জাফলং বাংলাদেশের উত্তরপূর্ব অঞ্চলের সিলেট বিভাগের একটি হিল স্টেশন। এখানে পাহাড় আর নদীর অপূর্ব সম্মিলন বলে এই এলাকা একটি অন্যতম পর্যটনস্থল হিসেবে পরিচিত। প্রকৃতি কন্যা নামেও এর রয়েছে আলাদা পরিচিতি। অবস্থান: জাফলং সিলেট জেলার গোয়াইনঘাট উপজেলার অর্ন্তগত একটি এলাকা এবং ভারতের মেঘালয় সীমান্ত ঘেঁষে খাসিয়া-জৈন্তা পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত। ঢাকা থেকে এর দূরত্ব ৩১৫ কিলোমিটার এবং সড়ক পথে পৌঁছাতে সময় লাগে প্রায় ৬ ঘন্টা। এছাড়া সিলেট থেকে এর দূরত্ব ৬০.৭ কিলোমিটার।
ইতিহাস: ইতিহাসবিদদের মতে, বহুবছর ধরে জাফলং ছিল খাসিয়া-জৈন্তা রাজার অধীনে থাকা এক নির্জন বিস্তীর্ণ বনভূমি। ১৯৫৪ খ্রিটাব্দে যখন জমিধারী প্রথার বিলুপ্তি সাধন হয় তখন খাসিয়া-জৈন্তা রাজ্যের অবসান ঘটলেও বেশ কয়েক বছর জাফলংয়ের বিস্তীর্ণ এলাকা পতিত পড়েছিল। পরবর্তীতে পাথরের সন্ধানে ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন অঞ্চল থেকে জাফলং আসতে শুরু করেন। আর তখন পাথর ব্যবসার প্রসার ঘটার ফলে এখানে গড়ে ওঠে নতুন জনবসতি।
বর্ণনা: পাহাড়, নদী, ঝর্ণা ও সবুজ বনে ঘেরা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি হল জাফলং। চা বাগান এবং পাহাড় থেকে গড়িয়ে আসা পাথরের অপার সৌন্দর্যের দেখা মিলবে এখানে। ডাউকি পাহাড় হতে বিরামহীন ধারায় প্রবাহিত মনোমুগ্ধকর জলপ্রপাত বা ঝর্ণা জাফলং এর অবারিত সৌন্দর্যের মধ্যে একটি। সবুজের বুকে নেমে আসা ঝর্ণা ধারায় রোদের আলোর ঝিলিক ও পাহাড়ের গায়ে ভেসে বেড়ানো মেঘের দল বিমোহিত করে পর্যটকদের। জাফলংয়ের বুক চিড়ে বয়ে গেছে দুই নদী। ধলাই ও পিয়াইন। নৌকায় করে পিয়াইন নদীর স্বচ্ছ জলে ভেসে বেড়ানো পর্যটকদের অন্যতম একটি আকর্ষণ। ভ্রমণের জন্য ২৫০ টাকায় ভাড়া পাওয়া যায় ইঞ্জিন নৌকা। সীমান্তের ওপারে ডাউকি নদীর উপরে দুই পাহাড়ের মাঝখানে ঝুলন্ত সেতু বাড়িয়ে তুলেছে জাফলংয়ের সৌন্দর্য। জাফলং এ বাংলাদেশের সীমান্তে দাঁড়ালে নদীর ওপারে ভারতের উঁচু উঁচু পাহাড় শ্রেণি দেখা যায়। যার উপরে রয়েছে ভারতের ডাউকি বাজার। এছাড়া আর যেসব দর্শনীয় স্থান রয়েছে জাফলংয়ে সেগুলো হল-
খাসিয়া পুঞ্জী: জাফলংয়ে সৌন্দর্যে আলাদা মাত্রা যোগ করেছে খাসিয়া পুঞ্জী। নদী পার হলেই খাসিয়া পুঞ্জী। খাসিয়াদের প্রতিটি বাড়িতে দেখা মিলবে পানবরজের। পানপাতা ও সুপারী খাঁচা ভর্তি করার অভিনব এ দৃশ্য পর্যটকদের নজরকাড়ে। পানবরজ ছাড়াও খাসিয়া পুঞ্জীতে দেখা মিলবে কমলা বাগানের। সংগ্রাম পুঞ্জী বা মায়াবী ঝর্ণা: জাফলং জিরো পয়েন্ট থেকে মাত্র ১৫-২০ হাঁটা দূরত্বে রয়েছে এ ঝর্ণাটির অবস্থান। এটি ভারত সীমান্তে পড়েছে। কয়েক ধাপ বিশিষ্ট এ ঝর্ণাটিতে রয়েছে গাছ, পাথর আর পানির অপূর্ব সম্মেলন
চা-বাগান: এছাড়াও জাফলংয়ে দেখা যাবে মনোরম সমতল চা-বাগান। সবুজের সমারোহ বিশিষ্ট এ চা-বাগান পর্যটকদের মন কাড়ে।
যোগাযোগ ব্যবস্থা: ঢাকা থেকে বাস, ট্রেন অথবা বিমান যোগে সিলেট যাওয়া যায়। মালিবাগ রেইল-গেট, রাজার-বাগ অথবা সায়েদাবাদ থেকে গ্রিনলাইন পরিবহন, শ্যামলী পরিবহন, হানিফ পরিবহনসহ আরো কয়েকটি পরিবহন সার্ভিসের বাস ছাড়ে সিলেটের উদ্দেশ্যে। ভাড়া পড়বে ৮৫০-১১০০ টাকা। এছাড়া কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকেও ট্রেনে যাওয়া যাবে সিলেট। তাছাড়া বিমান যোগে যেতে চাইলেও রয়েছে ঢাকা-সিলেট এর বেশ কয়েকটি ফ্লাইট। তারপর সিলেট থেকে বাস, জিপ অথবা অটোরিক্সা যোগে সিলেট-তামাবিল সড়ক ধরে যাওয়া যাবে জাফলং।