কাজাখস্তান, মধ্য এশিয়ার একটি বৃহৎ ও সমৃদ্ধ রাষ্ট্র, যার আয়তন প্রায় ২,৭০০,০০০ বর্গকিলোমিটার, যা এটিকে পৃথিবীর নবম বৃহত্তম দেশ হিসেবে পরিচিত করে। এটি বিশ্বের বৃহত্তম স্থলভূমি-বেষ্টিত দেশ, যেখানে পশ্চিম ইউরোপের সমান আয়তন রয়েছে।
ভূগোল ও সীমান্ত:
কাজাখস্তান উত্তরে রাশিয়া, পূর্বে চীন, দক্ষিণে কিরগিজস্তান, উজবেকিস্তান ও তুর্কমেনিস্তান এবং পশ্চিমে কাস্পিয়ান সাগর ও রাশিয়ার সাথে সীমান্ত ভাগ করে নেয়। উরাল নদীর পশ্চিমে কিছু অংশ ইউরোপ মহাদেশে অবস্থিত, যা দেশটিকে দুটি মহাদেশে বিস্তৃত করে।
রাজধানী ও প্রধান শহর:
রাজধানী শহর নূর সুলতান (পূর্বে আস্তানা) শহরের নকশা বিখ্যাত স্থপতি কিশো কুরোকাওয়া করেছিলেন। শহরটি ইশিম নদীর তীরে অবস্থিত এবং এর প্রধান আকর্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে হযরত সুলতান মসজিদ ও নূর আস্তানা মসজিদ। দেশের বৃহত্তম শহর আলমাতি, যা দেশের প্রধান বাণিজ্যিক ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত।
জনসংখ্যা ও ভাষা:
কাজাখস্তানের মোট জনসংখ্যা প্রায় ১৭,৫৬৩,৩০০। সরকারি ভাষা কাজাখ, তবে রুশ ভাষাও ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। দেশের প্রায় ৭০% মানুষ মুসলিম, যেখানে বেশিরভাগই সুন্নী মুসলিম।
ইতিহাস:
১৮৭০-১৮৭৬ সালের মধ্যে রাশিয়া কাজাখস্তানকে দখল করে এবং ১৯২২ থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত এটি সোভিয়েত ইউনিয়নের অংশ ছিল। ১৯৯১ সালে স্বাধীনতা লাভের পর, কাজাখস্তান রাষ্ট্রপতি শাসনব্যবস্থা গ্রহণ করে।
অর্থনীতি:
কাজাখস্তান মধ্য এশিয়ার বৃহত্তম ও শক্তিশালী অর্থনীতি রয়েছে। দেশটি তেল ও খনিজ সম্পদে সমৃদ্ধ, যা এর অর্থনীতির প্রধান চালিকাশক্তি।
সংস্কৃতি ও পর্যটন:
কাজাখ সংস্কৃতি তুর্কীয় ও মঙ্গোলীয় প্রভাবের মিশ্রণ। দেশটির ঐতিহ্যবাহী খাবারের মধ্যে রয়েছে বেশবারমেক, কুউরদাক, কেজি ইত্যাদি। পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয় স্থানগুলোর মধ্যে রয়েছে আলতাই পর্বত, কাজাখস্তান মার্কাকোল রিজার্ভ, কারা-কোবা নদী।
নিশ্চয়ই! কাজাখস্তান পর্যটনের জন্য এক অত্যন্ত আকর্ষণীয় দেশ। এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, ইতিহাস, সংস্কৃতি ও আধুনিক স্থাপত্য পর্যটকদের জন্য ভিন্নধর্মী অভিজ্ঞতা দেয়। নিচে কাজাখস্তানের কিছু জনপ্রিয় ও আকর্ষণীয় দর্শনীয় স্থানের বর্ণনা বাংলায় তুলে ধরা হলো:
চরিন ক্যানিয়নকে অনেক সময় “মিনি গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন” বলা হয়। এটি আলমাতি শহর থেকে প্রায় ২০০ কিমি দূরে অবস্থিত। প্রাকৃতিকভাবে গঠিত লাল পাথরের গঠন ও উপত্যকার সৌন্দর্য এককথায় অসাধারণ।
পূর্ব নাম আস্তানা। এটি কাজাখস্তানের আধুনিক রাজধানী, যেখানে চোখধাঁধানো আধুনিক স্থাপত্য, যেমন বাইতারেক টাওয়ার, খান শাতির শপিং মল, হযরত সুলতান মসজিদ ইত্যাদি রয়েছে। শহরটি কাজাখ আধুনিক স্থাপত্যশৈলীর অনন্য উদাহরণ।
এই পার্কটি বিখ্যাত তার “সিংগিং ডিউন” বা গান গাইতে থাকা বালিয়াড়ির জন্য। বাতাসের সময় বালু এমন এক শব্দ করে যেন মনে হয় কেউ গান গাইছে। এছাড়া এখানে বিভিন্ন বন্য প্রাণী ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়।
৪. বিগ আলমাতি লেক (Big Almaty Lake)
আলমাতি শহরের কাছে অবস্থিত একটি নীলচে রঙের হ্রদ। এটি পর্বতের কোলে অবস্থিত এবং বরফে মোড়া চূড়াগুলোর প্রতিবিম্ব হ্রদে প্রতিফলিত হয় – অসাধারণ দৃশ্য। ছবি তোলার জন্য এটি এক স্বপ্নের স্থান।
এই ঐতিহাসিক শহরটি ইসলাম ধর্মের ইতিহাসে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। খোজা আহমদ ইয়াসাভির মাজার ইউনেস্কো ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান, যা ১৪ শতকে তৈরী হয়েছিল।
যারা শীতকালীন খেলাধুলা ও বরফের পরিবেশ ভালোবাসেন, তাদের জন্য এটি স্বর্গের মত। এটি আলমাতি শহরের কাছে অবস্থিত এবং স্কিইং, স্নোবোর্ডিং ইত্যাদির জন্য বিখ্যাত।
এটি তিনটি হ্রদের একটি সমষ্টি, যা পর্বত ও বনভূমির মধ্যে অবস্থিত। হাইকিং, ক্যাম্পিং ও ঘোড়ায় চড়ার জন্য অসাধারণ স্থান।
এটি বিখ্যাত পানির নিচে ডুবে যাওয়া গাছের জন্য। এক ভূমিকম্পের কারণে এই লেক সৃষ্টি হয় এবং পানির নিচে গাছগুলো এমনভাবে দাঁড়িয়ে আছে যেন এক জলজ জাদুর জগৎ।
তুমি কি প্রকৃতিপ্রেমী, ইতিহাস অনুরাগী না আধুনিক শহর দেখতে চাও—কাজাখস্তানে সব ধরনের পর্যটকদের জন্য কিছু না কিছু রয়েছে।
তুমি কি নির্দিষ্ট কোনো ধরনের অভিজ্ঞতা খুঁজছো—প্রাকৃতিক, ঐতিহাসিক, নাকি আধুনিক অ্যাডভেঞ্চার টাইপ? আমি আরও কাস্টম সাজেস্ট করতে পারি!
সাম্প্রতিক ঘটনা:
২০২২ সালে, কাজাখস্তানে সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ সংঘটিত হয়, যা সরকারবিরোধী আন্দোলনে রূপ নেয়। সরকার জরুরি অবস্থা জারি করে এবং রাশিয়ার সহায়তা চায়। এই ঘটনাগুলো দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতিতে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলেছে।
সার্বিকভাবে, কাজাখস্তান একটি সমৃদ্ধ ইতিহাস ও সংস্কৃতির অধিকারী, যা তার ভূগোল, অর্থনীতি ও সমাজে প্রতিফলিত হয়।