দক্ষিণ বঙ্গের অন্যতম জনপ্রিয় মেলা পীর মেছের শাহের মেলা। প্রতি বছর ফাল্গুন মাসের পঞ্চম চাঁদের দিনে বাগেরহাটের মোংলা উপজেলার চাঁদপাই ইউনিয়নের দক্ষিণ চাঁদপাইয়ে পীর মেছের শাহের মাজারে এ মেলা অনুষ্ঠিত হয়। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বাৎসরিক উরস উপলক্ষ্যে শতবর্ষী এই মেলায় যোগ দিতে আসেন ভক্তরা। আর এ অঞ্চলে তখন বিরাজ করে উৎসবমুখর পরিবেশ। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দীপংকর দাশ শনিবার সন্ধ্যায় আনুষ্ঠানিকভাবে এ মেলার উদ্বোধন করেন। এ সময় মোংলা থানার ওসি মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম সহ মেলার আয়োজক ও চাঁদপাই ইউপি চেয়ারম্যান মোল্লা তরিকুল ইসলাম ছাড়াও অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।
মেলা আয়োজক ইউপি চেয়ারম্যান মোল্লা তরিকুল ইসলাম জানান, এটি এ অঞ্চলের একমাত্র মেলা, যা ১০০ বছরেরও অধিক সময় ধরে চলে আসছে। সংস্কৃতির এ ধারাটি এখানকার মানুষদের আবেগ ও অনুভূতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে মিশে আছে। মেলায় ঘর গৃহস্থালির প্রায় সব রকম জিনিসপত্র পাওয়া যায়। এখানে কসমেটিক্স পণ্য, শিশুদের খেলনা, বাঁশ ও বেতের জিনিসপত্র, মাটির পুতুল, কাঠ ও প্লাইউডের আসবাবপত্র পাওয়া যায়। এছাড়াও এখানে রয়েছে নানা রকমের খাবার দোকান। বিভিন্ন রকম মিষ্টির পসরা সাজিয়ে বসেছেন ময়রারা। বিনোদনের জন্য রয়েছে নাগরদোলা, চড়কি প্রভৃতি।
খুলনা থেকে মেলায় আসা ৫০ বছর বয়সি রাজু আহমেদ টোকন বলেন, তিনি ছোটবেলা থেকে তার বাবার সঙ্গে এ মেলায় আসতে শুরু করেন। এবার তারা বরাবরের ন্যায় বাস যোগে ৫৫ জনের একটি দল এসেছেন। শ্যামলী রায় নামে আরেক দর্শনার্থী বলেন, এ মেলায় ধর্মবর্ণনির্বিশেষে হাজার হাজার মানুষের জমায়েত হয়। এ মেলা থেকে আমরা গৃহস্থালি জিনিসপত্রের পাশাপাশি স্টিল ও কাঠের আসবাবপত্র কিনে থাকি। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের মোংলার সভাপতি মো. নুর আলম শেখ বলেন, প্রতিটি মানুষের জন্য সুস্থ বিনোদন প্রয়োজন। কিন্তু তা আজ খুঁজে পাওয়া যায় না। তবে মোংলায় শত বছরের পুরোনো পীর মেছের শাহ মেলাটি এখনো টিকে আছে। এটি ধরে রাখতে সংশ্লিষ্টদের আরো দায়িত্বশীল হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
মাজারটির অন্যতম সাধক ভক্ত আলী আকবর ফকির বলেন, ১০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে এখানে উরশ চলে আসছে এবং এখন সেটি কলেবরে অনেক বেশি জাঁকজমক আকার ধারণ করেছে। যোগাযোগ ব্যবস্থার কল্যাণে এখন অনেক দূর-দূরান্ত থেকে ভক্তরা এখানে এসে পীর মেছের শাহের মাজারে জিকির করে থাকেন। অনেকের বিশ্বাস এখানে কোনো কিছুর মানত করলে তা পূরণ হয়। মোংলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম বলেন, অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে মেলায় সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। পুলিশের সদস্যরা শিফট ওয়ারী তাদের দায়িত্ব পালন করছেন।