পরিবার নিয়ে ঘুরতে গেলে মাথায় রাখতে হবে যেন ভ্রমণটা কারো জন্য মজার আর কারো জন্য বিরক্তির না হয়। পরিবারের প্রত্যেক সদস্য যেন মজা পায় এমন কোন জায়গা ঠিক করতে হবে। পাশাপাশি পরিবারের নিরাপত্তাকেও দিতে হবে সর্বাধিক গুরুত্ব।
সে বিবেচনায় অস্ট্রেলিয়া থাকবে তালিকার প্রথম সারিতে। থিম পার্ক, রৌদ্রজ্জ্বল সৈকত, ওয়াটার স্পোর্টস, রেইন ফরেস্ট, বন্যপ্রাণী এসব মিলিয়ে যেকোনো বয়সের মানুষের জন্য বিনোদনের প্রাণকেন্দ্র বলতে পারেন অস্ট্রেলিয়াকে।
আজ আপনাদের জানাবো পারিবারিক ভ্রমণে অস্ট্রেলিয়া গেলে যেসব জায়গা না ঘুরলে নয় –
গোল্ড কোস্টের থিম পার্ক
শিশুদের জন্য কিছু জনপ্রিয় থিম পার্ক চোখে পড়বে কুইন্সল্যান্ডের উপকূলবর্তী শহরগুলোতে। সামুদ্রিক প্রাণী দেখার জন্য যেতে পারেন সি ওয়ার্ল্ড মেরিন পার্ক। পোলার বিয়ার বা মেরু ভল্লুকের দেখা মিলবে এখানে। শার্ক লেগুন বলে একটা জায়গা আছে এই পার্কে। যেখানে আপনি বিভিন্ন প্রজাতির হাঙ্গর দেখতে পাবেন। পানির উপর থেকে কিংবা পানির নীচে থেকে দু’ভাবেই দেখার সুবিধা রয়েছে আপনার শিশুদের জন্য।
এছাড়াও রয়েছে মানটা রে, পেলিকান, পেঙ্গুইন, ডলফিনের মত চমৎকার সব প্রাণীর প্রদর্শনী। মজার মজার সব রাইডের ব্যবস্থা রয়েছে পার্কের অপর প্রান্তে। শিশুদের নিয়ে উঠতে পারেন রোমাঞ্চকর স্টর্ম কোস্টার রাইডে। কার্টুন পছন্দ করে না এমন শিশু খুঁজে পাওয়া কঠিন। তাই শিশুদের নিয়ে নিকেলোডিয়ন ল্যান্ডে যেতে পারেন। যেখানে দেখা হয়ে যাবে স্পঞ্জ বব, নিনজা টার্টলস ও ডোরার সাথে। ড্রিমওয়ার্ল্ড নামের আরেকটি চমৎকার থিম পার্ক রয়েছে গোল্ড কোস্টে। যেখানে আপনি সপরিবারে উপভোগ করতে পারবেন। ফান রাইডের পাশাপাশি শিক্ষণীয় ব্যাপারের সাথে পরিচিত হয়ে যেতে পারেন ভিন্টেজ কার এডভেঞ্চার নামের পার্কটিতে।
সবশেষে আপনি যেতে পারেন ড্রিমওয়ার্ল্ড করোবরিতে। যেখানে আপনি নিজের হাতে কুমিরদের খাওয়াতে পারবেন, কুয়ালার সাথে সেলফি তুলতে পারবেন, দেখতে পারবেন নানা জাতের ভয়ংকর সাপ।
কেয়ার্নয়ে স্নোরকেলিং
শিশুদের পর্ব শেষে এবার আপনার পালা। গ্রীষ্মপ্রধান শহর কেয়ার্নস-এ রয়েছে দুইটি তালিকাভুক্ত হেরিটেজ সাইট – গ্রেট ব্যারিয়ার রিফ ও প্রাচীন ডেনট্রি রেনফরেস্ট। সানলাভার রীফ ক্রুজে সওয়ার হয়ে গ্রেট ব্যারিয়ার রিফের বাইরের দিকের মুর রিফ অঞ্চলটা ঘুরে দেখতে ভুল করেন না কোন পর্যটকই। মুর রিফের কাছেই স্নোরকেলিং করার সাইট গুলো অবস্থিত। এখানে আপনি আপনার শিশুদের জন্যও স্নোরকেলিং এর সকল সরঞ্জাম পেয়ে যাবেন। স্বচ্ছ কাঁচের মত পানির গভীরে সবুজ সামদ্রিক কচ্ছপ, ক্লাউন ফিস, বিশাল আকারের ওয়ালি ফিসের সাথে সাঁতার কাটার অভিজ্ঞতা আপনি বা আপনার পরিবারের কেউই বাকি জীবনে ভুলতে পারবেন না।
সিডনির সমুদ্র সৈকত
১০০ এর বেশি সমুদ্র সৈকত রয়েছে সিডনিতে। আপনি দ্বিধায় পড়ে যাবেন কোনটা রেখে কোনটায় যাবেন। এদের মধ্যে উত্তর সিডনির বালমোরাল সৈকতটি পারিবারিক ভ্রমণের জন্য আলাদা ভাবে জনপ্রিয়। এই সৈকতের স্রোত খুব ধীর গতির ও দর্শনার্থীদের নিরাপত্তার জন্য সাঁতার কাটার জায়গা ক্রিত্তিম ভাবে ঘেরাও দেয়া। সৈকতে শিশুদের জন্য খেলাধুলার আলাদা জায়গা রয়েছে। সপরিবারে ভ্রমণের জন্য পূর্ব সিডনির কুজি সৈকতও বেশ জনপ্রিয়।
কুজি সৈকতের পাশেই রয়েছে ঐতিহাসিক ওয়াইলি’স বাথ। সৈকতের দক্ষিণ দিকে শেষ প্রান্তে রয়েছে চমৎকার টাইডাল পুল। সপরিবারে ভ্রমণের জন্য সুসজ্জিত প্লে গ্রাউন্ড সম্বলিত কলারয় বিচ নামের আরেকটি বিখ্যাত সৈকত রয়েছে উত্তর সিডনিতে। মৃদু স্রোতের এই সৈকতে সাঁতার না জেনেও নির্ভয়ে খেলাধুলা করা যায় পাশাপাশি এখানে শিশুদের সার্ফিং করার ব্যবস্থাও রয়েছে।
সবশেষে অস্ট্রেলিয়ার সৈকত ভ্রমণকে পরিপূর্ণতা দিতে ঘুরে দেখতে হবে বন্ডি বিচ। সার্ফিং ও সাঁতারের জন্য বিখ্যাত এই বিচে রয়েছে কিলোমিটার বিস্তৃত সোনালি বর্ণের বালুকাবেলা। শিশুদের সার্ফিং শেখানোর ব্যবস্থা থাকছে এখানে। সৈকতের উত্তর প্রান্তে নিরাপত্তার জন্য ঘেরাও দেয়া একটা সুইমিং পুল আছে যেখানে বড় বড় ঢেউ ঢুকতে পারে না। বন্ডি বিচ প্লে গ্রাউন্ড নিঃসন্দেহে পরবারের ছোট্ট সদস্যদের মন কাড়বে।
ক্যাংগারু দ্বীপ
ইকো ট্যুরিজমের জন্য অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে জনপ্রিয় স্থান ক্যাংগারু দ্বীপ। এই দ্বীপে যাওয়ার পথটাও যথেষ্ট মনোরম। কেপ জারভিস থেকে আপনাকে সিলিংক ফেরিতে উঠতে হবে। যা আপনাকে নিয়ে যাবে দ্বীপের পেনেশোও বন্দরে। সিল বে কন্সারভেশন পার্কে ট্যুর গাইডদের তত্ত্বাবধানে ঘুরে দেখতে পারবেন বিপন্ন সি লায়নের অভয়ারণ্য। শত শত কোয়ালা দেখতে আপনাকে যেতে হবে দ্বীপের পশ্চিম দিকে অবস্থিত হ্যান্সন বে ওয়াইল্ডলাইফ স্যাঙ্কচুয়ারিতে।
সব মিলিয়ে পরিবার নিয়ে ভ্রমণের জন্য অস্ট্রেলিয়ার তুলনা হয় না। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, জীববৈচিত্র্য, সৈকত, পার্ক, প্লে গ্রাউন্ড তো থাকছেই। পাশাপাশি নিরাপত্তার দিক থেকে আপনি থাকতে পারবেন নিশ্চিন্ত। যেটা হয়তো এশিয়ার দেশ গুলোতে কিছুটা দুর্লভ।