শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:০২ অপরাহ্ন

দেহব্যবসা করে পড়াশোনা, সৌন্দর্য প্রতিযোগিতায় জিতেছেন ৭টি আন্তর্জাতিক খেতাব

  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ১৪ মার্চ, ২০২৩

ভারতের প্রথম রূপান্তরকামী সুন্দরী হিসেবে সৌন্দর্য প্রতিযোগিতায় ৭টি আন্তর্জাতিক খেতাব নিজের অর্জনের ঝুলিতে পুরেছেন তিনি। ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ফ্যাশন টেকনোলজি (এনআইএফটি)তে পোশাক ডিজাইনিংয়ে স্নাতক এবং নিজ ব্যাচের টপার ছিলেন তিনি। অথচ উপার্জনের জন্য এখনও নিজের দেহকে বিক্রি করতে হয় তাকে।

তার নাম নাজ জোশী। ছোটবেলাতেই বাবা-মা তাকে দূরে সরিয়ে দিয়েছিলেন। তার মেয়েলি হাবভাবে লজ্জায় পড়তেন তারা। প্রতিবেশীদের ভয়ে মুম্বইয়ের এক আত্মীয়ের বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন তাকে। সেখানেই মানুষ হন নাজ।

কারো বোঝা হয়ে থাকতে চাননি এই সুন্দরী। নিজের পোড়াশোনার খরচ নিজেই বহন করেছেন বরাবর। পড়াশোনার ইচ্ছে ছিল প্রবল। আইএমটি থেকে এমবিএ-ও করেছেন নাজ। ১২ বছর বয়স থেকে বারে নাচছেন। তাতে অবশ্য নাজের কোনও অসুবিধা হয়নি। বরং মেয়েদের মতো পোশাক পরতে পেরে, মেক আপ করার সুযোগ পেয়ে ভালই লাগত তার।

এ ভাবেই উপার্জন করে পড়াশোনার পাশাপাশি নিজের লিঙ্গ পরিবর্তন সংত্রান্ত অস্ত্রোপচারের খরচও জোগাড় করেছিলেন নিজেই।

ফ্যাশন ডিজাইনার হতে চেয়েছিলেন নাজ। মডেলিং করার প্রবল ইচ্ছা না থাকলেও ২০১২ সাল থেকে মডেলিং এজেন্সির কাজ করতে শুরু করেন। ২০১৪-এ প্রথম সৌন্দর্য্য প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছিলেন নাজ। তার সাম্প্রতিক সাফল্য এমপ্রেস আর্থের খেতাব জয়।

মে মাসে ভারতের হয়ে এই আন্তর্জাতিক সৌন্দর্য্য প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিলেন নাজ। গত ১ জুন সেই প্রতিযোগিতায় জয়ী হন। ওই প্রতিযোগিতায় নাজ একাই ছিলেন রূপান্তরকামী। আন্তর্জাতিক সৌন্দর্য প্রতিযোগিতায় নারীদের সঙ্গে টক্কর দিয়ে সেরা সুন্দরীর খেতাব ছিনিয়ে নেওয়া রূপান্তরকামীদের মধ্যেও তিনিই প্রথম।

এমপ্রেস আর্থের এই প্রতিযোগিতার শেষ রাউন্ডে ছিল প্রশ্নোত্তর পর্ব। শেষ পাঁচ প্রতিযোগীকে একই প্রশ্ন করেছিলেন বিচারকেরা। জানতে চাওয়া হয়, ‘লকডাউনই কি মহামারির একমাত্র সমাধান?’ জবাবে নাজ বলেন, ‘লকডাউন হয়তো রোগীর সংখ্যা কিছুটা কমাতে পারে। তবে অতিমারিকে সম্পূর্ণ নির্মূল করতে পারে মানুষের স্বাস্থ্য সচেতনতাই। আর আমরা যাঁরা বৃহত্তর প্ল্যাটফর্ম থেকে মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার সুবিধা পাই, তাঁরা এই মঞ্চকে সচেতনতা বাড়ানোর কাজে লাগাতে পারি। তাঁদের ধৈর্য্য ধরতে বলতে পারি। ইতিবাচক হওয়ার প্রেরণা দিতে পারি।’ মহামারি এবং লকডাউন নিয়ে নাজের ভাবনা ভাল লাগে বিচারকদের।

নাজ অবশ্য এর আগেও আরও বহু আন্তর্জাতিক শিরোপা জিতেছেন। ২০২০ সালে মিস ইউনিভার্স ডাইভারসিটির খেতাব পেয়েছেন। ২০১৭ সাল থেকে ২০১৯ পর্যন্ত পর পর তিন বার মিস ওয়ার্ল্ড ডাইভারসিটির মুকুট উঠেছে তাঁর মাথায়। এ ছাড়া মিস রিপাবলিক ইন্টারন্যাশনাল সৌন্দর্য রাষ্ট্রদূত হয়েছেন। রাষ্ট্রপুঞ্জের তরফেও সৌন্দর্য দূত হিসাবে নির্বাচিত করা হয় তাঁকে।

নাজ এখন একা মা। দু’টি মেয়ে আছে তাঁর। একটি আইভিএফ শিশু। অন্য জনকে তার মা ময়লা ফেলার পাত্রে ফেলে দিয়েছিল। সেখান থেকে তাকে তুলে এনে দত্তক নিয়েছেন নাজ। তাদের নিজের মতো করে মানুষ করছেন। নাজ জানিয়েছেন, ভালবাসা তাঁর দুই সন্তানের কাছেই পেয়েছেন তিনি।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com