বুধবার, ২২ জানুয়ারী ২০২৫, ১১:১২ পূর্বাহ্ন

একদিনের ছুটিতে স্বল্প খরচে ঘুরে আসুন ময়মনসিংহের দর্শনীয় সব স্থান

  • আপডেট সময় বুধবার, ২২ জানুয়ারি, ২০২৫

ঢাকার অদূরে অবস্থিত বিভাগীয় শহর ময়মনসিংহ ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির অন্যতম পীঠস্থান। ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে অবস্থিত এই প্রাচীন শহরটি ইতিহাস ও দর্শনীয় স্থানে যেমন সমৃদ্ধ তেমনি রয়েছে এর ঐতিহ্যবাহী অনেক খাবার। এখানে বেড়াতে আসার একটি বড় সুবিধা হলো, একদিনেই এর দর্শনীয় সব স্থান দেখা যায়।

শশীলজ

শশীলজ বাংলাদেশের ময়মনসিংহ শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত মহারাজা শশীকান্ত আচার্যের বাড়ি যা ময়মনসিংহের রাজবাড়ী নামেও খ্যাত। শহরের কেন্দ্রস্থলে, ব্রহ্মপুত্র নদের অদূরে, এই রাজবাড়ী অবস্থিত। ১৯৫২ সাল থেকে বহুদিন এটি নারী শিক্ষক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। লজ ভবনটি এখন জরাজীর্ণ এবং প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের জন্য ব্যবহার করা হয় না। ২০১৫ সালে ৪ এপ্রিল জাদুঘর স্থাপনের জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর শশীলজটি অধিগ্রহণ করে। ময়মনসিংহ শহরের প্রাণকেন্দ্রে ৯ একর জায়গা জুড়ে আজও সমহিমায় দাঁড়িয়ে রয়েছে লাল ইটের তৈরি এই রাজবাড়ি। যার দ্বারপ্রান্তে সাদা মার্বেল পাথরে নির্মিত দৃষ্টিনন্দন গ্রিকদেবী ভেনাসের মর্মর প্রতিমূর্তি রয়েছে (ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় এটি দুর্বৃত্তরা ভেঙে ফেলে)। যেখানে আজ আর রাজা নেই, নেই রাণী কিংবা মন্ত্রীপরিষদ, শুধু পড়ে আছে সুবিশাল রাজপ্রাসাদ আর তার পরতে পরতে জড়ানো ইতিহাসের স্মৃতিচিহ্ন।

২০১৯ সালে রাজবাড়ীর অন্দরমহল জনসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হয়। এর ১৮টি কক্ষের মধ্যে ৩টি কক্ষে রাজবাড়ীর পুরাকীর্তি, রাজার ব্যবহৃত জিনিস, আসবাবপত্র সংরক্ষণ করে রাখা আছে। সেখানে রয়েছে- হাতির দাঁতের তৈরি সোফা, মাঝখানে রাখা একটি মার্বেল পাথরের টেবিল। ঘরের ভেতর রাখা চেয়ারের সর্বাঙ্গে ময়ূর, লতাপাতা আর ফুলের কারুকাজ। এই কারুকাজগুলো করা হয়েছে হাতির দাঁত দিয়ে। এখানে রয়েছে- গণ্ডারের চামড়া থেকে শুরু করে বুনো মহিষের শিং, হরিণের শিং, জমিদারদের ব্যবহৃত পালংক, মহিষের শিং দিয়ে তৈরি পানপাত্র, শ্বেতপাথরের মূর্তি, হাতির মাথার কঙ্কাল, হাতির চোয়ালের কঙ্কাল, মাটির নলসহ হুঁকাসহ আরও ঐতিহাসিক পুরাকীর্তি দর্শনার্থীদের প্রদর্শনের জন্য রাখা হয়েছে। এছাড়াও ২০ টাকা মূল্যের টিকিটের মাধ্যমে এই জাদুঘরে প্রবেশ করা যায়।

আলেকজান্ডার ক্যাসেল

আলেকজান্ডার ক্যাসেল/আল আমিন আকাশ

আলেকজান্ডার ক্যাসেল

ময়মসিংহের জিরো পয়েন্টে অবস্থিত ভারত সম্রাট সপ্তম এডওয়ার্ডের পত্নী আলেকজান্দ্রার নামানুসারে মহারাজা সূর্যকান্ত আচার্য্য ভবনটি নির্মাণ করেন ১৮৭৯ খ্রিস্টাব্দে। পরবর্তীতে ভবনটি লোকমুখে “আলেকজান্ডার ক্যাসেল” বা “লোহাকুঠি” (লোহা নির্মিত বলে) নামে পরিচিতি পায়। ভবনসহ এই বাগানবাড়ির আয়তন প্রায় ২৭.৫০ একর। এই ভবনটি নির্মাণে ব্যয় হয় তৎকালীন প্রায় ৪৫ হাজার টাকা। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, লর্ড কার্জন, মহাত্মা গান্ধী, সুভাষ বসু, কামাল পাশা, নওয়াব স্যার সলিমুল্লাহ, দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস প্রমুখ বিখ্যাত ব্যক্তিবর্গের পদচারনায় এই বাগানবাড়িটির ইতিহাস- ঐতিহ্যকে আরও সমৃদ্ধ করেছে। বর্তমানে ভবনটি সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজ, ময়মনসিংহ এর গ্রন্থাগার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এতে রক্ষিত পুস্তকাদি সহ গ্রন্থাগারটির মোট পুস্তক সংখ্যা প্রায় ২৫,০০০।

জয়নুল আবেদীন পার্কজয়নুল আবেদীন পার্ক/আল আমিন আকাশ

জয়নুল আবেদীন পার্ক

আলেকজেন্ডার ক্যাসেল থেকে কিছু দূর এগিয়ে গেলে ব্রহ্মপুত্র নদের পাড় ঘেসে রয়েছে জয়নুল আবেদীন পার্ক। নদীর তীরের স্নিগ্ধ মনোরম পরিবেশে অবস্থিত এই দর্শনীয় স্থানটি ময়মনসিংহ শহরের অন্যতম বিনোদনের স্থান। নদীর ওপারে যাওয়ার জন্য রয়েছে সারি সারি নৌকা। এছাড়াও পাড়ে রয়েছে ফুচকার দোকান, চায়ের দোকান, রয়েছে হরেক রকম জিনিসপত্রের সমাহার। এছাড়াও পার্কের ভেতর রয়েছে শিশুদের জন্য ছোট চিড়িয়াখানা, রয়েছে বিভিন্ন রকম রাইড। পার্কের অপর প্রান্তে রয়েছে জয়নুল আবেদীন সংগ্রহশালা। সেখানে রয়েছে জয়নুলের ব্যবহৃত সব আসবাবপত্র। তার আঁকা বিখ্যাত কিছু ছবি। ২০ টাকা মূল্যের নামমাত্র টিকিটে ঘুরে আসতে পারেন সংগ্রহশালাটি।

কৃষি মিউজিয়াম, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়

ময়মনসিংহ শহরের একটু অদূরে ব্রহ্মপুত্রের কোল ঘেষে ১,২০০ একর জায়গা নিয়ে অবস্থিত বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। পুরো ক্যাম্পাসটিতে রয়েছে ঘুরে দেখার মতো অনেক জায়গা যা একদিনে পুরোপুরি ঘুরা সম্ভব না। তবে অল্প সময়ে দেখতে চাইলে ক্যাম্পাসের বেশ কিছু জায়গা ঘুরতে পারেন। এরমধ্যে রয়েছে- সূর্যমুখী ফুলের বাগান, আম বাগান, লিচু বাগান, টিএসসি, লেক, ফিশ মিউজিয়াম, বিখ্যাত জব্বারের মোড়, কৃষি মিউজিয়াম ইত্যাদি। এছাড়াও রয়েছে বিভিন্ন ফসলের খেত, মাছ চাষের পুকুর, গবাদি পশুর খামার। বিশ্ববিদ্যালয়ে মাঝে রয়েছে রেলওয়ে স্টেশন যা স্থিরচিত্র ধারণের জন্য অনেক বিখ্যাত। চারিদিকে সবুজে বেষ্টিত এই ক্যাম্পাসটিতে রয়েছে সবচেয়ে বড় বোটানিক্যাল গার্ডেন। নদীর পাড় ঘেষা এই গার্ডেনটিতে রয়েছে বাহারি প্রজাতির সব গাছগাছালি। ১০ টাকা টিকিটের মূল্যে চাইলেই ঘুরে আসতে পারেন সেখানে।

আনন্দমোহন কলেজ

আনন্দমোহন কলেজ/আল আমিন আকাশ

সরকারি আনন্দমোহন কলেজ

শতবর্ষের ঐতিহ্যলালিত এই কলেজটি বাংলাদেশের বিখ্যাত কলেজের অন্যতম। এর রয়েছে এক সমৃদ্ধ ও গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস। কলকাতা সিটি কলেজের প্রতিষ্ঠাতা আনন্দমোহন বসু এ কলেজের প্রতিষ্ঠা করেন। প্রথমে কলকাতা সিটি কলেজের অর্ন্তভুক্ত থাকলেও ১৯০৮ সালে এটি স্বতন্ত্রভাবে আনন্দমোহন নামে এর কার্যক্রম শুরু করে।

চক্রবাক, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়

চক্রবাক, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়/আল আমিন আকাশ

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম স্মৃতিবিজড়িত ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলায় ২০০৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এই বিশ্ববিদ্যালয়টি। ময়মনসিংহ থেকে ২২ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত ৪৭ একর জায়গার ওপর নির্মিত এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি ঘুরে আসতে পারেন। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে দেখার মতো রয়েছে- চক্রবাক, টিএসসি, পুরাতন কলাভবন, ফার্স্ট গেইট, নজরুল চ্ত্বর এবং বটতলা যেখানে বসে নজরুল ছোটবেলায় বাঁশির সুর তুলতেন।

ময়মনসিংহের এলে যা খেতে ভুলবেন না

প্রত্যেক অঞ্চলেরই বিশেষ কিছু খাবার থাকে যা শুধু ওই এলাকাতেই খেতে স্বাদ পাওয়া যায়। অন্যান্য যায়গায় পাওয়া গেলেও তার টেস্ট ভিন্ন হয়। বিখ্যাত খাবারের তালিকায় প্রথমেই রয়েছে মুক্তাগাছার মন্ডা যা স্বাদে অতুলনীয়। মিষ্টিজাতীয় এই খাবারটি খেতে অনেক মানুষ দূরদূরান্ত থেকে এখানে আসেন। এছাড়াও এখানে রয়েছে জিলা স্কুল মোড়ের জাকির মিয়ার বিখ্যাত টকমিষ্টি জিলাপি। এর বিশেষত্ব হলো জিলাপি বানাতে তেঁতুল ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও ময়মনসিংহের মানুষ শুঁটকি খেতে খুব ভালোবাসে। এখানে কুমড়ো পাতা পেঁচিয়ে তার ভেতর শুঁটকি রেখে তেলে ভেজে এক ধরনের খাবার রান্না করা হয় যাকে “চ্যাপার পুলি” বলা হয়।

যাবেন যেভাবে

ময়মনসিংহ যাওয়ার জন্য দুইটি পথ রয়েছে। এক হলো বাস দিয়ে অথবা ট্রেন। ময়মনসিংহ আসার জন্য ঢাকার মহাখালী থেকে বাস ছাড়ে। এই রুটের কয়েকটি পরিচিত বাস হলো- সৌখিন, ইউনাইটেড, আলম এশিয়া ইত্যাদি। ২০০ টাকা ভাড়ায় এসব বাস ময়মনসিংহের মাসকান্দা বাস স্ট্যান্ড পর্যন্ত আসে। পরে সেখান থেকে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার মাধ্যমে দর্শনীয় স্থানে যেতে হয়। এছাড়াও ময়মনসিংহ যাওয়ার আরেকটি পথ হলো রেলযোগে। এজন্য কমলাপুর থেকে বিভিন্ন সময়ে ময়মনসিংহগামী অনেক ট্রেন ছাড়ে। ময়মনসিংহ রুটে ১৬০ টাকায় শোভন চেয়ার যোগে ট্রেনে যাওয়া যায়। প্রত্যেকদিন এই রুটে কমপক্ষে ৩টি ট্রেন যাতায়াত করে। ঢাকা থেকে ময়মনসিংহ যেতে সময় লাগে ৩ ঘণ্টার মতো।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com