শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ১২:১৭ অপরাহ্ন

ঘুরতে যাই চায়ের রাজধানী শ্রীমঙ্গল

  • আপডেট সময় বুধবার, ৮ মার্চ, ২০২৩

যত দূর চোখ যায় কেবল সবুজের হাতছানি। চা বাগানের সারি সারি টিলা, আঁকাবাঁকা পাহাড়ি পথ আর ঘন সবুজ অরণ্যের অপরূপ সৌন্দর্য যে কাউকে আকৃষ্ট করে। তাই পর্যটকরা বার বার ছুটে যায় চায়ের রাজধানীখ্যাত শ্রীমঙ্গলের চিরসবুজের শোভা আর বৃষ্টিস্নাত পাহাড়ি সৌন্দর্য দেখতে।

১৯টি চা বাগানের সতেজ সবুজ পাতায় পূর্ণ হয়ে আছে শ্রীমঙ্গলের নিসর্গশোভা। পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে এবং চায়ের রাজধানী হিসেবে মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলার খ্যাতি সর্বত্রই ছড়িয়ে পড়েছে। নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক দৃশ্য আর নৈসর্গিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি শ্রীমঙ্গল বেড়াতে যাওয়ার এখনই সময়। যদিও এখন বৃষ্টির সময়, তারপরও অ্যাডভেঞ্চার প্রিয়রা প্রস্তুতি নিয়ে বেরিয়ে পড়তে পারেন এ সময়।

এই শীতে ঘুরতে যাই চায়ের রাজধানী শ্রীমঙ্গল…

সারা দেশ থেকেই রেল ও সড়কপথে শ্রীমঙ্গলে যাওয়া যায়। চা, রাবার, লেবু, পান, আনারস ও মূল্যবান কাঠসহ বিভিন্ন আদিবাসী সম্প্রদায়ের বসবাসের কারণে জেলাটি পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে বেশ আকর্ষনীয়। তাইতো দেশি-বিদেশি পর্যটকদের পদভারে বছরের প্রতিটি দিন মুখরিত থাকে চায়ের রাজধানী শ্রীমঙ্গল।

বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিটিআরআই) 
ইনস্টিটিউটের চারদিকে বিচিত্র সব রঙ বেরঙের ফুলের সমাহার। এছাড়াও রয়েছে সারিবদ্ধ পাম, ইউক্যালিপটাস ইত্যাদি বৃক্ষরাজির শোভা। লেকের জলে দেখতে পাবেন ফুটন্ত লাল পদ্মফুল। আর এসবের মাঝে দাঁড়িয়ে আছে চা গবেষণা ইনস্টিটিউট। এখানে আরও আছে একটি চা প্রক্রিয়াজাত কেন্দ্র। পুরো এলাকাটি আপনি দেখে নিতে পারেন তবে প্রয়োজন কর্তৃপক্ষের অনুমতি। মনোমুগ্ধকর এ এলাকাটি শ্রীমঙ্গল শহর থেকে এক কিলোমিটার দূরে হলেও রিকশায় মাত্র ১০ থেকে ১৫ মিনিটের পথ আর ভাড়া ১০ টাকা।

এই শীতে ঘুরতে যাই চায়ের রাজধানী শ্রীমঙ্গল…

লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান
শ্রীমঙ্গল শহর থেকে ৮ কিলোমিটার দূরে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের একমাত্র ন্যাশনাল পার্ক লাউয়াছড়ার অবস্থান। ১৯২০ সালে ১ হাজার ২৫০ হেক্টর জায়গাজুড়ে পরিকল্পিত চাষাবাদ করে লাগানো চারাগাছগুলো এখন ঘন প্রাকৃতিক বনের আকার ধারণ করেছে। জীববৈচিত্র্যে ভরপুর এই পার্কে দেখা মেলে বিভিন্ন বিরল প্রজাতির পশুপাখি। ধীরে ধীরে পার্কটি এখন দেশের শিক্ষা, গবেষণা ও ইকো-ট্যুরিজম স্পট হয়ে উঠেছে। শ্রীমঙ্গল থেকে গাড়ি রিজার্ভ করে অথবা বাসে করেও আপনি আসতে পারেন এ বনে। এখানে আসার পথে রাস্তার দুই ধারে দেখতে পাবেন সবুজ অরণ্য আর বিচিত্র সব পশুপাখি। তবে এসব প্রাণি দেখতে হলে বনের একটু গভীরে যেতে হবে আপনাকে।

এই শীতে ঘুরতে যাই চায়ের রাজধানী শ্রীমঙ্গল…

বাইক্কা বিল
বাইক্কা বিল একটি অনন্য স্থায়ী মৎস্য অভয়াশ্রম এবং জলচর পাখির বিচরণভূমি। এর আয়তন ১০০ হেক্টর। বাংলাদেশের অন্যতম জলাশয় হাইল-হাওরে এর অবস্থান। ২০০৩ সালের ১ জুলাই ভূমি মন্ত্রণালয় বাইক্কা বিলকে একটি স্থায়ী মৎস্য অভয়াশ্রম হিসেবে সংরক্ষণের সিদ্ধান্ত নেয়। হাওরটি বর্ষায় ১৪ হাজার হেক্টর এলাকায় বিস্তৃত হয়। আবার শুষ্ক মৌসুমে পানি কমে গিয়ে ১৩৩টি বিল ও বেশ ক’টি খালে খণ্ডিত হয়ে মোট ৪ হাজার হেক্টর এলাকায় সংকুচিত হয়ে পড়ে বিলটি। বাইক্কা বিলের প্রধান আকর্ষণ পাখি। বছরজুড়েই নানা প্রজাতির জলজ পাখির বিচরণে মুখরিত থাকে এ বিলটি। তবে শীত মৌসুমে প্রচুর পরিযায়ী পাখির দেখা মেলে। পাখি পর্যবেক্ষণের জন্য এখানে একটি পাখি পর্যবেক্ষণ টাওয়ার নির্মাণ করা হয়েছে। নয়নাভিরাম এ জলাভূমিতে যখন শাপলা, পদ্মসহ নানা প্রজাতির জলজ ফুল ফোটে, সেই দৃশ্যের কোন তুলনাই হয়না।

এই শীতে ঘুরতে যাই চায়ের রাজধানী শ্রীমঙ্গল…

পশু-পাখি সেবাশ্রম
এক সময়ের সিতেশ বাবুর চিড়িয়াখানা এখন নাম পরিবর্তন হয়ে হয়েছে বন্যপ্রাণি ফাউন্ডেশনের পশু-পাখি সেবাশ্রম। সিতেশ রঞ্জন দেবের এই সংগ্রহশালায় গেলে দেখতে পাবেন সাদা বাঘ, মেছো বাঘ, সোনালি বাঘ, মায়া হরিণ, অজগর সাপ, ভাল্লুক, বানর, লজ্জাবতী বানর, সজারু, সোনালি কচ্ছপ, বনমোরগ, ময়না, বন্য খরগোশ, সাইবেরিয়ান ডাক, পাহাড়ি বকসহ বিভিন্ন প্রজাতির বন্যপ্রাণি।

এই শীতে ঘুরতে যাই চায়ের রাজধানী শ্রীমঙ্গল…

ভাড়াউড়া লেক
শ্রীমঙ্গল শহর থেকে দুই কিলোমিটার দূরে অবস্থিত জেমস ফিনলে কোম্পানির চা-বাগান। ভাড়াউড়ায় আছে একটি লেক যেখানে বসে জলপদ্মের মেলা। চা বাগানের বুকে এই লেকটির আকর্ষণ কিন্তু কম নয়। এখানে আছে বানর আর হনুমানের বিচরণ। শীতে দল বেঁধে আসে অতিথি পাখি। পাহাড়ের কাছাকাছি গেলেই দেখতে পাবেন এক সাথে অনেক বানর। চার পাশে সতর্ক দৃষ্টি রাখলে হঠাৎ দু’একটা বানর আপনাকে দেখে ভেংচি কাটছে দেখলে চমকে উঠবেননা আবার।

এই শীতে ঘুরতে যাই চায়ের রাজধানী শ্রীমঙ্গল…

নিম্মাই শিববাড়ি
আজ থেকে প্রায় ৫৫৩ বছর আগে ১৪৫৪ খ্রিস্টাব্দে শ্রীমঙ্গলের বালিশিরা পরগনার শংকরসেনা গ্রামে নিম্মাই শিববাড়ি প্রতিষ্ঠিত হয়। চতুর্দশ শতাব্দিতে এই অঞ্চলে ত্রিপুরার মহারাজা রাজত্ব করতেন। প্রবল শক্তিশালী এ রাজার বিরুদ্ধে কুকি সামন্ত রাজা প্রায়ই বিদ্রোহ ঘোষণা করতেন। কথিত আছে একদিন কুকি রাজার বিদ্রোহের সংবাদ পেয়ে ত্রিপুরা রাজা একদল সৈন্য পাঠান বিদ্রোহ দমনের জন্য। তুমুল এ যুদ্ধে কুকি রাজা পরাজিত হলেও মহারাজার প্রধান সেনাপতি রণক্ষেত্রে নিহত হন। বিয়ের অল্প ক’বছরের মধ্যেই স্বামীহারা হন মহারাজার কন্যা নিম্মাই। তখনকার দিনে ভারতবর্ষে সহমরণ প্রথা চালু ছিল। কিন্তু রাজকন্যা সহমরণে রাজি না হয়ে স্বামী নিহত হওয়ার স্থানে এসে শিবের আরাধনা শুরু করেন এবং সিদ্ধিও লাভ করেন। সেই স্মৃতির প্রতি সম্মান জানিয়ে এই জায়গাটির নামকরণ করা হয় নিম্মাই শিববাড়ি। ঐতিহাসিক এই স্থানটি ধর্মীয় পৌরাণিক কাহিনী, সনাতন হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের আচার-আচরণে একটি অন্যতম তীর্থস্থানের মর্যাদায় সুপ্রতিষ্ঠিত।

হাইল-হাওর
শ্রীমঙ্গল শহরের পশ্চিম প্রান্তে বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে আছে বৃহত্তর সিলেটের মৎস্য ভাণ্ডারখ্যাত বিখ্যাত হাইল-হাওর। এই হাওরে শীত মৌসুমে সাতসমুদ্র তেরনদী পার হয়ে বেড়াতে আসে অতিথি পাখিরা। তারা দল বেঁধে হাওরে সাঁতার কেটে বেড়ায়। হাওরের জলে ডিঙ্গি নৌকায় চড়ে জেলেদের মাছ ধরার দৃশ্য, অতিথি পাখিদের জলকেলী, আর পড়ন্ত বিকেলে সূর্যাস্ত পর্যটকদের মনকে ভরিয়ে তুলবে অনাবিল আনন্দে।

রামনগর মনিপুরী পাড়া
১৭৬৫ খ্রিস্টাব্দে ভাগ্যচন্দ্রের শাসনামলে মনিপুর রাজপুরুষ মোয়রাং থেম গোবিন্দের নেতৃত্বে একদল মনিপুরী মনিপুর রাজ্য ছেড়ে শ্রীমঙ্গলের খাসগাওয়ের রামনগরে এসে আবাস গড়েন। খাসগাওয়ে রয়েছে মোয়রাং থেম গোবিন্দের স্মৃতিস্তম্ভের ধ্বংসাবশেষ, যা একটি ঐতিহাসিক নিদর্শন। স্বতন্ত্র কৃষ্টি, সভ্যতা, ভাষা-সংস্কৃতি, আচার-আচরণসমৃদ্ধ এক বৈশিষ্ট্যময় জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রার সঙ্গে পরিচিত হতে চাইলে আপনিও এই পাড়ায় আসতে পারেন। এখানে আপনি মনিপুরী মেয়েদের তাঁতের কাপড় বুননের দৃশ্য দেখতে পাবেন এবং পছন্দ মত শাড়ি, চাদর, ওড়না ইত্যাদি কিনতে পারেন। শ্রীমঙ্গল শহর থেকে কালিঘাট চা-বাগানের রাস্তা ধরে দুই কিলোমিটার পথ পেরুলেই আপনি পৌঁছে যাবেন মনিপুরী পাড়ায়।

এই শীতে ঘুরতে যাই চায়ের রাজধানী শ্রীমঙ্গল… (২য় পর্ব)

মাগুরছড়ায় রয়েছে খাসিয়াপুঞ্জি। উঁচু পাহাড়ের ওপর বিশেষভাবে নির্মিত তাদের আবাস। খাসিয়া সম্প্রদায় গোষ্ঠীবদ্ধভাবে বাস করে এখানে। প্রতিটি পুঞ্জিতে একজন করে মন্ত্রী (খাসিয়াদের হেডম্যান) থাকেন। তার অনুমতি নিয়ে পুঞ্জি এলাকা ঘুরে দেখতে পারেন। যতদূর দৃষ্টি যায় শুধু পান গাছের সারি চোখে পড়বে। সারি সারি উঁচু পাহাড়ি গাছগাছালি পরম মমতায় পানের লতাকে বুকে ধারণ করে আছে, যা অন্যরকম এক সৌন্দর্য। খাসিয়াপুঞ্জি ভ্রমণ করে আপনি সহজেই খাসিয়াদের স্বতন্ত্র এবং বিচিত্র জীবনধারা, কৃষ্টি, সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত হতে পারেন।

এই শীতে ঘুরতে যাই চায়ের রাজধানী শ্রীমঙ্গল… (২য় পর্ব)

পরিত্যক্ত গ্যাসকূপ
১৯৯৭ সালের ১৪ জুন গভীর রাতে এ গ্যাসকূপে ড্রিলিংয়ের সময় অগ্নিবিস্ফোরণে আশপাশের খাসিয়াপুঞ্জি, চা বাগান, রেললাইন, সবুজ বনাঞ্চল সবকিছু পুড়ে ছাই হয়ে যায়। এই গ্যাসকূপটি এখন পরিত্যক্ত এবং সংরক্ষিত এলাকা। চারদিকে কাঁটাতারের বেড়া। ৭ বছর ধরে এ এলাকাটিতে পুনরায় সজিবতা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চালাচ্ছে বন বিভাগ। আগুনে পোড়া গাছগুলো এখনো কালের সাক্ষী হয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে আছে মাগুরছড়ায়। শ্রীমঙ্গল থেকে সড়কপথে এখানে আসতে নয়ন ভোলানো প্রাকৃতিক দৃশ্য আপনাকে মুগ্ধ করবে।

এই শীতে ঘুরতে যাই চায়ের রাজধানী শ্রীমঙ্গল… (২য় পর্ব)

ডিনস্টন সিমেট্রি
শতবর্ষের স্মৃতিবিজড়িত শ্রীমঙ্গলের ডিনস্টন সিমেট্রির ইতিহাস মনকে ভীষণভাবে নাড়া দেয়। শ্রীমঙ্গল শহর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে ডিনস্টন চা বাগানে এর অবস্থান। আজ থেকে শতাধিক বছর আগে শ্রীমঙ্গলের ডিনস্টন চা বাগানে ডিনস্টন সিমেট্রির গোড়াপত্তন হয়। ১৮৮০ সালে এই অঞ্চলে ব্রিটিশদের দ্বারা বাণিজ্যিকভাবে চা চাষ শুরু হওয়ার পর সুদূর ব্রিটেন থেকে এখানে চা চাষী ও ব্যবসায়ীদের আগমন ঘটতে থাকে। জাহাজ, ঘোড়ার গাড়ি কিংবা হাঁটার সেই যুগে সেসব বিদেশিদের অনেকেই এই অঞ্চলে মারা যায়। তাদের সমাহিত করা হয় শ্রীমঙ্গলের ডিনস্টন সিমেট্রিতে। উঁচু নিচু পাহাড়ঘেরা চিরসবুজ চা বাগানের মাঝে অবস্থিত সিমেট্রিতে বিদেশিদের কবর রয়েছে ৪৬টি। এর মধ্যে পাঁচটি কবরে কোনো পরিচিতি নেই। এখানে গেলে একই কবরে চিরনিদ্রায় শায়িত ব্রিটিশ দম্পতি কিংবা নিষ্পাপ শিশুর কবর আমাদের মনকে অদ্ভুত বিষন্নতায় ছুঁয়ে দেয়।

এই শীতে ঘুরতে যাই চায়ের রাজধানী শ্রীমঙ্গল… (২য় পর্ব)

জলপ্রপাত যজ্ঞকুঞ্জের ধারা
শ্রীমঙ্গলের একমাত্র জলপ্রপাত যজ্ঞকুঞ্জের ধারা। এটি জাগছড়া চা বাগান এলাকায় অবস্থিত। জলপ্রপাত দেখতে আপনি শ্রীমঙ্গল শহর থেকে মৌলভীবাজার রোড হয়ে কাকিয়া নেমে ডান দিকে জাগছড়া চা বাগান চলে যাবেন। অথবা শ্রীমঙ্গল শহর থেকে ভাড়াউড়া চা বাগান হয়ে কাঁচা রাস্তায় জাগছড়া চা বাগানে কাউকে জিজ্ঞেস করে চলে যাবেন জাগছড়ার ১৪ নং সেকশনে। সেখানে চোখে পড়বে একটি ব্রিজ। ব্রিজের ডান পাশ দিয়ে ছড়ার পাড় ধরে একটু সামনে এগিয়ে গেলেই শুনতে পাবেন শোঁ শোঁ শব্দ। জনশ্রুতি রয়েছে- শ্রীমঙ্গলের কালাপুরে প্রাচীন বেলতলীতে দেবস্থান নির্মাণ করেন তৎকালীন রাজা। দেবস্থান নির্মাণকালে বিরাট যজ্ঞস্থানকে পরিষ্কার করে যে পয়ঃপ্রণালি সৃষ্টি হয়েছিল সেটাই জলপ্রপাতের আকার ধারণ করে, যা আজো যজ্ঞধারা বা যজ্ঞছড়া নামে কথিত রয়েছে।

এই শীতে ঘুরতে যাই চায়ের রাজধানী শ্রীমঙ্গল… (২য় পর্ব)

পাহাড় ডোবা লেক
শ্রীমঙ্গলের বন-পাহাড়, হাওর-বিল আর সবুজের সমারোহে একাকার হয়ে গড়ে ওঠা হ্রদটির নাম পাহাড় ডোবা লেক। বিলাসছড়া চা বাগানের পাদদেশে এই জলাশয়ের অবস্থান। প্রচার না হওয়ায় পর্যটক তথা এলাকাবাসীর পদচারণা খুব একটা হয়নি এ জলাশয় এলাকায়। শ্রীমঙ্গল শহর থেকে কালীঘাট রোড ধরে দলই চা বাগানের রাস্তা ধরে বিলাসছড়া পৌঁছা যায়। বিলাসছড়া অফিস ও লিপ হাউস ছাড়িয়ে কিছু সামনে এগুলেই দেখা যায় লেকটি। এটি চা বাগানের ১০ নম্বর সেকশনে অবস্থিত। সবুজ বন বনানী বেষ্টিত পাহাড় ডুবে পরিণত হয়েছে বিশাল জলরাশিতে। পাহাড়ের পাশ ঘেঁষে জলের পাশ দিয়ে নতুন একটি রাস্তা করা হয়েছে। এলাকাটির প্রবেশাধিকার সংরক্ষিত। তবে বিলাসছড়া চা বাগানের সুপারিনটেনডেন্টের অথবা বিটিআরআই কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে বেড়ানো যায় এখানে।

শ্রী আর মঙ্গলে নিহিত শ্রীমঙ্গল। প্রকৃতির অপরূপ সাজে সজ্জিত সবুজ শ্যামলের সমারোহে ভরপুর এ অঞ্চলের অন্যতম আকর্ষণ হচ্ছে চা। চায়ের রাজধানীখ্যাত শ্রীমঙ্গলকে দুটি পাতা একটি কুঁড়ির দেশও বলা হয়ে থাকে। দেশের অধিকাংশ চা বাগান শ্রীমঙ্গলের চারদিকে বেষ্টিত। এ অঞ্চলের লেবু ও আনারসের কদরও কম নয়। পাহাড় ও চা বাগান বেষ্টিত বৃহত্তর সিলেটের প্রায় মাঝামাঝি স্থানে অবস্থিত ছোট্ট শহর শ্রীমঙ্গল।

এখানে বেড়াতে আসার পথে ভাস্কর্যটি দেখে যে কেউ মনে করবেন, তিনি চা শিল্পাঞ্চলে প্রবেশ করেছেন। শ্রীমঙ্গলসহ দেশের সব চা শ্রমিকের ভালো-মন্দ, সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না, আনন্দ-বেদনা সবই যেন মিলেমিশে আছে এই ভাস্কর্যটির মধ্যে। চোখ জুড়ানো মনমুগ্ধকর এই ভাস্কর্যটির সৌন্দর্য অবলোকনে প্রতিদিন হাজার হাজার দেশি-বিদেশি পর্যটকের সমাগম ঘটে এখানে। এভাবেই নিভৃত অরণ্যভূমি শ্রীমঙ্গল বিশ্বব্যাপী খ্যাতি অর্জন করেছে। ক্রমে পর্যটকদের মনে পর্যটন অঞ্চল শ্রীমঙ্গল ও এই অঞ্চলের চা শ্রমিকদের বিষয়ে জানার আগ্রহ বেড়ে চলছে।

২০১০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের শেষদিকে নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার পরপরই ভাস্কর্যটি শ্রীমঙ্গলে বেড়াতে আসা দেশি বিদেশি পর্যটকদের কাছে দারুণ এক আকর্ষণে পরিণত হয়েছে। তাই প্রতিদিন হাজারো পর্যটককে এর সৌন্দর্য উপভোগ ও এর পাদদেশে দাঁড়িয়ে ছবি তুলতে দেখা যায়। প্রকৃতিপ্রেমীরা যেন অনায়াসে উপভোগ করতে পারেন চা বাগান এবং চা শিল্পের সঙ্গে নিবিড়ভাবে জড়িত চা জনপদের নারী চা শ্রমিকদের। সেজন্য এ বিষয়টিকে শ্রদ্ধার প্রতীক হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে এই ভাস্কর্যে।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com