আগামী এক দশকের মধ্যে বাড়ির কাজ ও পারিবারিক পরিচর্যার মতো কার্যক্রমের প্রায় ৩৯ শতাংশই স্বয়ংক্রিয় উপায়ে হতে পারে। এমনই ধারণা প্রকাশ করছেন বিশেষজ্ঞরা।
যুক্তরাজ্য ও জাপানের ৬৫জন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) বিশেষজ্ঞ ১০ বছরের বিভিন্ন সাধারণ পারিবারিক কাজে স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থার ব্যবহার সম্পর্কে নিজেদের অনুমান প্রকাশ করেছেন।
তাদের অনুমান বলছে, গৃহস্থালী কেনাকাটায় সবচেয়ে বেশি স্বয়ংক্রিয় উপায়ের ব্যবহার দেখা যাবে। আর শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তিদের পরিচর্যার মতো কার্যক্রমে এআই’র ওপর সবচেয়ে কম প্রভাব পড়বে।
এই গবেষণা প্রকাশ পেয়েছে ‘প্লস ওয়ান’ জার্নালে।
এদিকে, যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি ও জাপানের ‘ওচানোমিজু ইউনিভার্সিটি’র গবেষকরা জানতে চেয়েছেন, এইসব রোবট বাড়ির অবৈতনিক কাজে কী ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে।
“রোবট আমাদের কাজ নিয়ে নিলে তারা কী অন্তত আমাদের জন্য আবর্জনাও বহন করবে?” –জিজ্ঞেস করেন তারা।
উদাহরণ হিসেবে, গবেষকরা পর্যবেক্ষণ করে দেখেন, ভ্যাকুয়াম ক্লিনারের মতো ‘গার্হস্থ্য কার্যক্রমে’ ব্যবহৃত রোবট ‘বিশ্বে সবচেয়ে বেশি উৎপাদিত ও বিক্রিত রোবট’ হয়ে উঠেছে।
যুক্তরাজ্যের ২৯ জন ও জাপানের ৩৬ জন এআই বিশেষজ্ঞকে বাড়িতে রোবটের ব্যবহার সম্পর্কে পূর্বাভাস দেওয়ার কথাও বলেছিল এই দল।
গবেষকরা খুঁজে পান, যুক্তরাজ্যের নারী বিশেষজ্ঞদের তুলনায় পুরুষরা এই গার্হস্থ্য স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা নিয়ে বেশি আশাবাদী। আর জাপানের বেলায় এই পরিস্থিতি পুরোপুরি বিপরীত।
তবে, বিশেষজ্ঞদের বিবেচনায় স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থার মাধ্যমে পরিচালিত বিভিন্ন কার্যক্রম একেবারেই আলাদা।
“ব্যবহারকারীর সন্তানকে শেখানো, তার সঙ্গে থাকা বা পরিবারের বয়স্ক সদস্যের যত্ন নেওয়ার মতো কেবল ২৮ শতাংশ পরিচর্যা সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম স্বয়ংক্রিয়ভাবে ঘটার পূর্বাভাস মিলেছে।” –বলেন ‘অক্সফোর্ড ইন্টারনেট ইনস্টিটিউট’-এর গবেষক ড. লুলু শি।
অন্যদিকে, বিশেষজ্ঞরা বলেন, গৃহস্থলী কেনাকাটার পেছনে খরচ করা সময়ের ৬০ শতাংশই কমে আসবে এই প্রযুক্তির সহায়তায়।
তবে, ‘আগামী ১০ বছরে’ রোবট মানুষকে ঘরোয়া কাজ থেকে মুক্তি দেবে, এমন ভবিষ্যদ্বাণীর দীর্ঘ ইতিহাস আছে। আর এটি নিয়ে নিয়ে নিশ্চিতভাবেই অনেকে সংশয় প্রকাশ করতে পারেন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে বিবিসি।
১৯৬৬ সালে ‘টুমরো’স ওয়ার্ল্ড’ নামে পরিচিত টিভি শো এক ঘরোয়া রোবট নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল। এটি খাবার রান্না, কুকুরকে হাটানো, শিশুর কথা মনে রাখা, কেনাকাটা করা, ককটেল মেশানোর মতো অনেক কাজই করতে পারত।
ওই প্রতিবেদনে উঠে আসে, সে সময়, এই রোবটের নির্মাতারা কেবল ১২ লাখ ডলারের অনুদান পেলেই ১৯৭৬ নাগাদ এটি বাণিজ্যিকভাবে চালু করতে পারতেন।
অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও সমাজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও গবেষণাটির লেখকদের একজন একাটেরিনা হারটগ এই গবেষণার তুলনা করেছেন দীর্ঘদিন ধরে স্ব-চালিত গাড়িকে ঘিরে তৈরি হওয়া সম্ভাবনার সঙ্গে।
“ট্যাক্সির বদলে রাস্তায় স্ব-চালিত গাড়ির প্রতিশ্রুতি আগে থেকেই ছিল। আমার ধারণা, কয়েক দশক ধরে, এমনকি এখন পর্যন্ত আমরা রোবটের কার্যকারিতা ভালোভাবে কাজে লাগাতে পারিনি বা এইসব স্ব-চালিত গাড়ি আমাদের রাস্তার অপ্রত্যাশিত পরিবেশ নেভিগেট করছে। ওই বিবেচনায়, বাড়ির কাজও একই।”
লন্ডনের কিংস কলেজের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও সমাজ বিভাগের রিডার ড. কেট ডেভলিন বলেন, প্রযুক্তি মানুষের জায়গা নেওয়ার বদলে বরং তাদের সহায়তাই করবে। ওই গবেষণার সঙ্গে অবশ্য তার কোনো সম্পৃক্ততা নেই।
“এমন রোবট বানানো জটিল ও ব্যয়বহুল, যা একাধিক বা সাধারণ কাজগুলো সম্পন্ন করতে পারে। এর বদলে, আমাদের জায়গা না নিয়ে বরং সহায়তা করবে, এমন সহায়ক প্রযুক্তি বানানো তুলনামূলক সহজ ও গুরুত্বপূর্ণ।”