তুর্কমেনিস্তান (Turkmenistan) মধ্য এশিয়ার একটি প্রজাতান্ত্রিক রাষ্ট্র, যার ভৌগোলিক অবস্থান, প্রাকৃতিক সম্পদ ও ঐতিহাসিক গুরুত্ব একে বিশেষ বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত করেছে। এই দেশটি প্রাচীন সিল্ক রোডের অংশ ছিল এবং এখানে নানা সভ্যতার চিহ্ন বিদ্যমান রয়েছে।
তুর্কমেনিস্তান পশ্চিমে ক্যাস্পিয়ান সাগর, উত্তরে কাজাখস্তান, উত্তর-পূর্বে উজবেকিস্তান, দক্ষিণ-পূর্বে আফগানিস্তান এবং দক্ষিণে ইরানের সঙ্গে সীমানা ভাগ করে। এটি একটি স্থলবেষ্টিত দেশ এবং এর আয়তন প্রায় ৪৮৮,১০০ বর্গকিলোমিটার।
তুর্কমেনিস্তানের রাজধানী আশগাবাত (Ashgabat)। এটি একটি আধুনিক, মার্বেল-নির্মিত শহর হিসেবে পরিচিত, যেখানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি মার্বেল-নির্মিত ভবন রয়েছে। অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ শহরের মধ্যে মেরি, তুর্কমেনাবাদ, দাশোগুজ এবং বালকানাবাদ উল্লেখযোগ্য।
তুর্কমেনিস্তানের জনসংখ্যা প্রায় ৬০ লক্ষ (২০২৪ সালের আনুমানিক তথ্য অনুযায়ী)। এখানকার প্রধান জাতিগোষ্ঠী তুর্কমেন, তবে রুশ, উজবেক এবং অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর লোকও বাস করে। রাষ্ট্রভাষা হলো তুর্কমেন, তবে রুশ ভাষাও অনেক ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়।
তুর্কমেনিস্তানের প্রধান ধর্ম ইসলাম, বিশেষ করে সুন্নি মতবাদ অনুসরণ করা হয়। তবে এখানে ধর্মীয় স্বাধীনতা সীমিত। দেশটির সংস্কৃতি মূলত তুর্কি ও ইসলামি ঐতিহ্যের মিশ্রণে গঠিত। এখানে নানান লোকসঙ্গীত, নৃত্য, কারুশিল্প এবং ঐতিহ্যবাহী পোশাক এখনও জনগণের জীবনে গুরুত্বপূর্ণ।
তুর্কমেনিস্তান একটি একদলীয় রাষ্ট্র, যেখানে দীর্ঘদিন ধরে স্বৈরশাসন চলে আসছে। ১৯৯১ সালে স্বাধীনতা লাভের পর প্রথম প্রেসিডেন্ট সাপকুরাত নিয়াজভ (Saparmurat Niyazov) ছিলেন একজন কঠোর শাসক। বর্তমানে প্রেসিডেন্ট সারদার বারদিনমুহাম্মেদোভ (Serdar Berdimuhamedow), যিনি তার পিতার উত্তরসূরি।
তুর্কমেনিস্তান প্রাকৃতিক গ্যাসের এক বিশাল ভাণ্ডার। এটি বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ গ্যাস রফতানিকারক দেশ। দেশের অর্থনীতি মূলত প্রাকৃতিক গ্যাস, তুলা এবং কৃষির উপর নির্ভরশীল। যদিও এখানকার সম্পদের প্রাচুর্য রয়েছে, সাধারণ জনগণের অর্থনৈতিক অবস্থা উন্নত নয়।
তুর্কমেনিস্তান তুলনামূলকভাবে কমপরিচিত পর্যটন গন্তব্য, তবে এখানে অনেক আকর্ষণীয় স্থান রয়েছে:
দরওয়াজা গ্যাস ক্রেটার (Darvaza Gas Crater): “নরকের দরজা” নামে পরিচিত এই জ্বলন্ত গর্ত পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু।
মার্বেল শহর আশগাবাত: ইউনেস্কোর স্বীকৃতি প্রাপ্ত বিশ্বের সবচেয়ে সাদা মার্বেল শহর।
কুনি-উরগেঞ্চ ও মারগুশ: ঐতিহাসিক ধ্বংসাবশেষ ও প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শন।
কারাকুম মরুভূমি: বিশাল বালুকাময় অঞ্চল যা দেশের প্রায় ৭০% এলাকা দখল করে আছে।
তুর্কমেনিস্তান এখনও অনেক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি: বাক-স্বাধীনতা ও মানবাধিকার সংকট, অর্থনৈতিক বৈষম্য, এবং বৈদেশিক নির্ভরতা। তবে এর বিশাল প্রাকৃতিক সম্পদ এবং কৌশলগত অবস্থান দেশটিকে ভবিষ্যতের জন্য সম্ভাবনাময় করে তোলে।
তুর্কমেনিস্তান একটি রহস্যময়, সমৃদ্ধ ইতিহাস এবং প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর দেশ, যা বিশ্বে তার স্বকীয়তা নিয়ে অবস্থান করছে। দেশটির উন্নয়নের সম্ভাবনা অনেক, তবে তার জন্য প্রয়োজন আরও উন্মুক্ত, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও টেকসই নীতিমালা।