মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪, ১২:১৭ অপরাহ্ন
Uncategorized

থাইল্যান্ডে মধুচন্দ্রিমা

  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ২৪ জানুয়ারি, ২০২৩

‘বউ’ শব্দটি দুই অক্ষরের, কিন্তু এর বিশালতা দুই জীবন মিলিয়েও হয়তো শেষ করা যাবে না। এই একটা শব্দই জীবনে অদ্ভুত সব পরিবর্তন নিয়ে আসে, নিয়ে আসে রোমাঞ্চের আয়োজন। এবারের ভ্রমণের গল্পটা আমার বউকে নিয়ে, বউয়ের সঙ্গে প্রথম ভ্রমণের মুহূর্তগুলো নিয়ে। বিয়ের নানা অনুষ্ঠানের ঝক্কি-ঝামেলা মিটিয়ে এক দিনের বিশ্রাম। পরের ভোরেই বিমান বাংলাদেশের উড়োজাহাজে চড়ে রোমাঞ্চনগরী ব্যাংকক। লোকে বলে থাইল্যান্ডে নাকি বউ নিয়ে যাওয়া উচিত না, কারণ থাইল্যান্ডের বিমানবন্দরেই লেখা আছে, ‘ব্যাড বয়েজ গোজ টু পাতায়া!’

লোকের মুখে রীতিমতো ঝামা ঘষে আমরা দুজন ব্যাংকক থেকে গাড়িতে করে রওনা দিলাম রঙের নগরী পাতায়ার দিকে। রাত আটটায় যখন পাতায়ার মাটিতে নামলাম তখন কুচকুচে কালো আকাশের গা বেয়ে রুপালি বৃষ্টির ফোঁটা নামছে আমাদের বরণ করে নেওয়ার জন্য। আমার স্ত্রী নওরিন বৃষ্টিপাগল, প্রকৃতির সব খামখেয়ালি তার ভালো লাগে। প্রচণ্ড বৃষ্টিতে আমি যখন মাথার ওপর ছাদ খুঁজি, তখন ও রিকশার হুড খুলে হাঁ করে বৃষ্টি খায়, প্রবল শীতে আমি যখন থরথর করে কাঁপি, তখন সে জ্যাকেট খুলে বলে আয়োজন করে শীত খাওয়ার মধ্যেও একধরনের আরাম আছে। এবারও পাতায়ায় বৃষ্টি দেখে সে আয়োজন করেই নামতে গেল, তড়িঘড়ি করে কাবে হোটেলের দিকে নিয়ে গেলাম। রাতের পাতায়া সুন্দর। আমাদের হোটেল থেকে ওয়াকিং স্ট্রিট কয়েক মিনিটের দূরত্ব, সারা রাত সেখানে বসে রঙের আয়োজন, ভিনদেশিদের আড্ডা আর হইচই মাতিয়ে রাখে পুরো এলাকা। এই ওয়াকিং স্ট্রিট জাগেই রাত ১২টার পর, মধ্যরাতের এই আয়োজনে আমরা দুই নতুন মানুষ টুপ করে ঢুকে পড়লাম ওয়াকিং স্ট্রিটের বর্ণিল জগতে।

ভোরের দিকে গেলাম পাতায়া সমুদ্রসৈকতে। ছোট্ট একটা সৈকত, কিন্তু পানি কী টলটলে পরিষ্কার! এখানে মূলত এক রাতের জন্যই আসা আমাদের, পাতায়ার নাইট লাইফ দেখার জন্য। পরদিন ফুকেটের ফ্লাইট। ফুকেটকে বলা হয় থাইল্যান্ডের রূপের রানি। থোকা থোকা মেঘ পেরিয়ে আমরা যখন ফুকেট বিমানবন্দরে নামি, দেখি অদ্ভুত এক লালচে সূর্যাস্ত সাজিয়ে রেখেছে ফুকেটের নীলাভ অংশটুকু! এখান থেকেই থাইল্যান্ডের সব দ্বীপে যাওয়া যায়, একেকটা দ্বীপ একেক বিষয়ের জন্য বিখ্যাত-যেমন জেমস বন্ড আইল্যান্ড তার বিশাল বিশাল রকের জন্য।

খাই, নো খাই দ্বীপগুলো স্কুবা ডাইভিংয়ের স্বর্গরাজ্য। আবার আরও দক্ষিণের কোরাল দ্বীপগুলো সাজানো-গোছানো রঙিন সব পাথরের আয়োজনে। সবকিছু পাশ কাটিয়ে আমার বউ বেছে নিল ‘ফিফি আইল্যান্ড’। ফিফিতে যেতে হয় আন্দামান সাগর পাড়ি দিয়ে, বিশাল এক রিভার ক্রুজে করে ডলফিনের ডানায় সাদা ফেনা দেখতে দেখতে আমরা চললাম ফিফি আইল্যান্ড। বলে রাখা ভালো, এখাননকার পানি অদ্ভুত নীল, চারপাশজুড়ে শুধুই মুগ্ধতা। টুকরো টুকরো পাথুরে দ্বীপ ছাড়িয়ে যতক্ষণে ফিফি আইল্যান্ড গলা উঁচিয়ে নিজেকে দেখাচ্ছে ততক্ষণে নওরিনের সঙ্গে ডলফিনের খাতির হয়ে গেছে খুব। ডোবা-ভাসা, ডোবা-ভাসা করতে করতে একসময় হারিয়ে গেল তারা।

মাথা ঘুরিয়ে চক্ষু চড়কগাছ-সামনে ধবধবে সাদা বালুর এক নয়নজুড়ানো সৈকত নিয়ে বসে আছে ফিফি আইল্যান্ড। এর সৌন্দর্য বর্ণনা করার জন্য দুরন্ত কল্পনাশক্তি লাগে, লাগে অদ্ভুত সব ভাষার গাঁথুনি, আমার নেই সেগুলো। ফিফি থেকে একটা ট্রলার নিয়ে আমরা মায়া বে ঘুরে বেড়ালাম। এটা স্যাংচ্যুয়ারি, মানে সংরক্ষিত অঞ্চল। এখানে নামতে বা ঘুরতে হলে বাড়তি পয়সা গুনতে হয়। কিছু ইউরোপীয়দের দেখলাম, মনের আনন্দে স্নরকেলিং করছে মায়া বের স্বচ্ছ অ্যাকুয়ারিয়ামের মতো পানিতে। আমাদেরও মনে অনেক আনন্দ, তবে সেই আনন্দ প্রকাশের জন্য আমরা আর পানিতে নামলাম না, নৌকায় বসেও আনন্দ করা যায়, আমরা ছবি তুলে আনন্দ প্রকাশ করলাম।

আকাশ, পাহাড়, সাগরের নীল মিলে একাকার। ছবি: সংগৃহীত

আকাশ, পাহাড়, সাগরের নীল মিলে একাকার। ছবি: সংগৃহীত

ফুকেটে ছিলাম আমরা চার দিন, সব বিচ, সব দোকান আমাদের মুখস্থ হয়ে গেছে এই কয় দিনে। এখানেও পাতায়ার মতো একটা ওয়াকিং স্ট্রিট আছে, নাম ‘বাংলা ওয়াকিং স্ট্রিট’, পাতায়ার মতো আলো ঝলমলে না হলেও এখানে রঙের কমতি নেই। ফেরার পথে ব্যাংককে ছিলাম এক দিন দুই রাত। সারা দিন চষে বেড়িয়েছি মাদাম তুসোর মোমের জাদুঘর আর আন্ডারওয়াটার সিটি। আর রাতের ডাকে সোজা চলে গিয়েছি ‘চাও প্রায়া’ নদীতে।

এখানে ছিল আমাদের ক্রুজ ডাইন, এক জাহাজভর্তি খাবারের আয়োজন ছিল সন্ধ্যা থেকে, সঙ্গে লাইভ মিউজিক। ক্রুজ চলা শুরু করামাত্রই শুরু হয় খাওয়াদাওয়া, সে এক এলাহি কারবার, চিকেন থেকে শুরু করে চিকন চালের পোলাউ, শসা থেকে শুরু করে দশাসই সসেজ, কী নেই এখানে! ভরপেট খেয়ে পায়েসের বাটি হাতে নিয়ে আমরা দুজন ক্রুজের রেলিংয়ে হেলান দিয়ে দেখতে লাগলাম রাতের ব্যাংকক।

পুরো এক পাক ঘুরিয়ে ঝলমলে ব্যাংকক সিটি দেখিয়ে ক্রুজটা যখন আমাদের আবার আগের জায়গায় নামিয়ে দিল ব্যাংককের আকাশে তখন মেঘের আয়োজন! মেঘ দেখার জন্য বাংলাদেশের চেয়ে ভালো জায়গা আর নেই, তাই আমরা ব্যাগ গোছাতে শুরু করলাম দেশে ফেরার জন্য, বউ ততক্ষণে ঠিক করে ফেলেছে চন্দ্রিমা উদ্যানের রাস্তায় রিকশার হুড ফেলে বৃষ্টি দেখবে!

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com