উত্তর ইউরোপ এবং আটলান্টিক মহাসাগরের উত্তর ভাগে অবস্থিত একটা ভৌগোলিক অঞ্চল রয়েছে। যাকে Nordic Countries বা Nordan বলে। নর্ডেনের অর্থ উত্তর দিক। এই Nordic এ বেশ কিছু দেশ রয়েছে যেমন ফিনল্যান্ড, সুইডেন, ডেনমার্ক, গ্রিনল্যান্ড, নরওয়ে ইত্যাদি। তাই স্বাভাবিক ভাবেই বলা যাই ফিনল্যাণ্ড একটি Nordic দেশ। যার পূর্ব দিকে রাশিয়া, উত্তর দিকে নরওয়ে এবং উত্তর পশ্চিমে রয়েছে সুইডেন। উত্তর ইউরোপের এই দেশের মোট আয়তন তিন লক্ষ আত্রিস হাজার চারশো পঁচিশ বর্গ কিলোমিটার। আয়তম অনুসারে ফিনল্যান্ড বিশ্বে ৬৪ তম এবং ইউরোপে ৮ তম স্থান অধিকার করে।
বিশ্বের কিছু কম জন ঘনত্ব দেশের তালিকায় ফিনল্যান্ডের নাম রয়েছে। সেখানে প্রতি বর্গ কিলোমিটারে ১৬ থেকে ১৮ জন মানুষ বসবাস করে। তবে দেশের দক্ষিণ ভাগেই জন বসতি অধিক দেখতে পাওয়া যায়। ফিনল্যান্ডের মোট জনসংখ্যা ৫৫ লক্ষ ২০ হাজার ৫৩৫ জন। ফিনল্যান্ডের মানুষের গড় আয়ুকাল পুরুষের ক্ষেত্রে ৭৯ বছর এবং মহিলাদের ক্ষেত্রে ৮৪ বছর। ফিনল্যান্ডে দুইটি আধিকারিক ভাষা রয়েছে। ১) সুইডিশ ২) ফিনিশ। তবে সেখানে বেশির ভাগ মানুষই ফিনিশ ভাষায় কথা বলে। দেশের মোট জনসংখ্যার ৮৯ শতাংশ মানুষ ফিনিশ ভাষায় কথা বলে। দেশের অধিকাংশ মানুষ খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী। সেখানে প্রায় ৭২ শতাংশ মানুষ খ্রিস্টান। বাকি কিছু পরিমান হিন্দু , মুসলিম, বৌদ্ধ ইত্যাদি ধর্মে বিশ্বাসী। ফিনল্যান্ডের খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মানুষ দুটি জাতীয় চার্চে বিশ্বাসী। যেহেতু ফিনল্যান্ড একটি ইউরোপিয়ান সদস্যের দেশ তাই ফিনল্যান্ডের জাতীয় মুদ্রা ইউরো। ফিনল্যান্ডের সবচেয়ে জনবহুল এবং রাজধানীর নাম হলো হেলসিংকি।
ফিনল্যান্ডের মানুষ খেলাধুলায় বেশ আগ্রহী। তাই ১৯৫২ সালে অনুষ্ঠিত সামার অলিম্পিক আয়োজনের দায়িত্ব ফিনল্যান্ড পায়। তখন রাজধানী হেলসিংকি শহরের বিভিন্ন জায়গায় অলিম্পিক খেলার আয়োজন করা হয়। ১৯৫২ সালের এই অলিম্পিকে বেশ কিছু দেশ প্রথমবার অংশ গ্রহণ করে। যেমন ইন্দোনেশিয়া, হংকং, চিন সারল্যান্ড, ইসরাইল। “Wife Carrying” নামে এক বিশেষ মজাদার দৌড় প্রতিযোগিতা হয় ফিনল্যান্ডে। ১৯৯২ সালে প্রথম ফিনল্যান্ডে এই প্রতিযোগিতা শুরু হয়। এই খেলায় একজন পুরুষ, তার সঙ্গী একজন মহিলাকে কাঁধে উল্টো করে দৌড়ায়। যে যুগল আগে পৌঁছায় তারা এই খেলায় বিজয়ী হয়। এই প্রতিযোগিতায় সাধারণত পুরুষ প্রতিযোগীর সাথে তাদের স্ত্রী-রাই সঙ্গী হয়।
ফিনল্যান্ডের মানুষ দুধ খেতে প্রচন্ড ভালোবাসে। বিশেষ করে ফিনিশরা সবচেয়ে বেশি দুধ পান করে। সেখানে বৎসরে প্রতি ব্যক্তি প্রায় ৩৬১.২০ কেজি দুধ পান করে। তবে শুধু দুধ নয়, ফিনিশরা দই, দুধের তৈরি আইস ক্রিম এবং দুধ দিয়ে অন্য সকল রকম দ্রব্য খেতে তারা বেশ পছন্দ করে। এর সাথে বিশ্বের সব চেয়ে বেশি পরিমান কফি পান করার তালিকায় ফিনল্যান্ডের নাম আসে।
পৃথিবীর মধ্যে সব থেকে বেশি পরিমান লেক কানাডা এবং ফিনল্যান্ডে দেখতে পাওয়া যায়। শুধুমাত্র ফিনল্যান্ডেই ১ লক্ষ ৮৭ হাজারের বেশি লেক রয়েছে। এর মধ্যে লেক সায়মা হ্রদটি অন্যতম এবং আয়তনে সব থেকে বড়ো। যার আয়তন ৪ হাজার ৪০০বর্গ কিলোমিটার। বিশ্বের দ্বিতীয় দীর্ঘতম সুড়ঙ্গ রয়েছে ফিনল্যান্ডের দক্ষিণ দিকে। এই ওয়াটার টানেল নামের সুড়ঙ্গটি প্রায় ১ কিমি দীর্ঘ। এই সুড়ঙ্গ নির্মাণের উদ্দেশ্য ছিল রাজধানী হেলসিংকি মানুষদের জন্য স্বচ্ছ জলের যোগান দেওয়া। সুড়ঙ্গটি তৈরি করতে প্রায় ১০ বছর সময় লেগে ছিলো।
সাধারণত প্রত্যেকটি দেশে একটি বিশেষ দিনকে বেছে নেওয়া হয় উৎসব বা কোনো সফল জিনিষকে সেলেব্রেশন করার জন্য। কিন্তু ফিনল্যান্ড এমন একটি দেশ যেখানে বিফলতার জন্য একদিন বিশেষ দিন রাখা হয়েছে। আসলে প্রত্যেক বছর ১৩ ই অক্টোবর দিনটিকে ফিনল্যান্ডের মানুষ “
National Day of Failure” হিসাবে পালন করে। ২০১০ সালে ফিনল্যান্ডের এক বিশ্ব বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা প্রথম এই বিশেষ দিনটার আয়োজন করে। এর পিছনে যুক্তি ছিল যে মানুষকে তাদের বিফলতার ভয় থেকে মুক্তি দেওয়া। আসলে এই দিনে সমাজে প্রতিষ্ঠিত লোকদের নিয়ে এনে নিজেদের বিফলতার কারণ গুলি বের করে কিভাবে সফলতার দিকে এগিয়ে যাওয়া যায় তা এই বিশেষ দিনটাতে জানা যায়। তাই দিনটা সেই দেশের মানুষের কাছে বিশেষ একটা দিন।
ফিনল্যান্ডের মানুষ ঘুরে বেড়াতে বেশ পছন্দ করে। পর্যটকদের জন্যও ফিনল্যান্ড বেশ আকর্ষণীয় একটি জায়গা। সেখানে বেশ কিছু প্রাকৃতিক সৌন্ধর্য্য রয়েছে যা পর্যটকরা একেবারেই মিস করতে চাই না। ফিনল্যান্ডের পাসফোর্ডটি বেশ পাওয়ারফুল হয়ে থাকে। তাই ফিনল্যান্ডবাসীর ভিসার জন্য বিশেষ কোনো সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় না।
Like this:
Like Loading...