ঘুরছিলাম আর ছবি তুলছিলাম। মনে হচ্ছিল আমার স্বপ্নরাজ্যের আমিই রানি। ভেরোনিকা আমাদের বলল, এখন পিটার্সবার্গে রাত হয় না। কী অদ্ভুত শুনতে, না! মজার আরও একটি বিষয় হলো ভেরোনিকা দারুণ বাংলা বলতে পারে। সে দুই বছর বাংলাদেশে ছিল—বাংলাদেশ ও রাশিয়ার চুক্তিতে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের যে কাজ চলছে, সে কাজে। এ জন্য সে খুব ভালোভাবেই বাংলা রপ্ত করেছে। আমিও ওর বাংলা শুনে হতবাক হয়ে যাই। তার বাংলায় কথা বলা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দিই, যা এখন ভাইরালের পর্যায়ে। ভেরোনিকা আমাদের খালি মুখে ছাড়েনি। আমাদের রাশিয়ান স্যুপ, ওয়াফেল আর মোকা কফি ট্রিট দিয়ে হোটেল পর্যন্ত পৌঁছে দেয়। রাতে ক্লান্ত হয়ে হোটেলে এসে দেখি, লিমনের আরও একজন বন্ধু—রকি ভাই—আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে। তার অপেক্ষার কারণ এখানকার বিখ্যাত মুভিং ব্রিজ দেখানোর জন্য। রকি ভাইয়ের সঙ্গেই আমরা শীতের কাপড় জড়িয়ে বেরিয়ে পড়ি আলেক্সান্ডার নাভিস্কি ব্রিজ দেখতে। এটাও আমরা রাতে দেখি। রাতের পিটার্সবার্গ আরও বেশি অপরূপ! নাতিশীতোষ্ণ আর আলোকসজ্জায় আলোড়িত পিটার্সবার্গ! চোখটা বন্ধ করলে এখন মনে হয়, আমি ওখানেই আছি।
পরদিন আমরা বেরোলাম রিভারক্রুসে, চার বন্ধু আর রকি ভাই, পাঁচজন ক্রুসে ঘুরে বেড়ালাম। গোটা পিটার্সবার্গ শহর দেখলাম। ক্রুস থেকে নেমে আমরা গেলাম সেন্টারের সবচেয়ে বড় মসজিদ দেখতে। সেখানে ঈদে একসঙ্গে এক লাখ মুসল্লির নামাজ হয়। তারপর গেলাম পিটার অ্যান্ড পল ফরটেস। রাতের খাবার সারলাম, তখনই লিমন আর প্রবালদা বলল, আমরা আরও এক দিন থাকব এখানে। কারণ জানতে চাইলাম। এ আবহাওয়া ছেড়ে ফিরতে ইচ্ছে করছিল না, আসলে আমাদের কারই ফিরে যেতে মন চাইছিল না।
পরদিন আমরা কোথাও ঘুরতে গেলাম না। পুরোটা দিন হোটেলে আরাম–আয়েশ করে গল্প আর গানে কাটিয়ে দিলাম। পরের সকালটা ছিল পিটার্সবার্গকে বিদায়ের বেলা। রেলস্টেশন যাওয়ার পর থেকেই আমার চোখ গড়িয়ে পড়ছিল পানি! কী কারণে, আমি তা বলতে পারছিলাম না, আসলেই না।
এখন এ ডরমিটরিতে থিসিসের কাজের ফাঁকে যখনই জানালার দিকে তাকিয়ে চোখ বন্ধ করি, কানে বাজে পাখির কিচিরমিচির, স্বপ্নের চেয়ে সুন্দর পিটার্সবার্গের সেই টিউলিপবাগানে আমি! আসলেই পিটার্সবার্গ স্বপ্নের চেয়েও সুন্দর।
লেখক: নাফিজা মৌ, ভরনেজ, রাশিয়া