প্রায় দেড় যুগেরও বেশি সময় সুইডেনে থাকলেও এদেশের মায়া মোনা চৌধুরীকে খুব টানে। সেজন্যই বছর পেরোতেই চলে আসেন প্রিয় মাতৃভূমিতে। সম্প্রতি এক সন্ধ্যায় সুইডেনের মোন চৌধুরী এসেছিলেন পাক্ষিক প্রবাস মেলা কার্যালয়ে। করোনাকালে প্রবাসীদের দেশে আটকে পড়া, দেশে তার বেড়ে ওঠা, প্রবাসে কাটানো নানান স্মৃতি প্রভৃতি উঠে আসে প্রবাস মেলার সাথে আলাপচারিতায়। সে সবেরই চুম্বক অংশ নিচে তুলে ধরা হল…
মোনা চৌধুরীর পৈতৃক নিবাস শরীয়তপুরের গোসাইরহাট উপজেলার হাটুরিয়া গ্রামে। তবে তার জন্ম ঢাকায়। তার বাবা আলী হোসেন চৌধুরী ছিলেন বিমানবাহিনীর ওয়ারেন্ট অফিসার। বাবার চাকরির সুবাদে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে কেটেছে তার শৈশব ও কৈশোর।
বিমানবাহিনী থেকে অবসরের পর আলী হোসেন নারায়ণগঞ্জের আদমজী জুট মিলে চাকরি নেন। সেখানেই পরিবারের সাথে মোনা চৌধুরীর শৈশব কেটেছে। আদমজী জিএমসি কেজি স্কুলে তার শিক্ষার পাঠ শুরু হয়। পরে আরামবাগ গালর্স হাই স্কুল থেকে এসএসসি এবং লালমাটিয়া মহিলা কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় পাশ করেন।
শৈশব-কৈশরের স্মৃতি রোমান্থন করতে গিয়ে মোনা চৌধুরী বলেন, বর্তমানে বিশ্বের একটি উন্নত দেশে বসবাস করলেও আমাদের ছোটবেলা ছিল খুব সুন্দর। খুব ভালো কেটেছে আমাদের শৈশব। ‘আমি খুব দূরন্ত ছিলাম, ছোটবেলায় অনেক ঘুড়িও উড়িয়েছি অমি,’ বলেন মোনা। সেই দিনগুলো খুব মিস করি। সে সময় আমরা খুব আনন্দ করেছি।
এক পর্যায়ে ২০০৫ সালে পরিবারসহ ইতালিতে ঘুরতে যান মোনা। সেখান থেকে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ট্যুর দেন তারা। এরই মধ্যে সুইডেন যাওয়ার পর সেখানে পড়াশোনা করার সিদ্ধান্ত নেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘সুইডেনে যাওয়ার পর আমি সেখানে থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেই, তারপর একটি ভাষা কোর্সে ভর্তি হই।’
মোনা চৌধুরী বলেন, কোর্স শেষ হওয়ার পর আমি অর্থনীতিতে গ্রাজুয়েশনের জন্য ভর্তি হই। এরপর চাকরির জন্য আইকেইএ (IKEA) তে অফিস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনে ছয় মাসের একটি কোর্স সম্পন্ন করি।
আইকেইএ একটি বহুজাতিক কোম্পানি যা প্রয়োজনীয় পণ্য এবং হোম সার্ভিসের মধ্যে রেডি-টু এসেম্বল ফার্নিচার, রান্নাঘরের সরঞ্জাম এবং বাড়ি-ঘরের আনুষাঙ্গিক জিনিসপত্র বিক্রয় করে থাকে।
এরপর তিনি দুই বছরের জন্য নার্সিং কোর্স করেন। এই কোর্স শেষে সুইডেন তো বটেই বিশ্বের যে কোনো দেশে ভালো কিছু করা যায় বলে মোনা জানান।
সুইডেন সম্পর্কে বলতে গিয়ে তিনি বলেন, দেশটি খুবই মানবিক। প্রায় প্রতিবছরই গণতান্ত্রিক ক্ষেত্রে বিশ্বের র্যাঙ্কিয়ে প্রথম দিকে থাকে ইউরোপের এই দেশটি।
‘মোনা বলেন, দেশটিতে শিশু, বয়স্ক, প্রতিবন্ধী এবং নারীর জন্য বিশেষ অধিকার রয়েছে, যে কারণে আমি দেশটিতে থেকে খুব কমফোর্ট ফিল করি’। বাংলাদেশ থেকে অনেক দূরে থাকলেও দেশের শিকড়, কৃষ্টি-কালচার চর্চা করেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। বর্তমানে মহামারি করোনাভাইরাসের জন্য এ ধরণের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ থাকলেও আগে সবসময় ১লা বৈশাখের অনুষ্ঠান, মেলা, বনভোজনসহ নানান উদ্যোগ প্রবাসী বাঙালি কমিউনিটির আয়োজনে হয়ে থাকে। সুইডেনে প্রায় ১০ হাজার বাংলাদেশি আছেন বলে মোনা চৌধুরী জানান।
দেশে থাকতে এক সময় মিডিয়াতেও কিছু দিন কাজ করেছেন মোনা চৌধুরী। প্রয়াত সালমান শাহের সাথে ‘মিল্ক ভিটা চকলেট দুধ’ নামে একটি বিজ্ঞাপনে মডেল হয়েছিলেন বলে তিনি জানান। এছাড়া ওরিয়েন্টেড ব্রেডের বিজ্ঞাপন ছাড়াও কয়েকটি নাটকেও অভিনয় করেছেন তিনি।
বর্তমানে করোনা মহামারিতে দেশে আটকে পড়া প্রবাসীদের সরকারি পর্যায়ে কূটনৈতিক তৎপরতা বৃদ্ধি করে করোনামুক্ত সনদ বাধ্যতামূলক করে তাদের নির্দিষ্ট গন্তব্যে পাঠানো জোরদার করা উচিত বলে মোনা চৌধুরী জানান।
পারিবারিক জীবনে মোনা চৌধুরীর স্বামী আহসান উদ্দিন টুটুল একজন ব্যবসায়ী। তাদের সংসারে লামীম নাহিয়ান নামে আট বছরের এক সন্তান রয়েছে।
মোস্তফা কামাল মিন্টু: