাই বলে—তার নাম তো সোহাগ মোল্লা। আরাভ খান হলো কী করে? তার আ’বার আ’রেক নাম রবিউল ওরফে আপন। এই আলোচনা-সমালোচনার ঝড় গ্রাম থেকে উপজেলা, জেলা থেকে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে।
গ্রামবাসীর দাবি, এত টাকা তো আ”রাভ খানের হতে পারে না। তার পেছনে নিশ্চয়ই রয়েছে শীর্ষ কোনো কর্মকর্তা, যারা সরকারের প্রশাসনে থেকে শত’শত কোটি টাকার মালিক হয়েছেন, তাকে দিয়ে এই ব্যবসা পরিচালনা করছেন।
আবার কেউ কেউ বলছেন, ব্যাংক কিংবা সরকারি বিভি’ন্ন আ’র্থিক প্রতি’ষ্ঠা’নে হাজার হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎকারীরা এই প্রতিষ্ঠানের মালিক হিসেবে নেপথ্যে রয়েছেন।
অপরাধ বিষয়ে অভিজ্ঞ একাধিক শীর্ষ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তা বলেন, আরাভ খানের বিষয়ে তথ্য রয়েছে, সে একজন পাকা প্রতারক। ঢাকা শহরের শীর্ষ সসীদের সহযোগী হিসেবে সে কাজ করেছে।
দুবাইতে ঐ জুয়েলারি দোকানের ফলাও করে উদ্বোধ’নী অনুষ্ঠান করে প্রি’ন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় তা প্রচারের কারণে নেপথ্যে ঐ সম্পদের যে মালিকেরা রয়েছেন, তারা কেউ এখন আর এই স’ম্পদ দাবি করবে না।
দাবি করলে তাদের লুটপাটের আসল তথ্য ধরা পড়ে যাবে। এটা আরাভ খানের পরিকল্পিত প্রতারণার একটি অংশ। এখন পরোক্ষভাবে এই সম্পদের মালিক আরাভ খান।
একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা এই রহস্য ‘দ্ঘাটনের জন্য মাঠে নেমেছে। পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আরাভ খানকে দেশে ফিরিয়ে আনতে পারলে পু’লিশ ইন্সপেক্টর হ কাণ্ডসহ তার সব অপকর্মের রহস্য উদ্ঘাটন হবে। এদিকে দুবাই থেকে আরাভ যাতে পালাতে না পারে পুলিশ সেদিকে সতর্ক নজর রাখছে। বিষয়টি ইন্টারপোলকে অবহিত করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে পুলিশের আইজি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, আরাভ খানকে দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে ইন্টারপোলের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে। যেভাবে দর’কার সেই ভাবে আমরা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি।
এদিকে জানা গেছে, দুবাইতে স্বর্ণের দোকান উদ্বোধনের খবরে গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলায় আলোচনার ঝড় বইছে। দুবাইয়ের হিন্দ প্লাজায় আরাভ জুয়েলারি নামে এই দোকানটির মালিক কোটালীপাড়া উপজেলার হিরণ ইউনিয়নের আশুতিয়া গ্রামের আরাভ খান বলে জানা গেছে। তবে তার প্রকৃত নাম সোহাগ মো’ল্লা বলে জানিয়েছেন এ’লাকাবাসী।
সোহাগ মোল্লা আশুতিয়া গ্রা’মের দিনমজুর মতিয়ার রহমান মোল্লার ছেলে। মতিয়ার রহমান মোল্লা এক সময় ব’গেরহাট জেলার চিতলমারি উপজেলায় ফেরি করে সিলভারের হাঁড়ি-পাতিল বিক্রি করতেন।
এখানেই ১৯৮৮ সালে সোহাগ মোল্লার জন্ম হয়। ২০০৫ সালে চিতলমারি সদরের একটি বিদ্যালয় থেকে সোহাগ মোল্লা এসএসসি পাশ করে। দারিদ্র্যতার কারণে এরপর আর তার লেখাপড়া হয়নি।
চিতলমারি থেকে ২০০৮ সালে ভাগ্যের অন্বেষণে সে ঢাকা চলে যায়। ঢাকা গিয়ে নাম পরিবর্তন করে হয়ে যায় মোল্লা আপন। জড়িয়ে পড়ে অপরাধ জগতে।
ঢাকায় পুলিশসহ বিভিন্ন অপরাধ কর্মকাণ্ডের কারণে রাজ’ধানীর বিভিন্ন থানায় তার বিরুদ্ধে ডজন খানেক মাম’লা হয়। এরপর পুলিশের হাত থেকে বাঁচতে সোহাগ মোল্লা ওরফে মোল্লা আপন, ওরফে রবিউল ইসলাম রবি, ওরফে শেখ হৃ’দি, ওরফে আরাভ খান ভারতের কলকাতায় পালিয়ে যায়। সে’খান থেকে সে চলে যায় দুবাইয়ে।
সরেজমিনে আশুতিয়া গ্রামে গিয়ে কথা হয় সোহাগ মোল্লা ওরফে আরাভ খানের চাচাতো ভাই ফেরদৌস মোল্লার সঙ্গে। তিনিও সোহাগ মোল্লা ওরফে আরাভ খান অল্প দিনে এত টাকার মালিক হওয়ায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। ফেরদৌাস মোল্লা জানান, কিছু দিন আগে সোহাগ মোল্লা ওরফে আরাভ খান তার দুই বোন ও মা বাবাকে দুবাই নিয়ে গেছে।
হিরণ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাজাহারুল আলম পান্না বলেন, সোহাগ মোল্লা ওরফে আরাভ খান একটি দরিদ্র পরিবারের সন্তান। গত পাঁচ সাত বছর ধরে সে এলাকায় আসে না। হঠাৎ করে সে কীভাবে এত টাকার মালিক হলো এটা আমাদের বোধগম্য নয়।