বহুল আলোচিত মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে কর্মী যাওয়ার সংখ্যা লাখ ছাড়িয়েছে। রবিবার (৫ মার্চ) পর্যন্ত এই সংখ্যা ছিল ১ লাখ ২১। একই দিন পর্যন্ত জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো-বিএমইটি থেকে ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে ১ লাখ ৯ হাজার ৫০০ জনকে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এখন প্রতিদিন হাজারের বেশি কর্মীর ফ্লাইট দিতে পারছে অনুমোদিত রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো।
সোমবার (৬ মার্চ) জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো-বিএমইটির মহাপরিচালক শহীদুল আলম এনডিসি প্রবাস বার্তাকে জানিয়েছেন, “আমাদের কাছে আবেদন আসা মাত্রই ছাড়পত্র দেয়া হয়। যত দ্রুত সম্ভর কর্মীদের গন্তব্য দেশ মালয়েশিয়াতে পাঠানো জন্য, সেজন্য বিএমইটি’র সকল সদস্য সর্বোচ্চ আন্তুরিকতা দিয়ে কাজ করছেন। বিএমইটির কারণে কোন একজন কর্মীও যেনো ভোগান্তির শিকার না হন, আমরা সেই বিষয়টি নিশ্চিত করছি।”
জনশক্তি প্রেরণকারি ব্যবসায়িদের সংগঠন বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিজ- বায়রা’র সাবেক মহাসচিব ও মালয়েশিয়া শ্রমবাজারের অন্যতম ব্যবসায়ি রুহুল আমিন স্বপন প্রবাস বার্তাকে জানান, “রবিবার (৫ মার্চ) পর্যন্ত অনুমোদিত ১০০ রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে ১ লাখ ২১ জন কর্মী মালয়েশিয়া পৌঁছেছেন। সোমবারও প্রায় দেড় হাজার কর্মী দেশটিতে যাওয়ার কথা। তার মানে হচ্ছে, এখন প্রতিদিন ১ থেকে দেড় হাজার কর্মী মালয়েশিয়া যেতে পারছেন। এই সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে বলেও জানান বায়রার সাবেক মহাসচিব রুহুল আমিন স্বপন।”
রুহুল আমিন স্বপন জানান, “বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়া সরকারের সংশ্লিষ্ট সকল দপ্তরের চলমান সহযোগিতা অব্যহত থাকলে এবং উড়োজাহাজের টিকিট পর্যাপ্ত পাওয়ার নিশ্চয়তা থাকলে বর্তমানের চেয়ে দ্বিগুণ কর্মী প্রতিদিন পাঠানো সম্ভব।”
অন্যদিকে, রবিবার (৫ মার্চ ) পর্যন্ত মালয়েশিয়ার নিয়োগদাতারা বাংলাদেশ থেকে ৩ লাখ ১৪ হাজার ৪৭৩ জন কর্মী নিতে সরকারের কাছ থেকে অনুমোদন পেয়েছেন। তার মানে হচ্ছে, দেশটির মানবসম্পদ মন্ত্রণালয় বাংলাদেশের জন্য এখন পর্যন্ত ৩ লাখ ১৪ হাজার ৪৭৩ কোটা অনুমোদন দিয়েছে।
এর আগে ১ মার্চ পর্যন্ত প্রবাস বার্তা’র সংগ্রহ করা তথ্য অনুযায়ি, মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশনের শ্রম-কল্যাণ উইং থেকে ২ লাখ ১৯৯ কর্মী নিয়োগের চাহিদাপত্রে সত্যায়ন করা হয়েছে। আর মালয়েশিয়াগামী কর্মীদের ভিসা ইস্যুতে সহযোগিতা করা প্রতিষ্ঠান এমইএফসি থেকে ই-ভিসা ইস্যু করা হয়েছিল ২ লাখ ২২ হাজার ২ টি।
গেল ৮ ফেব্রুয়ারি মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ মন্ত্রী ভি শিবকুমারের সাথে এক সৌজন্য সাক্ষাতে কর্মী নিয়োগে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে দুই দেশের মধ্যে যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ এর সভা আয়োজনের অনুরোধ জানান বাংলাদেশের হাইকমিশনার মো: গোলাম সারোয়ার। এরই প্রেক্ষিতে চলতি মার্চে যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠকের বিষয়ে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন দেশটির মানবসম্পদ মন্ত্রী।
বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর গতি বাড়ানো ও অভিবাসন খরচ কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায় এবং দেশটিতে কর্মী নিয়োগ প্রক্রিয়া কিভাবে আরো সহজ করা যায় এসব বিষয় নিয়ে সেই বৈঠকে আলোচনা হতে পারে। এছাড়া বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মধ্যে কর্মী নিয়োগ সংক্রান্ত অনলাইন পদ্ধতি যুক্ত করার বিষয়ে আলোচনার সম্ভাবনার কথা জানা গেছে।
এর আগে ৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকা সফরে মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাইফুদ্দিন নাসুসন ইসমাইল ও প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ যৌথ ব্রিফিং-এ জানিয়েছিলেন, দেশটিতে কর্মী পাঠানোর গতি বৃদ্ধি এবং অভিবাসন খরচ নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনে দু’দেশের মধ্যকার সমঝোতা স্বারকে পরিবর্তন আনা হবে।
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর থেকে বন্ধ ছিল বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ায় কর্মী যাওয়া। দীর্ঘ দেনদরবার ও নানা অনিশ্চয়তার পর ২০২১ সালের ১৯ ডিসেম্বর কর্মী নিয়োগে মালয়েশিয়া ও বাংলাদেশ একটি সমঝোতা স্মারক সই হয়। এরপর ২০২২ সালের ২ জুন মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ মন্ত্রী এম সারাভানান এর নেতৃত্বে ঢাকায় দু’দেশের বৈঠকে কারিগরি বিষয়সহ অমীমাংসিত ইস্যুগুলোর সমাধান হয়। শ্রমবাজার খোলার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন দুই মন্ত্রী। তুন সমঝোতা স্মারক অনুযায়ি ২০২২ সালের ৮ আগস্ট থেকে কর্মী যাওয়া শুরু হয় মালয়েশিয়ায়।
শুরুতে ২৫ রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়ার ঘোষণা দেয় মালয়েশিয়া সরকার। এরপর দুই দফায় আরো ৭৫টি রিক্রুটিং এজেন্সি যুক্ত করে মালয়েশিয়া সরকার। এখন বাংলাদেশের মোট ১০০ রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে কর্মী নিচ্ছে মালয়েশিয়া সরকার।