২০২২ সালে শরণার্থী মর্যাদা ও আশ্রয় পেতে রেকর্ড সংখ্যক আবেদন জমা পড়েছে স্পেনে। তবে আশ্রয় আবেদন অনুমোদনে ইউরোপের গড়ের চেয়েও নিচে রয়েছে দেশটির অবস্থান। সোমবার বেসরকারি একটি সংস্থা এই তথ্য জানিয়েছে।
স্প্যানিশ কমিশন ফর রিফিউজিস বা সিয়ার নামের সংস্থাটি ২০২২ সালের বার্ষিক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ইউক্রেনে রাশিয়ার যুদ্ধ, আফ্রিকায় একাধিক সংঘাত এবং দক্ষিণ আমেরিকায় রাজনৈতিক সংকটের কারণে লাখ লাখ লোককে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত হতে হয়েছে।
গত বছর এক লাখ এক হাজার ৮৪২টি আশ্রয়ের অনুরোধ জমা পড়ে স্পেনে। যা এখন পর্যন্ত দেশটিতে সর্বোচ্চ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নে তৃতীয় সর্বোচ্চ। আর এত আবেদনের বিপরীতে স্পেন সরকার যাচাই বাছাই করে মাত্র ১৬ দশমিক ৫ শতাংশ আবেদনকারীকে অনুমোদন দিয়েছে।
অথচ গত বছর গোটা ইউরোপে গড় অনুমোদনের হার ছিল ৩৮ দশমিক ৫ শতাংশ। এর বাইরে এক লাখ ৬১ হাজার ৩৭ জন ইউক্রেনীয় নাগরিককে ইউরোপে অস্থায়ী সুরক্ষা দেওয়া হয়েছে।
সিয়ারের আইনি সমন্বয়কারী এলেনা মুওনজ বলেছেন, ‘সুরক্ষা দেওয়ার ক্ষেত্রে আবারও আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে দাবি জানাই আমরা।’
সংস্থাটি স্পেনে আশ্রয়ের নিরাপদ ও আইনি পথের অভাব, আমলাতন্ত্রের ধীরগতির সমালোচনা করেছে। এমনকি, অ্যাপয়েন্টমেন্ট সিস্টেমটি একটি অপরাধী নেটওয়ার্ক কুক্ষিগত করে রেখেছে জানিয়ে তাদের দাবি, এর মাধ্যমে দুর্বল আশ্রয়প্রার্থীদের কাছ থেকে অর্থ আদায় করা হচ্ছে।
প্রতিবেদনে গত গ্রীষ্মে স্পেনের উত্তর আফ্রিকান ছিটমহল মেলিলাকে মরক্কো থেকে বিচ্ছিন্ন করা একটি সীমান্ত এলাকায় অন্তত ৩৭ জন অভিবাসীর মৃত্যুর নিন্দা করা হয়েছে। বলা হয়েছে, অনেক বছরের মধ্যে ইউরোপীয় সীমান্তে সবচেয়ে হিংসাত্মক ও নিষ্ঠুর দৃশ্য।
এই ট্র্যাজেডির সঙ্গে জড়িত রয়েছে স্প্যানিশ এবং মরক্কোর নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। স্প্যানিশ প্রসিকিউটররা গত বছর তদন্ত বাতিল করার পরে বেশ কয়েকটি অভিবাসী অধিকার গোষ্ঠীর এ বিষয়ক একটি আইনি অভিযোগ দায়ের করেছে।
গেলো বছরে অনিয়মিতভাবে ইউরোপীয় ইউনিয়নে আসা অভিবাসীদের ২০ শতাংশই এসেছেন স্পেনে। তারা মূলত সমুদ্র পথে নৌকা নিয়ে এসেছেন। কিন্তু দেখা গেছে, আশ্রয় দেওয়া, শরণার্থী মর্যাদা কিংবা অন্য ধরনের সুরক্ষার গ্রহণের বিষয়টি অভিবাসীদের জাতীয়তার ওপর নির্ভর করত।
লাতিন আমেরিকার সঙ্গে স্পেনের ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক আছে। ফলে ভেনেজুয়েলা, কলম্বিয়া, পেরু এবং নিকারাগুয়ায় সহিংসতা, রাজনৈতিক নিপীড়ন এবং ক্ষুধা থেকে পালিয়ে আসা অনেকের পছন্দের গন্তব্য এটি। ওই অঞ্চলের আবেদনকারীদেরও অনেক আবেদনে মঞ্জুর করেনি দেশটি।
সিয়ার রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০২২ সালে ৯৫ শতাংশ কলম্বিয়ান এবং ৯৬ শতাংশ পেরুভিয়ানদের যে কোনও ধরনের সুরক্ষা আবেদন প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে।
সুরক্ষা চেয়ে আবেদন করেছেন অন্তত ৩৬ হাজার কলম্বিয়ান। যার মধ্যে ১৬ হাজার ১৮৭টি আবেদন চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য পৌঁছেছে। এর মধ্যে ২০২২ সালে ৬৪৬ জনকে শরণার্থী মর্যাদা দিয়েছে স্পেন। এছাড়া ৩১ হাজার ২৩৪ জন ভেনেজুয়েলার আবেদনকারীদের মধ্যে মাত্র চার জনকে শরণার্থী মর্যাদা দেওয়া হয়েছিল।