ক্যানারি দ্বীপপুঞ্জ
২০২৪ সালে পশ্চিম আফ্রিকার বিভিন্ন উপকূল থেকে ৪৩ হাজারেরও বেশি অনিয়মিত অভিবাসী স্পেনে পৌঁছেছেন। এই সংখ্যার আগের বছরের তুলনায় বেশি।

ইইউ সীমান্ত সংস্থা ফ্রন্টেক্সের তথ্য অনুসারে, ২০২৪ সালের প্রথম ১১ মাসে আফ্রিকার দেশ মালি, সেনেগাল এবং মরক্কো থেকে সবচেয়ে বেশি অভিবাসীর স্পেনে পাড়ি জমিয়েছেন।
স্প্যানিশ এনজিও ক্যামিনান্দো ফ্রন্টেরাসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ক্যানারি দ্বীপপুঞ্জের রুটটি বর্তমানে ‘বিশ্বের সবচেয়ে প্রাণঘাতী অভিবাসন রুট’। চলতি বছর এই রুটে প্রায় ১০ হাজার অনিয়মিত অভিবাসী নিখোঁজ অথবা মারা গিয়েছে।
অভিবাসন চাপ সামাল দিতে ক্যানারি দ্বীপপুঞ্জ কর্তৃপক্ষ অতিরিক্ত তহবিলের প্রদানের জন্য স্পেনের কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে আহ্বান জানিয়েছেন। সরকার দ্বীপপুঞ্জের তহবিলে অতিরিক্ত ১০০ মিলিয়ন ইউরো প্রদানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
ইংলিশ চ্যানেল
২০২৪ সালের পুরো সময়জুড়ে আলোচনায় ছিল ফ্রান্স এবং যুক্তরাজ্যের মধ্যে অবস্থিত ইংলিশ চ্যানেলের অভিবাসন রুট।
অনিয়মিত অভিবাসীদের জন্য চ্যানেল পারাপার ক্রমশ ভয়ংকর হয়ে উঠেছে৷ আগের চেয়ে বেশি মৃত্যুর সংখ্যা নথিভুক্ত করা হয়েছে।

জাতিসংঘের অভিবাসন সংস্থা আইওএমের মতে, ২০২৪ সালে উত্তর ফ্রান্স থেকে যুক্তরাজ্যে পাড়ি দিতে গিয়ে ৭০ জনেরও বেশি অভিবাসী মারা গেছে। তাদের অধিকাংশই সমুডরে ডুবে গেছে।
চলতি বছর ফরাসি উপকূল থেকে ব্রিটেনে পৌঁছেছে প্রায় ৩৬ হাজার অভিবাসী। ২০২৩ সালে সংখ্যাটি ছিল প্রায় ৩০ হাজার।
চ্যানেলে পাড়ি দিয়ে অভিবাসনের ঝুঁকি বাড়ার বিভিন্ন কারণ রয়েছে। মানবপাচারকারীরা ছোট নৌকায় অভিবাসীদের আরও বেশি সংখ্যায় পাচারের চেষ্টা করেন । ফরাসি সৈকতে বর্ধিত পুলিশ টহলের কাড়নে অনিয়মুত অভিবাসীরা আরও ঝুঁকিপূর্ণ প্রস্থানের পথ বেঁছে নিতে বাধ্য হয়। কারণ তারা স্থানীয় পুলিশকে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন।
এছাড়া সমুদ্রের খারাপ আবহাওয়ার সময় অনেকেই যাত্রা করেন যার ফলে নৌকাগুলো ঝুঁকিতে পড়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
ইইউর নতুন আশ্রয় নীতি
অনেক তর্ক-বিতর্কের পর ইউরোপীয় পার্লামেন্ট এবং ইইউ কাউন্সিল ২০২৪ সালে রাজনৈতিক আশ্রয় এবং অভিবাসন সংক্রান্ত নিয়মকানুনের সংস্কারের প্রস্তাব অনুমোদন করেছে৷

নতুন অভিন্ন আশ্রয়নীতির আওতায় ইইউর বহির্সীমানায় আরো কড়া নিয়ম চালু হবে এবং সব সদস্য দেশ সম্মিলিতভাবে এক্ষেত্রে দায়িত্ব বণ্টন করে নেবে৷ ফলে এবার থেকে শুধু গ্রিস ও ইটালির মতো দেশকে শরণার্থীদের ঢল আর একা সামলাতে হবে না৷ শরণার্থীরাও আর বিচ্ছিন্ন আশ্রয়নীতির দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে ইইউর একাধিক সদস্য দেশে স্বীকৃতির চেষ্টা চালাতে পারবেন না৷

অভিবাসন এবং আশ্রয় সংক্রান্ত চুক্তিটির সমর্থকরা এটিকে যুগান্তকারী সমঝোতা এবং বছরের পর বছর আলোচনার পর আরও সুসংহৎ ইইউ নীতির দিকে একটি কার্যকর পদক্ষেপ আখ্যা দিয়ে প্রশংসা করেছেন।তবে অনেক অভিবাসী এবং অভিবাসন কর্মীরা এই চুক্তির প্রতিবাদ করে বলেছেন, এটি আশ্রয়ের অধিকারকে ক্ষুন্ন করবে এবং নিরাপত্তা চাওয়া ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থার পথ তৈরি করতে পারে।
সেন্ট্রাল ভূমধ্যসাগর
২০২৪ সালে সেন্ট্রাল ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইটালির উপকূলে আসা অভিবাসীদের সংখ্যা কমে এসেছে। টিউনিশিয়ার সাথে রোমের চুক্তি সাক্ষরের পর টিউনিশিয়া থেকে আসা অভিবাসীদের সংখ্যা কমে এসেছে।
গত বছর ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ৬৫ হাজারেরও বেশি লোক ইটালির উপকূলে এসেছেন। যা আগের বছরের এক লাখ ৫৩ হাজার অভিবাসীর বিপরীতে উল্লেখযোগ্যভাবে কম।

উত্তর আফ্রিকা থেকে ইটালি এবং মাল্টা রুটটি বিশ্বের সবচেয়ে ভয়ংকর অভিবাসন রুটগুলোর মধ্যে একটি। আইওএম-এর মতে, গেল বছর সেন্ট্রাল ভূমধ্যসাগরীয় অভিবাসন রুটে এক হাজার ৬০০ জনেরও বেশি মানুষ মারা গেছেন বা নিখোঁজ হয়েছেন।
ভূমধ্যসাগরে সক্রিয় বেসরকারি উদ্ধার জাহাজ পরিচালনাকারী সংস্থাগুলো ইটালি সরকারের বিধিনিষেধের সমালোচনা অব্যাহত রেখেছে। রোম একটি ডিক্রি জারি করে এনজিওগুলোর উদ্ধার অভিযান সীমিত করেছে।
জার্মানি: নাগরিকত্ব সহজ, তবে আশ্রয় পাওয়া কঠিন
জার্মানিতে গত বছরজুড়ে অভিবাসী, শরণার্থী এবং আশ্রয় আবেদনের উপর প্রভাব পড়ে- এমন বেশ কয়েকটি সংস্কার কার্যকর হয়েছে৷
জার্মানিতে বসবাসকারী বিদেশিদের জন্য এখন দেশটির নাগরিকত্ব লাভ আগের চেয়ে সহজ হয়েছে। এছাড়া দ্বৈত নাগরিকত্বের অনুমোদন দিয়েছে বার্লিন।

জার্মানির স্কিলড বা দক্ষ অভিবাসন আইনে বেশ কিছু পরিবর্তন ২০২৪ সালে কার্যকর হয়েছে। যার ফলে কাজের অভিজ্ঞতা এবং পেশাগত যোগ্যতা সম্পন্ন ব্যক্তিদের জার্মানিতে প্রবেশ সহজ হয়েছে৷
এর মধ্যে রয়েছে ‘অপর্চুনিটি কার্ড’ নামক বিশেষ রেসিডেন্স পার্মিটের প্রবর্তন।
ইটালি-আলবেনিয়া চুক্তি
গত বছর আলবেনিয়ার সাথে ইটালির অভিবাসন চুক্তির নানা ঘটনা আলোচনা সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।
ইটালি দুই দফায় ২৪ জন আশ্রয়প্রার্থীকে আলবেনিয়াতে পাঠালেও উভয়বারই দেশটির আদালত সবাইকে ইটালিতে ফেরত নিয়ে আসার নির্দেশ দেয়।

আলবেনিয়ায় আশ্রয়প্রার্থিদের পাঠানোর আইনি বাধা কাটিয়ে ওঠার লক্ষ্যে রোম একটি নতুন ডিক্রি অনুমোদন করেছে। তবে মিশর এবং বাংলাদেশসহ কয়েকটি দেশকে ‘নিরাপদ’ দেশ ঘোষণাকারী ডিক্রিটির বৈধতা নিয়ে অনেক বিশেষজ্ঞ প্রশ্ন তুলেছেন।
২০২৫ সালে ইউরোপীয় আদালত এই ডিক্রিটির বৈধতা নিয়ে রায় দেওয়ার কথা রয়েছে।
প্যারিস অলিম্পিক
২০২৪ সালের প্যারিস অলিম্পিক ক্রীড়াবিদদের জন্য আলোচিত হলেও অভিবাসন সংক্রান্ত নানা ইস্যুতে প্যারিস অলিম্পিকে আলোচিত হয়েছে।
ক্যামেরুনের একজন শরণার্থী বক্সার গত বছর প্যারিস অলিম্পিকে শরণার্থী অলিম্পিক দলের হয়ে প্রথম পদক জিতেছেন৷

এছাড়া তায়কোয়ান্দো খেলোয়াড় জাকিয়া খুদাদাদি প্যারালিম্পিকে শরণার্থী দলের হয়ে প্রথম পদক জিতেছেন।
এছাড়া প্যারিস অলিম্পিক নিয়ে এনজিওগুলো স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সমালোচনা করেছে। তাদের অভিযোগ, ফরাসি কর্তৃপক্ষ অলিম্পিকের সময় রাজধানী পরিষ্কার রাখার অজুহাতে অনিয়মিত অভিবাসীদের অস্থায়ী শিবিরগুলো একের পর এক ভেঙে দিয়েছে।
তাদের অভিযোগ, এবারের অলিম্পিক সত্যিকার অর্থে সবাইকে অন্তর্ভুক্ত করতে ব্যর্থ হয়েছে।
ইটালিতে সাতনাম সিংয়ের মৃত্যু
গত বছর ইটালিতে ভারতীয় অভিবাসী সাতনাম সিং-এর মর্মান্তিক মৃত্যু ইটালির কৃষি খামারগুলোতে অনথিভুক্ত বিদেশি শ্রমিকদের শোষণ নিয়ে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
২০২৪ সালের ১৭ জুন রোমের দক্ষিণে লাতিনার গ্রামাঞ্চলে বোরগো সান্তা মারিয়ার একটি খামারে কাজ করার সময় মেশিনে আঘাত পান তিনি৷ এতে তার ডান হাত পুরোপুরি শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়৷ অভিযোগ, জমির মালিক রক্তাক্ত ওই শ্রমিককে বাড়ির সামনে ফেলে রেখে চলে যান৷ প্রসিকিউটাররা জানিয়েছেন, কোনো অ্যাম্বুলেন্সও ডাকা হয়নি৷

আন্তোনেলো লোভাতো নামের এক নিয়োগকর্তার কৃষি কোম্পানিতে ফল মোড়ানোর কাজ করতেন সাতনাম৷
সাতনাম সিংয়ের মৃত্যুতে ক্ষোভ তৈরি হয় ইটালিতে৷ সুস্থ কাজের পরিবেশের দাবিতে সংগঠন এবং খামার শ্রমিকরা প্রতিবাদ জানিয়েছেন৷ ইটালির কৃষিখাতের কাজে স্বল্প বেতনভুক্ত অভিবাসী শ্রমিকদের জন্য শোষণমূলক ‘কাপোরালাতো’ ব্যবস্থা বন্ধ করার আহ্বান জানান তারা৷
এমনকি প্রেসিডেন্ট সের্গিও মাতারেল্লা ওই মামলার গুরুত্বের কথা বলেছেন৷ সাতনামের মতো শ্রমিকদের ‘নিষ্ঠুর’ শোষণ এবং ‘অমানবিক’ অবস্থার প্রসঙ্গ উঠে এসেছে তার কথায়৷ ইটালিতে আসা মৌসুমি শ্রমিকেরা প্রায়ই এমন পরিস্থিতিতে কাজ করেন৷
পোল্যান্ড, ফিনল্যান্ড, লাটভিয়া: বেলারুশ এবং রাশিয়া
২০২৪ সালজুড়ে রাশিয়া এবং বেলারুশের সীমান্তবর্তী বেশ কয়েকটি ইইউ দেশ তাদের সীমানা প্রাচীর প্রসারিত করেছে এবং আশ্রয়ের অধিকার সীমাবদ্ধ করেছে।
পোলিশ প্রধানমন্ত্রী ডোনাল্ড টাস্ক বেলারুশিয় সীমান্তে অস্থায়ীভাবে আশ্রয় অধিকার স্থগিত করার পরিকল্পনা ঘোষণা করেছেন। পোল্যান্ডের সরকার একজন কর্মকর্তা মারাত্মক ছুরিকাঘাতের পরে সীমান্তরক্ষীদের অভিবাসীদের উপর গুলি চালানোর অনুমতি দেওয়া হয় এবং সীমান্তে একটি নো-গো জোন চালু করা হয়।

পোল্যান্ড এবং লাটভিয়ার কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে বারবার পুশব্যাকের অভিযোগ উঠে৷ দেশ দুটি অবশ্য এমন অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে। আফগানিস্তানের একজন আশ্রয়প্রার্থী ইনফোমাইগ্রেন্টসকে কে বলেছেন, লাটভিয়ান সীমান্তরক্ষীরা তাকে মারধর করেছে এবং সীমান্তের অপর দিকে ঠেলে দিয়েছে।
এছাড়া ফিনল্যান্ডও রাশিয়ার সাথে থাকা সীমান্তের সমস্ত গেইট বন্ধ করে দিয়ে আরও বেড়া নির্মাণ শুরু করে। দেশটি আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য বেশ কয়েকটি বিধিনিষেধও চালু করেছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নেড় সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মতে, প্রতিবেশী রাশিয়া এবং বেলারুশ তাদের বিরুদ্ধে অভিবাসঙ্কে ব্যবহার করে ‘হাইব্রিড যুদ্ধ’ শুরু করেছে।
গ্রিস
২০২৪ সালে ৬৩ হাজারেরও বেশি মানুষসাগর পাড়ি দিয়ে গ্রিক উপকূলে হাজিরে হয়েছেন।
তাদের বেশিরভাগই এসেছেন তুরস্ক থেকে। তাচাড়া তাদের একটি বড় অংশ এসেছেন আফ্রাকার দেশ লিবিয়া থেকে৷
আয়ারল্যান্ড: অভিবাসীরা গৃহহীন
গত বছর নতুন আসা অনেক আশ্রয়প্রার্থীকে আয়ারল্যান্ডে রাস্তায় থাকতে হয়েছে। কারণ, ডাবলিনের অস্থায়ী শিবিরগুলোতে কোন জায়গা খালি ছিল না।
প্রতিবেশী যুক্তরাজ্য থেকে আয়ারল্যান্ডে আশ্রয়প্রার্থীদের আগমন বৃদ্ধি পেয়েছে। যার ফলে অভিবাসীরা আবাসন সংকটের সম্মুখীন হয়েছিল।

২০২৪ সালের প্রথম ১১ মাসে ১৭ হাজারেরও বেশি মানুষ দেশটিতে সুরক্ষা চেয়েছে। ২০২৩ সালে এই সংখ্যা ছিল মাত্র ১২ হাজার।
গত বছর আয়ারল্যান্ডে অভিবাসী এবং আশ্রয়প্রার্থীদের বিরুদ্ধে বেশ কিছু উগ্র ডানপন্থিদের বিক্ষোভ হয়েছে। এই বিক্ষোভের সাথে জড়িত বেশ কয়েকজনকে অভিযুক্ত করে আটক করা হয়েছে।
সিরিয়া: স্বৈরশাসক আসাদ ক্ষমতাচ্যুত
২০২৪ সালের ডিসেম্বরে সিরিয়ার দীর্ঘদিনের একনায়ক বাশার আল-আসাদকে বিদ্রোহী জোট ক্ষমতাচ্যুত করেছে।
১৩ বছর ধরে চলা গৃহযুদ্ধে দেশটতে অর্ধেক জনসংখ্যাকে বাস্তুচ্যুত হয়েছিল। ইউরোপসহ সারা বিশ্বেজুড়ে ছড়িয়ে থাকা সিরীয় অভিবাসীরা রাস্তায় নেমে এসে আসাদের পতন উদযাপন করেছিল।

ইউরোপে সিরীয় শরণার্থী অভিবাসীদের অনেকেই তাদের নিজ দেশের ভবিষ্যত সম্পর্কে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। তবে তাদের অনেকেই এখনই দেশে ফেরা নিয়ে সতর্ক করেছেন।
আসাদের পতনের পর সিরীয় আশ্রয়প্রার্থীদের আশ্রয় আবেদন স্থগিত ঘোষণা করেছে বেশিরভাগ ইইউ দেশ।
বাংলাদেশ: স্বৈরশাসক হাসিনার পতন
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ফ্রান্স, ইটালি এবং রোমানিয়াসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশিদের রাজনৈতিক আশ্রয় আবেদনের হার বৃদ্ধি পেয়েছে।
২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে অক্টোবরের মধ্যে ইটালি আসা অভিবাসীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক এসেছেন বাংলাদেশ থেকে৷ এই সময়ে সমুদ্রপথে ইটালি এসেছেন ১২ হাজার ৭০২ জন বাংলাদেশি, যা মোট আগমনের ২০ শতাংশ৷
অর্থনৈতিক কারণ ছাড়াও রাজনৈতিক কারণেও বিগত বছরগুলোতে বহু বাংলাদেশি ইউরোপের দেশগুলোতে এসেছেন। ২০২৩ সালে মোট আট হাজার ৬০০ জন বাংলাদেশি প্রথম বারের মতো ফ্রান্সে আশ্রয় আবেদন করেছিলেন। ২০২৪ সালের প্রথম ছয় মাসে ইউরোপের দেশ রোমানিয়ায় আশ্রয় চেয়ে আবেদন করেছেন ১১৩ জন বাংলাদেশি আশ্রয়প্রার্থী।

বাংলাদেশে রাজনৈতিক সংঘাত এবং সাবেক হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে কর্তৃত্ববাদী শাসনের অভিযোগ ছিল। এছাড়া দেশটিতে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাস্তুচ্যুত হওয়া ও কোভিড পরবর্তী নাজুক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির মতো উল্লেখযোগ্য সমস্যা আছে।
২০০৯ সাল থেকে টানা ক্ষমতায় থাকা সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাত্র-জনতার গণ আন্দোলনের মুখে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ভারতে চলে যান।
৫ আগস্ট ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিস, যুক্তরাজ্যের লন্ডনসহ ইউরোপের দেশগুলোতে অবস্থানরত বাংলাদেশিরা রাস্তায় নেমে এসে হাসিনার পতন উদযাপন করেছিল।
রেডিও ফ্রান্স ইন্টারন্যাশনালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘দূরদর্শী আইকন’ হিসেবে ক্ষমতার মেয়াদ শুরু করলেও ক্রমেই কর্তৃত্ববাদী শাসন ব্যবস্থার দিকে ঝুঁকে পড়েছিলেন টানা চতুর্থ বারের মতো ক্ষমতায় আসা সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এছাড়া করোনা মহামারির পর থেকে বাংলাদেশের অর্থনীতির বেশ কিছু খাতে দেখা দিয়েছিল স্থবিরতা। সেই সঙ্গে বেড়েছে মূল্যস্ফীতির মতো বিষয়। কয়েক বছর আগেও এক ইউরোর বিপরীতে বাংলাদেশি টাকার মান ছিল ৮০ থেকে ৯৫ টাকা। এখন তা ১৩০ টাকার কাছাকাছি৷
৫ আগস্টের পর লিবিয়া ও লেবাননে আটকে পড়া বাংলাদেশিদের ঢাকায় ফেরত আনার হার বেড়েছে। কয়েক দফায় কয়েকশত অনিয়মিত অভিবাসী ঢাকায় ফেরত এসেছেন।
ইউরোপের দেশগুলোতে বাংলাদেশিদের শরণার্থী মর্যাদা পাওয়ার হার আগে থেকেই কম ছিল। ৫ আগস্ট হাসিনার পতনেড় পর এই সংখ্যা আরও কমে আসবে বলে ধারণা করছেন ফরাসি অভিবাসন সংশ্লিষ্টরা।
ইনফো মাইগ্রেন্টস